আরবি : ليلى خالد,
প্যালেস্টাইনের মুক্তিযোদ্ধা। Popular Front for the Liberation of Palestine (PFLP) -এর সদস্য এবং রাজনৈতিক আদর্শের জন্য বিমান ছিনতাইকারী হিসাবে বিখ্যাত।
১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ এপ্রিল লায়লা খালেদ জন্মগ্রহণ করেন, ব্রিটিশ অনুমোদিত প্যালেস্টাইনের হাইফা শহরে। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের আরব-ইজরাইল যুদ্ধের পর, ইজারাইল সৈন্যবাহিনী প্রায় ৭ লক্ষ ২৫ হাজার আরব-মুসলামনদের তাঁদের বাসস্থান থেকে উৎখাত করে। এই সময় লায়লার পরিবার বাস্তুভিটা ত্যাগ করে লেবাননে চলে আসেন। এই সময় তাঁর বড় ভাই আরব ন্যাশানালিষ্ট মুভমেন্ট (Arab Nationalist Movement) সদস্য ছিলেন। বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায়, ১৫ বৎসর বয়সে তিনি এই সংগঠনের সদস্য হন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এই সংগঠনটি Popular Front for the Liberation of Palestine (PFLP) -নাম ধারণ করে। ইজরাইলের আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে আঘাত হানার জন্য এই সংগঠন বিমান ছিনতাই-এর কার্যক্রম গ্রহণ করে, লায়লা খালেদ এই কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং বিমান ছিনাতইয়ের প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্রচালনায় প্রশিক্ষণ নেন।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে
২৯ আগস্ট এই সংগঠন রোম থেকে এথেন্সগামী একটি বিমান ছিনাতইয়ের পরিকল্পনা
করে। এই ছিনতাই-দলে লায়লা খালেদ স্থান পান। সংগঠনের আন্তর্জাতিক গোয়েন্দারা
জানান যে, ট্র্যান্স ওয়ার্ল্ড এয়ারলাইন্সের একটি বিমান (TWA
Flight 840)
ফ্রান্সের লিওনার্দো দ্যা ভিন্সি বিমান বন্দর থেকে রোম হয়ে
তেলাআবিবের বেন গুরিয়োন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রওনা হবে। এই বিমানে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ইজরাইলের রাষ্ট্রদূত ইৎজাক রবিন (Yitzak
Rabin)
যাত্রী হিসাবে
থাকবেন। এই খবরের সূত্রে লায়লা খালেদ এবং সালিম ইসাওয়াই-কে এই বিমান
ছিনাতইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এঁরা বিমানটি ছিনতাই করেন এবং বিমান চালককে
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক বিমান বন্দরে অবতরণ করাতে বাধ্য করেন।
এই
ছিনতাইয়ের সময় কোনো যাত্রী আহত বা নিহত হন নি।
ছিনতাইয়ের পরে মার্কিন আলিকচিত্র-সাংবাদিক
Eddie Adams
কিছু ছবি তোলেন। এর
ভিতরে একে-৪৭ রাইফেল হাতে তাঁর একটি ছবি চারদিকে আলোড়ন তোলে। পরে এই ছবিটি
প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠে। তাঁর চেহারা সারা বিশ্বে
পরিচিত হয়ে উঠলে, তিনি নাক ও চিবুকে ৬টি প্লাস্টিক সার্জারি করে চেহারা
পাল্টে ফেলেন।
এরপর ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর লায়লা খালেদ এবং নিকারাগুয়ার প্যাট্রিক আর্গুয়েল্লো আমস্টার্ডম থেকে নিউইয়র্কগামী বিমান El Al Flight 219 ছিনতাই করার চেষ্টা করেন। এই সময় ইজরাইলের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা প্যাট্রিককে গুলি করে হত্যা করে। এই সময় লায়লা দুই হাতে দুটি গ্রেনেড নিয়ে, হুমকি দেয় যে, তাকে গুলি করলে গ্রেনেডের আঘাতে বিমান বিধ্বস্ত হবে। এরপর বিমান চালক বিমানটিকে লণ্ডনের হিথরো বিমান বন্দরে অবতরণ করে। এই সময় লায়লাকে গ্রেফতার করে পশ্চিম লণ্ডলের ইয়ালিং (Ealing) পুলিশ স্টেশনে পাঠানো হয়। এই বৎসরের ১ অক্টোবর মাসে বন্দী বিনিময় চুক্তির অধীনে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বিমান PFLP ছিনতাই কার্যক্রম পরিত্যাগ করে। ফলে তিনি এই ধরণের কার্যক্রমে আর অংশ নেন নি।
অত্যন্ত দৃঢ়চেতা এবং স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে যেমন সাহসিকতা দেখিয়েছেন, তেমনি অস্ত্র ছাড়া প্রতিবাদে তিনি তাঁর দৃঢ়তা দেখিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ব্রিটেন ও স্বদেশের ভিতরে যাতায়াত করেছেন। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ব্রিটিশ পাসপোর্ট দেওয়ার প্রস্তাব দিলে, তিনি তা নিতে অস্বীকার করেন। তিনি তাঁর দেশের পাসপোর্ট বহন করাকেই সর্বোচ্চ সম্মানের বিষয় বলে বিবেচনা করেছেন।
এরপর তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের পথ থেকে সরে আসেন। কারণ ই্তিমধ্যে তিনি সারা বিশ্ব জুড়ে এতটাই পরিচিত ওয়ে উঠেছিলেন যে, তাঁর পক্ষে আত্মগোপন করে কার্যক্রম চালানো মুশকিল হয়ে উঠছিল। তবে প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার পক্ষে বা প্যালেস্টাইনের অধিকার নিয়ে তিনি বহুবার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে তিনি চিকিৎসক ফয়েজ রাশিদ হিলাল-কে বিবাহ করেন। বর্তমানে তিনি স্বামীর সাথে জর্ডানের আম্মানে বাস করেন। তাঁর দুই পুত্র সন্তানের নাম বদর এবং বাশার।