নির্ঝর
দীওয়ান-ই-হাফিজ
গজল ৫
হাত হতে মোর হৃদয় যায়
দোহাই বাঁচাও হৃদয়-বান!
আপশোশ! আমার গোপন সব
ফসকে যে দেয় নিদয় প্রাণ।
দশ দিনের এই দুনিয়া ভাই,
স্বপ্ন-কুহক কল্পলোক;
করতে ভালোই বন্ধুদের,
বন্ধু, তোমার লক্ষ্য হোক!
বও অনুখূল বায়, এ নাও
ভগ্ন, মনেও শ্রান্তি, হায়!
হয়তো দু-বার দেখব ফের
সেই হারা মোর প্রাণ-প্রিয়ায়।
শরাব-সভায় কুঞ্জে আজ
বুলবুলি বাঃ বোল বিলায় –
লাও প্রভাতের মদের ভাঁড়,
মস্তানা সব জলদি আয়!
হাজার লাখ হে মহান-প্রাণ,
সালাম সালাম ধন্যবাদ!
দরবেশ এ দীন একটি দিন
প্রসাদ চায়, নাই অন্য সাধ।
‘দুই দুনিয়ার আরাম’ সব
ব্যাখ্যা ভাই এই এক কথায়,-
দোস্তে মধুর স্নিগ্ধ ভাষ,
শত্রু যে – দাও বক্ষ তায়।
সুনাম সুযশ লাভের পথ
করলে হারাম , হে দুর্বোধ!
মন্দ বোধ হয় কু-নাম আজ?
বদলে দাও, বাস এ দূর পথ।
জমশেদের এই মদের গ্লাস
সিকান্দারের আয়না ভাই;
দারার দেশের সকল হাল
ঐ হের বাঃ, ভায় না তায়?
শির ঝোঁকা, নয় মোমের ন্যায়
জ্বালবে – সে কি শরম কম? –
এ পিয়া যার পরশ ঘায়
কঠিন শিলাও নরম মোম।
বন্ধুদে সব বৈতালিক
গায় যদি এই ফারসি-গীত
সন্ন্যাসী পীর ভাব-মোহিত
নাচবে; এ-গান সার-নিহিত।
ওই খাঁটি মদ – সুফির দল
পাপের মা কয়? – আ দুত্তোর!
আইবুড়ো সব ছুকরিদের
ঠোঁট-চুমোরও মধুরতর!
হাতখালি? বাস, আয়াস কর
আয়েস করার, শেখ সুখেও;
পরশ-পাথর মত্ততার
‘কারুন’ বানায় ভিক্ষুকেও।
পর্মায়ু দেয় মুমুর্ষুরে
ফারেস দেশের দিল্-পিয়ায়,
এয়্ সাকি, এই খোশখবর
জ্ঞান-বুড়োদের বলবি ভাই!
খাম্খা হাফিজ দেয়নি গায়
শরাব-রঙিন কুর্তি এই,
আলখেলা পাক গায় হে শেখ!
লাচার, সব এই ফুর্তিতেই!
ছন্দ
“দিল্ মি রওদ যে দস্তম সাহিব দিলাঁ খোদারা'
হাত হতে মোর হৃদয় যায় দোহাই বাঁচাও হৃদয়-বান্ !মোসলেম ভারত পত্রিকার মাঘ ১৩২৭ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ার ১৯২১)সংখ্যায় গজলটি প্রকাশিত হয়েছিল।