পবিত্র বাইবেল
পুরাতন নিয়ম।
আদিপুস্তক
অধ্যায় ১২-১৪
অব্রামের বিবরণ
১. সদাপ্রভু অব্রামকে কহিলেন,
তুমি আপন দেশ, জ্ঞাতিকুটুম্ব ও পৈতৃক বাটী পরিত্যাগ করিয়া, আমি যে দেশ তোমাকে
দেখাই, সেই দেশে চল।
২. আমি তোমা হইতে এক মহাজাতি উৎপন্ন করিব, এবং তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিয়া তোমার নাম মহৎ
করিব; তাহাতে তুমি আশীর্ব্বাদের আকর হইবে। ৩. যাহারা তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিবে তাহাদিগকে
আমি আশীর্ব্বাদ করিব; যে কেহ তোমাকে অভিশাপ দিবে, তাহাকে আমি অভিশাপ দিব; এবং তোমাতে
ভূমণ্ডলের যাবতীয় গোষ্ঠী আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে।
৪. পরে অব্রাম সদাপ্রভুর সেই বাক্যানুসারে যাত্রা করিলেন; এবং লোটও তাঁহার সঙ্গে গেলেন। হারণ হইতে প্রস্থান কালে
অব্রামের পঁচাত্তর বৎসর বয়স ছিল।
৫. অব্রাম আপন স্ত্রী সারীকে ও ভ্রাতুষ্পুত্র লোটকে
এবং হারণে তাঁহারা যে ধন উপার্জন করিয়াছিলেন, ও যে প্রাণিগণকে লাভ করিয়াছিলেন, সেই
সমস্ত লইয়া কনান দেশে গমনার্থে যাত্রা করিলেন, এবং কনান দেশে আসিলেন।
৬. আর অব্রাম
দেশ দিয়া যাইতে যাইতে শিখিম স্থানে, মোরির এলোন বৃক্ষের নিকটে উপস্থিত হইলেন।
তৎকালে কনানীয়েরা সেই দেশে বাস করিত।
৭. পরে সদাপ্রভু অব্রামকে দর্শন দিয়া কহিলেন,
আমি তোমার বংশকে এই দেশ দিব; আর সেই স্থানে অব্রাম সেই সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক
যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন যিনি তাঁহাকে দর্শন দিয়াছিলেন।
৮. পরে তিনি ঐ স্থান ত্যাগ
করিয়া পর্বতে গিয়া বৈথেলের পূর্ব্বদিকে আপনার তাম্বু স্থাপন করিলেন; তাহার পশ্চিমে
বৈথেল ও পূর্ব্বদিকে অয় ছিল; তিনি সেই স্থানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি
নির্ম্মাণ
করিলেন ও সদাপ্রভুর নামে ডাকিলেন।
পরে অব্রাম ক্রমে ক্রমে দক্ষিণে গমন করিলেন।
১০. দেশে দুর্ভিক্ষ হইল, তখন অব্রাম মিসরে প্রবাস করিতে যাত্রা করিলেন; কেননা (কনান)
দেশে ভারী দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল।
১১. আর অব্রাম যখন মিসরে প্রবেশ করিতে উদ্যত হন, তখন
আপন স্ত্রী সারীকে কহিলেন, দেখ, আমি জানি, তুমি দেখিতে সুন্দরী;
১২. এই কারণ
মিস্রীয়েরা যখন তোমাকে দেখিবে তখন তুমি আমার স্ত্রী বলিয়া আমাকে বধ করিবে, আর তোমাকে
জীবিত রাখিবে।
১৩. বিনয় করি, এই কথা বলিও যে, তুমি আমার ভগিনী; যেন তোমার অনুরোধে
