৩.১
আমি ও মন

জগতের সকল জীবিত প্রজাতির দৈহিক কার্যক্রমের জন্য রয়েছে একটি পরিচালক শক্তি। এই পরিচালকের নাম 'আমি'। আর আমির  ভাবনা ও ইচ্ছা হলো- মন।

প্রকৃতিতে সজীব দশায় টিকে থাকার জন্য প্রতিটি জীবের রয়েছে নিজস্ব দেহ-সম্পদ। যেমন মানুষের রয়েছে মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ইত্যাদি। বেঁচে থাকার এই লড়াইয়ে মানুষের এ সকল মৌলক উপকরণগুলো স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সক্রিয় থাকে। এর বাইরে অপর একটি অংশ থাকে, যাকে বলা যায় ঐচ্ছিক অংশ।

অন্যান্য সকল প্রজাতির মতই মানুষেরও নিজদেহের স্বয়ংক্রিয় অংশের উপর তার নিয়ন্ত্রণ নেই। যেমন মানুষের ক্ষুধার উদ্রেকটি স্বয়ংক্রিয়, কিন্তু খাদ্য গ্রহণ করবে করবে কি করবে না সেটা ঐচ্ছিক। কিন্তু খাদ্য পরিপাকের বিষয়টি স্বয়ংক্রিয়। এরূপ চোখ খোলা বন্ধের বিষয় ঐচ্ছিক। কিন্তু মানুষ ইচ্ছা করলেই কান বন্ধ করতে পারে না। কিন্তু শব্দ না-শোনার জন্য বাইরে থেকে কান চেপে ধরতে পারে। প্রস্রাব-পায়খানার মতো প্রাকৃতিক কাজ কিছুক্ষণ ধরে রাখা যায়। ইচ্ছা করলে শ্বাস ছোটো-বড় করে নেওয়া যায়। এরূপ সঙ্গমের বিষয়টি ঐচ্ছিক। কিন্তু নারীর গর্ভধারণের পর ভ্রূণ সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয়।

প্রতিটি জীব তার অস্তিত্ব রক্ষা করে স্বয়ংক্রিয় এবং ঐচ্ছিক ক্ষমতার সমন্বয়ে। দেহের স্বয়ংক্রিয় অংশের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন হয় উপযুক্ত মস্তিষ্ক। এর উপর ভিত্তি করে জীবের ঐচ্ছিক অংশের নিয়ন্ত্রক 'আমি' তার ইচ্ছাশক্তিকে জাগ্রত করে। মাছ জলের জীব। তার দেহের স্বয়ংক্রিয় অংশের খবর মাছের 'আমি' জানে। তাই তার ডাঙায় উঠে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা হবে না। পাখি জানে দেহের স্বয়ংক্রিয় অংশের ক্ষমতা, তাই পাখিকে তাড়া দিলে দৌড়ায় না, পাখা মেলে উড়ে যায়।

টিকে থাকার সংগ্রামের জীব সহজাত যে সকল উপকরণ নিয়ে জন্মায়, তার গঠন-প্রণালী, অভ্যন্তরীণ যান্ত্রিক প্রক্রিয়াটি না জানলেও চলে ব্যবহারিক গুণটা জানতেই হয়। মূলত প্রতিটি প্রজাতির জীবন-যাপনের আলাদা বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়, দৈহিক উপকরণ এবং এর ব্যবহারবিধি অনুসরণে। সেখানে 'আমি' পরিচালক আর তার ইচ্ছা হবে মন।

ইন্দ্রিয় ও মন
প্রকৃতিতে প্রতিটি জীব নিজের স্বাভাবিক জীবন-চক্রের ভিতরে যতদিন জীবিত থাকে, ততদিন সে জীবনযুদ্ধে সক্রিয় থাকে। জীবের জন্ম হয় মৃত্যুর জন্য। কিন্তু মৃত্যু তার কাম্য নয়। তাই সে মৃত্যুকে অগ্রাহ্য করে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করে। এর জন্য পরিবেশ সম্পর্কে তাকে জানতে হয়। জীবিত থাকার জন্য এই জানাটা অপরিহার্য।

