১.৫
অনুভব ও সংবেদন

ইন্দ্রিয় দ্বারা বাহিত সঙ্কেতসমূহ, মস্তিষ্কের দ্বারা প্রক্রিয়াকরণের মধ্য দিয়ে যে চূড়ান্ত ফলাফল (output) হিসেবে প্রকাশিত হয়, 'আমি' নামক সত্তা তা গ্রহণ করে। প্রতিটি সত্তার বৈশিষ্ট্য অনুসারে প্রকাশ পায় সত্তাগুণ (attribute)। এই সত্তাগুণের সাথে যখন মানুষের পরিচয় ঘটে, তখন মনের ভিতরে যে ভাবের আবেশ তৈরি হয়, সাধারণভাবে তাকে বলা হয় অনুভব (feeling)। এর দ্বারা মনোজগতের ভাবগত অবস্থার সৃষ্টি হয়। দশাটি হলো মনোগত দশা।  এই দশায় নানা ধরনের নেতিবাচক, ইতিবাচক বা নিরপেক্ষ ভাবের সৃষ্টি হতে পারে। ফলে অনুভবকে কখনো বিচার করতে হয়, মনোগত দশার বিচারে, কখনো ইন্দ্রিয় দ্বারা বাহিত অনুভূতির ভিতর দিয়ে। কার্যত অনুভবের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায় এই দুই ধরনের অনুভূতির সমন্বয়ে। এই আলোচনার প্রাথমিক ধাপে এই দুটি অনুভবকে পৃথকভাবে চেনার চেষ্টা করবো।

ইন্দ্রিয়-অনুভূতি

মানুষের জীবনযাত্রায় ইন্দ্রিয়ের ভূমিকা প্রবল। ইন্দ্রিয়ভেদে অনুভবের প্রকৃতিও ভিন্ন ভিন্ন। অর্থাৎ 'আমি'র কাছে প্রতিটি অনুভূতি পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য নিয়ে উপস্থিত হয়। ধরা যাক, কোনো বস্তুকে হাত দিয়ে স্পর্শ করা হলো। প্রাথমিকভাবে স্পর্শেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বস্তুটি সম্পর্কে কিছু সঙ্কেত মস্তিষ্কে পৌঁছে যাবে। এই সঙ্কেত মস্তিষ্কের বিভিন্ন তথ্য প্রক্রিয়কের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত হয়ে ফলাফল প্রকাশ করবে। আর এই ফলাফল 'আমি' গ্রহণ করবে। 'গ্রহণ করবে' কথাটা এই জন্যই বলা যে, অনেক সময় 'আমি' অনেক ফলাফলকে অগ্রাহ্য করে। যেমন কোনো একজন গভীরভাবে কোনো বিষয় নিয়ে ভাবছেন, সে সময় তাঁর কাছে আশপাশের শব্দ, দৃশ্য স্পর্শ ইত্যাদি গৃহীত হয় না। এমন কি চোখ খোলা রেখেও কেউ কিছু দেখে না। তাই 'আমি' যতক্ষণ না ইন্দ্রিয়বাহিত এবং মস্তিষ্কের প্রক্রিয়াজাত কোনো তথ্যকে গ্রহণ করে, ততক্ষণ তা উপেক্ষিত তথ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। আর যা 'আমি' গ্রহণ করবে, তার মাধ্যম অনুভবের সৃষ্টি হবে।

ইন্দ্রিয়সমূহ প্রাথমিকভাবে যে সকল বার্তা মস্তিষ্কে পাঠায় তার সমন্বয়ে মনোজগতে জ্ঞানের উদ্ভব হয়। এর প্রক্রিয়াগত নাম জ্ঞান-প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে মনোজগত মৌলিক জ্ঞান প্রক্রিয়ায় উন্নীত হয়
(basic cognitive process)। মানুষের ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রাপ্ত বা জ্ঞাত সকল উপলব্ধি এই প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়ে উঠে। সাধারণভাবে একে বলা হয় সংবেদন (sensation)। সংবেদনের প্রক্রিয়াটি চলে মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের সোমাটিক অংশে (somatic nervous system)। উল্লেখ্য এটি মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের একটি অংশ। এই অংশের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অংশের সাথে কেন্দ্রীয় মস্তিষ্ক যোগাযোগ রক্ষা করে। এর ফলে কেন্দ্রীয় মস্তিষ্ক দেহের বিভিন্ন অংশকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই সংবেদনের কারণে মানুষ যতধরনের অনুভব লাভ করে, তার সাধারণ নাম অনুভব। কিন্তু এর অন্যান্য অনুভব থেকে একে পৃথক করার জন্য স্নায়ু-অনুভব বললে সুষ্পষ্ট হয়।

