১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে
নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় একজন
স্বনামধন্য চিকিৎসক ছিলেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর, তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য
ইংল্যান্ডে চলে যান এবং সেখান থেকে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আইসিএস) পরীক্ষা
উত্তীর্ণ হন। ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সিভিল সার্ভিসের কর্মজীবনে সহকারী
ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রবেশ করেন। এই সময় তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকারীদের
সহযোগিতা করতে থাকেন। এই কারণে, তাঁকে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে বহিষ্কার করলেও, তাঁরা
অজুহাত দেখান যে, তিনি তার নির্ধারিত দায়িত্ব যথাযথ ঠিকভাবে চালাতে ব্যর্থ।
ভারত বিরোধীয় জাতীয় আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য তিনি ইংল্যান্ডে যান।
১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আবার মাতৃভূমি ভারতে ফিরে আসেন। এবার ইংরেজির অধ্যাপক
হিসেবে প্রথমে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন-এ যোগদান করেন। পরে এই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে তিনি
ফ্রি চার্চ কলেজে যোগদান করেন। সর্বশেষে রিপন কলেজে কিছুদিন অধ্যাপনা করেন।
উল্লেখ্য পরবর্তীকালে (১৯৪৮-৪৯ খ্রিষ্টাব্দে) এই রিপন কলেজই তার নামে নামকরণ করা
হয় সুরেন্দ্রনাথ কলেজ হিসেবে।
১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে
জুলাই, তিনি সর্ব ভারতীয় আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে 'ভারতীয় সংঘ' বা 'দি
ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন' প্রতিষ্ঠা করেন। এই বৎসরে তিনি কলকাতা কর্পোরেশনেরও সদস্য
হন। উল্লেখ্য ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তাঁর এই সদস্যপদ ছিল।
১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে থেকে তিনি 'বেঙ্গলী' নামক একটি পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন।
১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত জাতীয়তাবাদী প্রতিনিধিদের
নিয়ে নিয়মিতভাবে বার্ষিক সভা পরিচালনা শুরু করেন।
১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা পায়। আর ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে
কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে, তিনি তাঁর ভারতীয় সংঘকে নিয়ে
কংগ্রেসে যোগদান করেন। এই বৎসরে তিনি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন।
১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে মতাদর্শগত বিরোধের কারণে তিনি কংগ্রেস থেকে নিজেকে প্রত্যাহার
করে নেন। এরপর তিনি মধ্যপন্থী হিসেবে হিন্দু-মুসলিম উভয় পক্ষকে একীকরণের জন্য
উদ্যোগী হন।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নাইট উপাধি লাভ করেন এবং বাংলায় তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী
হিসেবে ১৯২১ থেকে ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কাজ করে।
ঊনবিংশ শতকে রাজা রামমোহন রায়ের নির্দেশিত সমাজ-ধর্ম বিষয়ক পুণর্জাগরণের
আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে বিশেষভাবে সচেষ্ট ছিলেন। এছাড়া তিনি বিধবা বিবাহ,
বাল্যবিবাহ বিরোধী আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই আগস্ট, ৭৭ বৎসর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।