সিরাজুল ইসলাম
(১৯৩০-?)
গীতিকার ও সুরকার।

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ২রা সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানার রসুলপুর গকুলচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

শৈশব থেকে তিনি গানের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন। সেই সূত্রে তিনি শুনে শুনে গান শিখেছেন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রথাগত সংগীতে তালিম নেওয়া শুরু করেন, তাঁর পরিচিত সঙ্গীত শিক্ষকের কাছে। এই সময় তিনি নিজে গান লিখে সুরারোপ করা শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যে তিনি গীতিকার ও সুরকার হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন। 
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান রেডিওর ঢাকাতে গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় টেলিভিশন কেন্দ্র স্থাপিত হলে তিনি সেখানেও গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এই সময় তিনি হিজ মাস্টার ভয়েজ রেকর্ড কোম্পানির তাঁর লেখা এবং সুরকরা গানের রেকর্ড প্রকাশ করে। তৎকালীন মাহেন ও মোহাম্মদী, দিলরুবা, পাকিস্তানি খবর, পাক জমহুরিয়াত, দৈনিক আজাদ, ইত্তেফাক, মিল্লাত, সংবাদ, সৈনিক, পূর্বদেশ, কৃষিকথা, বেতারবাংলা, শুকতারা, দিনকাল, যুগান্তরসহ বহু পত্রপত্রিকায় তার লেখা কবিতা ও গান প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর বেশ কিছু আধুনিক, দেশাত্মবোধক, মারফতি, মুর্শিদি, মরমী গানসহ কয়েকশ’ গান বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের ডিস্কে রেকর্ড করা রয়েছে। তাঁর লিখিত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো
আল্লাহু আল্লাহু তুমি জাল্লে জালালু, নবী মোর পরশমণি নবী মোর সোনার খনি, মন ভোমরা মজলিনা তুই রসুল নামের বসে, এখনও সময় আছে আল্লাহ নবীর নাম লও, হলুদিয়া পাখি সোনারই বরণ পাখিটি ছাড়িল কে, বলে দাও মাটির পৃথিবী কোথা শান্তি আমার জীবনে, কোকিল ডাকিসনারে আর, এলো বসন্তের বাহার, কে যাও তুমি ভাটির দেশে ও বিদেশি নাইয়া, এই যে দুনিয়া কিসেরও লাগিয়া প্রভৃতি জনপ্রিয় গানের তিনি ছিলেন গীতিকার।

সেকালের সকল জনপ্রিয় শিল্পী তাঁর গান গেয়েছেন। শিল্পী তালিকায় আছেনসরদার আলাউদ্দিন, আবদুল আলীম, ফেরদৌসী রহমান, মাহমুদুন নবী, ফরিদা ইয়াসমীন, খন্দকার ফারুক আহমেদ, খুরশিদ আলম, সাবিনা ইয়াসমীন, শাহনাজ রহমাতুল্লাহ, মোহাম্মদ আবদুল জব্বার, ফওজিয়া খান, বশির আহমেদ, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, ইন্দ্রোমোহন রাজবংশী, নাদিরা বেগম, রওশানারা চৌধুরী, সুবির নন্দী ও আবদুর রউফসহ খ্যাতনামা কণ্ঠশিল্পীরা।

এছাড়া কর্মজীবনে কবি সিরাজুল ইসলাম কয়েকটি প্রাইভেট ফার্মে সামান্য বেতনে হিসাবরক্ষকের কাজ করতেন। নিজের সঞ্চিত কোনো অর্থ ছিল না। যা ছিল নিজ বাড়িতে বইবাগান নামে একটি পাঠাগারে নিজের সব সম্পদ ও সম্পত্তি দান করে গেছেন।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে কেরানীগঞ্জের রক্তারুণ শিল্পীগোষ্ঠী তাকে সংবর্ধনা পদক দিয়েছে।
১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সিরাত মিশনের বিশেষ পুরস্কার ও সনদপত্র লাভ করেছেন। একই বছরে বাংলাদেশ কল্যাণ সংস্থারও পুরস্কার এবং সনদ পেয়েছেন।

কবি সিরাজুল ইসলাম ছিলেন বাংলা একাডেমি এবং কেরানীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য।


সূত্র :
বাংলাদেশের ইতিহাস (আদিপর্ব)/রমেশচন্দ্র মজুমদার।
ভারতের ইতিহাস । অতুলচন্দ্র রায়, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়।