জীবমাত্রেই জীবিত থাকার উপযোগী কিছু সহজাত ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। এর বাইরে আরও অন্যান্য অনেক কিছু সে জীবনযাত্রার ভিতরে অর্জন করে। কিছু কিছু অর্জন বংশানুক্রমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চালিত হয়। এই অর্জনের সূত্র ধরে ক্রমবিবর্তনের ধারায় তা জীবের জিনসঙ্কেতের অন্তর্গত হয়ে যায়। এই সঙ্কেত এক সময় জীবের সহজাত ক্ষমতায় পরিণত হয়।

স্বাভাবিকভাবে জীবের জীবনযাত্রার অনুকূল বিষয় হিসেবে থাকে প্রাকৃতিক উপাদান। এর ভিতরে থাকে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, অনার্দ্রতা, ইত্যাদি। এরপর আসে খাদ্যের বিষয়। জীবের সৃষ্টি লগ্নে খাদ্যের প্রয়োজন হয় দেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধির জন্য। প্রাপ্তদশায় পৌঁছার পর প্রয়োজন হয়, শুধু দেহের ক্ষয়পূরণের বিষয়। এর যে কোনোটির অভাবে প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হয়। জীবের প্রতিকূল দশার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অন্যজীবের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। জীবের খাদ্যচক্রের সূত্রে একটি জীব অন্যকে আহার করে। কিন্তু সকল জীব আবার সকল জীবের খাদ্য নয়। তাই নিজেকে অন্য জীবের খাদ্যে পরিণত না হওয়ার জন্য তাকে সচেতন থাকতে হয়। খাদ্য ছাড়াও একটি জীবের চলাচল বা বেঁচের থাকার প্রক্রিয়ার ভিতরে অপর একটি জীবের মৃত্যু হতে পারে। যেমন মানুষ পিঁপড়া খায় না, কিন্তু মানুষের চলাচলের সময়, পায়ের তলায় পরে পিঁপড়ার মৃত্য ঘটতে পারে। জীব তার পরিবেশ থেকে তথ্য নিয়ে, জীবিত থাকার যে কার্যক্রম পরিচালিত করে, তাতে কখনো সে পরাজিত হয়, কখনো সগৌরবে টিকে থাকে। সেটাও অনন্তকাল নয়। টিকে থাকার লড়াইয়ে জীব কখনো বা পরিবেশের সাথে সংগ্রাম করে, কখনো আপোষ করে। ঘটনাক্রমে এই যুদ্ধ হতে পারে নিজ প্রজাতির ভিতরে বা অন্য প্রজাতির সাথে। যুদ্ধ হতে পারে নানা ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে। এ ছাড়া মানুষের মতো তীব্রতর অনুভূতি-সম্পন্ন প্রজাতি আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা না করে বেঁচে থাকাটাও জীবনযুদ্ধেরই অংশ। অনেক সময় একটি প্রজাতি অন্য প্রজাতির সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে এবং বেঁচে থাকার রসদ পরস্পর থেকে গ্রহণ করে। কিন্তু শেষ জীব পর্যন্ত মারাই যায়। এটাই জীবের চূড়ান্ত পরিণতি।

জীবের বেঁচে থাকার জন্য, তার নানা ধরনের তথ্যের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ জীবকে ক্ষতিকারক, অক্ষতিকারক এবং উপযোগী অবস্থা সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত হতে হয়। এর ভিতরে ক্ষতিকারক অবস্থা থেকে জীব নিজেকে দূরে রাখে। নিজের জন্য বিপদজনক নয়, এমন উপকারীও নয়― এমন অক্ষতিকারক অবস্থা বা বস্তু থেকে জীব নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে না, কিন্তু উপেক্ষা করে। সাধারণভাবে মানুষ যে পরিবেশে দীর্ঘদিন বসবাস করছে, তার অধিকাংশ উপাদানই অক্ষতিকর। মানুষ অক্ষতিকর বস্তুকে উপযোগী করে নেয়। কিন্তু অন্যান্য জীব এটা পারে না, তাই তাদের কাছে অক্ষতিকারক বস্তু চিরকালই অক্ষতিকারকই রয়ে যায়। যেমন মাটি। মানুষের কাছে মাটি অক্ষতিকারক বস্তু, কিন্তু মানুষ মাটিকে নানা ধরনের উপযোগী কর্মে ব্যবহার করে। মাটি দিয়ে তৈরি ভূমিতে ফসল ফলায় আবার এবং  মাটি দিয়ে জীবনযাপনের নানা উপকরণও তৈরি করে।

উল্লিখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে জীবের জানার প্রয়োজন। জানার মূলে রয়েছে তথ্য। জীবভেদে তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়। দৈহিক কার্যক্রমের বিচারে যে জীব যত জটিল, তার তথ্য-সংগ্রাহক উপকরণও ততটাই জটিল। উন্নততর জীব হিসেবে মানুষের অবস্থানকে জীবজগতের সবার উপরে ধরা হয়। তাই তার তথ্য-সংগ্রাহক প্রক্রিয়াটি সবচেয়ে জটিল হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষের এই তথ্য-সংগ্রাহক জটিল পদ্ধতি অনেক ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ মানের হয় না। বহু মানবেতর প্রাণী প্রাকৃতিক বিপর্যয় আগে থেকে বুঝতে পারে, মানুষ পারে না। কুকুর জাতীয় প্রাণী অতি উচ্চ-কম্পাঙ্গকের শব্দ শুনতে পায়, মানুষ পায় না। বিড়াল পরিবারের প্রাণীরা রাতের অন্ধকারে যতটা ভালো দেখতে পারে, মানুষ তা পারে না। তাই পরিবেশ থেকে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে মানুষ সকল বিষয়ে উচ্চতর অবস্থানে রয়েছে এমনটা নয়। মানুষের যে সহজাত দৈহিক ক্ষমতা আছে, তার সাথে বুদ্ধির সংযোগে এবং সমন্বয়ে মানুষ অন্যান্য প্রজাতি থেকে উন্নততর। তাই অন্যান্য প্রাণীর সহজাত বিশেষগুণকে আয়ত্ব করতে পারে যন্ত্রের ব্যবহার করে।

আগেই উল্লেখ করেছি- জীবের বেঁচে থাকার জন্য, তার নানা ধরনের তথ্যের প্রয়োজন হয়। এই তথ্যগুলোকে প্রাথমিকভাবে দুটিভাগে ভাগ করা যায়। ভাগ দুটি হলো- দেহগত তথ্য ও বাহ্যিক তথ্য। ক্ষুধার উদ্রেক কিম্বা পেটে ব্যথা, এ দুটোই দেহগত তথ্য। আরে দেহের বাইরের জগতের তথ্য, যা আমরা দেখি, শুনি, স্পর্শিত হই ইত্যাদি।

'কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল'- চর্যাপদের আদি পাঠের প্রথম পংক্তির সরলার্থ করলে দাঁড়ায়− শরীর মহাবৃক্ষস্বরূপ, সে বৃক্ষের পাঁচটি ডাল হলো তার পাঁচটি ইন্দ্রিয়। এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা মানুষ দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শন, ঘ্রাণ ও আস্বাদনের তথ্য পায় । এর প্রত্যেকটির মাধ্যমে মানুষ তার দেহের বাইরের তথ্য সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ইন্দ্রিয়ের জন্য রয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট জৈবিক উপাদন। যেমন−

এর বাইরে একটি বিশেষ সঙ্কেতসংবেদী বিষয়ের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে। এই অংশ রয়েছে শরীরের সমগ্র অংশ জুড়ে। এই অংশ মূলত শরীরের আনন্দ-বেদনার সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। যেমন পেটের ব্যথা হলে— শরীরে যে বেদনাদায়ক অনুভূতির জন্ম হয়, তা দর্শন, শ্রবণ, ঘ্রাণ, আস্বাদন বা স্পর্শের বিষয় নয়। এই জাতীয় বিষয় শরীরের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় অনুভূত হয়। এই বিচারে মানুষের তথ্য সংগ্রাহক প্রক্রিয়ার সংখ্যা দাঁড়ায় ছয়টি। শরীরের এই স্বয়ংক্রিয় তথ্য-প্রদায়ক ব্যবস্থাটি ইন্দ্রিয়ের মধ্যে ফেলা হয়  না। কারণ, এই ব্যবস্থায় শরীরের বাইরের কোনো তথ্য মস্তিষ্ক গ্রহণ করে না।

স্নায়ুতন্ত্র ইন্দ্রিয় বা দেহাভ্যন্তরীণ অনুভব মস্তিষ্কে সঞ্চালনের ফলে মানুষ যে সকল অনুভূতি লাভ করে, এবং এর দ্বারা সে যেভাবে সাড়া দেয়, তার মূলে থাকে স্নায়ুতন্ত্র। এর নিয়ন্ত্রণের অংশটি থাকে মস্তিষ্কে। মস্তিষ্ক সুরক্ষিত থাকে মাথার খুলির ভিতরে। এখান থেকে সুতার মতো যে অংশ মেরুদণ্ডের ভিতর দিয়ে বিস্তৃত থাকে, তাকে বলা হয় সুষম্নাকাণ্ড (spinal cord) । এই সুষম্নাকাণ্ড থেকে ছড়িয়ে যাওয়া বা সরসারি মস্তিষ্ক থেকে ছড়িয়ে যায় বিস্তৃত সুতার মতো তথ্য পরিবাহী কলাগুলো স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে। কার্যকারিতার বিচারে স্নায়ুতন্ত্রকে যেভাবে ভাগ করা হয়ে থাকে, তার ছকটি নিচে দেওয়া হলো।

  • স্নায়ুতন্ত্র
    • কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (Central Nervous System)
      • মস্তিষ্ক (Brain)
      • সুষুম্নাকাণ্ড (Spinal Cord)
    • প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র (Perpheral Nervous System)
      • সোমাটিক স্নায়ু (somatic nervous system)
      • স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র (Automatic Nervous System)
        • সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র (autonomic nervous system)
        • প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র (parasympathetic nervous system)

মস্তিষ্ক স্নায়ুতন্ত্রের সাথে যুক্ত হয়ে, মানবদেহকে নিয়ন্ত্রণ করে। কার্যকারিতার বিচারে মস্তিষ্ক দুই ধরনের কাজ করে। এর একটি হলো, স্বয়ংক্রিয় অপরটি ঐচ্ছিক। স্বয়ংক্রিয় অংশ শরীরের নিজস্ব রীতিতে চলে। সেখানে মানুষের ইচ্ছা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে না। যেমন হৃদপিণ্ডের স্পন্দনের গতি। কিম্বা খাদ্যগ্রহণের পর হজমের প্রক্রিয়া। এগুলো উপর মানুষের ইচ্ছা শক্তি কাজ করে না। মানুষ শরীরের কিছু কিছু কাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেমন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ঔষধ ব্যবহার করা যায়। কোনো কারণে উত্তেজিত হলে, মানুষের হৃদপিণ্ডের গতি বৃদ্ধি পায়। মানুষ তার ইচ্ছা শক্তি দ্বারা উত্তেজনা প্রশমিত করলে হৃদপিণ্ডের গতি হ্রাস পায়। কিন্তু কিছু বিষয়ের উপর মানুষের ইচ্ছা কোনো কাজে লাগে না। দেহের কোষে কোষে পুষ্টি পৌঁছে দেওয়ার কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়। বৃক্কের রক্ত পরিশোধনের কাজও স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়। এরূপ বহু বিষয় মানুষের শরীরে আপনা-আপনি সংঘটিত হয়। এই কাজগুলো মস্তিষ্ক নিজস্ব ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ করে।

আমি ও মন
জগতের সকল জীবিত প্রজাতির দৈহিক কার্যক্রমের জন্য রয়েছে একটি পরিচালক শক্তি। এই পরিচালকের নাম আমি। জীবদেহের স্বয়ংক্রিয় অংশের উপর তার নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু ঐচ্ছিক অংশের উপর আমির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।  আর আমির  ভাবনা ও ইচ্ছা হলো- মন। ভ্রূণ সৃষ্টির শুরুতে স্বয়ম্ভু প্রাণশক্তি তৈরি হওয়ার সাথে সাথেই  সৃষ্টি হয়েছিল মন। 'আমি' ইচ্ছা করে বলেই, আমরা খাই, বা খাই না। এরূপ চোখ খোলা বন্ধের বিষয় ঐচ্ছিক। কিন্তু মানুষ ইচ্ছা করলেই কান বন্ধ করতে পারে না। কিন্তু শব্দ না-শোনার জন্য বাইরে থেকে কান চেপে ধরতে পারে। প্রস্রাব-পায়খানার মতো প্রাকৃতিক কাজ কিছুক্ষণ ধরে রাখা যায়। ইচ্ছা করলে শ্বাস ছোটো-বড় করে নেওয়া যায়। সঙ্গমের বিষয়টিও ঐচ্ছিক। কিন্তু নারীর গর্ভধারণের পর ভ্রূণ সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয়।

