ভাষাংশ | জীবনানন্দ দাশ | জীবনানন্দ দাসের রচনাবলীর সূচি


ঝরা-পালক


চাঁদনীতে

বেবিলোন কোথা হারায়ে গিয়েছে,— মিশর-‘অসুর’ কুয়াশাকালো;

চাঁদ জেগে আছে আজো অপলক,— মেঘের পালকে ঢালিছে আলো !

সে যে জানে কতো পাথারের কথা,— কতো ভাঙা হাট মাঠের স্মৃতি !

কতো যুগ কতো যুগান্তরের সে ছিলো জ্যোৎস্না, শুক্লাতিথি !

হয়তো সেদিনো আমাদেরি মতো পিলুবারোঁয়ার বাঁশিটি নিয়া

ঘাসের ফরাশে বসিতো এমনি দূর পরদেশী প্রিয় ও প্রিয়া !

হয়তো তাহারা আমাদেরি মতো মধু-উৎসবে উঠিতো মেতে

চাঁদের আলোয় চাঁদমারী জুড়ে, —সবুজ চরায়, —সবজি-ক্ষেতে !

হয়তো তাহারা দুপুর-যামিনী বালুর জাজিমে সাগরতীরে

চাঁদের আলোয় দিগদিগন্তে চকোরের মতো চরিতো ফিরে !

হয়তো তাহারা মদঘূর্ণনে নাচিতো কাঞ্চীবাঁধন খুলে

এমনি কোন্-এক চাঁদের আলোয়— মরু-‘ওয়েসিসে’ তরুর মূলে !

বীর যুবাদল শত্রুর সনে বহুদিনব্যাপী রণের শেষে

এমনি কোন্-এক চাঁদনীবেলায় দাঁড়াতো নগরীতোরণে এসে !

কুমারীর ভিড় আসিতো ছুটিয়া, প্রণয়ীর গ্রীবা জড়ায়ে নিয়া

হেঁটে যেতো তারা জোড়ায়-জোড়ায় ছায়াবীথিকার পথটি দিয়া !

তাদের পায়ের আঙুলের ঘায়ে খড়-খড় পাতা উঠিতো বাজি,

তাদের শিয়রে দুলিতো জ্যোৎস্না-চাঁচর-চিকণ পত্ররাজী !

দখিনা উঠিতো মর্মরি মধুবনানীর লতা-পল্লব ঘিরে

চপল মেয়েরা উঠিতো হাসিয়া— ‘এলো বল্লভ,— এলো ফিরে !’

—তুমি ঢুলে যেতে, দশমীর চাঁদ তাহাদের শিরে সারাটি নিশি,

নয়নে তাদের দুলে যেতে তুমি,—চাঁদিনী শরাব, —সুরার শিশি !

সেদিনো এমনি মেঘের আসরে জ্বলেছে পরীর বাসরবাতি,

হয়তো সেদিনো ফুটেছে মোতিয়া, —ঝরেছে চন্দ্রমল্লীপাঁতি !

হয়তো সেদিনো নেশাখোর মাছি গুমরিয়া গেছে আঙুরবনে,

হয়তো সেদিনো আপেলের ফুল কেঁপেছে আঢুল হাওয়ার সনে !

হয়তো সেদিনো এলাচির বন আতরের শিশি দিয়েছে ঢেলে

হয়তো আলেয়া গেছে ভিজে মাঠে এমনি ভূতুড়ে প্রদীপ জ্বেলে !

হয়তো সেদিনো ডেকেছে পাপিয়া কাঁপিয়া-কাঁপিয়া ‘সরো’র শাখে,

হয়তো সেদিনো পাড়ার নাগরী ফিরেছে এমনি গাগরি-কাঁখে !

হয়তো সেদিনো পানসী দুলায়ে গেছে মাঝি বাঁকা ঢেউটি বেয়ে

হয়তো সেদিনো মেঘের শকুনডানায় গেছিলো আকাশ ছেয়ে !

হয়তো সেদিনো মানিকজোড়ের মরা পাখিটির ঠিকানা মেগে

অসীম আকাশে ঘুরেছে পাখিনী ছটফট দুটি পাখার বেগে !

