চলব আমি হালকা চালে

চলব আমি হালকা চালে
পলকা খেয়ায় হাওয়ার তালে,
কুসুম যেমন গন্ধ ঢালে
                তরল সরল ছন্দে রে।
যেমন চলার ছন্দ লুটে
চন্দ্র ডোবে সূর্য উঠে,
সন্ধ্যা সকাল সমীর ছুটে
                যেমন সে আনন্দে রে॥
নাই বা হলেম মস্ত ভারি,
নাই হল ঘর লাখ-দুয়ারী,
বিশে ঘোড়া দশটা দ্বারী
                ভিড় যে দেওয়ান গোমস্তার।
ভারিকি কি! উঠতে গেলে
স্কন্ধে করে তুলবে ঠেলে,
                চাইনে সে ভার, নমস্কার॥
যে ভার বয়ে রাখাল ছেলে
মাঠে মাঠে বেড়ায় খেলে,
হাতের বেণু দেয় সে ফেলে
                একটু যদি ভার ঠেকে।
বসে মাটির সিংহাসনে
মাঠের সপ্ত রাজ্য গোনে,
দুন্দুভি তার বাজছে শোনে
                সাত সমুদদুর পার থেকে॥
এরোপ্লেন্‌ ঐ মোষ গোঙানো
ঢাউস যেন আকাশ-দানো,
বিরাট বিপুল ভয়-দেখানো
                চাইনে হতে চাইনে, ভাই!
হালকা পাখার পাল তুলে সে
পদ্ম যেন চলছে ভেসে,
                অমনি পাখায় উড়তে চাই॥
চাঁদের দেশে চরকা বুড়ি
কাটছে সুতো যাচ্ছে উড়ি,
তেমনি উদাস গগন জুড়ি
                চলব উড়ে হালকা বায়।
বুদ্বুদ-জল-বিম্ব যেমন
হাওয়ায় উড়ায় রাঙায় কিরণ,
স্বপন-পরীর যেমন উড়ন
                তেমনি এ প্রাণ উড়তে চায়া।
মস্ত জাহাজ ব্যস্ত ভারি
সিন্ধু ডাকাত জাল-পশারি,
মীনের ভীতি ধ্বংসচারী
                চাইনে ভাই এ জল-শকুন।
ছন্দ-দোদুল আমার তরী-
আমার তরী সলিল-পরী,
নাচবে ঢেউএর নৃপুর পরি,
                উজান পানে টানবে গুণ॥
আনব কাগজ আনব কেয়া
গড়ব আমার ঠুনকো খেয়া,
অশথপাতার ভেঁপুর দেয়া
                বাজবে ঘন, হাকবে জোর-
চাঁদ সদাগর আসছে ওরে
রত্ন-মানিক বোঝাই করে,
সপ্ত ডিঙা ফিরছে ঘরে
                ফিরছে বেউলো লখিন্দোরা॥
সাবমেরিনের মরণ-নীতি
ভরা ডুবি করছে নিতি,
কুমির হতেও ভীষণ রীতি
                ডূব দিয়ে সব খাচ্ছে জল!
আমি হব পানকৌড়ি
সঙ্গে সাথী মীন-গৌরী,
ফিরব ঘুরে জল-দেউড়ি
                দেখব জলের শীতল তল॥
ভাবছ বুঝি, বাঃ কি মজা,
রেলের গাড়ির লাইন সোজা
লক্ষ লোকের বইছে বোঝা
                ঝড়ির সনে দিচ্ছে রেস্‌!
আমার ভরসা চরণ-নেয়ে,
মাঠের বাউল চলব ধেয়ে,
পথের সকল ছেলে-মেয়ে
                চিনবে আমায় জানবে দেশ॥
আবার পথে ফিরব যবে
সবাই ঘিরে কুশল কবে, কবে,
সুদূর আমার নিকট হবে
                সকল যে ঘর ইস্টিশান!
বদর মোর সকল ঘাটে
গহন বনে ধানের মাঠে,
আমার সহজ ছন্দ-নাটে
                বন্ধ সারা সৃষ্টিখান॥
আমার রাখাল আমার চাষি
সবাই বলে-ভালোবাসি।
বিদায়কালে বলি, 'আসি!"
                'যাই' এখানে বলতে নাই।
আমার আলাপ জলে স্থলেস্থলে
সহজ চলায় চোখের জলে,
লতা ছিড়ে কুসুম দলে
            হয় যে আমায় চলতে, ভাই॥

মৌচাক
আশ্বিন ১৩৩৪