পবিত্র বাইবেল
পুরাতন নিয়ম।
আদিপুস্তক
অধ্যায় ৬-১০

নোহ ও জলপ্লাবনের বৃত্তান্ত

১. এইরূপে যখন ভূমণ্ডলে মনুষ্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইতে লাগিল ও অনেক কন্যা জন্মিল,
২. তখন ঈশ্বরের পুৎত্রেরা মনুষ্যদের কন্যাগণকে সুন্দরী দেখিয়া, যাহার যাহাকে ইচ্ছা, সে তাহাকে বিবাহ করিতে লাগিল।
৩. তাহাতে সদাপ্রভু কহিলেন, আমার আত্মা মনুষ্যদের মধ্যে নিত্য অধিষ্ঠান করিবেন না, তাহাদের বিপথগমনে তাহারা মাংসমাত্র; পরন্তু তাহাদের সময় এক শত বিংশতি বৎসর হইবে।
৪. তৎকালে পৃথিবীতে মহাবীরগণ ছিল, এবং তৎপরেও ঈশ্বরের পুৎত্রেরা মনুষ্যদের কন্যাদের নিকটে গমন করিলে তাহাদের গর্ভে সন্তান জন্মিল, তাহারাই সেকালের প্রসিদ্ধ বীর।
৫. আর সদাপ্রভু দেখিলেন, পৃথিবীতে মনুষ্যদের দুষ্টতা বড়, এবং তাহাদের অন্তঃকরণের চিন্তার সমস্ত কল্পনা নিরন্তর কেবল মন্দ।
৬. তাই সদাপ্রভু পৃথিবীতে মনুষ্য ন ির্ম্মাণ প্রযুক্ত অনুশোচনা করিলেন, ও মনঃপীড়া পাইলেন।
৭. আর সদাপ্রভু কহিলেন, আমি যে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিয়াছি তাহাকে ভূমণ্ডল হইতে উচ্ছিন্ন করিব; মনুষ্যের সহিত পশু, সরীসৃপ জীব ও আকাশের পক্ষীদিগকেও উচ্ছিন্ন করিব; কেননা তাহাদের নির্ম্মাণ প্রযুক্ত আমার অনুশোচনা হইতেছে।
৮. কিন্তু নোহ সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইলেন।
৯. নোহের বংশ-বৃত্তান্ত এই। নোহ তৎকালীন লোকদের মধ্যে ধার্ম্মিক ও সিদ্ধ লোক ছিলেন, নোহ ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন।
১০. নোহ শেম, হাম ও যেফৎ নামে তিন পুত্রের জন্ম দেন।
১১. তৎকালে পৃথিবী ঈশ্বরের সাক্ষাতে ভ্রষ্ট ছিল, পৃথিবী দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ ছিল।
১২. আর ঈশ্বর পৃথিবীতে দৃষ্টিপাত করিলেন, আর দেখ, সে ভ্রষ্ট হইয়াছে, কেননা পৃথিবীস্থ সমুদয় প্রাণী ভ্রষ্টাচারী হইয়াছিল।
১৩. তখন ঈশ্বর নোহকে কহিলেন, আমার গোচরে সকল প্রাণীর অন্তিমকাল উপস্থিত, কেননা তাহাদের দ্বারা পৃথিবী দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ হইয়াছে; আর দেখ, আমি পৃথিবীর সহিত তাহাদিগকে বিনষ্ট করিব।
১৪. তুমি গোফর কাষ্ঠ দ্বারা এক জাহাজ নির্ম্মাণ কর; সেই জাহাজের মধ্যে কুঠরী নির্ম্মাণ করিবে ও তাহার ভিতরে ও বাহিরে ধূনা দিয়া লেপন করিবে।