লক্ষ্য করা যায় দেহাভ্যন্তরীণ কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়। কিন্তু দেহের বাইরের অংশের কাজটি ঐচ্ছিক। দেহের বাইরের বিষয়টি একবার দেহের ভিতরে প্রবেশ করলে, সেখানে আর মানুষের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। দর্শন, শ্রবণ, আস্বাদ, স্পর্শন, ঘ্রাণ-এর মতো বিষয়গুলোর সাথে দেহের বাইরের বিষয় জড়িত। এগুলো মানুষ গ্রহণ করবে কি করবে না, তা ঐচ্ছিক। কিন্তু একবার দেহের বাইরের অংশ দ্বারা শরীরে ঢুকে পড়লে, সেখানে তার নিয়ন্ত্রণ নেই। যা শুনতে চাই না, তা যদিও শুনে ফেলি, মাঝ পথে তা আর ফেরানো যায় না। মানুষের ঐচ্ছিক কার্যক্রমটি মূলত ঘটে শরীরের পাঁচটি সংবেবদনশীল অংশ দ্বারা। এই সংবেদনশীল অংশগুলোর সাধারণ নাম ইন্দ্রিয়। পরবর্তী অধ্যায়ে 'বোধ ও সংবেদন' অংশে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

জীবের বেঁচে থাকার জন্য এত সব আয়োজন, সব ব্যর্থ হতো, যদি না তার ঐচ্ছিক সত্তা থাকতো। জীব বেঁচে থাকতে চায় বলে, বাঁচে। এই চাওয়াটাই হলো ঐচ্ছিক অংশের মূল কথা। আর সকল ঐচ্ছিক অংশের নিয়ন্ত্রক এবং পরিচালক হলো 'আমি'।

ধর্মতত্ত্বে আত্মা বিষয়ক উপপ্রেয়মূলক (hypothetical) ধারণায় বলা বলা হয়, প্রতিটি জীবের অভ্যন্তরে আত্মা রয়েছে। আত্মাকে প্রতিটি জীবের নিজসত্তার কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিটি জীব এই কেন্দ্রীয় শক্তিকে 'আমি' হিসেবে প্রতিনিয়ত চিহ্নিত করে থাকে। সেই কারণে যা আমি, তাই আত্মা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণ জ্ঞানে আমরা উপলব্ধি করি, আমাদের প্রত্যেকের ভিতরে একটি 'আমি' আছে। এই 'আমি' তার দেহাঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে সকল ঐচ্ছিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায়, এই পরিচালন-কার্যক্রম যার দ্বারা সম্পন্ন হয়, সেই হলো 'আমি'। ব্যাকরণের ভাষায় কর্তা, ভিন্নার্থে প্রভু। দেহ কেটেকুটে যার সন্ধান পাওয়া যায় না, কিন্তু তার অস্তিত্ব আছে। ধর্মমতে এই প্রভুই হলো আত্মা। ধর্মমতে তার বিশ্বাসভিত্তিক ব্যাখ্যা আছে, কিন্তু তা বাস্তব বুদ্ধি দিয়ে বিচার করা যায় না। এর ওজন নেই, ত্রিমাত্রিক জগতে তার কোনো স্থানের প্রয়োজন হয় না। এই কারণে 'আমি' বিমূর্ত সত্তা এবং আত্মার ক্রিয়াশীল অংশ।

জীবের দেহগত সার্বিক কার্যক্রমের সূত্রে, দেহের পরিচালন অংশের সমন্বয়কারী যে স্বয়ম্ভূ শক্তির উদ্ভব হয়। সেই শক্তিই হলো প্রাণশক্তি বা জীবন। এই শক্তি প্রতিটি মানুষের জীবিত দশাকে বজায় রাখার চেষ্টা করে যায়। এই শক্তিই পরিচালক হিসেবে কাজ করে। একটি কম্পিউটারের দিয়ে যখন সাধারণভাবে আমরা লেখালেখি করি, তখন তার পিছনে একজন মানুষ থাকে। এক্ষেত্রে কম্পিউটারের পরিচালককে আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি। কিন্তু চালকবিহীন পর্যবেক্ষণ বিমান চলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এই জাতীয় বিমানে যান্ত্রিকভাবে একটি পরিচালন শক্তি কাজ করে। জীবের ভিতরে যে স্বয়ম্ভূ পরিচালন শক্তি সক্রিয় থাকে, সেই পরিচালন শক্তিই হলো 'আমি'। এই 'আমি' ইচ্ছা করে তাই সে শোনে এবং শোনায়, চলাচল করে এবং চালায়, দেখে এবং দেখায়। এই জাতীয় নানারকম কার্যক্রম 'আমি' পরিচালনা করে। দেহধারী মানুষের 'আমি'র অবস্থান দেহে, তাই দেহকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্বও তার। সে কারণে দেহের ভালোমন্দ নিয়ে তাকে ভাবতে হয়। আমি এক্ষেত্রে কর্তা এবং তাই সে পরিচালকের কাজ করে। 'আমি'র ইচ্ছা এবং ইচ্ছাকে কার্যকরী করার মধ্য দিয়ে যে শক্তির প্রকাশ ঘটে, তা প্রাণশক্তিরই প্রকাশ।

