*১.
রাগ
: ভৈরবী, তাল
: কাহার্বা
কেন আসিলে ভালোবাসিলে
দিলে না ধরা জীবনে যদি।
বিশাল চোখে মিশায়ে মরু
চাহিলে কেন গো বে-দরদি॥
ছিনু অচেতন আপনা নিয়ে
কেন
জাগালে আঘাত দিয়ে
তব আঁখি জল সে কি শুধু ছল একি মরু হায় নহে জলধি॥
ওগো কত জনমের কত সে কাঁদন করে হাহাকার বুকেরি তলায়
ওগো কত নিরাশায় কত অভিমান ফেনায় ওঠে গভীর ব্যথায়।
মিলন হবে কোথায় সে কবে কাঁদিছে সাগর স্মরিয়া নদী॥
*২.
তাল
: কাহার্বা
কত ফুল তুমি পথে ফেলে দাও (প্রিয়) মালা গাঁথ অকারণে
আমি চেয়েছিনু একটি কুসুম সেই কথা পড়ে মনে॥
তব
ফুলবনে কত ছায়া দোলে
জুড়াইতে চেয়েছিনু তারি তলে
চাহিলে না ফিরে চলে গেলে ধীরে ছায়া-ঢাকা অঙ্গনে॥
অঞ্জলি পাতি'
চেয়েছিনু, তব ভরা ঘটে ছিল বারি
শুষ্ক-কণ্ঠে
ফিরিয়া আসিনু পিপাসিত পথচারী।
বহুদিন পরে দাঁড়াইনু এসে
তোমারি দুয়ারে উদাসীন বেশে
শুকানো মালিকা কেন দিলে তুমি তব ভিক্ষার সনে॥
*৩.
তাল :
দাদ্রা
নতুন পাতার নুপূর বাজে দখিনা বায়ে
কে এলে গো, কে এলে গো চপল পায়ে॥
ছায়া-ঢাকা আমের ডালে চপল আঁখি
উঠ্ল ডাকি
বনের পাখি–
উঠ্ল ডাকি'।
নতুন চাঁদের জোছনা মাখি সোনাল শাখায় দোল দুলায়ে
কে এলে গো, কে এলে গো চপল পায়ে॥
সুনীল তোমার ডাগর চোখের দৃষ্টি পিয়ে
সাগর দোলে, আকাশ ওঠে ঝিলমিলিয়ে।
পিয়াল বনে উঠল বাজি তোমার বেণু
ছড়াল পথে কৃষ্ণচূড়া পরাগ-রেণু।
ময়ূর-পাখা বুলিয়ে চোখে কে দিলে গো ঘুম ভাঙ্গায়ে।
কে এলে গো চপল পায়ে॥
*৪.
তাল :
কাহার্বা
কেন মনোবনে
মালতী-বল্লরী দোলে–
জানি না।
কেন মুকুলিকা ফুটে ওঠে পল্লব-তলে, জানি না॥
কেন ঊর্মিলা-ঝরনার পাশে
সে আপন মঞ্জরি-ছায়া দেখে'
হাসে;
কেন পাপিয়া কুহু মুহু মুহু বোলে, জানি না॥
চৈতালি-চাঁপা কয়,
মালতী শোন্
শুনেছিস্
বুঝি এত মধুকর গুঞ্জন,
তাই বুঝি এত
মধু সুরভি উথলে–
মধু-মালতী বলে, জানি না, জানি না॥
*৫.
রাগ : যোগিয়া মিশ্র,
তাল:
কাহার্বা
ঘুমাও, ঘুমাও, দেখিতে এসেছি ভাঙ্গাতে আসিনি ঘুম
কেউ জেগে কাঁদে, কারো চোখে নামে নিদালির মৌসুম॥
দেখিতে এলাম হ'য়ে
কুতূহলী
চাঁপা-ফুল
দিয়ে তৈরি পুতলী
দেখি, শয্যায়
স্তূপ হ'য়ে
আছে জোছনার কুম্কুম্
আমি নই,
ঐ কলঙ্কী চাঁদ নয়নে হেনেছে চুম্॥
রাগ করিও না,
অনুরাগ হ'তে
রাগ আরো ভালো লাগে,
তৃষ্ণাতুরের কেউ জল চায় কেউ বা শিরাজি মাগে।
মনে কর, আমি লোলুপ
বাতাস
চোর-জোছনা, ফুলের সুবাস
ভয় নাই, আমি
চলে যাই ডাকি'
নিশীথিনী নিঃঝুম॥
*৬.
