বঙ্কিম রচনাবলী

ইন্দিরা
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

এই উপন্যাসটি প্রথম সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশিত হয়েছিল বঙ্গদর্শন পত্রিকার ১২৭৯ বঙ্গাব্দের চৈত্র সংখ্যায়। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছিল।


ষোড়শ পরিচ্ছেদ : খুন করিয়া ফাঁসি গেলাম

পুরুষকে দগ্ধ করিবার যে কোন উপায় বিধাতা স্ত্রীলোককে দিয়াছেন, সেই সকল উপায়ই অবলম্বন করিয়া আমি অষ্টাহ স্বামীকে জ্বালাতন করিলাম। আমি স্ত্রীলোক—কেমন করিয়া মুখ ফুটিয়া সে সকল কথা বলিব। আমি যদি আগুন জ্বালিতে না জানিতাম, তবে গত রাত্রিতে এত জ্বলিত না। কিন্তু কি প্রকারে আগুন জ্বালিলাম—কি প্রকারে ফুৎকার দিলাম—কি প্রকারে স্বামীর হৃদয় দগ্ধ করিলাম, লজ্জায় তাহার কিছুই বলিতে পারি না। যদি আমার কোন পাঠিকা নরহত্যার ব্রত গ্রহণ করিয়া থাকেন, এবং সফল হইয়া থাকেন, তবে তিনিই বুঝিবেন। যদি কোন পাঠক কখন এইরূপ নরঘাতিনীর হস্তে পড়িয়া থাকেন, তিনিই বুঝিবেন। বলিতে কি, স্ত্রীলোকই পৃথিবীর কণ্টক। আমাদের জাতি হইতে পৃথিবীর যত অনিষ্ট ঘটে, পুরুষ হইতে তত ঘটে না। সৌভাগ্য এই যে, এই নরঘাতিনী বিদ্যা সকল স্ত্রীলোকে জানে না, তাহা হইলে এত দিনে পৃথিবী নির্মনুষ্য হইত।

এই অষ্টাহ আমি সর্বদা স্বামীর কাছে কাছে থাকিতাম—আদর করিয়া কথা কহিতাম—নীরস কথা একটি কহিতাম না। হাসি, চাহনি, অঙ্গভঙ্গী—সে সকল ত ইতর স্ত্রীলোকের অস্ত্র। আমি প্রথম দিনে আদর করিয়া কথা কহিলাম—দ্বিতীয় দিনে অনুরাগ লক্ষণ দেখাইলাম—তৃতীয় দিনে তাঁহার ঘরকরনার কাজ করিতে আরম্ভ করিলাম; যাহাতে তাঁহার আহারের পারিপাট্য, শয়নের পারিপাট্য, স্নানের পারিপাট্য হয়, সর্বাংশে যাহাতে ভাল থাকেন, তাহাই করিতে আরম্ভ করিলাম—স্বহস্তে পাক করিতাম; খড়িকাটি পর্যন্ত স্বয়ং প্রস্তুত করিয়া রাখিতাম। তাঁর এতটুকু অসুখ দেখিলে সমস্ত রাত্রি জাগিয়া সেবা করিতাম।

এখন যুক্তকরে আপনাদের নিকট নিবেদন যে, আপনারা না মনে করেন যে, এসকলই কৃত্রিম। ইন্দিরার মনে এতটুকু গর্ব আছে যে, কেবল ভরণপোষণের লোভে, অথবা স্বামীর ধনে ধনেশ্বরী হইব, এই লোভে, সে এই সকল করিতে পারে না। স্বামী পাইব এই লোভে, কৃত্রিম প্রণয় প্রকাশ করিতে পারিতাম না; ইন্দ্রের ইন্দ্রাণী হইব, এমন লোভেও পারিতাম না। স্বামীকে মোহিত করিব বলিয়া হাসি চাহনির ঘটা ঘটাইতে পারি, কিন্তু স্বামীকে মোহিত করিব বলিয়া কৃত্রিম ভালবাসা ছড়াইতে পারি না। ভগবান সে মাটিতে ইন্দিরাকে গড়েন নাই। যে অভাগী একথাটা না বুঝিতে পারিবে,—যে নারকিণী আমায় বলিবে, “হাসি চাহনির ফাঁদ পাতিতে পার, খোঁপা খুলিয়া আবার বাঁধিতে পার, কথায় ছলে সুগন্ধি কুঞ্চিতালিকগুলি হতভাগ্য মিন্‌সের গালে ঠেকাইয়া তাকে রোমাঞ্চিত করিতে পার—আর পার না তার পাখানি তুলিয়া লইয়া টিপিয়া দিতে, কিম্বা হুঁকার ছিলিমটায় ফুঁ দিতে”!—যে হতভাগী আমাকে এমন কথা বলিবে, সে পোড়ারমুখী আমার এই জীবনবৃত্তান্ত যেন পড়ে না।