মানুষের দেহের বাইরে থেকে আগত তথ্যের গ্রহণ এবং তা মস্তিষ্কে প্রেরণের যে জৈবিক পদ্ধতি, তারই সমন্বিত নাম হলো ইন্দ্রিয়। ইন্দ্রিয়ের প্রকরণ বিভাজনে এদের নামগুলো হলো দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শন, আস্বাদন ও ঘ্রাণ। এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে, তাদের উপযোগী কোনো সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছালে, প্রাথমিকভাবে যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, তাই হলো সংবেদন (sensation)। তাই পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সূত্রে সৃষ্ট সংবেদনের সংখ্যাও ৫টি। নিচে পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সূত্রে পাঁচটি সংবেদনের সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো।

দৃশ্যামান বর্ণালি  সারণী
রঙ কম্পাঙ্ক তরঙ্গদৈর্ঘ্য
বেগুনি ৬৬৮-৭৮৯টেরাহার্জ ৩৮০-৪৫০ ন্যানোমিটার
নীল ৬০৬-৬৬৮টেরাহার্জ ৪৫০-৪৯৫ ন্যানোমিটার
সবুজ ৫২৬-৬০৬ টেরাহার্জ ৪৯৫-৫৭০ ন্যানোমিটার
হলুদ ৫০৮-৫২৬ টেরাহার্জ ৫৭০-৫৯০ ন্যানোমিটার
কমলা ৪৮৪-৫০৮টেরাহার্জ ৫৯০ -৬২০ ন্যানোমিটার
লাল ৪০০-৪৮৪ টেরাহার্জ ৬২০-৭৫০ ন্যানোমিটার

আলোকবিজ্ঞানের মতে, বস্তুর পরমাণুর ইলেক্ট্রন এক স্তর থেকে অন্যস্তরে স্থানান্তরের সময় আলোকরশ্মি হিসাবে শক্তি শোষিত বা বিকিরিত হয়। এর ফলে বর্ণালির সৃষ্টি হয়। শক্তি শোষিত হওয়ার জন্য সৃষ্ট বর্ণালিকে বলা হয় অনুজ্জ্বল বর্ণালি  (dark spectrum) বা শোষিত বর্ণালি  (absorption spectrum)। পক্ষান্তরে শক্তি বিকিরিত হওয়ার জন্য সৃষ্ট বর্ণালি কে বলা হয় বিকিরণ বর্ণালি  (emission spectrum) বা উজ্জ্বল বর্ণালি  (hight spectrum)

রঙ (colour, color)
দৃশ্যমান বর্ণালি  সারণীতে আমরা যে রঙের নমুনা পাই, তার সবই আমরা কোনো বস্তুর রঙ হিসাবে দেখতে পারি। কোনো বস্তু দেখার জন্য প্রয়োজন তিনটি মৌলিক উপাদান। এই তিনটি বিষয় হলো
    . যে বস্তুটি দেখা হবে তার উপস্থিতি
    . দেখার জন্য দর্শ দৃষ্টিশক্তি
    . দেখার উপযোগী পর্যাপ্ত লো

প্রথম দুটি শর্ত পূরিত হলে তৃতীয় শর্তটি বিবেচনায়
সবে। রঙের প্রকৃতি নির্ভর করে লো এবং বস্তুর প্রকৃতির উপর। একটি আপতিত আলো কোনো সুনির্দিষ্ট রঙের হতে পারে। দৃশ্যমান আলোর আদর্শ রূপ হলো
দৃশ্যমান বর্ণালির সকল সদস্য মিলে যে আলো তৈরি করে, তার মিশ্র রূপ। এই বিচারে সূর্যের আলোকেই আদর্শ আলো হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আমাদের দর্শনেন্দ্রিয়ের বিচারে এর নাম সাদা।