জীবদেহে দুটি পরিচালন পদ্ধতির ঐচ্ছিক অংশের নিয়ন্ত্রক হলো আমি। দেহকে আশ্রয় করে 'আমি' বিদ্যমান। 'আমি'র জন্য শুধু দেহটাই জরুরি নয়, দেহের বাইরের জগৎও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষয়শীল প্রকৃতিতে শরীরটাকে রক্ষার করার জন্য হলেও 'আমি'র প্রয়োজন দেহের বাইরের জগৎটাকে জানা। বাইরের জগতের সাথে 'আমি'র যোগাযোগ ঘটে, দেহাশ্রিত পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের (দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শন, ঘ্রাণ ও আস্বাদন) মাধ্যমে। এদের দ্বারা সংগৃহীত তথ্য মস্তিষ্কের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রক্রিয়কের মাধ্যমে নানা ধরনের ফলাফল প্রদান করে। এই ফলাফলের সূত্রে যে মিশ্র দশা বা দশাসমূহের সৃষ্টি হয়, তা ভোগ করে 'আমি'।

'আমি'র পছন্দ-অপছন্দ তথা ইচ্ছা, মানসিক নানান ধরনের আবেগময় অনুভূতি ইত্যাদি গড়ে উঠে দেহকোষের জিনঘটিত বৈশিষ্ট্যের বিচারে। সহজাতভাবে 'আমি' কিছু প্রবৃত্তি পায়। দেহের বিকাশের সাথে সাথে মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। 'আমি' ধীরে ধীরে প্রাপ্তমনস্ক হয়ে ওঠে দেহের সাথে সামঞ্জস্য রেখে। কখনো এই দুইয়ের বিকাশে অসামঞ্জস্য দেখা দিলে তার প্রভাব পড়ে 'আমি'র উপর। তখন 'আমি'র আচরণও হয়ে ওঠে অস্বাভাবিক। একজন পাগলের 'আমি' অস্বাভাবিক আচরণ করে, তার মস্তিষ্কের সামঞ্জস্যহীনতার কারণে। একটি শিশুর আচরণ শিশুসুলভ হয়, তার মস্তিষ্কের পূর্ণাঙ্গ বিকাশের ধারায় শিশুর উপযোগী ধাপে থাকে বলে। একজন কবির সহজাত ছন্দোজ্ঞান থাকে তার জিনসঙ্কেতে। জিনসঙ্কেতের তাড়নায় কবির মস্তিষ্কে যে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, তাই 'আমি'র ইচ্ছায় কার্যকর হয়ে উঠে। আমি আছি বলেই জগৎ আছে। 'আমি' বুঝতে চায় বলেই জগতের মূল্য আছে। এই বিপুল বিশ্বচরাচর জুড়ে এত আয়োজন, 'আমি' আছি বলেই তার সার্থকতা। অনেক 'আমি' মিলে 'আমরা' হয়ে ওঠে। সকল 'আমি'র সমন্বয়ে গড়ে ওঠে সমাজ। সকল 'আমি'র সমবেত কর্ম হয়ে ওঠে সমবেত কর্মযজ্ঞ। এর জন্য প্রয়োজন আমি-সঙ্গম, সরলার্থে বন্ধুত্ব।