১৫. এই প্রকারে তাহা নির্ম্মাণ করিবে। জাহাজ দীর্ঘে তিন শত হাত, প্রস্থে পঞ্চাশ হাত ও উচ্চতায় ত্রিশ হাত হইবে।
১৬. আর তাহার ছাদের এক হাত নীচে বাতায়ন প্রস্তুত করিয়া রাখিবে, ও জাহাজের পার্শ্বে দ্বার রাখিবে; তাহার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা নির্ম্মাণ করিবে।
১৭. আর দেখ, আকাশের নিচে প্রাণবায়ুবিশিষ্ট যত জীবজন্তু আছে, সকলকে বিনষ্ট করণার্থে আমি পৃথিবীর উপরে জলপ্লাবন আনিব, পৃথিবীস্থ সকলে প্রাণত্যাগ করিবে।
১৮. কিন্তু তোমার সহিত আমি আমার নিয়ম স্থির করিব; তুমি আপন পুৎত্রগণ, স্ত্রী ও পুত্রবধূদিগকে সঙ্গে লইয়া সেই জাহাজে প্রবেশ করিবে।
১৯. আর মাংসবিশিষ্ট সমস্ত জীবজন্তুর স্ত্রীপুরুষ যোড়া যোড়া লইয়া তাহাদের প্রাণরক্ষার্থে আপনার সহিত সেই জাহাজে প্রবেশ করাইবে;
২০. সর্ব্বজাতীয় পক্ষী ও সর্ব্বজাতীয় পশু ও সর্ব্বজাতীয় ভূচর সরীসৃপ যোড়া যোড়া প্রাণরক্ষার্থে তোমার নিকটে প্রবেশ করিবে।
২১. আর তোমার ও তাহাদের আহারার্থে তুমি সর্ব্বপ্রকার খাদ্য সামগ্রী আনিয়া আপনার নিকটে সঞ্চয় করিবে।
২২. তাহাতে নোহ সেইরূপ করিলেন, ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারেই সকল কর্ম্ম করিলেন।


১. আর সদাপ্রভু নোহকে কহিলেন, তুমি সপরিবারে জাহাজে প্রবেশ কর, কেননা এই কালের লোকদের মধ্যে আমার সাক্ষাতে তোমাকেই ধার্মিক দেখিয়াছি।
২. তুমি শুচি পশুর স্ত্রীপুরুষ লইয়া প্রত্যেক জাতির সাত সাত যোড়া এবং অশুচি পশুর স্ত্রীপুরুষ লইয়া প্রত্যেক জাতির এক এক যোড়া,
৩. এবং আকাশের পক্ষীদিগেরও স্ত্রীপুরুষ লইয়া প্রত্যেক জাতির সাত সাত যোড়া, সমস্ত ভূমণ্ডলে তাহাদের বংশ রক্ষার্থে আপনার সঙ্গে রাখ।
৪. কেননা সাত দিনের পর আমি পৃথিবীতে চল্লিশ দিবারাত্র বৃষ্টি বর্ষাইয়া আমার নির্ম্মিত যাবতীয় প্রাণীকে ভূমণ্ডল হইতে উচ্ছিন্ন করিব।
৫. তখন নোহ সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে সকল কর্ম্ম করিলেন।
৬. নোহের ছয়শত বৎসর বয়সে পৃথিবীতে জলপ্লাবন হইল।
৭. জলপ্লাবনের অপেক্ষাতে নোহ ও তাঁহার পুৎত্রগণ এবং তাঁহার স্ত্রী ও পুৎত্রবধূগণ জাহাজে প্রবেশ করিলেন।
৮. নোহের প্রতি ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে শুচি অশুচি পশুর,