তা, তোমরা পাঁচরকমের পাঁচজন মেয়ে আছ, পুরুষ পাঠকদিগের কথা আমি ধরি না—তাহারা এ শাস্ত্রের কথা কি বুঝিবে—তোমাদের আসল কথাটা বুঝাইয়া বলি। ইনি আমার স্বামী—পতিসেবাতেই আমার আনন্দ—তাই,—কৃত্রিম নহে—সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত, আমি তাহা করিতেছিলাম। মনে মনে করিতেছিলাম যে, যদি আমাকে গ্রহণ নাই করেন, তবে আমার পক্ষে পৃথিবীর যে সার সুখ,--যাহা আর কখনও ঘটে নাই, আর কখনও ঘটিতে নাও পারে, তাহা অন্ততঃ এই কয় দিনের জন্য প্রাণ ভরিয়া ভোগ করিয়া লই। তাই প্রাণ ভরিয়া পতিসেবা করিতেছিলাম। ইহাতে কি পরিমাণে সুখী হইতেছিলাম, তা তোমরা কেহ বুঝিবে, কেহ বুঝিবে না।

পুরুষ পাঠককে দয়া করিয়া কেবল হাসি চাহনির তত্ত্বটা বুঝাইব। যে বুদ্ধি কেবল কলেজের পরীক্ষা দিলেই সীমাপ্রান্তে পৌঁছে, ওকালতিতে দশ টাকা আনিতে পারিলেই বিশ্ববিজয়িনী প্রতিভা বলিয়া স্বীকৃত হয়, যাহার অভাবই রাজদ্বারে সম্মানিত, সে বুদ্ধির ভিতর পতিভক্তিতত্ত্ব প্রবেশ করান যাইতে পারে না। যাহারা বলে বিধবার বিবাহ দাও, ধেড়ে মেয়ে নহিলে বিবাহ দিও না, মেয়েকে পুরুষ মানুষের মত নানা শাস্ত্রে পণ্ডিত কর, তাহারা পতিভক্তিতত্ত্ব বুঝিবে কি? তবে হাসি চাহনির তত্ত্বটা যে দয়া করিয়া বুঝাইব বলিয়াছি, তার কারণ, সেটা বড় মোটা কথা। যেমন মাহুত অঙ্কুশের দ্বারা হাতীকে বশ করে, কোচমান ঘোড়াকে চাবুকের দ্বারা বশ করে, রাখাল গোরুকে পাঁচনবাড়ির দ্বারা বশ করে, ইংরেজ যেমন চোখ রাঙ্গাইয়া বাবুর দল বশ করে, আমরা তেমনই হাসি চাহনিতে তোমাদের বশ করি। আমাদিগের পতিভক্তি আমাদের গুণ; আমাদিগকে যে হাসি চাহনির কদর্য কলঙ্কে কলঙ্কিত হইতে হয়, সে তোমাদের দোষ।

তোমরা বলিবে, এ অত্যন্ত অহঙ্কারের কথা। তা বটে—আমরাও মাটির কলসী, ফুলের ঘায়ে ফাটিয়া যাই। আমার এ অহঙ্কারের ফল হাতে হাতে পাইতেছিলাম। যে ঠাকুরটির অঙ্গ নাই, অথচ ধনুর্বাণ আছে,—মা বাপ, নাই। অথচ স্ত্রী আছে—ফুলের বাণ, অথচ তাহাতে পর্বতও বিদীর্ণ হয়; সেই দেবতা স্ত্রীজাতির গর্বখর্বকারী। আমি আপনার হাসি চাহনির ফাঁদে পরকে ধরিতে গিয়া পরকেও ধরিলাম, আপনিও ধরা পড়িলাম। আগুন ছড়াইতে গিয়া পরকেও পোড়াইলাম, আপনিও পুড়িলাম। হোলির দিনে, আবীর খেলার মত, পরকে রাঙ্গা করিতে গিয়া, আপনি অনুরাগে রাঙ্গা হইয়া গেলাম। আমি খুন করিতে গিয়া, আপনি ফাঁসি গেলাম। বলিয়াছি, তাঁহার রূপ মনোহর রূপ—তাতে আবার জানিয়াছি, যাঁর এ রূপরাশি, তিনি আমার সামগ্রী—

            তাহারই সোহাগে, আমি সোহাগিনী,
                রূপসী তাহারই রূপে।

তার পর এই আগুনের ছড়াছড়ি! আমি হাসিতে জানি, হাসির কি উতোর নাই? আমি চাহিতে জানি, চাহনির কি পাল্টা চাহনি নাই? আমার অধরোষ্ঠে দূর হইতে চুম্বনাকাঙ্ক্ষায় ফুলিয়া থাকে, ফুলের কুঁড়ি পাপড়ি খুলিয়া ফুটিয়া থাকে, তাহার প্রফুল্লরক্তপুষ্পতুল্য কোমল অধরোষ্ঠ কি তেমনি করিয়া, ফুটিয়া উঠিয়া, পাপড়ি খুলিয়া আমার দিকে ফিরিতে জানে না? আমি যদি তাঁর হাসিতে, তাঁর চাহনিতে, তাঁর চুম্বনাকাঙ্ক্ষায়, এতটুকু ইন্দ্রিয়াকাঙ্ক্ষার লক্ষণ দেখিতাম, তবে আমিই জয়ী হইতাম। তাহা নহে। সে হাসি, সে চাহনি, সে অধরোষ্ঠবিস্ফুরণে, কেবল স্নেহ— অপরিমিত ভালবাসা। কাজেই আমিই হারিলাম। হারিয়া স্বীকার করিলাম যে, ইহাই পৃথিবীর ষোল আনা সুখ। যে দেবতা, ইহার সঙ্গে দেহের সম্বন্ধ ঘটাইয়াছে, তাহার নিজের দেহ যে ছাই হইয়া গিয়াছে, খুব হইয়াছে।

পরীক্ষার কাল পূর্ণ হইয়া হইয়া আসিল, কিন্তু আমি তাঁহার ভালবাসার এমনই অধীন হইয়া পড়িয়াছিলাম যে, মনে মনে স্থির করিয়াছিলাম যে, পরীক্ষার কাল অতীত হইলে তিনি আমাকে মারিয়া তাড়াইয়া দিলেও যাইব না। পরিণামে যদি তিনি আমার পরিচয় পাইয়াও যদি আমাকে স্ত্রী বলিয়া গ্রহণ না করেন, গণিকার মতও যদি তাঁহার কাছে থাকিতে হয়, তাহাও থাকিব, স্বামীকে পাইলে, লোকলজ্জাকে ভয় করিব না। কিন্তু যদি কপালে তাও না ঘটে, এই ভয়ে অবসর পাইলেই কাঁদিতে বসিতাম।

কিন্তু ইহাও বুঝিলাম যে, প্রাণনাথের পক্ষচ্ছেদ হইয়াছে। আর উড়িবার শক্তি নাই। তাঁহার অনুরাগানলে অপরিমিত ঘৃতাহুতি পড়িতেছিল। তিনি এখন অনন্যকর্মা হইয়া কেবল আমার মুখপানে চাহিয়া থাকিতেন। আমি গৃহকর্ম করিতাম—তিনি বালকের মত আমার সঙ্গে সঙ্গে বেড়াইতেন। তাঁহার চিত্তের দুর্দমনীয় বেগ প্রতিপদে দেখিতে পাইতাম, অথচ আমার ইঙ্গিতমাত্রে স্থির হইতেন। কখন কখন আমার চরণস্পর্শ করিয়া রোদন করিতেন, বলিতেন, “আমি এ অষ্টাহ তোমার কথা পালন করিব—তুমি আমায় ত্যাগ করিয়া যাইও না।” ফলে আমি দেখিলাম যে, আমি তাঁহাকে ত্যাগ করিলে তাঁহার দশা বড় মন্দ হইবে।

পরীক্ষা ফাঁসিয়া গেল। অষ্টাহ অতীত হইলে, বিনা বাক্যব্যয়ে উভয়ে উভয়ের অধীন হইলাম। তিনি আমায় কুলটা বলিয়া জানিলেন। তাহাও সহ্য করিলাম। কিন্তু আমি যাই হই, হাতীর পায়ে শিকল পরাইয়াছি, ইহা বুঝিলাম।
 


সপ্তদশ পরিচ্ছেদ : ফাঁসির পর মোকদ্দমার তদারক

আমরা কলিকাতায় দিনকত সুখে-স্বচ্ছন্দে রহিলাম। তার পর দেখিলাম, স্বামী একদিন একখানা চিঠি হাতে করিয়া অত্যন্ত বিষণ্ণভাবে রহিয়াছেন। জিজ্ঞাসা করিলাম, “এত বিমর্ষ কেন?”
    তিনি বলিলেন, “বাড়ী হইতে চিঠি আসিয়াছে। বাড়ী যাইতে হইবে।”
    আমি হঠাৎ বলিয়া ফেলিলাম, “আমি!” আমি দাঁড়াইয়াছিলাম—মাটিতে বসিয়া পড়িলাম। চক্ষু দিয়া দরবিগলিত ধারা পড়িতে লাগিল।
    তিনি সস্নেহে হাত ধরিয়া আমায় তুলিয়া মুখচুম্বন করিয়া, অশ্রুজল মুছাইয়া দিলেন। বলিলেন, “সেই কথাই আমিও ভাবিতেছিলাম। তোমায় ছাড়িয়া যাইতে পারিব না।”
    আমি। সেখানে আমাকে কি বলিয়া পরিচিত করিবে?—কি প্রকারে, কোথায় রাখিবে?

তিনি। তাই ভাবিতেছি। সহর নহে যে, আর একটা জায়গায় রাখিব, কেহ বড় জানিতে পারিবে না। বাপ-মার চক্ষের উপর, তোমায় কোথায় রাখিব?
    আমি। না গেলেই কি নয়?
    তিনি। না গেলেই নয়।
    আমি। কত দিনে ফিরিবে? শীঘ্র ফের যদি, তবে আমাকে না হয়, এইখানেই রাখিয়া যাও।
    তিনি। শীঘ্র ফিরিতে পারিব, এমন ভরসা নাই। কলিকাতায় আমরা কালেভদ্রে আসি।
    আমি। তুমি যাও—আমি তোমার জঞ্জাল হইব না। (বিস্তর কাঁদিতে কাঁদিতে এই কথা বলিলাম) আমার কপালে যা থাকে, তাই ঘটিবে।
    তিনি। কিন্তু আমি যে তোমায় না দেখিলে পাগল হইব।
    আমি। দেখ, আমি ত তোমার বিবাহিতা স্ত্রী নহি—(স্বামী মহাশয় একটু নড়িয়া উঠিলেন)— তোমার উপর আমার কোন অধিকার নাই। আমাকে তুমি এ সময় বিদায়—

তিনি আমাকে আর কথা কহিতে দিলেন না। বলিলেন, “আজ আর একথায় কাজ নাই। আজ ভাবি। যা ভাবিয়া স্থির করিব, কাল বলিব।”

বৈকালে তিনি রমণ বাবুকে আসিতে লিখিলেন। লিখিলেন, “গোপনীয় কথা আছে। এখানে না আসিলে বলা হইবে না।”

