ভুসূকুপা

অন্যতম প্রাচীন বাঙালি কবি। মহাযান বৌদ্ধমতে শান্তিদেবের অপর নাম ভুসুকু। ইনি সৌরাষ্ট্রের রাজপুত্র ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর ইনি সিংহাসনের মায়া ত্যাগ করে নালন্দাতে চেল আসেন। এখানে তিনি বৌদ্ধাচর্য জয়দেবের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ইনি নিজের কুটিরে সর্বক্ষণ গোপনে অধ্যায়ন করতেন। এই কারণে অন্যান্য ভিক্ষুরা মনে করতেন যে, ইনি সব সময় আহার এবং নিদ্রায় সময় কাটান। এই কারণে ইনি ভিক্ষুরা ভুসুকু (ভু=ভক্ষণ, সু=সুপ্তি, কু=কুটির) নামে ডাকতেন। 

নালন্দা ত্যাগ করে তিনি কিছুদিন দক্ষিণদেশের শ্রীদক্ষিণমন্দিরে বাস করেন। এরপর ইনি বিদ্রোহী প্রজাদের হাত থেকে অরিবিশনের রাজাকে রক্ষা করেন। কথিত আছে তাঁর কাছে একটি কোষবদ্ধ কাঠের তরবারি ছিল। একবার রাজা এই তরবারি দেখার ইচ্ছা করলে- ইনি তরবারি রাজার সামনে তুলে ধরেন। এই তরবারির ঔজ্জ্বল্যে রাজার একটি চোখ অন্ধ হয়ে যায়। এরপর ইনি কলিঙ্গদেশে যান। সেখানে শ্রীপর্বতে বসবাসকালে খতবিহার রাজার অনুরোধে তিনি গুরু শঙ্করদেবের ইন্দ্রজাল ব্যর্থ করে দেন। এই কারণে ওই স্থানের নাম পরবর্তী সময়ে জিততীর্থ নামে খ্যাত হয়।

হরপ্রসাদশাস্ত্রী শান্তিদেব ভুসুকু এবং কবি ভুসুকু একই ব্যক্তি কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে- ভুসুকু বাঙালি ছিলেন। ভুসুকুর পদ থেকে পাওয়া যায়-
                              আজি ভুসু বঙ্গালী ভইলী
                              ইনঅ ঘরিণী চণ্ডালী লেলী

ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এই মতকে সমর্থন করেন নি। তাঁর মতে তিনি ভিনদেশী হয়েও বাংলাতে কবিতা লিখেছিলেন।

এঁর রচিত গ্রন্থাবলি :

বোধিচর্যাবতার
শিক্ষাসমুচ্চয়
সূত্রসমুচ্চয়

এর রচিত ৮টি পদ চর্যাগীতিতে পাওয়া যায়। এই পদগুলো হলো-

পদ সংখ্যা ৬। কাহেরে ঘিনি মেলি আছহুঁ কীস [তথ্য]
পদসংখ্যা ২১। নিসিত আন্ধারী মুসার চারা [তথ্য]
পদসংখ্যা ২৩। জই তুম্‌হে ভুসূকু অহেরি [তথ্য]
পদসংখ্যা ২৭। আধরাতি ভয় কমল বিকসিউ [তথ্য]
পদসংখ্যা ৩০। করুণা মেহ নিরস্তর ফরিআ [তথ্য]
পদসংখ্যা ৪১। আই এ অণু অনা এ জগ রে [তথ্য]
পদসংখ্যা ৪৩।
সহজ মহাতরু ফরিঅ এ [তথ্য]
পদসংখ্যা ৪৯।
বাজ ণাব পাড়ী পউআঁ খালেঁ বাহিউ  [তথ্য]


তথ্যসূত্র :
চর্যাগীতিকা/মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা সম্পাদিত। ষ্টুডেন্ট ওয়েজ। অগ্রহায়ণ ১৪০২।
চর্যাগীতি কোষ/নীলরতন সেন। সাহিত্যলোক।  জানুয়ারি ১৯৭৮।
চর্যাগীতি পরিক্রমা/ড. নির্মল সেন। দে'জ পাবলিশিং, জানুয়ারি ২০০৫।
চর্যাগীতি প্রসঙ্গ/সৈয়দ আলী আহসান। মৌলি প্রকাশনা, জুন ২০০৩।
বাংলাভাষার ইতিবৃত্ত/ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। মাওলা ব্রাদ্রার্স, মার্চ ২০০০।
ভাষার ইতিবৃত্ত। আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড। নভেম্বর ১৯৯৪।
হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা/হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৩২৩)
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা-সংগ্রহ (দ্বিতীয় খণ্ড)। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, নভেম্বর ২০০০/বি


তথ্যসূত্র :
চর্যাগীতিকা/মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা সম্পাদিত। ষ্টুডেন্ট ওয়েজ। অগ্রহায়ণ ১৪০২।
চর্যাগীতি কোষ/নীলরতন সেন। সাহিত্যলোক।  জানুয়ারি ১৯৭৮।
চর্যাগীতি পরিক্রমা/ড. নির্মল সেন। দে'জ পাবলিশিং, জানুয়ারি ২০০৫।
চর্যাগীতি প্রসঙ্গ/সৈয়দ আলী আহসান। মৌলি প্রকাশনা, জুন ২০০৩।
বাংলাভাষার ইতিবৃত্ত/ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। মাওলা ব্রাদ্রার্স, মার্চ ২০০০।
হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা/হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৩২৩)
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা-সংগ্রহ (দ্বিতীয় খণ্ড)। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, নভেম্বর ২০০০