৯. এবং পক্ষীর ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় জীবের স্ত্রীপুরুষ যোড়া যোড়া জাহাজে নোহের নিকটে প্রবেশ করিল।
১০. পরে সেই সাত দিন গত হইলে পৃথিবীতে জলপ্লাবন হইল।
১১. নোহের বয়সের ছয়শত বৎসরের দ্বিতীয় মাসের সপ্তদশ দিনে মহাজলধির সমস্ত উনুই ভাঙ্গিয়া গেল, এবং আকাশের বাতায়ন সকল মুক্ত হইল;
১২. তাহাতে পৃথিবীতে চল্লিশ দিবারাত্র মহা বৃষ্টি হইল।
১৩. সেই দিন নোহ, এবং শেম, হাম ও যেফৎ নামে নোহের পুৎত্রগণ, এবং তাঁহাদের সহিত নোহের স্ত্রী ও তিন পুৎত্রবধূ জাহাজে প্রবেশ করিলেন।
১৪. আর তাঁহাদের সহিত সর্ব্বজাতীয় বন্য পশু, সর্ব্বজাতীয় গ্রাম্য পশু, সর্ব্বজাতীয় ভূচর সরীসৃপ জীব ও সর্ব্বজাতীয় পক্ষী, সর্ব্বজাতীয় খেচর,
১৫. প্রাণবায়ুবিশিষ্ট সর্ব্বপ্রকার জীবজন্তু জোড়া জোড়া জাহাজে নোহের নিকটে প্রবেশ করিল।
১৬. ফলতঃ তাঁহার প্রতি ঈশ্বরের আজ্ঞানুসারে সমস্ত প্রাণীর স্ত্রীপুরুষ প্রবেশ করিল। পরে সদাপ্রভু তাঁহার পশ্চাতের দ্বার বদ্ধ করিলেন।
১৭. আর চল্লিশ দিন পর্যন্ত পৃথিবীতে জলপ্লাবন হইল; তাহাতে জল বৃদ্ধি পাইয়া জাহাজ ভাসাইলে তাহা মৃত্তিকা ছাড়িয়া উঠিল।
১৮. পরে জল প্রবল হইয়া পৃথিবীতে অতিশয় বৃদ্ধি পাইল, এবং জাহাজ জলের উপরে ভাসিয়া গেল।
১৯. আর পৃথিবীতে জল অত্যন্ত প্রবল হইল, আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সকল মহাপর্বত মগ্ন হইল।
২০. তাহার উপরে পনের হাত জল উঠিয়া প্রবল হইল, পর্বত সকল মগ্ন হইল।
২১. তাহাতে ভূচর যাবতীয় প্রাণী
পক্ষী, গৃহপালিত ও বন্য পশু, ভূচর সরীসৃপ সকল এবং মনুষ্য সকল মরিল।
২২. স্থলচর যত প্রাণীর নাসিকাতে প্রাণবায়ুর সঞ্চার ছিল, সকলে মরিল।
২৩. এইরূপে ভূমণ্ডল-নিবাসী সমস্ত প্রাণী
মনুষ্য, পশু, সরীসৃপ জীব ও আকাশীয় পক্ষী সকল উচ্ছিন্ন হইল, পৃথিবী হইতে উচ্ছিন্ন হইল, কেবল নোহ ও তাঁহার সঙ্গী জাহাজস্থ প্রাণীরা বাঁচিলেন।
২৪. আর জল পৃথিবীর উপরে একশত পঞ্চাশ দিন পর্যন্ত প্রবল থাকিল।


১. আর ঈশ্বর নোহকে ও জাহাজে স্থিত তাঁহার সঙ্গী পশ্বাদি যাবতীয় প্রাণীকে স্মরণ করিলেন; ঈশ্বর পৃথিবীতে বায়ু বহাইলেন, তাহাতে জল থামিল।
২. আর জলধির উনুই ও আকাশের বাতায়ন সকল বদ্ধ এবং আকাশের মহাবৃষ্টি নিবৃত্ত হইল।
৩. আর জল ক্রমশঃ ভূমির উপর হইতে সরিয়া গিয়া একশত পঞ্চাশ দিনের শেষে হ্রাস পাইল।