আমার মঙ্গল হয়, ও তোমাহেতু আমার প্রাণ বাঁচে।
১৪. পরে অব্রাম মিসরে প্রবেশ করিলে
মিস্রীয়েরা ঐ স্ত্রীকে পরম সুন্দরী দেখিল।
১৫. আর ফরৌণের অধ্যক্ষগণ তাঁহাকে দেখিয়া
ফরৌণের নিকটে তাঁহার প্রশংসা করিলেন; তাহাতে সেই স্ত্রী ফরৌণের বাটীতে নীত হইলেন।
১৬. আর তাঁহার অনুরোধে তিনি অব্রামকে আদর করিলেন; তাহাতে অব্রাম মেষ, গরু, গর্দভ, এবং
দাস-দাসী, গর্দভী ও উষ্ট্র পাইলেন।
১৭. কিন্তু অব্রামের স্ত্রী সারীর জন্য সদাপ্রভু
ফরৌণ ও তাঁহার পরিবারের উপরে ভারী ভারী উৎপাত ঘটাইলেন।
১৮. তাহাতে ফরৌণ অব্রামকে
ডাকিয়া কহিলেন, আপনি আমার সহিত এ কি ব্যবহার করিলেন? উনি আপনার স্ত্রী, এই কথা
আমাকে কেন বলেন নাই? ১৯. উঁহাকে আপনার ভগিনী কেন বলিলেন? আমি ত উাঁহাকে বিবাহ করিতে
লইয়াছিলাম। এখন আপনার স্ত্রীকে লইয়া চলিয়া যাউন।
২০. তখন ফরৌণ লোকদিগকে তাঁহার বিষয়ে
আজ্ঞা দিলেন, আর তাহারা সর্বস্বের সহিত তাঁহাকে ও তাঁহার স্ত্রীকে বিদায় করিল।
অব্রাম ও লোটের বিবরণ
১৩
১. পরে অব্রাম ও তাঁহার স্ত্রী সমস্ত সম্পত্তি লইয়া লোটের সঙ্গে মিসর হইতে [কনান
দেশের] দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রা করিলেন।
২. অব্রাম পশুধনে ও স্বর্ণ রৌপ্যে অতিশয় ধনবান
ছিলেন।
৩. পরে তিনি দক্ষিণ হইতে বৈথেলের দিকে যাইতে যাইতে বৈথেলের ও অয়ের মধ্যবর্ত্তী যে
স্থানে পূর্ব্বে তাঁহার তাম্বু স্থাপিত ছিল,
৪. সেই স্থানে আপনার পূর্ব্বনির্মিত
যজ্ঞবেদির নিকটে উপস্থিত হইলেন; তথায় অব্রাম সদাপ্রভুর নামে ডাকিলেন।
৫. আর অব্রামের সহযাত্রী লোটেরও অনেক গো ও তাম্বু ছিল।
৬. আর সেই দেশে একত্র বাস সম্পোষ্য
হইল না, কেননা তাঁহাদের প্রচুর সম্পত্তি থাকাতে তাঁহারা একত্র বাস করিতে পারিলেন
না।
৭. আর অব্রামের পশুপালকদের ও লোটের পশুপালকদের মধ্যে বিবাদ হইল।
−তৎকালে সেই
দেশে কনানীয়েরা ও পরিষীয়েরা বাসতি করিত।
৮. −তাহাতে অব্রাম লোটকে কহিলেন, বিনয় করি,
তোমাতে ও আমাতে এবং তোমার পশুপালকগণে ও আমার পশুপালকগণে বিবাদ না হউক; কেননা আমরা
পরস্পর জ্ঞাতি।
৯. তোমার সম্মুখে কি সমস্ত দেশ নাই? বিনয় করি, আমা হইতে পৃথক্ হও; হয়,
তুমি বামে যাও, আমি দক্ষিণে যাই; নয়, তুমি দক্ষিণে যাও, আমি বামে যাই।
১০. তখন লোট
চক্ষু তুলিয়া দেখিলেন, যর্দ্দনের সমস্ত অঞ্চল সোয়র পর্য্যন্ত সর্ব্বত্র সজল, সদাপ্রভুর
উদ্যানের ন্যায়, মিসর দেশের ন্যায়, কেননা তৎকালে সদাপ্রভু সদোম ও ঘমোরা বিনষ্ট করেন
