১৯০৯ – ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ
		শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী  এবং সঙ্গীতগুরু। 
		
		১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই নভেম্বর    ব্রিটিশ ভারতের হুগলি জেলার পাণ্ডুয়া স্টেশনের কাছে সরাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় ও মাতা প্রভাবতী দেবী। 
পিতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় মহাভারতের ভীষ্মপর্ব পাঠের সূত্রে তাঁর নাম রেখেছিলেন 
ভীষ্ম। তাঁর ডাক নাম ছিল কালো।
তাঁর পিতার কর্মস্থল ছিল কলকাতা। বাসস্থান ছিল উত্তর কলকাতার বলরাম দে স্ট্রিটে। 
শৈশবেই তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলে। এই স্কুলে সেকেন্ড ক্লাস 
পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর, তাঁকে ভর্তি করা হয় ক্যালকাটা ট্রেনিং একাডেমিতে। এই 
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তাঁকে ভর্তি করা 
হয় বিদ্যাসাগর কলেজে। এই কলেজের আই এ পরীক্ষার আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তিনি 
প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া করেন নি।
পিতামাতার উৎসাহে তিনি নগেন দত্তের কাছে গানের প্রাথমিক পাঠ নেন। তাঁর কণ্ঠে গান 
শুনে ওস্তাদ বাদল খাঁ তাঁকে শিয্য হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯২০ 
খ্রিষ্টাব্দে মাত্র এগারো বছর বয়সে ভীষ্মদেব কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট হলে একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন। 
সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁর গান শুনে পুষ্পস্তবক দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন।  এরপরে অন্য একটি অনুষ্ঠানে 
রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামীও তাঁর গান শুনে আশীর্বাদ করেন। কলেজে লেখাপড়ার সময় তিনি 
আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় খেয়াল, টপ্পা ও ঠুংরি অংশগ্রহণ করেন এবং তিনি বিভাগেই তিনি 
প্রথম স্থান অধিকার করে বেষ্টম্যান পুরস্কার লাভ করেন।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে ওস্তাদ বাদল খাঁর 
তাঁর শুনে মুগ্ধ হন, তাঁকে শিষ্য করে নেন। এই ওস্তাদের কাছে শিক্ষালাভের পর তিনি আগ্রা ঘরানার ওস্তাদ ফৈ্য়াজ খাঁর কাছে 
নাড়া বেঁধে গান শেখা শুরু করেন। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে তাঁর 
গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। রেকর্ড নম্বর পি ৭৪০২। গান দুটি ছিল নিধুবাবুর রচিত টপ্পা। গান দুটি ছিল- 
	-  কি করে লোকের কথায় (মিশ্র খাম্বাজ))
-  এত কি চাতুরী সহে প্রাণ (কাফি সিন্ধু)
১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মেগাফোন কোম্পানির সঙ্গীত পরিচালক ও প্রশিক্ষকের পদে যোগ দেন। সেই বছরেই মেগাফোন কোম্পানি থেকে তাঁর গাওয়া দু’টি খেয়াল প্রকাশিত হয়। এর 
কিছুদিনের মধ্যেই তিনি এলাহাবাদ, দিল্লি, লখনউ, বেনারস, কানপুরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য ভীষ্মদেব আমন্ত্রণ পেতে থাকেন।
১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে অশ্বিনীকুমার মুখোপাধ্যায়ের কন্যা 
দীপ্তিকণাকে বিবাহ করেন। এই বছরেই বেনারসে অনুষ্ঠিত প্ৰথম অল ইণ্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে আমন্ত্রিত 
শিল্পী হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
১৯৩৬  খ্রিষ্টাব্দে  মেগাফোন কোম্পানির কর্ণধার জে এন ঘোষ এবং কবি অজয় ভট্টাচার্যের অনুরোধে ভীষ্মদেব বাংলা গান রেকর্ড করতে রাজি হয়েছিলেন। প্রথম গান দু'টি ছিল 'ফুলের দিন হল যে অবসান' এবং 'শেষের গানটি ছিল তোমার লাগি'। ভীষ্মদেবের গাওয়া অন্যতম কালজয়ী বাংলা গান 'যদি মনে পড়ে সে দিনের কথা'। 
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ফিল্ম কর্পোরেশনে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। 
তিনি ছয়টি বাংলা ও ছয়টি হিন্দি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন। ছায়াদেবীকে অভিনয় জগতে এনেছিলেন ভীষ্মদেব। গলায় উপযুক্ত সুর না থাকায় ছায়াদেবীকে নিউ থিয়েটার্সে নায়িকার ভূমিকায় উপযুক্ত মনে করেননি রাইচাঁদ বড়াল। সেই সময়ে ফিল্ম কর্পোরেশনে ছিলেন ভীষ্মদেব। 
পরে তিনি ছায়াদেবীকে গান শিখিয়ে 
ছায়াদেবীকে তৈরি করে সন। এই ছিবিটি ছিল ‘রিক্তা’। সেই ছবিতেই ভীষ্মদেব প্রথম সিনেমার গানে ভারতীয় সুরকার হিসেবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দুই ধারার সুরের প্রয়োগ করেন। গানটি ছিল ‘আরও একটু সরে বসতে পারো’। 
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পণ্ডিচেরী অরবিন্দ আশ্রমে চলে যান।
১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা এসে ছয় মাস কাটিয়ে আবার পণ্ডিচেরীতে ফিরে যান। 
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আবার কলকতায় ফিরে আসেন। 
১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই আগষ্ট তিনি কলকাতায় মৃত্যবরণ করেন।
সেকালের বহু স্বনামধন্য শিল্পীদের তিনি সঙ্গীতগুরু ছিলেন। এঁদের 
মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন-যে কাননদেবী, কৃষ্ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, ছায়াদেবী প্রকাশকালী ঘোষাল, বেগম আখতার, ভবানী দাস, যূথিকা রায়,  শচীন মুখোপাধ্যায়, শচীনদেব বর্মণ, শ্যামানন্দ সিংহ, সুরেশ চক্রবর্তী, হিমাংশু 
রায়
প্রমুখ। 
সম্মাননা
	- ডক্টর অফ লিটারেচার। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। ৯ 
	মে, ১৯৭২
-  সম্মাননা। প্রাচীন কলমান্দির (চণ্ডীগড়)। ৮ 
	ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬
- সম্মাননা। পশ্চিমবঙ্গ নজরুল একাডেমি। ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৭
- সম্মাননা। সুরদাস সঙ্গীত সম্মেলন। ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪
- সম্মাননা। যাদবপুর সঙ্গীত বিদ্যালয়। ১১নভেম্বর ১৯৬১
 
		সূত্র :
		
	 
	ভীষ্মদেবের  জীবন ও সঙ্গীত। প্রশান্ত দাঁ। সমকাল প্রকাশনী। কলকাতা। ১ 
	কার্তিক, ১৩৮৬।