৪. তাহাতে সপ্তম মাসে, সপ্তদশ দিনে অরারটের পর্ব্বতের উপরে জাহাজ লাগিয়া রহিল।
৫. পরে দশম মাস পর্য্যন্ত জল ক্রমশঃ সরিয়া হ্রাস পাইল; ঐ দশম মাসের প্রথম দিনে পর্বতগণের শৃঙ্গ দেখা গেল।
৬. আর চল্লিশ দিন গত হইলে নোহ আপনার নির্ম্মিত জাহাজের বাতায়ন খুলিয়া একটা দাঁড়কাক ছাড়িয়া দিলেন;
৭. তাহাতে সে উড়িয়া ভূমির উপরিস্থ জল শুষ্ক না হওয়া পর্যন্ত ইতস্ততঃ গতায়ত করিল।
৮. আর ভূমির উপরে জল হ্রাস পাইয়াছে কি না, তাহা জানিবার জন্য তিনি আপনার নিকট হইতে এক কপোত ছাড়িয়া দিলেন।
৯. তাহাতে সমস্ত পৃথিবী জলে আচ্ছাদিত থাকাতে কপোত পদার্পণের কোন স্থান পাইল না, তাই জাহাজে তাঁহার নিকটে ফিরিয়া আসিল। তখন তিনি হাত বাড়াইয়া তাহাকে ধরিলেন ও জাহাজের ভিতরে আপনার নিকটে রাখিলেন।
১০. পরে তিনি আর সাত দিন বিলম্ব করিয়া জাহাজ হইতে সেই কপোত পুনর্ব্বার ছাড়িয়া দিলেন,
১১. এবং কপোতটি সন্ধ্যাকালে তাঁহার নিকটে ফিরিয়া আসিল; আর দেখ, তাহার চঞ্চুতে জিতবৃক্ষের একটি নবীন পত্র ছিল; ইহাতে নোহ বুঝিলেন যে, ভূমির উপরে জল হ্রাস পাইয়াছে।
১২. পরে তিনি আর সাত দিন বিলম্ব করিয়া সেই কপোত ছাড়িয়া দিলেন, তখন সে তাঁহার নিকটে আর ফিরিয়া আসিল না।
১৩. [নোহের বয়সের] ছয়শত এক বৎসরের প্রথম মাসের প্রথম দিনে পৃথিবীর উপরে জল শুষ্ক হইল; তাহাতে নোহ জাহাজের ছাদ খুলিয়া দৃষ্টিপাত করিলেন, আর দেখ, ভূতল নির্জল।
১৪. পরে দ্বিতীয় মাসের সাতাইশ দিনে ভূমি শুষ্ক হইল।

নোহের সহিত কৃত ঈশ্বরের নিয়ম

১৫, ১৬ পরে ঈশ্বর নোহকে কহিলেন, তুমি আপনার স্ত্রী, পুৎত্রগণ ও পুৎত্রবধূগণকে সঙ্গে লইয়া জাহাজ হইতে বাহিরে যাও।
১৭. আর তোমার সঙ্গী পশু, পক্ষী ও ভূচর সরীসৃপ প্রভৃতি মাংসময় যত জীবজন্তু আছে, সেই সকলকে তোমার সঙ্গে বাহিরে আন, তাহারা পৃথিবীকে প্রাণিময় করুক, এবং পৃথিবীতে প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হউক।
১৮. তখন নোহ আপনার পুৎত্রগণ এবং আপনার স্ত্রী ও পুৎত্রবধূগণকে সঙ্গে লইয়া বাহির হইলেন।
১৯. আর স্ব স্ব জাতি অনুসারে প্রত্যেক পশু, সরীসৃপ ও পক্ষী, সমস্ত ভূচর প্রাণী জাহাজ হইতে বাহির হইল।
২০. পরে নোহ সদাপ্রভুর উদ্দেশে যজ্ঞবেদি নির্ম্মাণ করিলেন এবং সর্ব্বপ্রকার শুচি পশুর ও সর্ব্বপ্রকার শুচি পক্ষীর মধ্যে কতকগুলি লইয়া বেদির উপরে হোম করিলেন।
