পবিত্র বাইবেল
পুরাতন নিয়ম।
আদিপুস্তক
অধ্যায় ৪-৫

কয়িন ও হেবলের বিবরণ


১. পরে আদম আপন স্ত্রী হবার পরিচয় লইলে তিনি গর্ভ্ববতী হইয়া কয়িনকে প্রসব করিয়া কহিলেন, সদাপ্রভুর সহায়তায় আমি নরলাভ করিলাম।
২. পরে তিনি হেবল নামে তাহার সহোদরকে প্রসব করিলেন। হেবল মেষপালক ছিল, ও কয়িন ভূমিকর্ষক ছিল।
৩. পরে কালানুক্রমে কয়িন উপহার রূপে সদাপ্রভুর উদ্দেশে ভূমির ফল উৎসর্গ করিল।
৪. আর হেবলও আপন পালের প্রথমজাত কএকটি পশু ও তাহাদের মেদ উৎসর্গ করিল। তখন সদাপ্রভু হেবলকেও তাহার উপহার গ্রাহ্য করিলেন;
৫. কিন্তু কয়িনকে ও তাহার উপহার গ্রাহ্য করিলেন না; এই নিমিত্ত কয়িন অতিশয় ক্রুদ্ধ হইল, তাহার মুখ বিষণ্ণ হইল।
৬. তাহাতে সদাপ্রভু কয়িনকে কহিলেন, তুমি কেন ক্রোধ করিয়াছ? তোমার মুখ কেন বিষণ্ণ হইয়াছে?
৭. যদি সদাচরণ কর, তবে কি গ্রাহ্য হইবে না? আর যদি সদাচরণ না কর, তবে পাপ দ্বারে গুঁড়ি মারিয়া রহিয়াছে। তোমার প্রতি তাহার বাসনা থাকিবে, এবং তুমি তাহার উপরে কর্তৃত্ব করিবে।
৮. আর কয়িন আপন ভ্রাতা হেবলের সহিত কথোপকথন করিল; পরে তাহারা ক্ষেত্রে গেলে কয়িন আপন ভ্রাতা হেবলের বিরুদ্ধে উঠিয়া তাহাকে বধ করিল।
৯. পরে সদাপ্রভু কয়িনকে বলিলেন, তোমার ভ্রাতা হেবল কোথায়? সে উত্তর দিল, আমি জানি না; আমার ভ্রাতার রক্ষক কি আমি?
১০. তিনি কহিলেন, তুমি কি করিয়াছ? তোমার ভ্রাতার রক্ত ভূমি হইতে আমার কাছে ক্রন্দন করিতেছে।
১১. আর এখন, যে ভূমি তোমার হস্ত হইতে তোমার ভ্রাতার রক্ত গ্রহণার্থে আপন মুখ খুলিয়াছে, সেই ভূমিতে তুমি শাপগ্রস্ত হইলে।
১২. ভূমিতে কৃষিকর্ম্ম করিলেও তাহা আপন শক্তি দিয়া তোমার সেবা আর করিবে না; তুমি পৃথিবীতে পলাতক ও ভ্রমণকারী হইবে।
১৩. তাহাতে কয়িন সদাপ্রভুকে বলিল, আমার অপরাধের ভার অসহ্য।
১৪. দেখ, অদ্য তুমি ভূতল হইতে আমাকে তাড়াইয়া দিলে, আর তোমার দৃষ্টি হইতে আমি লুক্কায়িত হইব। আমি পৃথিবীতে পলাতক ও ভ্রমণকারী হইব, আর আমাকে যে পাইবে, সেই বধ করিবে।
১৫. তাহাতে সদাপ্রভু তাহাকে কহিলেন, এই জন্য কয়িনকে যে বধ করিবে, সে সাত গুণ প্রতিফল পাইবে। আর সদাপ্রভু কয়িনের নিমিত্ত এক চিহ্ন রাখিলেন, পাছে কেহ তাহাকে পাইলে বধ করে।
১৬. পরে কয়িন সদাপ্রভুর সাক্ষাৎ হইতে প্রস্থান করিয়া এদনের পূর্বদিকে নোদ দেশে বাস করিল।
১৭. আর কয়িন আপন স্ত্রীর পরিচয় লইলে সে গর্ভবতী হইয়া হনোককে প্রসব করিল। আর কয়িন এক নগর পত্তন করিয়া আপন পুত্রের নামানুসারে তাহার নাম হনোক রাখিল।
