চড়ুই পাখির ছানা

  এই কবিতার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে শৈলজানন্দের 'কেউ ভোলে না কেউ ভোলে' গ্রন্থের চতুর্থ অধ্যায় থেকে যা জানা যায় তা হলো- একবার দালানের কড়িকাঠের ফাঁকে চড়ুয়ের বাসা থেকে একটি চড়ুই ছানা নিচে পড়ে যায়। এই ছানাটি তখনও উড়তে শেখে নি। পরে এঁরা অনেক কসরত করে, ছানটিকে বাসায় তুলে দিয়েছিলেন। এই সূত্রে নজরুল 'চড়ুই পাখির ছানা' নামে এই কবিতাটি রচনা করেছিলেন।

 

মস্ত বড় দালান-বাড়ির উই-লাগা এ কড়ির ফাঁকে
ছোট্ট একটি চড়াই-ছানা কেঁদে কেঁদে ডাকৃছে মা'কে।
“চুঁ চা রবে আকুল কাঁদন যাচ্ছিল নে" বসন_বায়ে,
মায়ের পরান ভাবলে-বুঝি দুষ্টু ছেলে নিচ্ছে ছা-য়ে।
অম্‌নি কাছের মাঠটি হতে ছুটল মাতা ফড়িং মুখে,
স্নেহের আকুল আশিস-জোয়ার উথ্‌‌লে ওঠে মা'র সে বুকে।
আধ-ফুরফুরে ছাটি নীড়ে দেখছে মা তার আসছে উড়ে,
ভাবলে আমি যাই না ছুটে, বসি গে' মা'র বক্ষ জুড়ে।
হৃদয়-আবেগ রুধতে নেরে উড়তে গেল অবোধ পাখি,
ঝুপ করে সে গেল পড়ে-ঝরল মায়ের করুণ আখি!
হায়রে মায়ের স্নেহের হিয়া বিষম ব্যথায় উঠল কেঁপে,
রাখলে নাকো প্রাণের মায়া, বসল ডানায় ছাটি ঝেঁপে।
ধরতে ছোটে ছানাটিরে ক্লাসের যত দুষ্টু ছেলে;
ছুটছে পাখি প্রাণের ভয়ে ছোট্ট দুইটি ডানা মেলে।
বুঝতে নারি কি সে ভাষায় জানায় মা তার হিয়ার বেদন,
বুঝে না কেউ ক্লাসের ছেলে- মায়ের সে যে বুকভরা ধন!
একটি ছেলে দেখছে, আঁসু চোখ দুটি তার যাচ্ছে ভেসে।
মা মরেছে বহুদিন তার, ভুলে গেছে মায়ের সোহাগ,
তবু গো তা মরম ছিঁড়ে উঠল বেজে করুণ বেহাগ।
মই এনে সে ছানাটিরে দিল তাহার বাসায় তুলে,
ছানার দুটি সজল আঁখি করলে আশিস পরান খুলে।
অবাক-নয়ান মা'টি তাহার রইল চেয়ে পাঁচুর পানে,
হৃদয়-ভরা কৃতজ্ঞতা দিল দেখা আখির কোণে।
পাখির মায়ের নীরব আশিস যে ধারাটি দিল ঢেলে,
দিতে কি তার পারে কণা বিশ্বমাতার বিশ্ব মিলে !