২১. তাহাতে সদাপ্রভু তাহার সৌরভ আঘ্রাণ করিলেন, আর সদাপ্রভু মনে মনে কহিলেন, আমি মনুষ্যের জন্য ভূমিকে আর অভিশাপ দিব না, কারণ বাল্যকাল অবধি মনুষ্যের মনস্কল্পনা দুষ্ট; যেমন করিলাম, তেমন আর কখনও সকল প্রাণীকে সংহার করিব না।
২২. যাবৎ পৃথিবী থাকিবে, তাবৎ শস্য বপনের ও শস্য ছেদনের সময়, এবং শীত ও উত্তাপ, এবং গ্রীষ্মকাল ও হেমন্তকাল, এবং দিবা ও রাত্রি, এই সকলের নিবৃত্তি হইবে না।


১.. পরে ঈশ্বর নোহকে ও তাঁহার পুৎত্রগণকে এই আশীর্বাদ করিলেন, তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, পৃথিবী পরিপূর্ণ কর।
২. পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণী ও আকাশের যাবতীয় পক্ষী তোমাদের হইতে ভীত ও ত্রাসযুক্ত হইবে; সমস্ত ভূচর জীব ও সমুদ্রের সমস্ত মৎস্যশুদ্ধ সে সকল তোমাদেরই হস্তে সমর্পিত।
৩. প্রত্যেক গমনশীল প্রাণী তোমাদের খাদ্য হইবে; আমি হরিৎ ওষধির ন্যায় সে সকল তোমাদিগকে দিলাম।
৪. কিন্তু সপ্রাণ অর্থাৎ সরক্ত মাংস ভোজন করিও না।
৫. আর তোমাদের রক্তপাত হইলে আমি তোমাদের প্রাণের পক্ষে তাহার পরিশোধ অবশ্য লইব; সকল পশুর নিকটে তাহার পরিশোধ লইব, এবং সকল মনুষ্যের ভ্রাতা মনুষ্যের নিকটে আমি মনুষ্যের প্রাণের পরিশোধ লইব।
৬. যে কেহ মনুষ্যের রক্তপাত করিবে, মনুষ্য কর্তৃক তাহার রক্তপাত করা যাইবে; কেননা ঈশ্বর আপন প্রতিমূর্তিতে মনুষ্যকে নির্মাণ করিয়াছেন।
৭. তোমরা প্রজাবন্ত ও বহু বংশ হও, পৃথিবীকে প্রাণিময় কর, ও তন্মধ্যে বর্ধিষ্ণু হও।
৮. পরে ঈশ্বর নোহকে ও তাঁহার সঙ্গী পুত্রগণকে কহিলেন,
৯. দেখ, তোমাদের সহিত, তোমাদের ভাবী বংশের সহিত ও তোমাদের সঙ্গী যাবতীয় প্রাণীর সহিত,
১০. পক্ষী এবং গ্রাম্য ও বন্য পশু, পৃথিবীস্থ যত প্রাণী জাহাজ হইতে বাহির হইয়াছে, তাহাদের সহিত আমি আমার নিয়ম স্থির করি।
১১. আমি তোমাদের সহিত আমার নিয়ম স্থির করি; জলপ্লাবন দ্বারা সমস্ত প্রাণী আর উচ্ছিন্ন হইবে না, এবং পৃথিবীর বিনাশার্থ জলপ্লাবন আর হইবে না।
১২. ঈশ্বর আরও কহিলেন, আমি তোমাদের সহিত ও তোমাদের সঙ্গী যাবতীয় প্রাণীর সহিত চিরস্থায়ী পুরুষ-পরম্পরার জন্য যে নিয়ম স্থির করিলাম, তাহার চিহ্ন এই।
১৩. আমি মেঘে আমার ধনু স্থাপন করি, তাহাই পৃথিবীর সহিত আমার নিয়মের চিহ্ন হইবে।