কোনো বস্তু থেকে লো প্রতিফলিত হয়ে চোখে এসে পড়লে, তখন উক্ত বস্তু দেখা যায়আর একটি আদর্শ আলো কোনো বস্তু দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে পড়লে, তখন ওই বস্তু যে রঙে দেখাবে, তাই হবে ওই বস্তুর রঙ অর্থাৎ বস্তুর রঙই হলো প্রতিফলিত আলোর রঙ।  প্রকৃতিতে আমার বিভিন্ন বস্তু বিভিন্ন রঙে দেখি, এর মূলে রয়েছে বস্তুর নিজস্ব ধর্ম। প্রতিটি দৃশ্যমান বস্তুর আলো প্রতিফলন ও শোষণের ক্ষমতা আছে। যখন একটি আদর্শ আলোর কিছু রঙকে কোনো বস্তু শোষণ করে এবং কিছু রঙকে প্রতিফলিত করে এবং ওই প্রতিফলিত রঙ যখন আমাদের দর্শনেন্দ্রিয়ে অনুভূতি জাগায়, তখন প্রতিফলিত রঙের বিচারে আমরা বস্তুকে ওই রঙে দেখে থাকি। ধরা যাক, একটি বস্তু একটি আদর্শ আলোর নীল রঙ ছাড়া বাকি সকল রঙ শোষণ করছে। এক্ষেত্রে নীল লো উক্ত বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে চোখে এসে পড়বে। সে কারণে উক্ত বস্তুকে নীল রঙ হিসাবে দেখা যাবে কোনো রঙই যখন প্রতিফলিত হয় না, তখন তার রঙ হয় কালো। আর সকল রঙের প্রতিফলনে যে অনুভূতির তৈরি হয়, তাকে বলা হয় সাদা।

মূল লাল =FF0000

পরিবর্তিত লাল=FE0000 আরও একটু পরিবর্তিত লাল=FD0000


 
   

মানুষ তার দর্শনেন্দ্রিয়ের ক্ষমতার দিয়ে যত রঙ দেখে, তার সবগুলোকে পৃথক পৃথকভাবে নামকরণ করতে পারে না। রঙের সামান্য হেরফের চোখ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত কাছাকাছি দুটি রঙের পার্থক্য মানুষ বুঝতে পারে না। পাশের চিত্রে কাছাকাছি মানের লাল রঙের তিনটি নুমনা দেখানো হলো।

চোখের দেখায় যে সকল রঙকে একই রঙ মনে হয়, বর্ণালি  বিশ্লেষণে তা এক নয়। এমন কি একই রঙে ছাপানো কাপড় বা কাগজের রঙ সর্বত্র একই মানের নাও হতে পারে। তারপরেও মানুষ বহু রঙকে আলাদা আলাদা নামে চিহ্নিত করে থাকে। চোখের দেখায় মানুষ মূলত একটি রঙের গড় মানকেই বিচার থাকে। বিভিন্ন ভাষায় এই সকল রঙকে নানা রকম নামে অভিহিত করা হয়। সাধারণভাবে লাল, সবুজ, হলুদ, নীল ইত্যাদি নামে রঙের নামকরণ করার পাশাপাশি কোনো বস্তুর রঙের সাথে তুলনা করে রঙের নামকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন কাঠ রঙ, জলপাই রঙ, সোনালি রঙ ইত্যাদি।

রঙচক্র (colour wheel)
বর্ণালি  অনুসারে রঙের ক্রম পরিবর্তনের ধারায় যত রঙ পাওয়া যায়, এদের খুব কাছাকাছি রঙ মানুষ আলাদা করে শনাক্ত করতে পারে না। কিন্তু এই ধারায় অনেকখানি দূরত্ব পেরিয়ে মানুষ আলাদা আলাদা রঙ হিসেবে শনাক্ত করতে। অবশ্য কিছু কিছু বর্ণান্ধ মানুষ অনেক রঙকে দেখতেই পায় না। মানুষের দেখার গড় মান অনুসারে রঙের ক্রম পরিবর্তনের ধারাকে চক্রাকারে সাজালে রঙচক্র পাওয়া যায়। রঙ চক্রে সমদূরত্বে ৩টি রঙ পাওয়া যায়। এই রঙ তিনটি হলো নীল, হলুদ ও লাল। এই কারণে এই তিনটি রঙকে বলা হয় প্রাথমিক রঙ। বাকি সকল রঙকে বলা হয় মিশ্র রঙ। হলুদ আর নীল রঙ মিলে তৈরি হয় সবুজ রঙ। অন্যদিকে লাল আর হলুদ মিলে তৈরি হয় কমলা।