রমণ বাবু আসিলেন। আমি কবাটের আড়াল হইতে শুনিতে লাগিলাম, কি কথা হয়। স্বামী বলিলেন, “আপনাদিগের সেই পাচিকাটি—যে অল্পবয়সী—তাহার নাম কি?”
    র। কুমুদিনী।
    উ। তাহার বাড়ী কোথায়?
    র। এখন বলিতে পারি না।
    উ। সধবা না বিধবা?
    র। সধবা।
    উ। তার স্বামী কে জানেন?
    র। জানি।
    উ। কে?
    র। এক্ষণে বলিবার আমার অধিকার নাই।
    উ। কেন, কিছু গুপ্ত রহস্য আছে নাকি?
    র। আছে।
    উ। আপনারা উহাকে কোথায় পাইলেন?
    র। আমার স্ত্রী তাহার মাসীর কাছে উহাকে পাইয়াছেন।
    উ। যাক্‌ এ সব বাজে কথা। উহার চরিত্র কেমন?
    র। অনিন্দনীয়। আমাদের বুড়ী রাঁধুনীটাকে বড় ক্ষেপাইত। তা ছাড়া একটি দোষও নাই।
    উ। স্ত্রীলোকের চরিত্রদোষের কথা জিজ্ঞাসা করিতেছি।
    র। এমন উৎকৃষ্ট চরিত্র দেখা যায় না।
    উ। উহার বাড়ী কোথায়, কেন বলিতেছেন না?
    র। বলিবার অধিকার নাই।
    উ। স্বামীর বাড়ী কোথায়?
    র। ঐ উত্তর।
    উ। স্বামী জীবিত আছে?
    র। আছে।
    উ। আপনি তাহাকে চেনেন?
    র। চিনি
    উ। ঐ স্ত্রীলোকটি এখন কোথায়?
    র। আপনার এই বাড়ীতে।

স্বামী মহাশয় চমকিয়া উঠিলেন। বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি কিপ্রকারে জানিলেন?”

    র। আমার বলিবার অধিকার নাই। আপনার জেরা কি ফুরাইল?
    উ। ফুরাইল। কিন্তু আপনি ত জিজ্ঞাসা করিলেন না যে, আমি কেন আপনাকে এসকল কথা জিজ্ঞাসা করিলাম?
    র। দুই কারণে জিজ্ঞাসা করিলাম না। একটি এই যে, জিজ্ঞাসা করিলে, আপনি বলিবেন না। সত্য কিনা?
    উ। সত্য। দ্বিতীয় কারণটি কি?
    র। আমি জানি, যে জন্য জিজ্ঞাসা করিতেছেন।
    উ। তাও জানেন? কি বলুন দেখি?
    র। তা বলিব না।
    উ। আচ্ছা, আপনি ত সব জানেন দেখিতেছি। বলুন দেখি, আমি যে অভিসন্ধি করিতেছি, তাহা ঘটিতে পারে কিনা?
    র। খুব ঘটিতে পারে। আপনি কুমুদিনীকে জিজ্ঞাসা করিবেন।
    উ। আর একটি কথা। আপনি কুমুদিনীর সম্বন্ধে যাহা জানেন, তাহা সব একটা কাগজে লিখিয়া দিয়া দস্তখত করিয়া দিতে পারেন?
    র। পারি—এক সর্তে। আমি লিখিয়া পুলিন্দায় সীল করিয়া কুমুদিনীর কাছে দিয়া যাইব। আপনি এক্ষণে তাহা পড়িতে পারিবেন না। দেশে গিয়া পড়িবেন। রাজি?

স্বামী মহাশয় অনেক ভাবিয়া বলিলেন, “রাজি। আমার অভিপ্রায়ের পোষক হইবে ত?”
    র। হইবে।

অন্যান্য কথার পর রমণ বাবু উঠিয়া গেলেন। উ-বাবু আমার নিকট আসিলেন।
আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “এ সব কথা হইতেছিল কেন?”
তিনি বলিলেন, “সব শুনিয়াছ না কি?”
    আমি। হাঁ শুনিয়াছি। ভাবিতেছিলাম, আমি ত তোমায় খুন করিয়া, ফাঁসি গিয়াছি। ফাঁসির পর আর তদারক কেন?
    তিনি। এখনকার আইনে তা হইতে পারে।