রাগ : খাম্বাজ,
তাল:
দাদ্রা
(সখি) ব'লো
বঁধুয়ারে নিরজনে
দেখা হ'লে
রাতে ফুল-বনে॥
কে করে ফুল
চুরি জেনেছে ফুলমালী
কে দেয় গহীন রাতে ফুলের কুলে কালি
জেনেছে ফুলমালী গোপনে॥
ও-পথে চোর-কাঁটা, সখি, তায় বলে
দিও
বেঁধে না বেঁধে না লো যেন তার উত্তরীয়।
এ বনফুল লাগি'
না আসে কাঁটা'
দলি'
আপনি
যাব চলি'
বঁধুয়ার কুঞ্জ-গলি
বিনা মূলে বিকাইব ও-চরণে॥
*৭.
রাগ:
মান্দ, তাল:
কাহার্বা
বাজ্ল কি রে ভোরের সানাই নিদ্-মহলার
আঁধার-পুরে
শুন্ছি আজান গগন-তলে আঁধার-রাতের মিনার-চূড়ে॥
সরাই-খানার
যাত্রীরা কি
'বন্ধু
জাগো'
উঠল হাঁকি'?
নীড় ছেড়ে ঐ প্রভাত-পাখি
গুলিস্তানে
চল্ল
উড়ে'॥
তীর্থ-পথিক্ দেশ-বিদেশের
আরাফাতে আজ জুট্ল কি ফের,
'লা
শরীক আল্লাহু'
মন্ত্রের
নাম্ল কি বান পাহাড়
'তূরে'॥
আজকে আবার কা'বার
পথে
ভিড় জমেছে প্রভাত হ'তে,
নামল কি ফের্
হাজার স্রোতে
'হেরার'
জ্যোতি জগৎ জুড়ে॥
আবার
'খালেদ'
'তারেক'
'মুসা'
আনল কি খুন-রঙিন ভূষা,
আস্ল ছুটে'
হাসীন ঊষা
নও-বেলালের শিঁরিন সুরে॥
*৮.
তাল:
কাহার্বা
কুঁচবরণ কন্যা রে তার মেঘ-বরণ কেশ।
ওরে আমায় নিয়ে যাও রে নদী সেই সে কন্যার দেশ রে॥
পরনে তার মেঘ-ডম্বুর্
উদয়-তারার শাড়ি
ওরে রূপ নিয়ে তার চাঁদ-সুরুজে করে কাড়াকাড়ি রে
আমি তারি লাগি রে
আমি তারি লাগি বিবাগী ভাই আমার চির-পথিক বেশ॥
পিছ্লে
পড়ে চাঁদের কিরণ নিটোল তারি গায়ে
ওরে
সন্ধ্যা-সকাল আসে তারি'
আল্তা হতে পায়ে রে।
ও সে
রয় না ঘরে রে
ও সে
রয় না ঘরে ঘুরে'
বেড়ায় ময়নামতীর চরে
তা'রে দেখলে
মরা বেঁচে ওঠে জ্যান্ত মানুষ মরে রে
ও সে জল-তরঙ্গে বাজে রে তার সোনার চুড়ির রেশ॥
*৯.
রাগ:
জিলফ্,
তাল:
ত্রিতাল
ভোরে ঝিলের জলে শালুক-পদ্ম তোলে কে
ভ্রমর-কুন্তলা কিশোরী
ফুল দেখে বেভুল
সিনান বিসরি'॥
একি নূতন লীলা আঁখিতে দেখি ভুল
কমল ফুল যেন তোলে কমল ফুল
ভাসায়ে আকাশ-গাঙে
অরুণ-গাগরি॥
ঝিলের নিথর জলে আবেশে ঢল ঢল
গ'লে
পড়ে শত সে তরঙ্গে,
শারদ-আকাশে দলে দলে আসে
মেঘ, বলাকার খেলিতে সঙ্গে।
আলোক-মঞ্জরি প্রভাত বেলা
বিকশি'
জলে কি গো করিছে খেলা
বুকের আঁচলে ফুল উঠিছে শিহরি'॥
*১০.