হয়তো সেদিনো খুর্-খুর্ করে খরগোশছানা গিয়েছে ঘুরে

ঘন মেহগনি-টার্পিন-তলে— বালির জর্দা-বিছানা ফুঁড়ে !

হয়তো সেদিনো জানালার নীল জাফরির পাশে একলা বসি

মনের হরিণী হেরেছে তোমারে— বনের পারের ডাগর শশী !

শুক্লা একাদশীর নিশীথে মণিহর্ম্যের তোরণে গিয়া

পারাবত-দূত পাঠায়ে দিয়েছে প্রিয়ের তরেতে হয়তো প্রিয়া !

অলিভকুঞ্জে হা-হা ক’রে হাওয়া কেঁদেছে কাতর যামিনী ভরি !

ঘাসের শাটিনে আলোর ঝালরে ‘মার্টিল’ পাতা পড়েছে ‘ঝরি’ !

‘উইলো’র বন উঠেছে ফুপায়ে,- ‘ইউ’-তরুশাখা গিয়েছে ভেঙে,

তরুণীর দুধ-ধবধবে বুকে সাপিনীর দাঁত উঠেছে রেঙে !

কোন্ গ্রীস,—  কোন্ কার্থেজ, রোম, ‘ক্রবেদুর’-যুগ কোন্,—

চাঁদের আলোয় স্মৃতির কবর-সফরে বেড়ায় মন !

জানি না তো কিছু,— মনে হয় শুধু এমনি তুহিন চাঁদের নিচে

কতো দিকে-দিকে— কতো কালে-কালে হ’য়ে গেছে কতো কি যে!

কতো-যে শ্মাশান,- মশান কতো-যে,- কতো–যে কামনা-পিপাসা-আশা

অস্তচাঁদের আকাশে বেঁধেছে আরব-উপন্যাসের বাসা !

 

                       দক্ষিণা

প্রিয়ার গালেতে চুমা খেয়ে যায় চকিতে পিয়াল রেণু !-

এলো দক্ষিণা,—কাননের বীণা, —বনানীপথের বেণু !

তাই মৃগী আজ মৃগের চোখেতে বুলায়ে নিতেছে আঁখি,

বনের কিনারে কপোত আজিকে নেয় কপোতীরে ডাকি !

ঘুঘুর পাখায় ঘুঙুর বাজায় আজিকে আকাশখানা,—

আজ দখিনার ফর্দা হাওয়ায় পর্দা মানে না মানা !

শিশিরশীর্ণা বালার কপোলে কুহেলির কালো জাল

উষ্ণ চুমোর আঘাতে হয়েছে ডালিমের মতো লাল !

দাড়িমের বীজ ফাটিয়া পড়িছে অধরের চারিপাশে

আজ মাধবীর প্রথম উষায়,— দখিনা হাওয়ার শ্বাসে !

মদের পেয়ালা শুকায়ে গেছিলো, উড়ে গিয়েছিলো মাছি,

দখিনা-পরশে ভরা পেয়ালায় বুদবুদ ওঠে নাচি !

বেয়ালার সুরে বাজিয়া উঠিছে শিরা-উপশিরাগুলি !

শ্মশানের পথে করোটি হাসিছে,— হেসে খুন হলো খুলি !

এস্রাজ বাজে আজ মলয়ের,—চিতার রৌদ্রাতপ

সুরের সুঠামে নিভে যায় যেন,— হেসে ওঠে যেন শব !

নিভে যায় রাঙা অঙ্গারমালা,— বৈতরণীর জলে,

সুর-জাহ্নবী ফুটে ওঠে আজ মলয়ের কোলাহলে !

আকাশ-নিথানে মধু-পরিণয়,— মিলন-বাসর পাতি

হিমানীশীর্ণ বিধবা তারারা জ্ব’লে ওঠে রাতারাতি !

ফাগুয়ার রাগে চাঁদের কপোলে চকিতে হয়েছে রাঙা !

—হিমের ঘোমটা চিরে দেয় কে গো মরমস্নায়ুতে দাঙা !

