নির্ঝর
হবে জয়
আবার কি আঁধি এসেছে, হানিতে
ফুলবনে লাঞ্ছনা?
দুহাত ভরিয়া ছিটাইছে পথে
মলিন আবর্জনা!
করিয়ো না ভয়, হবে হবে লয়,
আপনি এ উৎপাত;
আঙনের দুটো খড়কুটো লয়ে,
লুকোবে অকম্মাৎ!
উৎপাতে তার যদি সখা তব
ফুলবনে ফুল ঝরে,
নব বসন্তে নব ফুলদল
আসিবে কানন ভরে।
অসুন্দরের প্রতীক উহারা
কেবলি পিছন পানে।
বন্ধু, ওদের উহাই ধর্ম,
“তাই বলে তুমি আগে
চলিবে না ভয়ে? ফুটাবে না ফুল
তোমার কুসুম-বাগে?
অভিশাপ-শ্বাস দমকা বাতাস
প্রদীপ নিবায় বলে
আলো ন৷জ্বালায়ে রহিবে বসিয়া
আঁধার আঙিনা-তলে?
সূর্যে ঢাকিতে ছুটে যায় নভে
পায়ের তলার ধূলি,
সূর্য কি তাই লুকাবে আকাশে
আপনার পথ ভুলি?
তড়িত-প্রদীপ জ্বালাইয়া আসো
তোমরা বরষা-ধারা.
তোমাদের জলে সব ধুলো মাটি.
নিমিষে হইবে হারা।
যে অন্তরের দীপ্তিতে তব
হাতের মশাল জ্বলে,
ফুৎকারে তাহা নিভিবে না,
চল আগে চল নব বলে!
পথ ভুলাইতে আসিয়াছে যারা
চাহিবে ভুলাতে পথ,
লঙ্ঘিতে হবে উহাদের-রচা
মরু; নদী, পর্বত।
পিছনের যারা রহিবে পিছনে,
উহাদের চিৎকারে
তুমি কি বন্দি হইয়া রহিবে
আঁধারের কারাগারে?
মাথার ওপরে শত বাজপাখি,
তবু পারবত দল
আলোক-পিয়াসী চল-পাখা
লুণ্ঠিছে নভতল।
বন্ধু গো, তোলো শির!
তোমারে দিয়াছি বৈজয়ন্তী
বিংশ শতাব্দীর।
মোরা যুবাদল, সকল আগল
ভাঙিতে চলেছি ছুটি,
তোমারে দিয়াছি মোদের পতাকা,
তুমি পড়িও না লুটি।
চাহি না জানিতে- বাঁচিবে অথবা
মরিবে তুমি এ পথে,
এ পতাকা বয়ে চলিতে হইবে
বিপুল ভবিষ্যতে।
তাজা জীবন্ত যৌবন-অভিযান-
সেনা মোরা আছি,
ভূমিকম্পের সাগরের মতো
সুখে প্রাণ ওঠে নাচি;
চাহ বা না চাহ, মোরা যুবাদল
তোমারে চালাব আগে,
ব্যগ্র-চরণ চলিবে অগ্রে
আমাদের অনুরাগে!
মৃত্যুর হাতে মরে তো সবাই
সে-ই শুধু বেঁচে থাকে-
মানুষের লাগি যে চির বিরাগী,
মানুষ মেরেছে যাকে!
বিধাতার পরিহাস-
রচেছে মানুষ যুগে যুগে তার
অমানুষী ইতিহাস!
সবচেয়ে বড় কল্যাণ তার
করিয়াছে যে মানুষ,
তারেই পাথরে পিষিয়া মেরেছে
মেরেছে বিঁধিয়া ক্রুশ!
যে-হাতে করিয়া এনেছে মানুষ
স্বর্গ-অমৃত-বারি,
সে হাত কাটিয়া ধরার মানুষ
প্রতিদিন দিল ভারি।
দেয় ফুল ফল ছায়া সুশীতল-
তরুরে আমরা তাই-
ঢিল ছুঁড়ে মারি, ফুল ছিঁড়ি তার
শেষে শাখা ভেঙে যাই!
সেই অভিমানে ফুটিবে না ফুল?
ফলিবে না তরুশাখে
সু-রসাল ফল? দিবে না সে ছায়া
যে আঘাত করে- তাকে
চন্দ্রে যাহারা বলে কলঙ্কী
চন্দ্রালোকেই বসি,
করুণায় হাসি দেখে তাহাদের
দিই না গলায় রশি!
অসহ সাহসে আমরা অসীম
সম্ভাবনার পথে
ছুটিয়া চলেছি, সময় কোথায়
পিছে চাবো কোনো মতে
নিচের যাহারা- রহিবে নিচেই
ঊর্ধেই ছিটাবে কালি,
আপনার অনুরাগে চলে যাব
আমরা মশাল জ্বালি।
যৌবন-সেনাদল তব সখা,
বন্ধু গো নাহি ভয়,
পোহাবে রাত্রি, গাহিবে যাত্রী
নব আলোকের জয়!