শরৎচন্দ্র পণ্ডিত, দাদাঠাকুর
(১৮৮১ -১৯৬৮) খ্রিষ্টাব্দ)
কথাশিল্পী ও সাংবাদিক। পাঠক সমাজে দাদাঠাকুর নামে সর্বাধিক পরিচি ছিলেন

১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল (রবিবার ১
বৈশাখ ১২৮৮) জন্মগ্রহণ করেননির্মলরঞ্জন মিত্র তাঁর 'সেরা মানুষ দাদাঠাকুর'  রচনায় [রূপা অ্যাণ্ড কোম্পানী, কলকাতা, ১৯৫১, পৃষ্ঠা ২৬] দাদাঠাকুরে পূর্ব-পুরুষের বংশের যে পরিচয় দিয়েছেন,
‌'জেলা বীরভূম রামপুরহাট মহকুমার নলহাটি থানার এলাকায় ধর্মপুর নামে একটি পল্লীগ্রাম আছে৷ ধর্মপুর কাশিমবাজারের দানশীলা রাণী আন্নাকালী দেবীর মহালের অন্তর্গত। রাণীমা উক্ত ধর্মপুরের "পণ্ডিত" উপাধিধারী রাঢ়ীশ্রেণী ব্রাহ্মণ বংশের এক গৃহস্থকে গ্রামখানি পত্তনী বন্দোবস্ত দেন।...'

পারিবারিক বিবাদের ফলে শরচ্চন্দ্রের পিতামহ ঈশানচন্দ্র পণ্ডিত ভিটেমাটি ত্যাগ করে মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর মহকুমার দফরপুরে এসে বসবাস শুরু করেন। এই গ্রামই ছিল দাদাঠকুরের পৈতৃক বাসস্থান। তাঁর জন্ম হয়েছিল বীরভূম জেলার নলহাটি থানার অন্তর্গত ধরমপুরে গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে সেখান থেকে মাতুলালয় সিমলাদ্দি কিছুদিন থাকেন। পিতার নাম হরিলাল পণ্ডিত। মায়ের নাম তারা সুন্দরী।

শৈশবে তাঁর পিতামাতার মৃত্যু হয়। এরপর তিনি প্রতিপালিত হন, তাঁর চাচা রসিকলাল পণ্ডিতের কাছে। তিনি জঙ্গিপুর হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে বর্ধমান রাজ কলেজে এফ.এ. ক্লাশে ভর্তি হন। অর্থের অভাবে তিনি এফ.এ পড়া শেষ করতে পারেন নি।

১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি পরে তিনি ৪৬টাকায় দফরপুর বাড়িতে একটি হস্তচালিত ছাপাখানা স্থাপন করেন। প্রথম জীবনে এই ছাপাখানাটিই ছিল  তাঁর উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন। এই ছাপাখানার নাম দিয়েছিলেন 'পণ্ডিত প্রেস‌'। এই সময় তিনি বাস করতেন। এই ছাপাখানায় তিনি ছিলেন একাধারে কম্পো্জিটার, মুদ্রণ-সংশোধক। ছাপার ক্ষেত্রে তাঁকে সাহায্য করতেন তাঁর স্ত্রী। এ বিষয় নলিনীকান্ত সরকার তাঁর দাদাঠাকুর গ্রন্থে দাদাঠাকুরের জবানিতে লিখেছেন-

‌'আমার ছাপাখানার আমিই প্রোপাইটর, আমি কম্পোজিটর, আমি প্রুফ রিডার, আর আমিই ইঙ্ক-ম্যান। কেবল প্রেস-ম্যান আমি নই। সেটি ম্যান নয় - উওম্যান অর্থাৎ আমার অর্ধাঙ্গিনী। ছাপাখানার কাজে ব্রাহ্মণী আমাকে সাহায্য করেন, স্বামী-স্ত্রীতে আমরা ছাপাখানা চালাই।'
তিনি ১১ বছরের বালিকা প্রভাবতী দেবীকে বিবাহ করেছিলেন। কিছুদিন পরে তিনি সস্ত্রীক চলে আসেন জঙ্গীপুরে। এখানে তাঁর প্রেসের কাজ শুরু করেন নতুনভাবে শুরু করেন।

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি (শনিবার ৬ মাঘ ১৩২৯) রঘুনাথগঞ্জের এই ছাপাখানা থেকেই তাঁর সম্পাদিত ‘বিদূষক’ নামক সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। এই ছাপাখানা থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল ‌'জঙ্গীপুরে সংবাদ' নামক পত্রিকা। এই পত্রিকার সংখ্যাগুলো প্রকাশিত হতো প্রথম হর্ষ, দ্বিতীয় হর্ষ ইত্যাদি নামে।

১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে (১৩৩২ বঙ্গাব্দ)) প্রকাশিত হয়েছিল 'বোতল পুরাণ' নামক পত্রিকা। পত্রিকার প্রচ্ছদ ও নামপত্রে বোতল পুরাণ-এর তলায় লেখা ছিল: ভেণ্ডার— শ্রীশরচ্চন্দ্র পণ্ডিত।

তাঁর সংসারে আটটি সন্তান যার মধ্যে – চারটি পুত্র ও চারটি কন্যা ছিল। পুত্রদের মধ্যে সত্যেন্দ্র কুমার ও বিমল কুমার শৈশবে মারা যায়। তার জীবিত পুত্র ও কন্যাগণ হলেন – বিনয় কুমার , অনিল কুমার, ইন্দুমতি, বিন্দুবাসিনী, রেনুকা ও কণিকা।

তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর জীবনের কাহিনী নিয়ে গঠিত একটি বাংলা চলচ্চিত্রের নাম-ভূমিকায় শিল্পী ছবি বিশ্বাস রাষ্ট্রপতির পুরস্কার পান। কিন্তু ‘দাদাঠাকুর’ পুরস্কৃত হন নি।