বুলবুল
দ্বিতীয় খণ্ড



বন-বিহঙ্গ যাও রে উড়ে মেঘনা নদীর পারে
দেখা হলে আমার কথা কই গিয়া তারে ॥
         কোকিল ডাকে বকুল-ডালে
         সে মালঞ্চে সাঁঝ-সকালে
আমার বন্ধু কাঁদে সেথায় গাঙেরই কিনারে॥

গিয়া তারে দিয়া আইস আমার শাপ্‌লা-মালা
আমার জন্য লইয়া আইস তাহার বুকের জ্বালা।
         সে যেন রে বিয়া করে
         সোনার কন্যা আনে ঘরে
আমার পাটের জোড় পাঠাইয়া দিব সে-কন্যারে


                           ৬৯
          আমি জানি তব মন, বুঝি তব ভাষা
          তব কঠিন হিয়ার তলে জাগে
                          কি গভীর ভালোবাসা
         
ওগো উদাসীন! আমি জানি তব ব্যথা
          আহত পাখির বুকে বাণ বিঁধে কোথা
          কোন্ অভিমান ভুলিয়াছ তুমি
                          ভালোবাসিবার আশা
তুমি  কেন হানো অবহেলা অকারণ আপনাকে!
বঁধু  যে হৃদয়ে বিষ থাকে, সে হৃদয়ে অমৃত থাকে।
          তব     যে-বুকে জাগে প্রলয়-ঝড়ের জ্বালা
আমি দেখেছি যে সেথা সজল মেঘের মালা
ওগো ক্ষুধাতুর, আমারে আহুতি দিলে
          মিটাবে কি তব পরানের পিপাসা 

                            ৮৪

কত ফুল তুমি পথে ফেলে দাও মালা গাঁথ অকারণে।
আমি চেয়েছিনু একটি কুসুম, সেই কথা পড়ে মনে॥

        তব ফুল বনে কত ছায়া দোলে
        জুড়াইতে চেয়েছিনু, তারি তলে,
        চাহিলে না ফিরে চলে গেলে ধীরে
                            ছায়া-ঢাকা অঙ্গনে।
                            সেই কথা পড়ে মনে॥

অঞ্জলি পাতি চেয়েছিনু, তব ভরা ঘটে ছিল বারি,
শুষ্ক-কণ্ঠে ফিরিয়া আসিনু পিপাসিত পথচারী।
        বহু যুগ পরে দাঁড়াইনু এসে
        তোমারি দুয়ারে উদাসীন বেশে
        শুকানো মালিকা কেন দিলে তুমি
                             তব ভিক্ষার সনে।
                            সেই কথা পড়ে মনে॥

                ৯৫
নতুন পাতার  নূপুর বাজে দখিনা বায়ে
কে এলে গো, কে এলে গো চপল পায়ে॥

ছায়া-ঢাকা আমের ডালে চপল আঁখি
ঠ্‌ল ডাকি বনের পাখি' উঠ্‌ল ডাকি ।
নতুন চাঁদের জোছনা মাখি সোনাল শাখায় দোল দুলায়ে
কে এলে গো, কে এলে গো চপল পায়ে॥

সুনীল তোমার ডাগর চোখের দৃষ্টি পিয়ে
সাগর দোলে, আকাশ ওঠে ঝিলমিলিয়ে ।
পিয়াল বনে উঠল বাজি তোমার বেণু
ছড়া পথে কৃষ্ণচূড়া পরাগ-রেণু ।
ময়ূর-পাখা বুলিয়ে চোখে কে দিলে গো ঘুম ভাঙায়ে ।
কে এলে গো চপল পায়ে॥