১৪. যখন আমি পৃথিবীর ঊর্ধ্বে মেঘের সঞ্চার করিব, তখন সেই ধনু মেঘে দৃষ্ট হইবে;
১৫. তাহাতে তোমাদের সহিত ও মাংসময় সমস্ত প্রাণীর সহিত আমার যে নিয়ম আছে, তাহা আমার স্মরণ হইবে, এবং সকল প্রাণীকে বিনাশার্থ জলপ্লাবন আর হইবে না।
১৬. আর মেঘধনুক হইলে আমি তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিব; তাহাতে মাংসময় যত প্রাণী পৃথিবীতে আছে, তাহাদের সহিত ঈশ্বরের যে চিরস্থায়ী নিয়ম, তাহা আমি স্মরণ করিব।
১৭. ঈশ্বর নোহকে কহিলেন, পৃথিবীস্থ সমস্ত প্রাণীর সহিত আমার স্থাপিত নিয়মের এই চিহ্ন হইবে।

নোহের তিন পুৎত্রের বিবরণ

১৮. নোহের যে পুৎত্রেরা জাহাজ হইতে বাহির হইলেন, তাঁহাদের নাম শেম, হাম ও যেফৎ; আর সেই হাম কনানের পিতা;
১৯. এই তিন জন নোহের পুৎত্র, ইঁহাদেরই বংশ সমস্ত পৃথিবীতে ব্যাপ্ত হইল।
২০. পরে নোহ কৃষিকর্ম্মে প্রবৃত্ত হইয়া দ্রাক্ষাক্ষেত্র করিলেন।
২১. আর তিনি দ্রাক্ষারস পান করিয়া মত্ত হইলেন, এবং তাম্বুর মধ্যে বিবস্ত্র হইয়া পড়িলেন।
২২. তখন কনানের পিতা হাম আপন পিতার উলঙ্গতা দেখিয়া বাহিরে আপন দুই ভ্রাতাকে সমাচার দিল।
২৩. তাহাতে শেম ও যেফৎ বস্ত্র লইয়া আপনাদের স্কন্ধে রাখিয়া পশ্চাৎ হাঁটিয়া পিতার উলঙ্গতা আচ্ছাদন করিলেন; পশ্চাৎদ্দিকে মুখ থাকাতে তাঁহারা পিতার উলঙ্গতা দেখিলেন না।
২৪. পরে নোহ দ্রাক্ষারসের নিদ্রা হইতে জাগ্রত হইয়া আপনার প্রতি কনিষ্ঠ পুত্রের আচরণ অবগত হইলেন।
২৫. আর তিনি কহিলেন,
          কনান অভিশপ্ত হউক,
         সে আপন ভ্রাতাদের দাসদের দাস হইবে।
২৬. তিনি আরও কহিলেন,
       শেমের ঈশ্বর সদাপ্রভু ধন্য;
      কনান তাহার দাস হউক।
২৭. ঈশ্বর যেফৎকে বিস্তীর্ণ করুন;
      সে শেমের তাম্বুতে বাস করুক,
      আর কনান তাহার দাস হউক।
২৮. জলপ্লাবনের পরে নোহ তিনশত পঞ্চাশ বৎসর জীবিত থাকিলেন।
২৯. সর্বসুদ্ধ নোহের নয়শত পঞ্চাশ বৎসর বয়স হইলে তাঁহার মৃত্যু হইল।

নোহের বংশের বিবরণ

১০
১. নোহের পুৎত্র শেম, হাম ও যেফতের বংশবৃত্তান্ত এই। জলপ্লাবনের পরে তাঁহাদের সন্তানসন্ততি জন্মিল।
২. যেফতের সন্তান
গোমর, মাগোগ, মাদয়, যবন, তূবল, মেশক ও তীরস।
৩. গোমরের সন্তান
অস্কিনস, রীফৎ ও তোগর্ম।
৪. যবনের সন্তান
ইলীশা, তর্শীশ, কিত্তীম ও দোদানীম।
