 শেখ লুৎফর রহমান
শেখ লুৎফর রহমান 
১৯২১-১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ
কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলার সুলতানপুর নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ 
করেন। পিতার নাম শেখ আব্দুল হক, মায়ের নাম লতিফুন নেসা। 
শৈশবে পোলিও আক্রান্ত হওয়ার কারণে, তিনি স্বাভাবিক চলাচল করতে 
পারতেন না। শৈশবে লেখাপড়ার পাশাপাশি গানের চর্চা শুরু করেছিলেন বাড়িতেই। তিনি
অল্প বয়সেই তিনি রাগ সঙ্গীতের প্রতি অনুরক্ত হয়ে উঠেন। স্থানীয় সঙ্গীত শিক্ষকদের 
কাছে কিছুটা তালিম নেওয়ার পর, উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি কলকাতা চলে যান। কলকাতায় 
তাঁর সাথে আব্বাস উদ্দীনের সাথে সাক্ষাৎ হয়। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে আব্বাস উদ্দীন তাঁকে 
‘সঙ পাবলিসিটি’ বিভাগে চাকুরি দেন। এই বৎসরে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিও’র কলকাতা স্টেশন 
থেকে প্রথম গান পরিবেশন করেন। এরপর থেকে নিয়মিতভাবে এই বেতার কেন্দ্রে তিনি সঙ্গীত 
পরিবেশন করা শুরু করেন। এর কিছুদিন পর, তিনি মমতাজ উদ্দীন আহমেদের অনুপ্রেরণায় 
‘ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখা ‘গণনাট্য সংঘ’-এ যোগদান করেন। 
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকভারত বিভাজনের পর, তিনি তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানের রাজধানী 
ঢাকা-তে চলে আসেন। ঢাকাতে তিনি বাসা নেন জিন্দাবাহার লেনে।
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের করাচিতে যান। সেখানে তিনি প্রায় আট বৎসর ওস্তাদ 
বুন্দু খান এবং হাবিব আলী খান (বীণকার)-এর কাছে রাগ সঙ্গীতের তালিম নেন।
করাচি থেকে ফিরে তিনি গান লেখা, সুর করা এবং গান গাওয়া শুরু করেন। সে সময়ে তিনি বহু 
জনপ্রিয় গান রচনা করেন। একই সময়ে তিনি বেশ কিছু বিখ্যাত কবিতার সুরারোপ করেন। 
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সিকান্দার আবু জাফর রচিত 
কবিতা ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’-তে সুর 
দিয়ে গানে রূপান্তর করেন। তৎকালীন নানান গণ-আন্দোলনের সূত্রে তিনি সুরারোপ করেছিলেন-
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 
রচিত ‘ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’, আবুবকর সিদ্দিক রচিত বিপ্লবের রক্তরাঙা ঝাণ্ডা ওড়ে, 
সুকান্ত ভট্টাচার্যের রচিত ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন হঠাৎ বাংলাদেশ’, মতলুব আলী রচিত 
‘লাঞ্ছিত নিপীড়িত জনতার জয়’। 
এই সময়ে তিনি ছায়ানটে নজরুল সঙ্গীত বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। 
পরে তিনি নজরুল একাডেমিতে অধ্যক্ষ হিসেবে 
যোগদান করেন। তবে ছায়ানটের সাথে তাঁর সম্পর্ক অটুট ছিল। এই একাডেমিতে কাজ করার পাশাপাশি তিনি 
ছায়ানটে গণসঙ্গীতের শিক্ষাদান 
করেছেন নিয়মিতভাবে।
১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সম্মাননা
একুশ পদক (১৯৭৯), নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদক, জেবুন্নেসা-মাহবুব উল্লাহ কল্যাণ ট্রাস্ট 
পদক, বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ, নজরুল একাডেমি পুরস্কার, শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, 
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা পুরস্কার, ঋষিজ পদক, মুকুন্দ দাশ পদক ইত্যাদি।