সুচিত্রা মিত্র
১৯২৪- ১৯১১
উপমহাদেশের প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী।

১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর
ঝাড়খণ্ডের ডিহিরী জংশন লাইনে শালবন ঘেরা গুঝাণ্টি নামে একটি রেলস্টেশনের কাছে, ট্রেনের কামরায় জন্মগ্রহণ করেন  তাঁদের পৈত্রিক নিবাস ছিল উত্তর কলকাতার হাতিবাগান অঞ্চলে। তাঁর পিতার নাম সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়। মায়ের নাম সুবর্ণলতা দেবী। ইনি ছিলেন পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান।

ইনি কলকাতার বেথুন কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন। এখানে পড়ার সময় গানের চর্চা শুরু হয় দুই শিক্ষক অমিতা সেন এবং অনাদিকুমার দস্তিদারের কাছে। পংকজ মল্লিকের গান শুনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ জন্মে। 

ছেলেবেলায় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাৎ সহচর্য লাভ করেছিলেন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে ক্লাস টেন-এ পড়ার সময় শান্তিনিকেতনের সংগীত ভবন থেকে বৃত্তি লাভ করেছিলেন। ১৯৪২-এ ম্যাট্রিক পরীক্ষা না দিয়েই তিনি শান্তিনিকেতন চলে যান। এখানে এসে তিনি ইন্দিরাদেবী চৌধুরানী, শান্তিদেব ঘোষ, শৈলজারঞ্জন মজুমদারের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাঠ নেন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসাবে প্রাইভেটে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেন। শান্তিনিকেতন থেকে ডিপ্লোমা লাভ করার পর, ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় ফিরে আসেন। এই বৎসরে তিনি  London Tagore Hymn Society থেকে Tagore Hymn Prize পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ২১ বছর বয়সে তাঁর প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড প্রকাশিত হয়।

১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলা ভাষা নিয়ে এমএ পাশ করেন।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ মে-তে তিনি ধ্রুব মিত্রের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জুন তাঁদের একমাত্র পুত্র সন্তান কুণাল মিত্রের জন্ম হয়। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।

শান্তিনিকেতনে তিনি কণ্ঠ সঙ্গীতের পাশাপাশি সেতার, এস্রাজ ও তবলা শেখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি কণ্ঠসংগীতই বেছে নেন। তিনি ধ্রুপদী সংগীতের শিক্ষাগ্রহণ করেন ভি ভি ওয়াঝেলকরের কাছে। এ সময় কিছুদিন (প্রায় দু’বছর) নাচ শেখার চেষ্টা করেছিলেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে নির্মিত উমাপ্রসাদ মৈত্রের জয় বাংলা এবং মৃণাল সেনের পদাতিক'-এ অভিনয় করেছেন। এছাড়াও, বিষ্ণু পাল চৌধুরীর টেলিফিল্ম আমার নাম বকুল-এর একটি পর্বে তিনি অভিনয় করেন।  পরিণত বয়সে ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত দহন ছবিতে অভিনয় করেন। দীর্ঘদিন তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন-এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

বেশ কয়েকটি নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো-  মুক্তধারা, বিসর্জন, তপতী, নটীর পুজা, মায়ার খেলা, চিরকুমার সভা ও নীলদর্পণ

তিনি 'রবিতীর্থ' নামে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার উপযোগী একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এরই পাশাপাশি তিনি বহু রবীন্দ্রসঙ্গীতে কণ্ঠদান করেন। এবং তাঁর জীবদ্দশাতেই তিনি এক কিম্বদন্তী শিল্পী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তাঁর অসাধারণ সঙ্গীতশৈলী এবং প্রজ্ঞার জন্য, তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন।

১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লী থেকে প্রচারিত আকাশবাণীর জাতীয় অনুষ্ঠানে, তিনি রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন। আকাশবাণীতে জওহরলাল নেহেরুকে কটাক্ষ করে বাল্মীকি প্রতিভা-য় গান গাওয়ার অভিযোগে তাঁকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ছ'বছর তিনি আকাশবাণীতে গান করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন।

১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জানুয়ারি, সোমবার  তারিখে দুপুরে তিনি তাঁর দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাটের বাসভবনে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