নাই।
১১. অতএব লোট আপনার নিমিত্ত যর্দ্দনের সমস্ত অঞ্চল মনোনীত করিয়া পূর্ব্বদিকে
প্রস্থান করিলেন; এইরূপে তাঁহারা পরস্পর পৃথক্ হইলেন।
১২. অব্রাম কনান দেশে থাকিলেন,
এবং লোট সেই অঞ্চলস্থিত নগরসমূহের মধ্যে থাকিয়া সদোমের নিকট পর্য্যন্ত তাম্বু স্থাপন
করিতে লাগিলেন।
১৩. সদোমের লোকেরা অতি দুষ্ট ও সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে অতি পাপিষ্ঠ ছিল।
১৪. অব্রাম হইতে লোট পৃথক্ হইলে পর সদাপ্রভু অব্রামকে কহিলেন, চক্ষু তুলিয়া এই যে
স্থানে তুমি আছ, এই স্থান হইতে উত্তর-দক্ষিণে ও পূর্ব্ব-পশ্চিমে দৃষ্টিপাত কর;
১৫. কেননা এই যে সমস্ত দেশ তুমি দেখিতে পাইতেছ, ইহা আমি তোমাকে ও যুগে যুগে তোমার
বংশকে দিব।
১৬. আর পৃথিবীস্থ ধূলির ন্যায় তোমার বংশ বৃদ্ধি করিব; কেহ যদি পৃথিবীর
ধূলি গণিতে পারে, তবে তোমার বংশও গণা যাইবে।
১৭. উঠ, এই দেশের দৈর্ঘ্যপ্রস্থে পর্য্যটন
কর, কেননা আমি তোমাকেই ইহা দিব।
১৮. তখন অব্রাম তাম্বু তুলিয়া হিব্রোণে স্থিত মম্রির
এলোন বনের নিকটে গিয়া বাস করিলেন, এবং সেখানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি
নির্ম্মাণ করিলেন।
লোটের বন্দিত্ব ও পুনরুদ্ধার।
১৪
১. শিনিয়রের অম্রাফল রাজা, ইল্লাসরের অরিয়োক রাজা, এলমের কদর্লায়োমর রাজা
২. এবং
গোয়ীমের তিদিয়ল রাজার সময়ে ঐ রাজগণ সদোমের রাজা বিরা, ঘমোরার রাজা বির্শা, অদ্মার
রাজা শিনাব, সবোয়িমের রাজা শিমেবর ও বিলার অর্থাৎ সোয়রের রাজার সহিত যুদ্ধ করিলেন।
৩. ইঁহারা সকলে সিদ্দীম তলভূমিতে অর্থাৎ লবণসমুদ্রে একত্র হইয়াছিলেন।
৪. ইঁহারা দ্বাদশ
বৎসর পর্যন্ত কদর্লায়োমরের দাসত্বে থাকিয়া ত্রয়োদশ বৎসরে বিদ্রোহী হন।
৫. পরে চতুর্দ্দশ
বৎসরে কদর্লায়োমর ও তাঁহার সহায় রাজগণ আসিয়া অস্তরোৎ-কর্ণয়িমে রফায়ীয়দিগকে, হমে
সুষীয়দিগকে, শাবিকিরিয়াথয়িমে এমীয়দিগকে
৬. ও প্রান্তরের পার্শ্বস্থ এল-পারণ পর্য্যন্ত
সেয়ীর পর্ব্বতে তথাকার হোরীয়দিগকে আঘাত করিলেন।
৭. পরে তথা হইতে ফিরিয়া ঐনমিষ্পটে অর্থাৎ
কাদেশে গিয়া অমালেকীয়দের সমস্ত দেশকে এবং হৎসসোন-তামর নিবাসী ইমোরীয়দিগকে আঘাত
করিলেন।
৮. আর সদোমের রাজা, ঘমোরার রাজা, অদ্মার রাজা, সবোয়িমের রাজা ও বিলার অর্থাৎ
সোয়রের রাজা বাহির হইয়া এলমের কদর্লায়োমর রাজার,
৯. গোয়ীমের তিদিয়ল রাজার, শিনিয়রের
অম্রাফল রাজার ও ইল্লাসরের অরিয়োক রাজার সহিত, পাঁচ জন রাজা চারি জন রাজার সহিত,
