ওস্তাদ
মতিউর রহমান খান (মতি মিয়া)
(১৯০০-১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ)
শিল্পী এবং শিক্ষাগুরু, ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তনের
প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ।
ছায়ানট সঙ্গীত-বিদ্যায়তনের প্রতিষ্ঠালগ্নে, বিদ্যায়তনকে
প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে যে কয়েকজন সঙ্গীতশিক্ষক অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন,
তাঁদের একজন ছিলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিক্ষাগুরু ওস্তাদ মতিউর রহমান খান (মতি মিয়া)।
তিনি অধ্যক্ষের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করে বিদ্যায়তনের অগ্রযাত্রার পথকে সুগম করেছিলেন।
পাশাপাশি তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবে বিদ্যায়তনের
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিভাগকে সমৃদ্ধ করেছিলেন।
ওস্তাদ মতিউর রহমান খান, ১৯০০ সালে তৎকালীন
ব্রিটিশ-ভারতের ত্রিপুরা জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া
মহাকুমার মধ্যপাড় গ্রামের সঙ্গীতানুরাগী এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতার নাম সওদাগর মিয়া।
অর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য ম্যাট্রিকুলেশান
পাশ করার পর, তাঁর আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের সুযোগ ঘটে নি।
পিতার
কাছে তাঁর সঙ্গীতের হাতে খড়ি হয়েছিল ক্ল্যারিওনেট ও
বেহালা শিক্ষার মধ্য দিয়ে। পরে
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাঠ নেওয়ার জন্য সে সময়ের
প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ওস্তাদ আহম্মদ আলী খানের শিষ্যত্ব
গ্রহণ করেছিলেন। এরপর তিনি কিছুদিন উকিল
কামিনী ভট্টাচার্য-এর কাছে খেয়াল গানের তালিম নিয়েছিলেন।
পাশাপাশি তিনি ধ্রুপদের পাঠ
নিয়েছিলেন তাঁর চাচা বরকত
আলী খানের কাছে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দীন খানের কাছে
তিনি কিছুদিন বেহালা শেখেন। এছাড়া
তিনি
ওস্তাদ আয়েত আলী খান এবং ওস্তাদ মোহম্মদ হোসেন খানের কাছেও কিছুদিন রাগ সঙ্গীতের
তালিম নেন।
বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ বীরেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সহায়তায় মতিউর রহমান শিলং-এ
পেশাদারি সঙ্গীতজগতে প্রবেশ করেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের
১লা জুলাই শিলং বেতার কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে
অন্যান্য শিল্পীদের সাথে তিনি কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশন করার গৌরব
অর্জন করেন।
সঙ্গীতবিজ্ঞান প্রবেশিকা পত্রিকার বৈশাখ ১৩৪৮ (এপ্রিল-মে ১৯৪১) সংখ্যা থেকে
পৌষ ১৩৪৮ (ডিসেম্বর ১৯৪১-জানুয়ারি ১৯২০) পর্যন্ত 'বেহালা শিক্ষার সহজ প্রণালী'
শিরোনামে ধারাবাহিক রচনা প্রকাশিত হয়েছিল।
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পাকিস্তানের ঢাকা বেতারকেন্দ্রের নিজস্ব শিল্পী হিসেবে
যোগদান করেন। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়নের প্রতিষ্ঠা লগ্নে-
বিদ্যায়তনের অধ্যক্ষ এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং
তিনি আমৃত্যু এই পদে আসীন ছিলেন।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকাতে মৃত্যুবরণ করেন।
স্ত্রীর নাম : ভানু বেগম
সন্তানাদি : আশফাকুর রহমান খান (চুনী মিয়া), মোহম্মদ চান মিয়া, সুরুজ মিয়া,
শাহজাহান খান মোহম্মদ হারুন অর রশিদ, নাজমুল আলম খান (ঝুরু), শোভনার বেগম, জাহানারা
বেগম, রওশনারা বেগম, মহব্বত নেসা, নূরজাহান বেগম।