রঙিন টেলিভিশনে মৌলিক রঙ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তিনটি রঙকে। এই রঙ তিনটি হলো লাল-সবুজ-নীল [RGB (Red-Green-Blue)]। এইমান বিচার করা হয় ২৫৬টি গাণিতিক মানে। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানটি হলো২৫৫, আর সর্বনিম্ন মান হলো ০। ষোড়শাঙ্কিক (Hexadecimal) মানে এই সঙ্কেত ধরা হয়, যথাক্রমে 0 1 2 3 4 5 6 7 8 9 A B C D F প্রতিটি রঙের জন্য মোট ৬ অঙ্কের মান ব্যবহার করা হয়। এর ভিতর ৩ জোড়া অঙ্ক ব্যবহার করা হয়, মৌলিক রঙের জন্য। এক্ষেত্রে রঙের সর্বোচ্চ মান ধরা হয় FF। রঙের শূন্যতা অর্থে ব্যবহার করা হয় 00। এক্ষেত্রেও RGB (Red-Green-Blue) সূত্রই অনুসরণ করা হয়।

রঙের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে রঙকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ ৩টি হলো

উষ্ণরঙ: রঙচক্রের হলুদ থেকে থেকে লাল পর্যন্ত পর্যন্ত সকল রঙকে উষ্ণ রঙ বলা হয়। এর কেন্দ্রে রয়েছে লাল। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশ বড়। এই কারণে বাহ্যিক দৃষ্টিতে কাছে নিয়ে আসে এবং বড় দেখায়। এর ফলে মনে উদ্দীপনা ও উত্তাপের সৃষ্টি করে। এই কারণে একে উষ্ণ রঙ বলা হয়। মনে সাহস সঞ্চারে লাল রঙ বিশেষ ভূমিকা রাখে। উত্তেজনা সৃষ্টিতে লালকে ব্যবহার করা যায়। লাল থেকে হলুদ পর্যন্ত কমবেশি এই ভাব বজায় থাকে। তবে লাল থেকে রঙটা নীলের বিপরীত দিকে যতটা অগ্রসর হয়, ততটাই লালের সামগ্রিক প্রভাব কমতে থাকে। এই শ্রেণির অন্যান্য রঙগুলোকে যেভাবে বিচার করা হয়, তা হলো

  • লালচে কমলা: উষ্ণ, অগ্রগামী, সাহসী এবং শক্তিশালী

  • কমলা: উষ্ণ, প্রাণবন্ত, আনন্দপূর্ণ, এবং উৎফুল্লপূর্ণ

  • হলুদাভ কমলা: উষ্ণ, প্রাণবন্ত, আনন্দপূর্ণ এবং প্রফুল্ল

  • হলুদ: উষ্ণ, প্রাণবন্ত, আনন্দপূর্ণ, সুখদায়ক, বন্ধত্বপূর্ণ এবং প্রফুল্ল

শীতল রঙ: রঙচক্রের বেগুনি থেকে সবুজ পর্যন্ত সকল রঙকে শীতল রঙ বলা হয়। এর কেন্দ্রে রয়েছে নীল। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত ছোট। এই কারণে এই রঙ বস্তুকে দূরবর্তী করে তোলে এবং আকারে ছোটো করে। এই উভয় বৈশিষ্ট্যের ভিতর দিয়ে এই রঙ মনে শান্তভাব জাগিয়ে তোলে। ফলে মন সংযত হয়। ধ্যানের জন্য নীল রঙ মনের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। নীলরঙ মনে রহস্যময়তারও সৃষ্টি করে। নীলের উভয় পাশের  দুটি রঙ-এ এর প্রভাব থাকে। তবে তাতে হেরফের থাকে। এই শ্রেণির অন্যান্য রঙগুলোকে যেভাবে বিচার করা হয়, তা হলো

  • নীলচে বেগুনি: শীতল, পরিপক্ব, শান্ত ও রক্ষণশীল

  • বেগুনি: শীতল, মর্যাদাপূর্ণ, রহস্যময়, অবসাদপূর্ণ

  • নীলচে সবুজ: শীতল, শান্ত, আনন্দময় এবং সংযত

  • সবুজ: শীতল, শান্ত, আনন্দময়, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সংযত

