মহাবীর
জৈনধর্মের প্রবর্তক।
আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪০ অব্দের দিকে বৈশালীর নিকট কুন্দগ্রামের এক ক্ষত্রিয় বংশে মহাবীর জন্মগ্রহণ করেন। এঁর পিতার নাম ছিল সিদ্ধার্থ এবং মা ছিলেন লিচ্ছবি বংশীয়া, নাম ত্রিশিলা। তিনি যশোদা নামক এক ক্ষত্রিয় নারীকে বিবাহ করেন। এঁদের একমাত্র কন্যার পরিচয় পাওয়া যায়। এই কন্যার নামও রাখা হয়েছিল ত্রিশিলা।
ত্রিশ বৎসর বয়সে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করে গৃহত্যাগ করেন। কঠোর তপস্যা করে তিনি সিদ্ধি লাভ করেন। জৈন ধর্মমতে এই সিদ্ধিলাভকে বলা হয় কৈবল্য। এরপর পূর্বভারতে তিনি ধর্মপ্রচার শুরু করেন। পূর্ব ভারতের কোশল, মগধ ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে বহু মানুষ তাঁর ধর্মে দীক্ষিত হন। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৪২৮ অব্দে তিনি দক্ষিণ বিহারের পাবা নগরে দেহত্যাগ করেন।
মহাবীর নিজেকে চতুর্বিংশ তীর্থঙ্কর নামে
পরিচয় দিতেন। উল্লেখ্য জৈনদের মতে বহু প্রাচীনকাল থেকে মহাবীর পর্যন্ত মোটা ২৪জন ধর্মগুরু এই ধর্মকে সমৃদ্ধ
করেছেন। মহাবীরের পূর্ববর্তী ২২ জন গুরুর কোনো ঐতিহাসিক পরিচয় পাওয়া যায় না। ২৩
সংখ্যক গুরু ছিলে পার্শ্বনাথ। এঁর সম্পর্কে খুব সামান্যই জানা যায়। জৈনদের মতে-
পার্শ্বনাথ কাশীর রাজপুত্র ছিলেন। প্রায় ৩০ বৎসর তিনি সাংসারিক জীবন অতিবাহিত করেন।
এরপর তিনি সন্ন্যাস নিয়ে তপস্যা শুরু করেন এবং কৈবল্য লাভ করেছিলেন। পার্শ্বনাথের
উপদেশাবলিকে বলা হয় চতুর্যাম। এঁর উপদেশের মূল বিষয় ছিল— অহিংসা, সত্য, অচৌর্য ও
অপরিগ্রহ।
মহাবীর তীর্থঙ্কর-এর ক্রমধারায় ছিলেন ২৪তম। তিনি মূলত পার্শ্বনাথের উপদেশ অনুসরণ
করে ধর্ম প্রচার শুরু করেছিলেন। তিনি পার্শ্বনাথের মূল চারটি বিধানের সাথে শুচিতা
বা ব্রহ্মচর্য নামে একটি বাড়তি বিধান যুক্ত করেছিলেন। ফলে এই বিধানের নতুন নামকরণ
করা হয় পঞ্চ মহাব্রত। তিনি ৮ মাস নানা স্থানে ঘুরে ঘুরে তাঁর ধর্মের কথা
শোনাতেন, আর ৪ মাস কোনো নির্দিষ্টস্থানে অবস্থান করতেন। কথিত আছে, তিনি ধর্ম
প্রচারের জন্য সেকালের চম্পা, বৈশালী, মিথিলা, রাজগৃহ, শ্রাবস্তি প্রভৃতি অঞ্চলে
ভ্রমণ করেন। তাঁর ধর্মীয় দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়ে মগধের রাজা বিম্বিসার ও অজাতশত্রু
জৈনধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।