ম্যাক্স প্লাঙ্ক
Max Planck
১৮৫৮-১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ
জার্মান বংশোদ্ভূত তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী এবং কোয়ান্টাম
তত্ত্বের জনক।
১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ এপ্রিল বরধ্তমান জার্মানীর
শ্লেসভিগ-হোল্স্টাইন রাজ্যের কিল উপসাগরের তীরে অবস্থিত কিল
বন্দর নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা উইলহেল্ম প্লাঙ্ক
ছিলেন আইনের অধ্যাপক।
তিনি পরিবারের ষষ্ঠ সন্তান ছিলেন, যদিও তার দুই ভাইবোন তার পিতার প্রথম স্ত্রীর সন্তান। প্ল্যাঙ্ক সঙ্গীতে প্রতিভাবান ছিলেন। তিনি গান শেখার পাশাপাশি পিয়ানো, অর্গান এবং সেলো বাজাতেন এবং গান ও অপেরা রচনা করতেন।
১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে পিতা-মাতার সাথে জার্মানীর মিউনিখে চলে আসেন।
১৮৭৪-১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যান্ত তিনি মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত
নিয়ে লেখাপড়া করেন।
১৮৭৮খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তিনি তার নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৮৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে
Über den zweiten Hauptsatz der mechanischen Wärmetheorie (যান্ত্রিক তাপ তত্ত্বের দ্বিতীয় সূত্র সম্পর্কে) শিরোনামের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। মিউনিখে তার প্রাক্তন স্কুলে অল্প সময়ের জন্য তিনি গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান পড়ান।
১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থার্মোডায়নামিক্স-এ পিএইচডি করেন। যেখানে উত্তপ্ত প্লাটিনামের মাধ্যমে হাইড্রোজেনের বিকিরণ নিয়ে গবেষণা করেন। তবে, তিনি পরে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে স্থানান্তরিত হন।
১৮৮০খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্ল্যাঙ্ক ইউরোপের
সর্বোচ্চ দুটি একাডেমিক ডিগ্রি অর্জন করেন। প্রথমটি ছিল তার তাপগতিবিজ্ঞানের গবেষণা
ও তত্ত্ব নিয়ে লেখা গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে ডক্টরেট ডিগ্রি। পরে তিনি
Gleichgewichtszustände isotroper Körper in verschiedenen Temperaturen (বিভিন্ন তাপমাত্রায় আইসোট্রপিক বস্তুর সাম্যাবস্থা) শিরোনামের সন্দর্ভ (থিসিস) উপস্থাপন করে হ্যাবিলিটেশন ডিগ্রি লাভ করেন।
১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে কিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত হন।
১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিয়ে করেন মারি মের্ক (Marie Merck)
-কে। ১৮৭৭
খ্রিষ্টাব্দে তিনি ফ্রিডরিখ উইলহেম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরের জন্য অধ্যয়ন করতে যান। সেখানে তিনি হার্মান ফন হেলমহল্টজ এবং গুস্তাভ কির্চহফ এর পাশাপাশি গণিতবিদ কার্ল ওয়েইয়ারস্ট্রাসের সাথে কাজ করেন।
১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান সরকারের জন্য বাতি তৈরির কাজে যুক্ত হন। এই সময় কালো
বস্তুর শক্তি বিকিরণ বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন।
১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে, তিনি বার্লিনের ফ্রিডরিখ-উইলহেমস-ইউনিভার্সিটেতে কির্চহফের স্থলাভিষিক্ত হন। সম্ভবত হেলমহল্টজের মধ্যস্থতার জন্য সম্ভব হয়েছিল এবং ১৮৯২ সালের মধ্যে তিনি পূর্ণ অধ্যাপক হন।
১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তার
Treatise on Thermodynamics
রচনা প্রকাশ করেন। তিনি আরেনিয়াসের ইলেক্ট্রোলাইটিক বিভাজন তত্ত্বের জন্য একটি তাপগতিবিদ্যাগত ভিত্তি প্রস্তাব করেছিলেন।
১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর তিনি কোয়ান্টাম কল্প-সিদ্ধান্ত দেন। এই সিদ্ধান্তের
মূল বিষয় হলো- 'শক্তি কোনো অবিচ্ছিন্ন বিষয় নয়' এটি ছোট ছোট কোয়ান্টা বা গুচ্ছ
হিসেবে নির্গত হয়।" তিনি শক্তি বিষয়ে যে সূত্র প্রদান করেন, তা হলো-
E=hv
E: শক্তি
h: প্লাঙ্ক ধ্রুবক
= 6.626×10−34 6.626 × 10-34
v
:
কম্পাঙ্ক
১৯০৭খ্রিষ্টাব্দে প্ল্যাঙ্ককে ভিয়েনাতে লুডভিগ বোল্টজমানের পদে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, কিন্তু তিনি বার্লিনেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯০৯ সালে, বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে, তিনি নিউ ইয়র্ক সিটির
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্নেস্ট কেম্পটন অ্যাডামস তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান
বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হন। তার একটি বক্তৃতামালা অ্যালবার্ট পটার উইলস দ্বারা
অনূদিত এবং প্রকাশিত হয়েছিল।
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর প্রথম স্ত্রী মারি মের্ক মৃত্যবরণ
করেন। এই বছরে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন মার্গা ভন হোসলিন
(Marga von Hoßlin)
-কে।
১৯১৪খ্রিষ্টাব্দে তিনি আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস
অ্যান্ড সায়েন্সেসের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল ১৯১৯
খ্রিষ্টাব্দে।
১৯২৬খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি বার্লিন
বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং এরউইন শ্রোডিঙ্গার তার উত্তরসূরি হিসেবে স্থান দখল করেন।
এই বছরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেসের
সদস্য নির্বাচিত।
১৯৩০ থেকে ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কায়সার উইলহেল্ম সোসাইটির-এর সভাপতি ছিলেন
১৯৩৩খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকান দার্শনিক সমাজের সদস্য
নির্বাচিত হন।
১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাড়ি ধ্বংস করা হয় এবং তাঁর ছেলে এরভিনকে নাজি কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড
প্রদান করেছিল। অপর ছেলেও যুদ্ধের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া দুটি কন্যা সন্তান প্রসবের সময় মারা যান।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।