'আমি' জীবের ঐচ্ছিক অংশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রক। এই নিয়ন্ত্রণের জন্য তাকে নানা ধরনের তথ্যের বিচার-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। একই সাথে যে কোনো বিষয় কার্যকর করার জন্য দেহের ঐচ্ছিক অংশগুলোকে পরিচালিত করতে হয়। এসকল কাজে 'আমি' স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগায়। যেমন একজন গাড়ি চালক ইচ্ছা করলো সে তার চলন্ত গাড়িকে থামাবে। এই ইচ্ছা চালক কার্যকর করার জন্য গাড়ির ব্রেক অংশ ব্যবহার করবে। এরপর চালকের ইচ্ছাকে কার্যকর করবে গাড়ির ব্রেকপদ্ধতি। জীবদেহের বিষয়টিও এই রকম। জীবদেহের কোনো কার্যক্রম সচল করার জন্য, প্রথমে তার ভিতরে ইচ্ছা জাগতে হবে। মনের যে অংশে ইচ্ছা জাগ্রত হয়, তা-ই হলো মন। এক কথায় সত্তার ইচ্ছাই হলো মন। 'আমি' যখন মনে করে সে হাত নাড়াবে, তখন সে সে ইচ্ছাকে কার্যকর করার জন্য উদ্যোগী হয়। আর এই উদ্যোগের সূত্রে দেহের যান্ত্রিক অংশকে মস্তিষ্ক বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে জাগ্রত করে এবং 'আমি'র ইচ্ছাপূরণের আদেশ পালন করে।

ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যা কিছু 'আমি'র কাছে প্রকাশ পায়, 'আমি' সিদ্ধান্ত নেয় সে অনুভূতি অনুসারে কি করবে। 'আমি' ইচ্ছা করলো− গান শুনবে বা শুনবে না। অর্থাৎ 'আমি'র মন নামক অংশে এই ইচ্ছা জাগ্রত হবে। এরূপ মনে নানা ধরনের ইচ্ছা জাগ্রত হতে পারে। এই ইচ্ছা কার্যকর করা উচিত কি অনুচিত মন তার ধার ধারে না। এই বিচারে মন স্বেচ্ছাচারী। কিন্তু 'আমি' স্বেচ্ছাচারী নয়। 'আমি'র ইচ্ছায় প্রাথমিকভাবে যে ভাবনাই জাগ্রত হোক না কেন, 'আমি' তা বিচার করতে বসে। এই বিচারে যে জয় যুক্ত হয়, 'আমি' তা-ই করে। ফলে মন দ্বৈত-সত্তার ভূমিকা নেয়। এক্ষেত্রে আমির ভূমিকা হয়ে উঠে আদালতের মতো। মনের স্বেচ্ছাচারী ভাবাবেগ এবং তাকে অভিজ্ঞতার আলোকে বিচার করার ইচ্ছা, উভয়ই একটি অখণ্ড মনের দুটি অংশ হিসেবে প্রকাশ পায়। 'আমি' মনের উভয় অংশ নিয়ে ভালোমন্দের তুলনামূলক বিচারে বসে।  'আমি'র ইচ্ছাতেই এই কার্যক্রম চলতে থাকে। ফলে  'আমি'র আর একটি ইচ্ছা আগের ইচ্ছার কাতারে এসে হাজির হয়। আবার সবশেষে 'আমি' কোনটি গ্রহণ করবে, তার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই সিদ্ধান্ত দ্বারা চালিত হয়। এর ফলে মনের আরও একটি অংশের সৃষ্টি হয়। এই কারণে মন বলে যে সত্তাকে উল্লেখ করা হয়, তা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইচ্ছার সমন্বিত অখণ্ড অংশ হিসেবে উপস্থাপিত হয়। এই কারণে মন বড়ই জটিল। এক্ষেত্রে  'আমি'কে দক্ষ বিচারকের ভূমিকায় থাকতে হয়। কখনো কখনো মন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। ফলে ইচ্ছা বা মনের অস্থিরতার ভিতর দিয়ে 'আমি' অসহায় হয়ে পড়ে। একটি 'আমি' অন্য কোনো 'আমি'র সাহায্য নিতে পারে। এটাও মনের অংশ হয়ে যায়। 'আমি' মস্তিষ্কের স্মৃতিভাণ্ডার থেকে অভিজ্ঞতাকে উত্তোলন করে। উল্লেখ্য 'আমি' যে স্মৃতি ভাণ্ডার থেকে অভিজ্ঞতা তুলে আনার ইচ্ছা করে, তাও মনের আর একটি অংশ। এই গ্রন্থের 'স্মৃতি ও বিস্মৃতি' অংশে এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

