অবেলায়
এক
অবেলায়-
অবেলায় প্রিয়তম এ যে অবেলায় !
তেয়াগিয়া বালিকার শরম (ভরম) সব লাজ
খুলে দিলে হৃদয়ের চির-রুদ্ দ্বার যবে আজ,
সংকোচের নিষ্ঠুরতা দলি দুটি পায়
আত্মপ্রকাশিলে এসে দীপ্ত গরিমায়,-
মরমের কথা
চাপা ব্যাকুলতা
স্রোত হয়ে বয়ে গেল ক্ষিপ্ত বেদনায়,-
অবেলায়-
অবেলায় প্রিয়তম এ যে অবেলায়।
দুই
দুনিয়ার বিষ-মাখা শত তীক্ষ্ণ তীর
কলিজা করেছে চৌচির,
নীল হয়ে গেছে সারা বুকের রুধির,-
বেদনার অবিশ্রান্ত ঘায়ে
সোনার দেউল গেছে চুরমার হয়ে,-
তবুও একাটি এই জীবনের তীরে
রাখিয়াছি প্রাণপণে সারা বক্ষ ঘিরে
তোমারে সে নিবেদিত মম অর্ঘ্য-ডালি,
ওগো দেবি, আজো শুধু পূত অশ্রু ঢালি!
সে ব্যথা কি এতদিনে বেজেছে হিয়ায়?
কেন এলে পথে পুন জীবন-সন্ধযায়?
অবেলায়
অবেলায়. প্রিয়তম এ যে অবেলায়!
তিন
মনে পড়ে যৌবনের পশরাটি শিরে
যখন আসিতেছিনু নিরাশায় ফিরে,-
অজয়ের কুলে
'কি জানি কেমনে দুটো গুলঞ্চের ফুলে
সব গেনু ভুলে!
শত সাধনার সেই হিমখানি মম
বিকানু তোমার পায়ে, ওগো প্রিয়তম!
লাজ-মৌন তুমি
মাথা নত করে ছিলে বনলতা তুমি,-
তারপর?
তারপরে, হায়।
তুমি কোথা ভেসে গেলে, আমি বা কোথায়!
আজো সেই প্রশ্ন জাগে, 'কোথায়? কোথায়?'
মাঝ-পথে কোথা হতে এসে
'আসিয়াছি' বলি প্রিয় ডাক দাও হেসে,-
ছি ছি হাসি যাবে পুন আখি-নীরে ভেসে
ঐ শোনো ডাক যত বন-লতিকায়,-
অবেলায়-
অবেলায় প্রিয়তম এ যে অবেলায় !
চার
মনে পড়ে, অদেখার কত সে বরষ,
স্বপনের ব্যথা-ভরা কত সে হরষ,
স্বপ্ন-অবসানে পুন সারা বিশ্ব জুড়ে
সে কি কান্না ব্যর্থতার মাথা খুঁড়ে খুড়ে-
আজ প্রিয় সব মনে পড়ে।
তারপর!
তারপর মূঢ় এক শান্তি এল নেমে,-
প্রিয়তম, আজ সব চাওয়া গেছে থেমে।
বেদনার মাঝে সুপ্ত আনন্দের রেখা
আজি এ শেষের দিনে দিয়াছে সে জ্যোতি হয়ে দেখা।
কোথা ছিল এত আলো এত আঁধিয়ায়?
আর কেন দেবি এ ডাক শোনা যায়
সব-ভালো দেশ হতে 'আয় আয় আয়'
(মম) একা পথে একা সুর এক বাজি যায়-
অবেলায়
অবেলায় প্রিয়তম এ যে অবেলায় !
সাধনা পত্রিকার 'কার্তিক ১৩২৭' সংখ্যায় কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।