সম্মাননা
১৯৪৫: লন্ডন টেগোর হিম সোসাইটি প্রদত্ত টেগোর হিম প্রাইজ
১৯৫০: নিখিল বঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনে স্বর্ণপদক
১৯৭৪: ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মশ্রী সম্মান
১৯৭৯: বাংলা চলচ্চিত্র পুরস্কার সমিতি প্রদত্ত পঙ্কজ মল্লিক স্মৃতি পুরস্কার
১৯৮০: এইচএমভি প্রদত্ত গোল্ডেন ডিস্ক অ্যাওয়ার্ড
১৯৮৫: ভারত সরকার প্রদত্ত সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার
১৯৮৫: এশিয়ান পেইন্টস প্রদত্ত শিরোমণি পুরস্কার
১৯৯০: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সাম্মানিক ডি.লিট.
১৯৯৭: বিশ্বভারতী প্রদত্ত দেশিকোত্তম
১৯৯৭: পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত আলাউদ্দিন পুরস্কার
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সাম্মানিক ডি.লিট.
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সাম্মানিক ডি.লিট.

সুচিত্রা মিত্রের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিকা

গান রেকর্ড নম্বর তারিখ সহশিল্পী
মরণরে তুঁহু মম শ্যাম সমান
হৃদয়ের এ কুল ও কুল দু’কুল ভেসে যায়
N27564 ডিসেম্বর, ১৯৪৫  
আমার কী বেদনা সে কি জান
আরো কিছুক্ষণ না হয় বসিয়ো
N27630 সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬  
আর রেখো না আঁধারে আমায়
না চাহিলে যারে পাওয়া যায়
N27673 মে, ১৯৪৭  
তোর আপনজনে ছাড়বে তোরে
দেশ দেশ নন্দিত করি
N27736 অক্টোবর, ১৯৪৭

জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, দেবব্রত বিশ্বাস,
সুপ্রীতি ঘোষ ও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়