'আমি' কোনো বিষয়কে মস্তিষ্কের স্মৃতিভাণ্ডার থেকে যখন তুলে আনার চেষ্টা করে। 'আমি'র এই ইচ্ছার ভিতর দিয়ে মনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যায়। মনের প্রার্থিত বিষয় যখন স্মৃতি থেকে উত্তোলিত হয়ে উপস্থাপিত হয়, তখন তা 'আমি'র ইচ্ছাকেই পূরণ করে। এই পূরিত ইচ্ছার সূত্রে প্রাপ্ত ফলাফলকে স্মরণ বলা যায়। আর এই চেষ্টা ব্যর্থ হলে বলা হয় মনে পড়ছে না। অর্থাৎ মনের ক্ষেত্রটিতে প্রার্থিত বিষয়টি স্থান লাভ করে নি। সব মিলিয়ে দাঁড়ায় মন হচ্ছে স্বয়ম্ভূ বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে উদ্ভূত 'আমি'র ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার একক বা পারস্পরিক ঐচ্ছিক কার্যক্রমের ক্ষেত্র।

জন্মগত সূত্রে মানুষ একটি দেহ পায়। জীনসঙ্কেতের নির্দেশে আদি ভ্রূণ একটি পূর্ণাঙ্গ দৈহিক রূপ পায়। দৈহিক উপাদানের কার্যকারিতার বিচারে আত্মা ক্ষমতা ভোগ করে। এই আত্মার ইচ্ছা যে মন তৈরি হয়, তা বিভিন্ন দশার ভিতর দিয়ে পূর্ণতার পথে অগ্রসর হয়। মনের এই যাত্রাপথ অসীম। দেহ বুড়িয়ে যায়, জীবধর্মের অমোঘ নিয়মে দেহের মৃত্য ঘটে, কিন্তু মনের যাত্রাপথ শেষ হয় না। আমৃত্যু তার অসীমের পথে যাত্রা।

সৃষ্টি লগ্ন থেকে মনের বিকাশ ও পুষ্টির জন্য  একটি বিশেষ প্রক্রিয়া কাজ করে। মনের অসীম যাত্রা পথে সে প্রক্রিয়াটি সক্রিয় থাকে। যদি কখনো এই প্রক্রিয়া থেমে যায়, তখনই মনের বিকাশ বন্ধ হয়ে যায়। এর শুরু হয় অনুভব থেকে আর শেষ হয় চৈতন্যে। 'অনুভব থেকে চৈতন্য'-ই মনের বিকাশের শেষ কথা নয়। একে বলা মনোবিকাশের একটি দশা মাত্র। এই দশার ভিতরে রয়েছে আরও নানারকম উপ-দশা। এই উপদশার স্তর অতিক্রম করে চৈতন্যের সৃষ্টি হয়। এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরার আগে, এর কাঠামোগত দিক সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়া যেতে পারে।
  • ১. মনের আদি দশায় জন্ম হয় অনুভব। অনুভব মানুষের স্মৃতির অংশ হিসেবে স্থান নেয়। ইন্দ্রিয় এবং অতীন্দ্র অনুভব দিয়ে এই দশার উদ্ভব হয়।
  • ২. মন সে অনুভবকে বুঝতে চায়। এর ভিতর দিয়ে মন অর্জন করে উপলব্ধি। এই উপলব্ধি থেকে মন জানে। প্রাথমিক স্তরের এই জানাটা মৌলক পর্যায়ের। একে বলা যায়- অভিজ্ঞা।
  • ৩. বহুবিধ অভিজ্ঞা থেকে জন্মলাভ করে জ্ঞান।
  • ৪. জ্ঞানের দ্বারা সৃষ্ট উপলব্ধি থেকে জন্ম নেয় অভিজ্ঞতা। এর ব্যবহারিক বিষয়টি নির্ধারিত হয় বিবেচনার দ্বারা।
  • ৫. নানাবিধ অভিজ্ঞতা জাত জ্ঞান এবং  নতুন পরিস্থিত সাপেক্ষে যে জ্ঞানের প্রকাশ পায়, সে জ্ঞান থেকে জন্ম নেয় প্রজ্ঞা।
  • ৬. প্রজ্ঞার দ্বারা উপলব্ধির সূত্রে জন্মলাভ করে চেতনা।
মানব মনের আদি স্তরে অনুভবের জন্ম হয়, ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে। আর অনুভবের প্রাথমিক স্তরে এর বিস্তারঘটে ইন্দ্রের সংবেদনশীলতার গুণে। তাই পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করবো- অনুভব ও সংবেদন সম্পর্কে।