জাহেদুর রহিম
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল পাবনা জেলার
শাহজাদপুরে।
১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ
করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ফিলিপস কোম্পানীতে চাকরী করলেও সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ
তাঁকে স্থায়ীভাবে সঙ্গীতাঙ্গনে কাজ করার প্রেরণা দেয়।
তাঁর সঙ্গীতশিক্ষা শুরু হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী আতিকুল ইসলাম এর কাছে। পরবর্তীতে
তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বুলবুল
ললিতকলা একাডেমী থেকে কৃতিত্বের সাথে সঙ্গীতের পাঠ সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি এই
একাডেমিতেই শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর অসাধারণ ভরাট গলা এবং সঙ্গীতে দক্ষতার
জন্য অল্প সময়ের ভিতরই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। সে সময়
তাঁর বন্ধু মহলে গানের জন্য হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বলতো।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রনাথের গানের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করলেও
তিনি বিভিন্ন জমায়েতে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, মিছিলে রবীন্দ্রনাথের গান গেয়েছেন
নির্ভয়ে, পাকিস্তান সরকারের হুমকি উপেক্ষা করে। সে সময়, রবীন্দ্রনাথের “আমার সোনার
বাংলা” -কে তিনি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় করে তোলেন। রবীন্দ্রনাথের গানের মধ্য দিয়ে
ষাটের দশকে বাঙালী জাতিকে উদবুদ্ধ করতে যারা সংগ্রাম করেছেন, তাদের মধ্যে জাহিদুর
রহিম-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জানুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)
জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে জয়ী আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই অনুষ্ঠান উপস্থিত জনতার সামনে জাহেদুর রহিম 'আমার
সোনার বাংলা' গানটি পরিবেশন করেন। ষাটের দশকের পুরোটা সময় তিনি চারণের মতো এ গানটি
গেয়েছেন প্রধানত ছাত্রদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। তিনি সে সময়ে ছাত্র ইউনিয়নের
কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের ঐতিহাসিক মোড়
পরিবর্তনের সময়ে এই জাহেদুর রহিমকেই বঙ্গবন্ধু আহ্বান জানান নির্বাচিত
জনপ্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠানে এ গানটি পরিবেশনের জন্য।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রথম ক্যাসেট
প্রকাশিত হয়।
ইতিমধ্যে তিনি বাফা ছেড়ে ছায়ানটে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেই সূত্রে তিনি
ছায়ানটের একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মীতে পরিণত হয়েছিলেন। ছায়ানট ও বুলবুল ললিতকলা
একাডেমী ছাড়াও তিনি শিক্ষকতা করেছেন অগ্নিবীণা, মূর্চ্ছনা, আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত
নিকেতন, নজরুল পরিষদের মত সাংস্কৃতিক সংগঠনে।
১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বেতারে সঙ্গীত প্রযোজক
হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তৎকালীন সামরিক সরকার তাঁকে দায়িত্ব পালনে
ইস্তফা দিতে বাধ্য করে।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুন মৃত্যুবরণ করেন।