পুব-হাওয়াতে দেয় দোলা
বাদল মেঘে মাদল বাজে
N27737 অক্টোবর, ১৯৪৭  
সার্থক জনম আমার
আমার সোনার বাংলা
N27790 ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮  
জীবন যখন শুকায়ে যায়
যদি তোর ডাক শুনে কেউ
N27823 এপ্রিল, ১৯৪৮  
ওগো কিশোর, আজি তোমার দ্বারে GE7230 মে, ১৯৪৮ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস,
গীতা নাহা, চিত্রা মজুমদার,
ও অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়
জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে N27829 মে, ১৯৪৮ জগন্ময় মিত্র, দ্বিজেন চৌধুরী,
দেবব্রত বিশ্বাস, নীহারবিন্দু সেন,
কনক বিশ্বাস, সুপ্রীতি ঘোষ,
ও গীতা নাহা
নৃত্যের তালে তালে N27906 সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮  
আমি কী গান গাব যে
অশ্রুভরা বেদনা
N27983 ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৯  
নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে
আজি গোধূলি লগনে এই বাদল গগনে
N31026 মে, ১৯৪৯  
কোন্‌ খেপা শ্রাবণ ছুটে এল
আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়
N31261 সেপ্টেম্বর, ১৯৫০  
কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ
জানি গো, দিন যাবে
N31334 মে, ১৯৫১  
যে কেবল পালিয়ে বেড়ায়
গানগুলি মোর শৈবালেরই দল
N31350 জুলাই, ১৯৫১  
এই শরৎ-আলোর কমলবনে
দেখো দেখো, শুকতারা
N31387 জুলাই, ১৯৫১  
(ও নিঠুর, আরো কি বাণ) তোমার তূণে
আমার প্রাণের মাঝে
N82507 মে, ১৯৫২  
মেঘের কোলে কোলে যায় রে
আমার মুক্তি আলোয় আলোয়
N82528 সেপ্টেম্বর, ১৯৫২  
দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে
এবার দুঃখ আমার অসীম পাথার পার হল
N82562 মে, ১৯৫৩  
যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক
ছি ছি, চোখের জলে
N82578 সেপ্টেম্বর, ১৯৫৩  
অরূপবীণা রূপের আড়ালে
বিশ্বজোড়া ফাঁদ পেতেছ
N82616 মে, ১৯৫৪  
কেন রে এই দুয়ারটুকু পার হতে সংশয়
আজ নবীন মেঘের সুর লেগেছে
N82627 মে, ১৯৫৪  
দুঃখ যদি না পাবে তো
আমারে বাঁধবি তোরা
N82633 জানুয়ারি, ১৯৫৫  
তুমি তো সেই যাবেই চলে
আমার জ্বলেনি আলো অন্ধকারে
N82650 মে, ১৯৫৫  
সখী, ওই বুঝি বাঁশি বাজে
সকল জনম ভরে ও মোর দরদীয়া
N82671 অক্টোবর, ১৯৫৫  
ওহে জীবনবল্লভ N82690 ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬  
পথে যেতে ডেকেছিলে
হৃদয় আমার প্রকাশ হল
N82698 এপ্রিল, ১৯৫৬  
অবেলায় যদি এসেছ আমার বনে
কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার
N82714 সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬  
মরি লো মরি, আমায় বাঁশিতে ডেকেছে কে
আমি যে আর সইতে পারি নে
N82741 ১৯৫৭  
আমি যে গান গাই
যদি প্রেম দিলে না প্রাণে
N82780 এপ্রিল, ১৯৫৮  
সকালবেলার কুঁড়ি আমার
মেঘের পরে মেঘ জমেছে
N82780 অগস্ট, ১৯৫৮  
দেওয়া নেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া
তুমি কোন ভাঙনের পথে এলে
N82853 নভেম্বর, ১৯৫৯  
তোমার মনের একটি কথা
দিনের বেলা বাঁশি তোমার
N82865 মার্চ, ১৯৬০  
পূর্বাচলের পানে তাকাই
ভেবেছিলেম আসবে ফিরে
N82906 ডিসেম্বর, ১৯৬০  
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি
পুরানো জানিয়া চেয়ো না
তুমি কোন্‌ ভাঙনের পথে এলে
7EPE1005 মার্চ, ১৯৬১  
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি N82923 এপ্রিল, ১৯৬১  
প্রভু,আজি তোমার দক্ষিণ হাত
প্রভু, বলো বলো কবে
N82953 নভেম্বর, ১৯৬১  
আজ আকাশের মনের কথা
আমার আপন গান
N82966 মার্চ, ১৯৬২  
চণ্ডালিকা গীতিনাট্যের সংগীতাংশ ECLP 2273
(পূর্বতন সেট রেকর্ড, জুলাই, ১৯৪৯
N31053-58/N82662-67)
এপ্রিল, ১৯৬২  
কত যে তুমি মনোহর
এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে
N82995 নভেম্বর, ১৯৬২  
যদি তোর ডাক শুনে কেউ
সার্থক জনম আমার
ECLP 2280 (সংস অফ প্যাট্রিয়টিজম) জানুয়ারি, ১৯৬৩  
ফাগুনের পূর্ণিমা এল
দেখা না-দেখায় মেশা
N83009 মার্চ, ১৯৬৩  
চিত্রাঙ্গদা গীতিনাট্যের সংগীতাংশ ECLP 2272(পূর্বতন সেট রেকর্ড, অগস্ট, ১৯৫৮
N82680-86/7EPE 53-55)
মার্চ, ১৯৬৩  
জীবন যখন শুকায়ে যায়
দুঃখের তিমির যদি জ্বলে
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে
কোন্‌ আলোতে প্রাণের প্রদীপ
7EPE 1009 মার্চ, ১৯৬৩  
তবু মনে রেখো
আমার মাঝে তোমারই মায়া
N83059 মার্চ, ১৯৬৪  
দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে 7EPE 1017 মার্চ, ১৯৬৪  
আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে
আমার মুক্তি আলোয় আলোয়
কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার
আজি গোধূলি লগনে
মরি লো মরি
আজ তারায় তারায় দীপ্তশিখার
ECLP 2303 অগস্ট, ১৯৬৪  
লিখন তোমার ধূলায় হয়েছে ধূলি
সখী, আমারি দুয়ারে কেন
N83113 ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৫  
আমার নয়ন-ভুলানো এলে
হিমের রাতে ওই গগনের
ECLP 2311
(সিজনাল সংস অফ টেগোর)
এপ্রিল, ১৯৬৫  
আসা-যাওয়ার মাঝখানে
আরো, আরো প্রভু
7EPE 1025 মার্চ, ১৯৬৬  
শাপমোচন গীতিনাট্যের সংগীতাংশ EALP 1303 মে, ১৯৬৬  

সূত্র