যুদ্ধ করণার্থে 'সিদ্দীম তলভূমিতে' সৈন্য স্থাপন করিলেন।
১০. ঐ সিদ্দীম তলভূমিতে
মেটিয়া তৈলের অনেক খাত ছিল; আর সদোম ও ঘমোরার রাজগণ পলায়ন করিলেন ও তাহার মধ্যে
পতিত হইলেন, এবং অবশিষ্টেরা পর্বতে পলায়ন করিলেন।
১১. আর শত্রুরা সদোম ও ঘমোরার সমস্ত
সম্পত্তি ও খাদ্যদ্রব্য লইয়া প্রস্থান করিলেন।
১২. বিশেষতঃ তাঁহারা অব্রামের ভ্রাতুষ্পুত্র লোটকে ও তাঁহার সম্পত্তি লইয়া গেলেন, কেননা তিনি সদোমে বাস
করিতেছিলেন।
১৩. তখন একজন পলাতক ইব্রীয় অব্রামকে সমাচার দিল; ঐ সময়ে তিনি ইষ্কোলের
ভ্রাতা ও আনেরের ভ্রাতা ইমোরীয় মম্রির এলোন বনে বাস করিতেছিলেন, এবং তাঁহারা
অব্রামের সহায় ছিলেন।
১৪. অব্রাম যখন শুনিলেন, তাঁহার জ্ঞাতি ধৃত হইয়াছেন, তখন তিনি
আপন গৃহজাত তিনশত আঠার জন অভ্যস্থ দাসকে লইয়া দান পর্য্যন্ত ধাবমান
হইয়া গেলেন।
১৫. পরে রাত্রিকালে আপন দাসদিগকে দুই দল করিয়া তিনি শত্রুগণকে আঘাত
করিলেন, এবং দম্মেশকের উত্তরে স্থিত হোবা পর্যন্ত তাড়াইয়া দিলেন।
১৬. এবং সকল সম্পত্তি, আর আপন জ্ঞাতি লোট ও তাঁহার সম্পত্তি এবং স্ত্রীলোকদিগকে ও লোক সকলকে ফিরাইয়া
আনিলেন।
১৭. অব্রাম কদর্লায়োমরকে ও তাঁহার সঙ্গী রাজগণকে জয় করিয়া ফিরিয়া আসিলে পর,
সদোমের রাজা তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে শাবী তলভূমিতে অর্থাৎ রাজার তলভূমিতে গমন
করিলেন।
১৮. এবং শালেমের রাজা মল্কীষেদক রুটি ও দ্রাক্ষারস বাহির করিয়া আনিলেন; তিনি
পরাৎপর ঈশ্বরের যাজক।
১৯. তিনি অব্রামকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, বলিলেন, অব্রাম
স্বর্গমর্ত্ত্যের অধিকারী পরাৎপর ঈশ্বরের আশীর্ব্বাদপাত্র হউন,
২০. আর পরাৎপর ঈশ্বর ধন্য হউন, যিনি তোমার বিপক্ষগণকে তোমার হস্তে সমর্পণ করিয়াছেন। তখন অব্রাম সমস্ত
দ্রব্যের দশমাংশ তাঁহাকে দিলেন।
২১. আর সদোমের রাজা অব্রামকে কহিলেন, মনুষ্য সকল
আমাকে দিউন, সম্পত্তি আপনার জন্য লউন।
২২. তখন অব্রাম সদোমের রাজাকে উত্তর করিলেন,
আমি স্বর্গমর্ত্যের অধিকারী পরাৎপর ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে হস্ত উঠাইয়া কহিতেছি,
২৩. আমি আপনার কিছুই লইব না, এক গাছি সূতা কি পাদুকার বন্ধনীও লইব না; পাছে আপনি
বলেন, আমি অব্রামকে ধনবান করিয়াছি।
২৪. কেবল [আমার] যুবকেরা যাহা খাইয়াছে তাহা লইব,
এবং যে ব্যক্তিরা আমার সঙ্গে গিয়াছিলেন, আনের, ইষ্কোল ও মম্রি, তাঁহারা তাঁহাদের
আপন আপন প্রাপ্তব্য অংশ গ্রহণ করুন।