১৮. হনোকের পুৎত্র ঈরদ, ঈরদের পুৎত্র মহূয়ায়েল, মহূয়ায়েলের পুৎত্র মথূশায়েল ও মথূশায়েলের পুৎত্র লেমক।
১৯. লেমক দুই জন স্ত্রী গ্রহণ করিল, এক স্ত্রীর নাম আদা ও অন্য জনের নাম সিল্লা।
২০. আদার গর্ভে যাবল জন্ম গ্রহণ করিল, সে তাম্বুবাসী পশুপালকদের আদিপুরুষ ছিল। তাহার ভ্রাতার নাম যূবল;
২১. সে বীণা ও বংশীধারী সকলের আদিপুরুষ ছিল।
২২. আর সিল্লার গর্ব্‌ভে তূবল-কয়িন জন্মিল, সে পিত্তলের ও লৌহের নানা প্রকার অস্ত্র গঠন করিত; তূবল-কয়িনের ভগিনীর নাম নয়মা।
২৪. আর লেমক আপন দুই স্ত্রীকে কহিল,
         আদা ও সিল্লা, তোমরা আমার কথা শুন,
        লেমকের ভার্য্যাদ্বয়, আমার বাক্যে
           কর্ণপাত কর;
       কারণ আমি আঘাতের পরিশোধে
          পুরুষকে,
       প্রহারের পরিশোধে যুবাকে বধ
          করিয়াছি।
২৪. যদি কয়িনের বধের প্রতিফল সাত
         গুণ হয়,
     লেমকের বধের প্রতিফল সাতাত্তর
        গুণ হইবে।
২৫. আর আদম পুনর্ব্বার আপন স্ত্রীর পরিচয় লইলে তিনি পুত্র প্রসব করিলেন ও তাহার নাম শেথ রাখিলেন। কেননা [তিনি কহিলেন,] কয়িন কর্তৃক হত হেবলের পরিবর্ত্তে ঈশ্বর আমাকে আর এক সন্তান দিলেন।
২৬. পরে শেথেরও পুৎত্র জন্মিল, আর তিনি তাহার নাম ইনোশ রাখিলেন। তৎকালে লোকেরা সদাপ্রভুর নামে ডাকিতে আরম্ভ করিল।

আদমের-বংশের বিবরণ


১. আদমের বংশাবলি-পত্র এই। যে দিন ঈশ্বর মনুষ্যের সৃষ্টি করিলেন, সেই দিনে ঈশ্বরের সাদৃশ্যেই তাঁহাকে নির্ম্মাণ করিলেন;
২. পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাঁহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন, এবং সেই সৃষ্টিদিনে তাঁহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিয়া আদম, এই নাম দিলেন।
৩. পরে আদম একশত ত্রিশ বৎসর বয়সে আপনার সাদৃশ্যে ও প্রতিমূর্তিতে পুৎত্রের জন্ম দিয়া তাহার নাম শেথ রাখিলেন।
৪. শেথের জন্ম দিলে পর আদম আট শত বৎসর জীবিত থাকিয়া আরও পুৎত্রকন্যার জন্ম দিলেন।
৫. সর্ব্বশুদ্ধ আদমের নয়শত ত্রিশ বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল।
৬. শেথ একশত পাঁচ বৎসর বয়সে ইনোশের জন্ম দিলেন।
৭. ইনোশের জন্ম দিলে পর শেথ আট শত সাত বৎসর জীবিত থাকিয়া আরও পুৎত্রকন্যার জন্ম দিলেন।
৮. সর্ব্বশুদ্ধ শেথের নয়শত বারো বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল।