মিশ্রভাবাপন্ন রঙ: উষ্ণ এবং শীতল রঙের মধ্যবর্তী দুটি রঙকে মিশ্রভাবাপন্ন রঙ বলা যায়। এই দুটি রঙ হলো হলুদাভ সবুজ এবং লালচে বেগুনি। এর ভিতরে লালচে বেগুনি রঙ নীল থেকে বেশি দূরে এবং লালের নিকটবর্তী হওয়ায় উষ্ণতার প্রভাব বেশি থেকে। কিন্তু নীলভাব থাকার কারণে এই উষ্ণতা তীব্রতর হয়ে উঠে না। এতে লালের উত্তেজনা থাকে আবার নীলের রহস্যময়তাও থাকে। উভয় মিলে রঙটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে।

হলুদাভ সবুজ রঙটি লাল থেকে বহু দূরে। সেই তুলনায় এই রঙটি নীলের কাছে অবস্থিত। এই রঙে নীলের প্রভাব না থাকলেও সবুজের প্রভাব থাকে, ফলে এটি প্রশমিত উষ্ণ রঙে পরিণত হয়। এই রঙটি উত্তেজনাপূর্ণ এবং আনন্দদায়ক। সবুজের প্রভাবে এই রঙে শান্তভাব থাকে।

রেখা ও রঙ ছবির ছন্দের মূল উপাদান।
সচল দৃশ্যের গতি বোঝা যায়, তার চলনের মধ্য দিয়ে। মন না চাইলেই বলতেই হয়, দৃশ্যটির ভিতরে গতি আছে। কিন্তু অচল দৃশ্যের গতি লুকিয়ে থাকে। গতির কারণেই দৃশ্য থাকে অচল, কিন্তু মন থাকে গতিময়। চোখের দেখার গতির স্থিরচিত্রের লুকানো গতি ক্রিয়াশীল থাকে।

পিলফর্ম প্যাপিলি ছাড়া সকল প্যাপিলিতে স্বাদ কোরক (Taste Bud) থাকে। স্বাদকোরকে থাকে তথ্য সংগ্রাহক কোষ। এই কোষ থেকেই স্বাদ-তথ্য স্নায়ুকোষ দ্বারা বাহিত হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জিহ্বার মধ্যভাগে কোনো স্বাদের কোরক থাকে না। অন্যান্য স্বাদগ্রাহক কোরক যুক্ত প্যাপিলির দ্বারা যখন স্বাদ-তথ্য মস্তিষ্কে পৌঁছায়, তখন একই সাথে সকল স্বাদের অনুভব সৃষ্টি হয়। এরপর সকল স্বাদের সম্মেলনে যে যৌগিক স্বাদের অনুভব সৃষ্টি হয়, সেটাই মানুষ অনুভব করে।  

মনোগত অনুভব
অনুভূতি দ্বারা মনোজগতে নানা মনোগত-দশার সৃষ্টি হয়। এই দশাসমূহের উদ্ভব ঘটতে পারে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা বা অতীন্দ্রয় কোনো ভাব থেকে। মূলত যে কোনো বিষয় জানার বা উপলব্ধির মধ্য দিয়ে মনোজগতে এই দশার (state) সৃষ্টি হয়। মনোগত এই দশা থেকে কখনো বিশ্বাসজাত বা পরিবেশগত অনুভবের জন্ম দেয়।

ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নানা ধরনের অনুভব মানুষ পায়। এছাড়া মানুষের দেহাভ্যন্তরীণ অনুভূতি থাকে। এর সাথে থাকে ইন্দ্রিয়-গ্রাহ্য নয় এমন অনুভূতি। এই বিচারে অনুভবকে প্রাথমিকভাবে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। এই ভাগ দুটি হলো- ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য প্রত্যক্ষ অনুভব ও অতীন্দ্রিয় অনুভব।

উৎসের বিচারে যেকোনো ধরনের অনুভব তিন ধরনের হতে পারে। এই ধরন ৩টি হলো

প্রতিটি অনুভবই একটি বার্তা ধারণ করে। এই বার্তা যখন মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয়, তখন তা স্মৃতির অংশ হয়ে যায়। পরে প্রয়োজন মতো সেই বার্তা স্মৃতি থেকে উত্তোলিত হয়। ধারাবাহিক এই আলোচনার পরবর্তী ধাপে আলোচনা করবো স্মৃতি নিয়ে।