১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে
তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে গবেষক হিসাবে যোগদান করেন। এই সময় তিনি
ব্র্যাকের 'রিসার্স এ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন ডিভিশন' কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত হন,
গ্রামবাংলা মানুষের পুষ্টির জন্য করণীয় বিষয় সম্পর্কে নানাধরণের কার্যক্রম চালান।
বিশেষ করে গৃহস্থদের সব্জির বাগান করার বিষয়ে উৎসাহী করে তোলেন এবং এই বিষয়ে
সহযোগিতা করেন।
১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর, তিনি হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে-এ সিনিয়র
পলিসি এ্যাডভাইজার হিসাবে যোগদান করেন। এই সময় তিনি এই সংস্থা এবং সরকার,
দাতাগোষ্ঠী এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূল সংস্থার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হন।
এই সময়ে তিনি এ্যাসিড দগ্ধ নারীদের পাশে এসে দাঁড়ান। তাঁর উদ্যোগের সূত্রে পরবর্তী
সময়ে তৈরি হয়েছে 'এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন'। এই বিষয়ে ডা: সামন্ত লাল (প্রকল্প
পরিচালক বার্ন ইউনিট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সহ সভাপতি) বলেন।
১৯৯৭ | "...১৯৯৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতাল পরিদর্শনে ব্রিটিশ হাইকমিশনের তৎকালীন চিকিৎসক হিউজ কার্পেন্টার
আসেন এবং তিনি পোড়া রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। পরবর্তী সময়ে
তাঁরই অনুরোধে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্রিটিশ নাগরিক জন মরিসন আমার
সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তিনি আমাকে নিয়ে আমাদের হাসপাতালের ৩৫ বি-ওয়ার্ডে
এসিডদগ্ধ রোগীদের দেখতে আসেন। তখন আমাদের ওয়ার্ডে মাজেদা নামের একজন
এসিডদগ্ধ রোগী ভর্তি ছিলেন। মাজেদা তখন অন্তঃসত্ত্বা এবং এক চোখ এসিডের
কারণে অন্ধ ছিল। তিনি স্বামী দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই রোগী দেখার পর
আমার রুমে বসে জন মরিসন ও আমি আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিই, এঁদের জন্য কিছু
করতে হবে। পরবর্তী সময়ে জন মরিসনের একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালের ১২ মে
এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের জন্ম হয়। -সূত্র : এসিডদগ্ধদের মনোবল ফিরিয়ে
আনা জরুরি। সামন্ত লাল সেন। প্রথম আলো ০৭-০৩-২০১০। |
১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে অস্ট্রেলীয় কোম্পানি ফুলবাড়ি কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের চুক্তি করে। এই চুক্তি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কার্যকরী হওয়ার আগেই বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হয়। পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার অস্ট্রেলীয় কোম্পানি এশিয়া এনার্জির সাথে এই বিষয়ে একটি চুক্তি করে। নাসরীন ব্যক্তিগত উদ্যোগে নানাবিধ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এই কোম্পানিটিকে একটি লুটেরা কোম্পানি হিসাবে উপস্থাপন করেন। এশিয়া এনার্জি'র কর্মাকণ্ড এবং কয়লা উত্তোলন পদ্ধতির সমালোচনা করে জনমত গড়ে তোলেন। অনেকেই মনে করেন এই কারণে, তাঁকে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে জীবন দিতে হয়েছে।
এরপর তিনি এ্যাকশান এইড বাংলাদেশ-এ যোগদান করেন। এই সংস্থায় কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসাবে মৃত্য পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
২০০২ খ্রিষ্টাব্দে
গোল্ডলিফ-এর বিজ্ঞাপন নিয়ে 'ভয়েজ অব ডিসকভারি' নামক জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর
করার চেষ্টা করলে তিনি তাঁর বিরোধিতা করেন। বন্দরের ১৪ নম্বর জেটির সামনে তিনি মানব
বন্ধনের দ্বারা সৃষ্ট প্রতিবাদের নেতৃত্ব দেন। উল্লেখ্য এই জাহাজটি শেষ পর্যন্ত
চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে নি।
২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯.৪৫টার দিকে, তাঁর বাসার সামনে এ্যাকশান
এইড বাংলাদেশ-এর গাড়ি দ্বারা পিষ্ট হন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এই দিনই ৭.৪৫টার সময় ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করেন।
সূত্র :
আন্দোলনের নাসরীন, নাসরীনের আন্দোলন। নারীপক্ষ। ১১ বৈশাখ ১৪১৪, ২৪ এপ্রিল
২০০৭।
বহির্সূত্র :
http://bn1.starhostbd.com/detailsnews.php?nssl=8d1da9e81f8b2829ec8139358a3dc7e2&nttl=58471