খোন্দকার মোশতাক আহমেদ
(১৯১৮-১৯৯৬)
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও রাষ্ট্রপতি।

১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ মার্চ কুমিল্লার  দাউদকান্দির দশপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার ছিলেন দাউদকান্দির পীর হযরত খন্দকার কবিরউদ্দিন আহমেদ।

স্থানীয় স্কুল-কলেজের পাঠ শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে বি.এল-এ ভর্তি হন এবং এই বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আতাউর রহমান খান। উল্লেখ্য এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আব্দুল হামিদ খান ভাসানি। উক্ত সম্মেলনে উপস্থিত সদস্যদের সম্মতিতে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ' নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়। আর পুরো পাকিস্তানের জন্য দলটির নাম রাখা হয় 'নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'। এর সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এই দলের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সভাপতি হন- আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, সহ-সভাপতি আতাউর রহমান খান, শাৱখাওয়াত হোসেন, ও আলী আহমদ খান।  সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শামসুল হক (টাঙ্গাইল), যুগ্ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবর রহমান (তখন জেলে ছিলেন), খন্দকার মোস্তাক আহমেদ, একে রফিকুল হোসেন এবং কোষাধ্যক্ষ।

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্তফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এই বছরে কেন্দ্রীয় সরকার  আর্টিকেল ৯২ (১৯৫৩)-এ ব্যবহার করে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙ্গে দিলে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়।

১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১-২৩ অক্টোবর সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলে আনুষ্ঠানিক সম্মেলনে ভাসানী-মুজিব যখন দলকে ধর্মনিরপেক্ষ করার দাবি তুলে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়ার দাবি তুললেন, মোশতাক বিরোধিতা করেছেন। এজন্য এডভোকেট আলী আমজাদ খান, আবদুস সালাম ও হাশিমউদ্দিনকে নিয়ে পাল্টা সংগঠন গড়লেন।

১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মুক্ত হয়ে আবার সংসদে যুক্তফ্রন্টের চিফ হুইপ হিসেবে নির্বাচিত হন।
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি আবার বন্দি হন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ছয়-দফার সমর্থন করায় তাকে আবার কারাবরণ করতে হয়।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে দেশের আটটি রাজনৈতিক দল আইয়ুব বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ গঠন করলে তাতে খন্দকার মোশতাক আহমেদ পশ্চিম পাকিস্তান অংশের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছিলেন। এই বছরেই রাওয়ালপিন্ডিতে আইয়ুব খানের ডাকা গোল টেবিল বৈঠকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে যোগদান করেছিলেন।

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারে তিনি পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারে তিনি বিদ্যুৎ, সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।
https://www.dailyjagaran.com/m/liberation-war/news/30948

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে  বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের জন্য বঙ্গভবনের প্রবেশপথে  মোশতাক আহমেদ

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তাকে বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বাকশালের কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। এই বছরের ১৫ আগষ্ট সামরিক অভ্যত্থানে বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবর রহমানকে হত্যা করা হয়। এরপর মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের জাতির সূর্যসন্তান বলে আখ্যা দেন। এই পদে তিনি মাত্র ৮৩ দিন ছিলেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেবার পর তিনি ইনডেমিনিটি বিল পাশ করেন। তিনি "জয় বাংলা" স্লোগান পরিবর্তন করে এর স্থলে "বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" স্লোগান চালু করেন। এই সময় তিনি "বাংলাদেশ বেতার" এই নাম পরিবর্তন করে রেডিও পাকিস্তানের আদলে "রেডিও বাংলাদেশ" করেন।

৩ নভেম্বর তাঁর শাসনামলে চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মোঃ মনসুর আলী ও এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয়।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর সেনাবিদ্রোহের দ্বারা অপসারিত হন। ৬ই নভেম্বর তাঁকে বন্দী করা হয়।

১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বন্দী দশা থেকে মুক্তি লাভ করেন। এরপর ডেমোক্র্যাটিক লীগ নামক এক নতুন দল প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
 


তথ্যসূত্র: