পবিত্র বাইবেল
পুরাতন নিয়ম।
আদিপুস্তক
অধ্যায় ১-৩
জগতের বিবরণ
১
১. আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও
পৃথিবীর সৃষ্টি করলেন।
২. পৃথিবী ঘোর ও শূন্য ছিল; এবং অন্ধকার জলধির উপরে ছিল, আর ঈশ্বরের আত্মা জলের
উপরে অবস্থিতি করিতেছিলেন।
৩. পরে ঈশ্বর কহিলেন, দীপ্তি হউক; তাহাতে দীপ্তি হইল।
৪. তখন ঈশ্বর দীপ্তি উত্তম দেখিলেন, এবং ঈশ্বর অন্ধকার হইতে দীপ্তি পৃথক করিলেন।
৫. আর ঈশ্বর দীপ্তির নাম দিবস ও অন্ধকারের নাম রাত্রি রাখিলেন। আর সন্ধ্যা ও
প্রাতঃকাল হইলে প্রথম দিবস হইল।
৬. পরে ঈশ্বর কহিলেন, জলের মধ্যে বিতান হউক, ও জলকে দুই ভাগে পৃথক্ করুক।
৭. ঈশ্বর এইরূপে বিতান করিয়া বিতানের ঊর্দ্ধস্থিত জল হইতে বিতানের অধঃস্থিত জল
পৃথক্ করিলেন; তাহাতে সেইরূপ হইল।
৮. পরে ঈশ্বর বিতানের নাম আকাশমণ্ডলের রাখিলেন। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে
দ্বিতীয় দিবস হইল।
৯. পরে ঈশ্বর কহিলেন, আকাশমণ্ডলের নীচস্থ সমস্ত জল এক স্থানে সংগৃহীত হউক ও স্থল
সপ্রকাশ হউক; তাহাতে সেইরূপ হইল।
১০. তখন ঈশ্বর স্থলের নাম ভূমি, ও জলরাশির নাম সমুদ্র রাখিলেন; আর ঈশ্বর দেখিলেন
যে, তাহা উত্তম।
১১. পরে ঈশ্বর কহিলেন, ভূমি তৃণ, বীজোৎপাদক ওষধি, ও সবীজ স্ব স্ জাতি অনুযায়ী ফলের
উৎপাদক ফলবৃক্ষ, ভূমির উপরে উৎপন্ন করুক; তাহাতে সেইরূপ হইল।
১২. ফলতঃ ভূমি তৃণ. স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী বীজোৎপাদক ওষধি, ও স্ব
স্ব জাতি অনুযায়ী সবীজ ফলের উৎপাদক বৃক্ষ, উৎপন্ন করিল; আর ঈশ্বর দেখিলেন যে,
সে সকল উত্তম।
১৩. আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে তৃতীয় দিবস হইল।
১৪. পরে ঈশ্বর কহিলেন, রাত্রি হইতে দিবসকে বিভিন্ন করণার্থে আকাশমণ্ডলের বিতানে
জ্যোতির্গণ হউক; সে সমস্ত চিহ্নের জন্য, ঋতুর জন্য এবং দিবসের ও বৎসরের জন্য হউক;
১৫. এবং পৃথিবীতে দীপ্তি দিবার জন্য দীপ বলিয়া আকাশমণ্ডলের বিতানে থাকুক; তাহাতে
সেইরূপ হইল।
১৬. ফলতঃ ঈশ্বর দিনের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিতে এক মহাজ্যোতিঃ ও রাত্রির উপরে
কর্ত্তৃত্ব করিতে তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এক জ্যোতিঃ এই বৃহৎ জ্যোতিঃ, এবং নক্ষত্রসমূহ
নির্ম্মাণ করিলেন।
১৭. আর পৃথিবীতে দীপ্তি দিবার জন্য, এবং দিবস ও রাত্রির উপরে কর্ত্তৃত্ব করণার্থে
১৮. এবং দীপ্তি হইতে অন্ধকার বিভিন্ন করণার্থে ঈশ্বর ঐ জ্যোতিঃসমূহকে আকাশমণ্ডলের
বিতানে স্থাপন করিলেন, এবং ঈশ্বর দেখিলেন যে, সে সকল উত্তম।
১৯. আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে চতুর্থ দিবস হইল।
২০. পরে ঈশ্বর কহিলেন, জল নানাজাতীয় জঙ্গম প্রাণিবর্গে প্রাণময় হউক, এবং ভূমির
ঊর্দ্ধে আকাশমণ্ডলের বিতানে পক্ষিগণ উড়ুক।
২১. তখন ঈশ্বর বৃহৎ তিমিগণের, ও যে নানাজাতীয় জঙ্গম প্রাণিবর্গের জল প্রাণময় আছে,
সে সকলের, এবং নানাজাতীয় পক্ষীর সৃষ্টি করিলেন। পরে ঈশ্বর দেখিলেন যে, সে সকল
উত্তম।
২২. আর ঈশ্বর সে সকলকে আশীর্ব্বাদ করিয়া কহিলেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং
পৃথিবীতে পক্ষিগণের বাহুল্য হউক।
২৩. আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে, পঞ্চম দিবস হইল।
২৪. পরে ঈশ্বর কহিলেন, ভূমি নানাজাতীয় প্রাণিবর্গ, অর্থাৎ
স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী গ্রাম্য পশু, সরীসৃপ ও বন্য পশু উৎপন্ন করুক; তাহাতে সেইরূপ
হইল।
২৫. ফলতঃ ঈশ্বর স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী বন্য পশু ও স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী গ্রাম্য পশু
ও স্ব স্ব জাতি অনুযায়ী যাবতীয় ভূচর সরীসৃপ নির্ম্মাণ করিলেন; আর ঈশ্বর দেখিলেন যে,
সে সকল উত্তম।
২৬. পরে ঈশ্বর কহিলেন, আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য
নির্ম্মাণ করি ; আর তাহারা সমুদ্রের মৎস্যদের উপরে, আকাশের পক্ষীদের উপরে, পশুগণের
উপরে, সমস্ত পৃথিবীর উপরে, ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় সরীসৃপের উপরে কর্ত্তৃত্ব করুক।
২৭. পরে ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্ত্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের
প্রতিমূর্ত্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি
করিলেন।
২৮. পরে ঈশ্বর তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিলেন; ঈশ্বর কহিলেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও
বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ ও বশীভূত কর, আর সমুদ্রের মৎস্যগণের উপরে, আকাশের
পক্ষিগণের উপরে, এবং ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবজন্তুর উপরে কর্ত্তৃত্ব কর।
২৯. ঈশ্বর আরও কহিলেন, দেখ, আমি সমস্ত ভূতলে স্থিত যাবতীয় বীজোৎপাদক ওষধি ও যাবতীয়
সবীজ ফলদায়ী বৃক্ষ তোমাদিগকে দিলাম, তাহা তোমাদের খাদ্য হইবে। ৩০.আর ভূচর যাবতীয়
পশু ও আকাশের যাবতীয় পক্ষী ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় কীট, এই সকল প্রাণীর আহারার্থে
হরিৎ ওষধি সকল দিলাম। তাহাতে সেইরূপ হইল।
৩১. পরে ঈশ্বর তাঁহার সৃষ্ট বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন, আর দেখ, সকলই অতি
উত্তম। আর সন্ধ্যা ও প্রাতঃকাল হইলে ষষ্ঠ দিবস হইল।
২
১. এইরূপে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী এবং তাহার
তদুভয়স্থ সমস্ত বস্তুব্যূহ সমাপ্ত হইল।
২. পরে ঈশ্বর সপ্তম দিনে আপনার কৃতকার্য্য হইতে নিবৃত্ত হইলেন, সেই সপ্তম দিনে
আপনার কৃত সমস্ত কার্য্য হইতে বিশ্রাম করিলেন।
৩. আর ঈশ্বর সেই সপ্তম দিনকে আশীর্ব্বাদ করিয়া পবিত্র করিলেন, কেননা সেই দিবসে
ঈশ্বর আপনার সৃষ্ট ও কৃত সমস্ত কার্য্য হইতে বিশ্রাম করিলেন।
প্রথম নরনারীর বিবরণ
৪. সৃষ্টি কালে যে দিন সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবী ও আকাশমণ্ডল নির্ম্মণ
করিলেন, তখনকার আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর বৃত্তান্ত এই।
৫. সেই সময়ে পৃথিবীতে ক্ষেত্রের কোন উদ্ভিজ্জ হইত না, আর ক্ষেত্রের কোন ওষধি উৎপন্ন
হইত না, কেননা সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবীতে বৃষ্টি বর্ষান নাই, আর ভূমিতে কৃষিকর্ম্ম
করিতে কোন মনুষ্য ছিল না।
৬. আর পৃথিবী হইতে কুজ্ঝটিকা উঠিয়া সমস্ত ভূতলকে জলসিক্ত করিল।
৭. আর সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে (অর্থাৎ মনুষ্যকে) নির্ম্মাণ করিলেন,
এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন; তাহাতে মনুষ্য সজীব প্রাণী
হইল।
৮. আর সদাপ্রভু ঈশ্বর পূর্ব্বদিকে, এদনে, এক উদ্যান প্রস্তুত করিলেন, এবং সেই
স্থানে আপনার নির্ম্মিত ঐ মনুষ্যকে রাখিলেন।
৯. আর সদাপ্রভু ঈশ্বর ভূমি হইতে সর্ব্বজাতীয় সুদৃশ্য ও সুখাদ্য-দায়ক বৃক্ষ, এবং সেই
উদ্যানের মধ্যস্থানে জীবনবৃক্ষ ও সদসদ্-জ্ঞানদায়ক, বৃক্ষ উৎপন্ন করিলেন।
১০. আর উদ্যানে জলসেচনার্থে এদন হইতে এক নদী নির্গত হইল, উহা তথা হইতে বিভিন্ন হইয়া
চতুর্ম্মুখ হইল।
১১. প্রথম নদীর নাম পীশোন; ইহা সমস্ত হবীলা দেশ বেষ্টন করে,
১২. তথায় স্বর্ণ পাওয়া যায়, আর সেই দেশের স্বর্ণ উত্তম, এবং সেই স্থানে গুগ্গুলু ও
গোমেদকমণি জন্মে।
১৩. দ্বিতীয় নদীর নাম গীহোন; ইহা সমস্ত কূশ দেশ বেষ্টন করে।
১৪. তৃতীয় নদীর নাম হিদ্দেকল, ইহা অশূরিয়া দেশের সম্মুখ দিয়া প্রবাহিত হয়। চতুর্থ
নদীর নাম ফরাৎ।
১৫. পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে লইয়া এদনস্থ উদ্যানের কৃষিকর্ম্ম ও রক্ষার্থে তথায়
রাখিলেন।
১৬. আর সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে এই আজ্ঞা দিলেন, তুমি এই উদ্যানের সমস্ত বৃক্ষের ফল
স্বচ্ছন্দে ভোজন করিও;
১৭. কিন্তু সদসদ্-জ্ঞানদায়ক যে বৃক্ষ, তাহার ফল ভোজন করিও না, কেননা যে দিন তাহার
ফল খাইবে, সেই দিন মরিবেই মরিবে।
১৮. আর সদাপ্রভু ঈশ্বর কহিলেন, মনুষ্যের একাকী থাকা ভাল নয়, আমি তাহার জন্য তাহার
অনুরূপ সহকারিণী নির্মাণ করি।
১৯. আর সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকা হইতে সকল বন্য পশু ও আকাশের সকল পক্ষী নির্ম্মাণ
করিলেন; পরে আদম তাহাদের কি কি নাম রাখিবেন তাহা জানিতে সেই সকলকে তাঁহার নিকটে
আনিলেন, তাহাতে আদম যে সজীব প্রাণীর যে নাম রাখিলেন, তাহার সেই নাম হইল।
২০. আদম যাবতীয় গ্রাম্য পশুর ও খেচর পক্ষীর ও যাবতীয় বন্য পশুর নাম রাখিলেন, কিন্তু
মনুষ্যের জন্য তাঁহার অনুরূপ সহকারিণী পাওয়া গেল না।
২১. পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে ঘোর নিদ্রায় মগ্ন করিলে তিনি নিদ্রিত হইলেন; আর তিনি
তাঁহার একখানি পঞ্জর লইয়া মাংস দ্বারা সেই স্থান পূরাইলেন।
২২. সদাপ্রভু ঈশ্বর আদম হইতে গৃহীত সেই পঞ্জরে একজন স্ত্রী নির্ম্মাণ করিলেন ও
তাঁহাকে আদমের নিকটে আনিলেন।
২৩. তখন আদম কহিলেন, এইবার [হইয়াছে]; ইনি আমার অস্থির অস্থি ও মাংসের মাংস; ইঁহার
নাম নারী হইবে, কেননা ইনি নর হইতে গৃহীত হইয়াছেন।
২৪. এই কারণ মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং
তাহারা একাঙ্গ হইবে।
২৫. ঐ সময়ে আদম ও তাঁহার স্ত্রী উভয়ে উলঙ্গ থাকিতেন, আর তাঁহাদের লজ্জা বোধ ছিল না।
মানবজাতির পাপে পতন
৩
১. সদাপ্রভু ঈশ্বরের নির্ম্মিত ভূচর
প্রাণীদের মধ্যে সর্প সর্ব্বাপেক্ষা খল ছিল। সে ঐ নারীকে কহিল, ঈশ্বর কি বাস্তবিক
বলিয়াছেন, তোমরা এই উদ্যানের কোন বৃক্ষের ফল খাইও না?
২. নারী সর্পকে কহিলেন, আমরা এই উদ্যানস্থ বৃক্ষ সকলের ফল খাইতে পারি;
৩. কেবল উদ্যানের মধ্যস্থানে যে বৃক্ষ আছে, তাহার ফলের বিষয় ঈশ্বর বলিয়াছেন, তোমরা
তাহা ভোজন করিও না, স্পর্শও করিও না, করিলে মরিবে।
৪. তখন সর্প নারীকে কহিল, কোন ক্রমে মরিবে না;
৫. কেননা ঈশ্বর জানেন, যে দিন তোমরা তাহা খাইবে, সেই দিন তোমাদের চক্ষু খুলিয়া
যাইবে, তাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদাসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবে।
৬. নারী যখন দেখিলেন, ঐ বৃক্ষ সুখাদ্যদায়ক ও চক্ষুর লোভজনক, আর ঐ বৃক্ষ জ্ঞানদায়ক
বলিয়া বাঞ্ছনীয়, তখন তিনি তাহার ফল পাড়িয়া ভোজন করিলেন; পরে আপনার মত নিজ স্বামীকে
দিলেন, আর তিনিও ভোজন করিলেন।
৭. তাহাতে তাঁহাদের উভয়ের চক্ষু খুলিয়া গেল, এবং তাঁহারা বুঝিতে পারিলেন যে তাঁহারা
উলঙ্গ; আর ডুমুর বৃক্ষের পত্র সিঙ্গাইয়া ঘাগ্রা প্রস্তুত করিয়া লইলেন।
৮. পরে তাঁহারা সদাপ্রভু ঈশ্বরের রব শুনিতে পাইলেন, তিনি দিবাবসানে উদ্যানে গমনাগমন
করিতেছিলেন; তাহাতে আদম ও তাঁহার স্ত্রী সদাপ্রভু ঈশ্বরের সম্মুখ হইতে উদ্যানস্থ
বৃক্ষসমূহের মধ্যে লুকাইলেন।
৯. তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে ডাকিয়া কহিলেন, তুমি কোথায়?
১০. তিনি কহিলেন, আমি উদ্যানে তোমার রব শুনিয়া ভীত হইলাম, কারণ আমি উলঙ্গ, তাই
আপনাকে লুকাইয়াছি।
১১. তিনি কহিলেন, তুমি যে উলঙ্গ, ইহা তোমাকে কে বলিল? যে বৃক্ষের ফল ভোজন করিতে
তোমাকে নিষেধ করিয়াছিলাম, তুমি কি তাহার ফল ভোজন করিয়াছ?
১২. তাহাতে আদম কহিলেন, তুমি আমার সঙ্গিনী করিয়া যে স্ত্রী দিয়াছ, সে আমাকে ঐ
বৃক্ষের ফল দিয়াছিল, তাই খাইয়াছি।
১৩. তখন সদাপ্রভু ঈশ্বর নারীকে কহিলেন, তুমি এ কি করিলে? নারী কহিলেন, সর্প আমাকে
ভুলাইয়াছিল, তাই খাইয়াছি।
১৪. পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর সর্পকে কহিলেন, তুমি এই কর্ম্ম করিয়াছ, এই জন্য গ্রাম্য ও
বন্য পশুগণের মধ্যে তুমি সর্বাপেক্ষা অধিক শাপগ্রস্ত; তুমি বুকে হাঁটিবে, এবং
যাবজ্জীবন ধূলি ভোজন করিবে।
১৬. আর আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব;
সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।
১৬. পরে তিনি নারীকে কহিলেন, আমি তোমার গর্ভবেদনা অতিশয় বৃদ্ধি করিব, তুমি বেদনাতে
সন্তান প্রসব করিবে; এবং স্বামীর প্রতি তোমার বাসনা থাকিবে; ও সে তোমার উপরে
কর্তৃত্ব করিবে।
১৭. আর তিনি আদমকে কহিলেন, যে বৃক্ষের ফলের বিষয়ে আমি তোমাকে বলিয়াছিলাম, তুমি তাহা
ভোজন করিও না, তুমি তোমার স্ত্রীর কথা শুনিয়া তাহার ফল ভোজন করিয়াছ, এই জন্য তোমার
নিমিত্ত ভূমি অভিশপ্ত হইল; তুমি যাবজ্জীবন ক্লেশে উহা ভোগ করিবে;
১৮. আর উহাতে তোমার জন্য কণ্টক ও শেয়ালকাঁটা জন্মিবে, এবং তুমি ক্ষেত্রের ওষধি ভোজন
করিবে।
১৯. তুমি ঘর্মাক্ত মুখে আহার করিবে, যে পর্যন্ত তুমি মৃত্তিকায় প্রতিগমন না করিবে;
তুমি ত তাহা হইতে গৃহীত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।
২০. পরে আদম আপন স্ত্রীর নাম হবা (জীবিত) রাখিলেন, কেননা তিনি জীবিত সকলের মাতা
হইলেন।
২১. আর সদাপ্রভু ঈশ্বর আদম ও তাঁহার স্ত্রীর নিমিত্ত চর্মের বস্ত্র প্রস্তুত করিয়া
তাঁহাদিগকে পরাইলেন।
২২. আর সদাপ্রভু ঈশ্বর কহিলেন, দেখ, মনুষ্য সদসদ্-জ্ঞান প্রাপ্ত হইবার বিষয়ে
আমাদের একের মত হইল; এখন পাছে সে হস্ত বিস্তার করিয়া জীবনবৃক্ষের ফলও পাড়িয়া ভোজন
করে ও অনন্তজীবী হয়।
২৩. এই নিমিত্ত সদাপ্রভু ঈশ্বর তাঁহাকে এদনের উদ্যান হইতে বাহির করিয়া দিলেন, যেন,
তিনি যাহা হইতে গৃহীত, সেই মৃত্তিকাতে কৃষিকর্ম্ম করেন।
২৪. এইরূপে ঈশ্বর মনুষ্যকে তাড়াইয়া দিলেন, এবং জীবনবৃক্ষের পথ রক্ষা করিবার জন্য
এদনস্থ উদ্যানের পূর্বদিকে করূবগণকে ও ঘূর্ণায়মান তেজোময় খড়্গ রাখিলেন।