মৃণাল সেন
প্রখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্রকার।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ মে, বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় স্কুলের
পাঠ শেষ করে, তিনি পড়াশোনার জন্য কলকাতায় আসেন। প্রথমে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে
ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা
করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখার সঙ্গে যুক্ত হন।
কিন্তু তিনি কখনও কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয়পদ গ্রহণ করেন নি।
১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সমাজবাদী সংস্থা আইপিটিএর (ইন্ডিয়ান পিপ্লস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন) সঙ্গে যুক্ত হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি সাংবাদিকতা, ওষুধ বিপননকারী এবং চলচ্চিত্রে শব্দ কলাকুশলী হিসাবে কাজ করেন।
বাইশে শ্রাবণ। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ |
১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ছবি 'রাতভোর' মুক্তি পায়। এই ছবিটি ততটা সাফল্য পায় নি। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায় তাঁর দ্বিতীয় ছবি 'নীল আকাশের নীচে'। এই ছবিটি সরকার দুই মাসের জন্য বাজেয়াপ্ত করে রেখেছিল। এই ছবি তাঁকে স্থানীয় চলচ্চিত্র মহলে পরিচিতি এনে দেয়। তাঁর তৃতীয় ছবি 'বাইশে শ্রাবণ' মুক্তি পায় ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে। এই ছবির দ্বারা তিনি আর্ন্তজাতিক চলচচ্চিত্র অঙ্গনে পরিচিতি পান।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পরিচালিত বহুল আলোচিত ছবি 'ভুবন সোম' মুক্তি পায়। এই ছবিটি অনেকের মতে মৃণাল সেনের শ্রেষ্ঠ ছবি।
১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের
ভিতরে, কলকাতার অস্থির সামাজিক অবস্থার আলোকে তাঁর তিনটি ছবি (ইন্টারভিউ,
ক্যালকাটা ৭১, পদাতিক) মুক্তি পায়। এই ছবি তিনটি কলকাতা ট্রিলোজি নামে খ্যাত।
উল্লেখ্য ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পরিচালিত খারিজ ছবিটি 'কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র
উৎসবে'-এ বিশেষ জুরি পুরস্কার পেয়েছিল। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নির্মাণ করেন
'জেনেসিস'। এই ছবিটি হিন্দি, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় মুক্তি পেয়েছিল।
এখন অবধি তিনি ২৭টি কাহিনি চিত্র, ১৪টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি, ৪টি তথ্য চিত্র
নির্মাণ করেছেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারত সরকার দ্বারা পদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন।
২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পান।
১৯৯৮ থেকে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দ অবধি ভারতীয় সংসদের সাম্মানিক সদস্যপদ লাভ করেন।
২০০০ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে অর্ডার অফ
ফ্রেন্ডশিপ সম্মানে ভূষিত করেন।
এছাড়া ফরাসি সরকার তাঁকে কম্যান্ডার অফ দি অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস
(Ordre des Arts et des
Lettres ) সম্মানে
সম্মানিত করেন। এই সম্মান ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান।
মৃণাল সেনের সৃষ্ট কাজের তালিকা
পূর্ণ দৈর্ঘ্য কাহিনি চিত্র (২৭টি)
১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ 'রাতভোর'
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ 'নীল আকাশের নীচে'
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ 'বাইশে শ্রাবণ'
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দ মুক্তি পায় 'পুনশ্চ'।
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায় 'অবশেষে'।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে মুক্ত পায় 'প্রতিনিধি'
১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পায় 'আকাশ কুসুম'।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ 'মাটির মনীষ' [কালীন্দিচরণ পাণিগ্রাহীর গল্প অবলম্বনে ওড়িয়া
ভাষায় নির্মিত।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ 'ভুবন সোম'।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ 'ইন্টারভিউ'।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ 'এক আধুরি কাহানি'।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ 'ক্যালকাটা ৭১'।
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দ 'পদাতিক'।
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ 'কোরাস'।
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ 'মৃগয়া'।
১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ 'ওকা উরি কথা' [প্রেম চন্দের গল্প অবলম্বনে তেলেগু ভাষায়
নির্মিত ।
১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দ 'এক দিন প্রতিদিন'।
১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ 'আকালের সন্ধানে'।
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দ 'চালচিত্র'।
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ 'খারিজ' ।
১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ 'কান্দাহার'।
১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ 'জেনেসিস' (হিন্দি, ফরাসি ও ইংরেজি ভাষায় মুক্তিপ্রাপ্ত।
১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দ 'একদিন আচানক'
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ 'মহাপৃথিবী'।
১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দ মুক্তি পায় অন্তরীণ।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দ 'আমার ভুবন'।
স্বল্পদৈর্ঘ্য চিত্র [১৪টি]
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ 'ইচ্ছাপূরণ'।
১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দ 'তসবির আপনি আপনি'।
১৯৮৬-৮৭ খ্রিষ্টাব্দ 'দশ সাল বাদ'।
১৯৮৬-৮৭ খ্রিষ্টাব্দ 'আজনবি'।
১৯৮৬-৮৭ খ্রিষ্টাব্দ 'সওয়াল'।
১৯৮৬-৮৭ খ্রিষ্টাব্দ 'সালগিরা'।
১৯৮৬-৮৭ খ্রিষ্টাব্দ 'দো বহিনে'।
১৯৮৬-৮৭ খ্রিষ্টাব্দ 'আজকাল'।
১৯৮৬-৮৭ খ্রিষ্টাব্দ 'রবিবার'।
১৯৮৬-৮৭ খ্রিষ্টাব্দ 'আয়না'।
১৯৮৬-৮৭ খ্রিষ্টাব্দ 'সোমবারা'।
১৯৮৬-৮৭ খ্রিষ্টাব্দ 'কভি দূর কভি পাস'।
১৯৮৬-৮৭ খ্রিষ্টাব্দ 'অপরাজিত'।
তথ্যচিত্র [৪টি]
Moving
Perspectives 1964
Tripura Prasanga 1982
City Life - Calcutta My El Dorado 1990
And the Show Goes On - Indian Chapter 1996
তথ্যসূত্র
মৃণাল সেন; আশরাফুল হক; দৈনিক প্রথম আলো; মে ১৪, ২০০৯; পৃষ্ঠা ২৬।
http://www.calcuttaweb.com/cinema/mrinalsen.shtml
http://mrinalsen.org/documentaries.htm
http://www.britannica.com/EBchecked/topic/762851/Mrinal-Sen
http://en.wikipedia.org/wiki/Mrinal_Sen