৫. এই সকল হইতে জাতিগণের দ্বীপনিবাসীরা আপন আপন দেশে স্ব স্ব ভাষানুসারে আপন আপন জাতির নানা গোষ্ঠীতে বিভক্ত হইল।
৬. আর হামের সন্তান
কূশ, মিসর, পূট ও কনান। কূশের সন্তান সবা, হবীলা, সপ্তা, রয়মা ও সপ্তকা।
৭. রয়মার সন্তান
শিবা ও দদান।
৮. নিম্রোদ কূশের পুৎত্র; তিনি পৃথিবীতে পরাক্রমী হইতে লাগিলেন।
৯. তিনি সদাপ্রভুর সাক্ষাতে পরাক্রান্ত ব্যাধ হইলেন; তজ্জন্য লোকে বলে, সদাপ্রভুর সাক্ষাতে পরাক্রান্ত ব্যাধ নিম্রোদের তুল্য।
১০. শিনিয়র দেশে বাবিল, এরক, অক্কদ ও কল্‌নী, এই সকল স্থান তাঁহার রাজ্যের প্রথম অংশ ছিল।
১১. সেই দেশ হইতে তিনি অশূরে গিয়া নীনবী,
১২. রহোবোৎ-পুরী, কেলহ এবং নীনবী ও কেলহের মধ্যস্থিত রেষণ নগর পত্তন করিলেন; উহা মহানগর।
১৩. আর লূদীয়, অনামীয়,
১৪. লহাবীয়, নপ্তুহীয়, পথ্রোষীয়, পলেষ্টীয়দের আদিপুরুষ কস্‌লূহীয় এবং কপ্তোরীয়- এই সকল মিসরের সন্তান।
১৫. এবং কনানের জ্যেষ্ঠ পুৎত্র সীদোন, তাহার পর
১৬. হেৎ, যিবূষীয়, ইমোরীয়, গির্গাশীয়, হিব্বীয়, অর্কীয়, সীনীয়, অর্বদীয়, সমারীয় ও হমাতীয়।
১৭. পরে কনানীয়দের গোষ্ঠী সকল বিস্তারিত হইল।
১৮. সীদোন হইতে গরারের দিকে ঘসা পর্যন্ত,
১৯. এবং সদোম, ঘমোরা, অদ্‌মা ও সবোয়ীমের দিকে লাশা পর্যন্ত কনানীয়দের সীমা ছিল।
২০. আপন আপন গোষ্ঠী, ভাষা, দেশ ও জাতি অনুসারে এই সকল হামের সন্তান।
২১. যে শেম এবরের সকল সন্তানের আদিপুরুষ আর যেফতের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা, তাঁহারও সন্তান সন্ততি ছিল।
২২. শেমের এই সকল সন্তান
এলম, অশূর, অর্ফক্‌ষদ, লূদ ও অরাম।
২৩. অরামের সন্তান
ঊষ, হূল, গেথর ও মশ।
২৪. আর অর্ফক্‌ষদ শেলহের জন্ম দিলেন ও শেলহ এবরের জন্ম দিলেন।
২৫. এবরের দুই পুৎত্র; একজনের নাম পেলগ (বিভাগ), কেননা তৎকালে পৃথিবী বিভক্ত হইল; তাঁহার ভ্রাতার নাম যক্তন।
২৬. আর যক্তন,
২৭. অল্‌মোদদ, শেলফ, হৎসর্মাবৎ, যেরহ,
২৮. হদোরাম ঊষল, দিক্ল, ওবল, অবীমায়েল, শিবা, ওফীর, হবীলা ও যোববের জন্ম দিলেন;
২৯. এই সকলে যক্তনের সন্তান।
৩০. মেষা অবধি পূর্বদিকের সফার পর্বত পর্য্যন্ত তাহাদের বসতি ছিল।
৩১. আপন আপন গোষ্ঠী, ভাষা, দেশ ও জাতি অনুসারে এই সকল শেমের সন্তান।
৩২. আপন আপন বংশ ও জাতি অনুসারে ইহারা নোহের সন্তানদের গোষ্ঠী; এবং জলপ্লাবনের পরে ইহাদের হইতে উৎপন্ন নানা জাতি পৃথিবীতে বিভক্ত হইল।