লালসে কাহার আজ নীলিমার আনন রুধির –লাল—

নিখিলের গালে গাল পেতে কার কুঙ্কুম-ভাঙা গাল !

নারাঙ্গি-ফাটা অধর কাহার আকাশ-বাতাসে ঝরে !

কাহার বাঁশিটি খুন উথলায়— পরান উদাস করে !

কাহার পানেতে ছুটেছে উধাও শিশু পিয়ালের শাখা !

ঠোঁটে ঠোঁট ডলে— পরাগ চোঁয়ায় অশোক ফুলের ঝাঁকা !

কাহার পরশে পলাশ-বধূর আঁখির কেশরগুলি

মুদে-মুদে আসে,—আর বার করে কুঁদে-কুঁদে কোলাকুলি !

পাতার বাজারে বাজে হল্লোড়,—পায়েলার রুণ্–রুণ্,

কিশলয়দের ডাশা পেষে কে গো— চোখ করে ঘুমঘুম !

এসেছে দখিনা— ক্ষীরের মাঝারে লুকায়ে কোন্ এক-হীরের ছুরি !-

তার লাগি তবু ক্ষ্যাপা শাল-নিম, তমাল-বকুলে হুড়াহুড়ি !

আমের কুঁড়িতে বাউল বোলতা খুনসুড়ি দিয়ে খ’সে যায়,

অঘ্রাণে যার ঘ্রাণ পেয়েছিলো,—পেয়েছিলো যারে ‘পোষলা’য়,

সাতাশে মাঘের বাতাসে তাহার দর বেড়ে গেছে দশগুণ,—

নিছক হাওয়ায় ঝরিয়া পড়িছে আজ মউলের কষগুণ !

ঠেলে ফেলে দিয়ে নীলমাছি আর প্রজাপতিদের ভিড়

দখিনার মুখে রসের বাগান বিকায়ে দিতেছে ক্ষীর !

এসেছে নাগর,—যামিনীর আজ জাগর রঙিন আঁখি,-

কুয়াশার দিনে কাঁচুলি বাঁধিয়া কুচ রেখেছিলো ঢাকি,—

আজিকে কাঞ্চী যেতেছে খুলিয়া, মদঘূর্ণনে হায় !

নিশীথের স্বেদ-সীধুধারা আজ ক্ষরিছে দক্ষিণায় !

রূপসী ধরণী বাসকসজ্জা,—রুপালি চাঁদের তলে

বালুর ফরাশে রাঙা উল্লাসে ঢেউয়ের আগুন জ্বলে !

রোল উতরোল শোণিতে শিরায়,—হোরীর হা রা রা চিৎকার,—

মুখে-মুখে মধু,- সুধাসীধু শুধু,—তিত্ কোথা আজ— তিত্ কার !

শীতের বাস্তুভিত ভেঙে আজ এলো দক্ষিণা, —মিষ্টি-মধু,

মদনের হুলে ঢুলে-ঢুলে-ঢুলে হুঁশ-হারা হলো সৃষ্টি-বধূ !
 

              যে কামনা নিয়ে

যে কামনা নিয়ে মধুমাছি ফেরে বুকে মোর সেই তৃষা !

             খুঁজে মরি রূপ, ছায়াধূপ জুড়ি,

             রঙের মাঝারে হেরি রঙডুরি !

             পরাগের ঠোঁটে পরিমলগুঁড়ি,

               হারায়ে ফেলে গো দিশা !

 

আমি প্রজাপতি মিঠা মাঠে-মাঠে সোঁদালে সর্ষেক্ষেতে;

         বেদের সফরে খুঁজি নাকো ঘর,

          বাঁধি নাকো বাসা কাঁপি থরধর

          অতসী ছুঁড়ির ঠোঁটের উপর

              শুঁড়ির গেলাসে মেতে !

 

আমি দক্ষিণা দুলালীর বীণা, পউষ-পরশহারা !

               ফুল আঙিনায় আমি ঘুমভাঙা

               পিয়াল চুমিয়া পিলাই গো রাঙা

                পিয়ালার মধু, তুলি রাতজাগা

                    হোরী হা রা রা-সাড়া !

