পঞ্চানন কর্মকার
(?-১৮০৪)
তিনি তৎকালীন হুগলির ত্রিবেণীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষর ছিলেন পেশায় লৌহকর্মকার। তবে এই বংশের অনেকে লিপিকার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাম্রপটে, অস্ত্রশস্ত্রে অলঙ্করণ বা নামাঙ্কনের কাজে তাঁরা বেশ দক্ষ ছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস কোথায় ছিল তা জানা যায় না। এঁদের কোনো পরিবার হুগলির অন্তঃপাতী জিরাট বালাগড়ে বসতি স্থাপন করেছিলেন: পরে ত্রিবেণীতে গিয়ে বসবাস শুরু করেন।

১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে চার্লস উইলকিন্স যখন হুগলিতে ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেডের লেখা
A Grammar of the Bengal Language) নামক গ্রন্থ মুদ্রিতাকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেন। এই সময় বাংলা ফন্ট তৈরির জন্য পঞ্চাননের সাহায্য নেন। উইলকিন্স এবং পঞ্চাননের প্রচেষ্টায় মুদ্রণের উপযোগী বাংলা হরফ প্রস্তুত করেন।

১৭৭৯ খ্রিষ্টাব্দে তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের উৎসাহে উইলকিন্সের পরিচালনাধীনে কলকাতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ছাপাখানা স্থাপিত হয়। এই সময় পঞ্চানন ওই ছাপাখানা কর্মচারী হিসেবে যোগদান করেন।  ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এই সরকারি ছাপাখানা চালু হয়। এই সময় তিনি নতুন শৈলীর হরফ তৈরিতে উইলকিন্সের সাথে গবেষণা করেন।

১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দের দিকে উইলিয়াম কেরির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয় এবং সে বছরই তিনি কেরি সাহেবের উদ্যোগে শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে যোগদান করেন। গোড়ার দিকে একটি পুরোনো মুদ্রণ নিয়ে এই প্রেসের কাজ শুরু হয়। কিন্তু পঞ্চাননবাবুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অল্প দিনের মধ্যে এটি এশিয়ার বৃহত্তম অক্ষর তৈরির কারখানা হয়।

১৮০১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর তৈরি হরফে বাংলায় বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টর কেরিকৃত অনুবাদ ছাপা হয়।
১৮০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কেরির সংস্কৃত ব্যাকরণ মুদ্রণের জন্য দেবনাগরী হরফ নির্মাণ করেন। উল্লেখ্য, এটিই ছিল ভারতবর্ষে প্রথম দেবনাগরী বর্ণমালায় মুদ্রণের উপযোগী ফন্ট। এরপর তিনি বাংলা হরফের উৎকর্ষ রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর সৃষ্ট বাংলা হরফ মুদ্রণশিল্পে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত ছিল।

১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।


সূত্র :