নাগার্জুন
(আনুমানিক ১৫০-২৫০ খ্রিষ্টাব্দ)
খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রখ্যাত বৌদ্ধ ভিক্ষু, ধর্মপ্রচারক, নৈয়াকিক, সংগঠক, তার্কিক, চিকিৎসক।

তাঁর জন্মকাল সম্পর্কে বিশেষভাবে জানা যায় না। ধারণা করা হয়, তিনি
অন্ধ্ররাজ গৌতমীপুত্র যজ্ঞশ্রীর (১৬৬-১৯৬ খ্রিষ্টাব্দ) সমকালীন।  তিনি তৎকালীন বিদর্ভের কোনো এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশব থেকে ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা শুরু করেন। বিশেষ করে ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান হিসেবে সনাতন হিন্দু ধর্মের উল্লেখযোগ্য সকল গ্রন্থই পাঠ করেন। এরপর তিনি বৌদ্ধ ধর্মের গ্রন্থাদি পড়া শুরু করেন। চীনা ভাষায় রচিত কুমারজীব অনূদিত নাগার্জুনের জীবনচিত থেকে জানা যায় যে, ৯০ দিনে তিনি সমগ্র ত্রিপিটক আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

এরপর তিনি মহাযান বৌদ্ধ তত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেন এবং এই সূত্রে তিনি বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন। এরপর বৌদ্ধ ধর্মের অন্যান্য গ্রন্থাদি পাঠ করে শ্রীপর্বতে (নাগার্জোনি কোণ্ডা, গুন্টুর) বসবাস শুরু করেন। বৌদ্ধধর্মের অনুশীলনে পাশাপাশি তিনি চিকিৎসাবিদ্যা ও রসায়নবিদ্যা নিয়ে কিছু গবেষণা করেন। এই দুটি তিনি এতটা খ্যাতি লাভ করেন যে, তিনি চিকিৎসা এবং রসায়নশাস্ত্রের গুরু হিসেবে আখ্যায়িত হন।

তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ ‘অষ্টাঙ্গ হৃদয়’ তিব্বতী চিকিৎসকদের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত এবং সমাদৃত। তিনি অন্ধ্ররাজ সুহৃৎ সাতবাহনকে সদুপদেশ দেবার রচনা করেছিলেন ‘সুহৃল্লেখ’ নামে একটি ক্ষুদ্র গ্রন্থ। যতদূর জানা যায় গ্রন্থটি চীনা ও তিব্বতী অনুবাদে সংরক্ষিত আছে বলে জানা যায়। এছাড়া তিনি রচনা করেন মাধ্যমিককারিকা, যুক্তিষষ্ঠিকা, প্রমাণ-বিধ্বংসন, উপায়কৌশল্য, বিগ্রহব্যবর্তনী, প্রজ্ঞাপারমিতাশাস্ত্র, মহাযানবিংশক প্রভৃতি।তিনি শূন্যবাদের প্রচারক ছিলেন।

নাগার্জুনের বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের পূর্বে
সংস্কারপন্থী মহাসাঙ্ঘিকদের ক্রম-সংস্কারের মধ্য দিয়ে মহাযান সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। এরা নিজদেরকে মহৎ বা উৎকৃষ্ট মতাদর্শের অধিকারী বলে মহাযান হিসেবে আখ্যায়িত করে। পক্ষান্তরে মহতের বিপরীত অর্থে স্থবিবাদের অনুসারীদের হীনযান নামে আখ্যায়িত করে। হীনযানের অনুসারীদের একদল অভিধম্মের 'বিভাষা' নামক টীকায় বিশ্বাস করতো। তারা মনে করতো স্বলক্ষণযুক্ত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের অস্তিত্বে বিশ্বাস করাটাই ধর্ম। এদের বলা হয় বৈভাষিক। অন্যদিকে সূত্রগ্রন্থ অনুসরণে সৃষ্টি হয়েছিল শূন্য-স্বভাব এবং অলীক বিশ্বাস অনুসরণে সৃষ্টি হয়েছিল বস্তুবাদী দর্শন। এই মতের বিশ্বাসীদের বলা হয় সৌত্রান্তিক। চরম এই মতের মাধ্যমিক মত হিসেবে সৃষ্টি হয়েছিল শূন্যবাদ। তাই এই মতবাদের জনক হিসেবে মান্য করা হয় নাগার্‌জুনকে

নাগার্জুন তাঁর ‘বিগ্রহব্যবর্তনী’র কারিকায় শূন্যতার সূত্রে বলেন, ‘...শূন্যতাকে যিনি অনুভব করতে পারেন তিনি সবকিছুরই অর্থ অনুধাবনে সক্ষম। যিনি শূন্যতাকে বোঝেন না তিনি কিছুই বোঝেন না।’ তাঁর মতে ধর্ম বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোনো বিষয়েরই উৎপত্তি, স্থিতি ও বিনাশ নাই। তাই এগুলোর কোনো কিছুকেই প্রমাণ করা যায় না। একই কারণে, ভুত, বর্তমান ভবিষ্যত ব্যাপী কালপ্রবাহও থাকতে পারে না। হীনযান মতে ব্যক্তিত্ব থাকলেও ধর্ম আছে। পক্ষান্তরে বেদান্ত মতে আত্মা আছে কিন্তু কর্মজগৎ নেই। নাগার্জুনের মতে দুটোই অযৌক্তিক। তিনি চারটি দ্বন্দ্ব-মূলক প্রস্তাবনা রেখেছেন তাঁর দর্শনে। এগুলো হলো-

এই চারটি দ্বান্দ্বিক প্রস্তাবনাকে বলা হয়ে থাকে নাগার্জুনের চতুষ্কোটি।
 


সূত্র :
চর্যাগীতি পদাবলী, সুকুমার সেন, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৯৫
চর্যাগীতি পরিক্রমা। দে'জ সংস্করণ। জানুয়ারি ২০০৫।
চর্যাগীতিকোষ। নীলরতন সেন সম্পাদিত। সাহিত্যলোক। কলকাতা। জানুয়ারি ২০০১।
বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত। ডঃ মুহম্মদ শহীদউল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স। জুলাই ১৯৯৮
বাংলা সাহিত্যের কথা
। ডঃ মুহম্মদ শহীদউল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স।
ভারতীয় সঙ্গীতকোষ। শ্রীবিমলাকান্ত রায়চৌধুরী। কথাশিল্পী প্রকাশ। বৈশাখ ১৩৭২
সাধারণ ভাষা বিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা
। ডঃ রামেশ্বর শ।
হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা বৌদ্ধ গান ও দোঁহা, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, ১৩২৩ 
http://en.wikipedia.org/wiki/Indo-Aryan_languages
http://en.wikipedia.org/wiki/Magadhi_Prakrit