 

আমি গো লালিমা, গোধূলির সীমা, বাতাসের ‘লাল’ ফুল ।

             দুই নিমেষের তরে আমি জ্বালি

             নীল আকাশের গোলাপি দেয়ালি !

             আমি খুশরোজী আমি গো খেয়ালি,

             চঞ্চল, চুলবুল ।

 

বুকে জ্বলে মোর বাসর-দেউটি মধু- পরিণয়-রাতি !

           তুলিছে ধরণী বিধবা-নয়ন

           মনের মাঝারে মদনমোহন

           মিলননদীর নিধুর কানন

                  রেখেছে রে মোর পাতি !

 

                স্মৃতি

থমথমে রাত, —আমার পাশে বসল অতিথি,

বললে, —আমি অতীত ক্ষুধা, তোমার অতীত স্মৃতি!

যে দিনগুলো সাঙ্গ হল ঝড়বাদলের জলে,

শুষে গেল মেরুর হিমে, —মরুর অনলে,

ছায়ার মতো মিশেছিলাম আমি তাদের সনে!

তারা কোথায়? বন্দি স্মৃতিই কাঁদছে তোমার মনে!

কাঁদছে তোমার মনের খাকে, —চাপা ছাইয়ের তলে,

কাঁদছে তোমার স্যাঁতসেঁতে শ্বাস ভিজা চোখের জলে,

কাঁদছে তোমার মূক মমতার রিক্ত পাথার ব্যেপে,

তোমার বুকের খাড়ার কোপে, —খুনের বিষে ক্ষেপে!

আজকে রাতে কোন্ সে সুদূর ডাক দিয়েছে তারে,—

থাকবে না সে ত্রিশূলমূলে, শিবের দেউলদ্বারে!

মুক্তি আমি দিলেম তারে, উল্লাসেতে দুলে

স্মৃতি আমার পালিয়ে গেল বুকের কপাট খুলে

নবালোকে, নবীন উষার নহবতের মাঝে

ঘুমিয়েছিলাম, —দোরে আমার কার করাঘাত বাজে!

আবার আমায় ডাকলে কেন স্বপনঘোরের থেকে!

ওই লোকালোক-শৈলচূড়ায় চরণখানা রেখে

রয়েছিলাম মেঘের রাঙা মুখের পানে চেয়ে,

 কোথার থেকে এলে তুমি হিম সরণি বেয়ে!

ঝিম্‌ঝিমে চোখ, —জটা তোমার ভাসছে হাওয়ার ঝড়ে,

শ্মশানশিঙা বাজল তোমার প্রেতের গলার স্বরে!

আমার চোখের তারার সনে তোমার আঁখির তারা

মিলে গেল, —তোমার মাঝে আবার হলেম হারা!

হারিয়ে গেলাম ত্রিশূলমূলে, —শিবের দেউলদ্বারে;

কাঁদছে স্মৃতি কে দেবে গো মুক্তি দেবে তারে!

    

        সেদিন এ- ধরণীর

সেদিন এ- ধরণীর

সবুজ দ্বীপের ছায়া উতরোল তরঙ্গের ভিড়

মোর চোখে জেগে-জেগে ধীরে-ধীরে হ’লো অপহত

কুয়াশায় ঝ’রে পড়া আতসের  মতো ।

দিকে-দিকে ডুবে গেলো কোলাহল,

সহসা উজানজলে ভাঁটা গেলো ভাসি,

অতিদূর আকাশের মুখখানা আসি

বুকে মোর তুলে গেলো যেন হাহাকার ।

সেইদিন মোর অভিসার

মৃত্তিকার শূন্য পেয়ালার ব্যথা একাকারে ভেঙে

বকের পাখার মতো শাদা লঘু মেঘে 

ভেসেছিলো আতুর উদাসী;

বনের ছায়ার নিচে ভাসে কার ভিজে চোখ

কাঁদে কার বাঁরোয়ার বাঁশি

সেদিন শুনিনি তাহা;

ক্ষুধাতুর দুটি আঁখি তুলে

অতিদূর তারকার কামনায় আঁখি মোর দিয়েছিনু খুলে।

 

আমার এ শিরা-উপশিরা

চকিতে ছিঁড়িয়া গেলো ধরণীর নাড়ীর বন্ধন,

শুনেছিনু কান পেতে জননীর স্থবির ত্রুন্দন

মোর তরে পিছুডাক মাটি-মা,তোমার;

ডেকেছিলো ভিজে ঘাস হেমন্তের হিম ঘাসজোনাকির ঝাড়,

আমারে ডাকিয়াছিলো আলেয়ার লাল মাঠশ্মশানের খেয়াঘাট আসি,

             কঙ্কালের রাশি,

             দাউদাউ চিতা,

     কতো পূর্বজাতকের পিতামহ-পিতা,

             সর্বনাশ ব্যসন বাসনা,

             কতো মৃত গোক্ষুরার ফণা,

             কতো তিথিকতো যে অতিথি

              কতো শত যোনিচক্রস্মৃতি

             করেছিলো উতলা আমারে।

    আধো আলোআধেক আঁধারে

    মোর সাথে মোর পিছে এলো তারা ছুটে,

মাটির বাঁটের চুমো শিহরি উঠিলো মোর ঠোঁটে, রোমপুটে;

ধু-ধু মাঠধানক্ষেতকাশফুলবনো হাঁস বালুকার চর

    বকের ছানার মতো যেন মোর বুকের উপর

এলোমেলো ডানা মেলে মোর সাথে চলিলো নাচিয়া;
     মাঝপথে থেমে গেলো তারা সব;

     শকুনের মতো শূন্যে পাখা বিথারিয়া

দূরেদূরেআরো দূরে আরে দূরে চলিলাম উড়ে,

নিঃসহায় মানুযের শিশু একা– অনন্তের শুক্ল অন্তঃপুরে

         অসীমের আঁচলের তলে

স্ফীত সমুদ্রের মতো আন্দের আর্ত কোলাহলে

    উঠিলাম উথলিয়া দুরন্ত সৈকতে

              দূর ছায়াপথে।

          পৃথিবীর প্রেতচোখ বুঝি

সহসা উঠিলো ভাসি তারকা-দর্পণে মোর অপহৃত  আননের প্রতিবিম্ব খুঁজি;

      ভ্রাণভ্রষ্ঠ  সন্তের তরে

মাটি-মা ছুটিয়া এলো বুকফাটা মিনতির ভরে;

    সঙ্গে নিয়া বোবা শিশুবৃদ্ধ মৃত পিতা,

    সূতিকা-আলয় আর শ্মশানের চিতা,

মোর পাশে দাঁড়ালো সে গর্ভিণীর ক্ষোভে,

          মোর দুটি শিশু আঁখি-তারকার লোভে

          কাঁদিয়া উঠিলো তার পীনস্তনজননীর প্রাণ;

জরায়ুর ডিম্বে তার জন্মিয়াছে যে ঈপ্সিত বাঞ্ছিত সন্তান

তার তরে কালে-কালে পেতেছে সে শৈবালবিছানা শালতমালের ছায়া,

এনেছে নব-নব ঋতুরাগ– পউষনিশির শেষে ফাগুনের ফাগুয়ার  মায়া;

তার তরে বৈতরণীতীর সে যে ঢালিয়াছে  গাগরী ,

মৃত্যুর অঙ্গার মথি স্তন তার ভিজে রসে উঠিয়াছে ভরি,

                উঠিয়াছে দূর্বাধানে শোভি,

                মানবের তরে সে যে এনেছে মানবী;

মশালদরাজ এই মাটিটার ঝাঁঝ যে রে –

               কেন তবে দু-দণ্ডের অশ্রু অমানিশা

দূর আকাশের তরে বুকে তোর তুলে যায় নেশাখোর মক্ষিকার তৃষা !

নয়ন মুদিনু ধীরেশেষ আলো নিভে গেলো পলাতকা নীলিমার পারে,

সদ্য-প্রসূতির মতো অন্ধকার বসুন্ধরা আবরি আমারে ।