নাঙ্গেলি
ভারতের কেরালা রাজ্যের এক অসম সাহসিনী প্রতিবাদী নারী। যিনি নিজের অধিকার আদায়ের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছিলেন।

১৭০০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে নাঙ্গেলি জন্মগ্রহণ করেছিলেন কেরালা রাজ্যের  ত্রিভাঙ্কুরের (এখনকার কেরালা ও তামিলনাড়ুর কিছু অংশ) আলাপুঝার এঝাওয়া সম্প্রদায়ের এক নিম্নবর্ণের কৃষক পরিবারে। যথা সময়ে তাঁর বিবাহ হয়েছিল। ১৮০৩ খ্রিষ্টাব্দে 'স্তনকর' দেওয়ার প্রতিবাদে নাঙ্গেলি নিজের স্তন কেটে ফেলেছিলেন এবং এর ফলে তাঁর মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য, ত্রিবাঙ্কুরের রাজা তাঁর রাজ্যের  হিন্দু নিচু জাতের জন্য পুরুষ ও নারীর জন্য একটি বিশেষ কর আরোপ করেছিলেন। এই আইনে পুরুষরা গোঁফ রাখতে, আর মেয়েরা স্তন ঢাকতে পারবে না। এই আইনে পুরুষদের গোঁফ রাখতে হলে তার জন্য কর প্রদান করতে হতো। একই ভাবে মেয়েরা তাদের স্তন ঢেকে রাখার জন্য কর দিতে হতো। এই কারণে পুরুষরা গোঁফ রাখতো না। কিন্তু নারীদের জন্য স্তন ঢেকে না রাখাটা ছিল নিতান্তই অস্বস্তিকর এবং অবমাননাকর। ফলে তারা বাধ্য হয়ে স্তনকর পরিশোধ করতো। স্থানীয় ভাষায় এই করের নাম ছিল ‘মুলাক্করম’।

স্তনকর (মুলাক্করম) আইনে বলা হয়েছিল- ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য কোনো হিন্দু নারী তাদের স্তনকে কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখতে পারবে না। যদি কোনো অব্রাহ্মণ নারী তার স্তনকে কাপড় দ্বারা আবৃত করতে চায়, তাহলে তাকে স্তনের মাপের উপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান করতে হবে। উল্লেখ্য এই করের অধিকাংশ যেত ত্রিবাঙ্কুরের রাজাদের কুলদেবতা পদ্মনাভ মন্দিরে।

১৮০৩ খ্রিষ্টাব্দে নাঙ্গেলি এই আইন অগ্রাহ্য করে স্তনকে আবৃত করেন। গ্রামের শুল্ক সংগ্রাহক তার কাছ থেকে  ‘স্তনশুল্ক’ দাবি করলে, নাঙ্গেলি এই কর দিতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু শুল্কবিভাগের কর্মচারীরা জোরজবদস্তি করলে, নাঙ্গেলি ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের দুটি স্তন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলেন এবং একটি কর্তিত স্তন কলাপাতায় মুড়ে শুল্ক সংগ্রাহকের হাতে তুলে দেন। এর কিছু পরে  রক্তক্ষরণে নাঙ্গেলির মৃত্যু। শেষকৃত্যের সময় নাঙ্গেলির স্বামী নিজেও জ্বলন্ত চিতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত্যু বরণ করেন।