৯. ইনোশ নব্বই বৎসর বয়সে কৈননের জন্ম দিলেন।
১০. কৈননের জন্ম দিলে পর ইনোশ আট শত পনের বৎসর জীবিত থাকিয়া আরও পুৎত্রকন্যার জন্ম দিলেন।
১১. সর্ব্বশুদ্ধ ইনোশের নয়শত পাঁচ বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল।
১২. কৈনন সত্তর বৎসর বয়সে মহললেলের জন্ম দিলেন।
১৩. মহললেলের জন্ম দিলে পর কৈনন আট শত চল্লিশ বৎসর জীবিত থাকিয়া আরও পুৎত্রকন্যার জন্ম দিলেন।
১৪. সর্ব্বশুদ্ধ কৈননের নয়শত দশ বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল।
১৫. মহললেল পঁয়ষট্টি বৎসর বয়সে যেরদের জন্ম দিলেন।
১৬. যেরদের জন্ম দিলে পর মহললেল আট শত ত্রিশ বৎসর জীবিত থাকিয়া আরও পুৎত্রকন্যার জন্ম দিলেন।
১৭. সর্ব্বশুদ্ধ মহললেলের আট শত পঁচানব্বই বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল।
১৮. যেরদ একশত বাষট্টি বৎসর বয়সে হনোকের জন্ম দিলেন।
১৯. হনোকের জন্ম দিলে পর যেরদ আট শত বৎসর জীবিত থাকিয়া আরও পুৎত্রকন্যার জন্ম দিলেন।
২০. সর্ব্বশুদ্ধ যেরদের নয়শত বাষট্টি বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল।
২১. হনোক পঁয়ষট্টি বৎসর বয়সে মথূশেলহের জন্ম দিলেন।
২২. মথূশেলহের জন্ম দিলে পর হনোক তিনশত বৎসর ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিলেন, এবং আরও পুৎত্রকন্যার জন্ম দিলেন।
২৩. সর্ব্বশুদ্ধ হনোক তিনশত পঁয়ষট্টি বৎসর রহিলেন।
২৪. হনোক ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন। পরে তিনি আর রহিলেন না, কেননা ঈশ্বর তাঁহাকে গ্রহণ করিলেন।
২৫. মথূশেলহ একশত সাতাশি বৎসর বয়সে লেমকের জন্ম দিলেন।
২৬. লেমকের জন্ম দিলে পর মথূশেলহ সাত শত বিরাশি বৎসর জীবিত থাকিয়া আরও পুৎত্রকন্যার জন্ম দিলেন।
২৭. সর্ব্বশুদ্ধ মথূশেলহের নয়শত ঊনসত্তর বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল।
২৮. লেমক একশত বিরাশী বৎসর বয়সে পুৎত্রের জন্ম দিয়া তাহার নাম নোহ (বিশ্রাম) রাখিলেন;
২৯. কেননা তিনি কহিলেন, সদাপ্রভু কর্তৃক অভিশপ্ত ভূমি হইতে আমাদের যে শ্রম ও হস্তের ক্লেশ হয়, তদ্বিষয়ে এ আমাদিগকে সান্ত্বনা দিবে।
৩১. নোহের জন্ম দিলে পর লেমক পাঁচ শত পঁচানব্বই বৎসর জীবিত থাকিয়া আরও পুৎত্রকন্যার জন্ম দিলেন।
৩১. সর্বশুদ্ধ লেমকের সাত শত সাতাত্তর বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল।
৩১. পরে নোহ পাঁচ শত বৎসর বয়সে শেম, হাম ও যেফতের জন্ম দিলেন।