রাগ : চর্জ্যু কি মল্লার,
তাল:
কাহার্বা
শাওন-রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে
বাহিরে ঝড় বহে, নয়নে বারি ঝরে॥
ভুলিও স্মৃতি মম, নিশীথ-স্বপন
সম
আঁচলের গাঁথা মালা ফেলিও পথ'
পরে॥
ঝরিবে পুবালি বায় গহন দূর-বনে,
রহিবে চাহি'
তুমি একেলা বাতায়নে।
বিরহী কুহু-কেকা গাহিবে নীপ-শাখে
যমুনা-নদীপারে শুনিবে কে যেন ডাকে।
বিজলি দীপ-শিখা খুঁজিবে তোমায় প্রিয়া
দু'
হাতে ঢেকো আঁখি যদি গো জলে ভরে॥
*১১.
তাল:
কাহার্বা
ভেসে আসে সুদূর স্মৃতির সুরভি হায় সন্ধ্যায়
রহি'
রহি'
কাঁদি'
ওঠে সকরুণ পূরবী, আমারে কাঁদায়॥
কা'রা
যেন এসেছিল, এসে ভালোবেসেছিল।
ম্লান হ'য়ে
আসে মনে তাহাদের সে-ছবি, পথের ধুলায়॥
কেহ গেল দ’লে
–
কেহ ছ’লে,
কেহ গলিয়া নয়ন নীরে
যে গেল সে জনমের মত গেল চলিয়া এলো
না, এলো না ফিরে।
কেহ দুখ দিয়া
গেল কেহ ব্যথা নিয়া গেল
কেহ সুধা পিয়া গেল কেহ বিষ করবী তাহারা কোথায় আজ।
তাহারা কোথায়॥
*১২.
তাল:
দাদ্রা
কাণ্ডারি
গো, কর কর পার এই অকূল ভব-পারাবার।
তোমার
চরণ-তরী বিনা, প্রভু পারের আশা নাহি আর॥
পাপের তাপের ঝড় তুফানে
শান্তি নাহি আমার প্রাণে।
আমি যেদিকে চাই দেখি কেবল
নিরাশারি অন্ধকার॥
দিন থাকতে আমার মত
কেউ নাহি সম্ভাষে
হে প্রভু তোমায়
কেউ নাহি সম্ভাষে
দিন ফুরালে খাটে
শুয়ে
এই ঘাটে সবাই আসে।
লয়ে তোমারি নামের কড়ি
সাধু পেল চরণ-তরী
সে কড়ি নাই যে
কাঙ্গালের হও হে দীনবন্ধু তার॥
*১৩.
তাল :
কাহার্বা
মোরা আর জনমে হংস-মিথুন
ছিলাম নদীর চরে
যুগলরূপে এসেছি গো আবার
মাটির ঘরে॥
তমাল তরু চাঁপা-লতার মত
জড়িয়ে কত জনম হ'ল
গত,
সেই বাঁধনের
চিহ্ন
আজো জাগে হিয়ার থরে থরে॥
বাহুর ডোরে বেঁধে আজো
ঘুমের ঘোরে যেন
ঝড়ের
বন-লতার মত লুটিয়ে কাঁদ কেন।
বনের কপোত কপোতাক্ষীর তীরে
পাখায় পাখায় বাঁধা ছিলাম
নীড়ে
চিরতরে হ'ল
ছাড়াছাড়ি নিঠুর ব্যাধের শরে॥
*১৪.
তাল:
কাহার্বা
তব গানের ভাষায় সুরে বুঝেছি বুঝেছি বুঝেছি
এত দিনে পেয়েছি তারে আমি যারে খুঁজেছি॥
ছিল পাষাণ হয়ে গভীর অভিমান
সহসা, এলো সহসা আনন্দ-অশ্রুর বান।
বিরহ-সুন্দর হ'য়ে
সেই এলো
দেবতা ব'লে
যাঁরে পুজেছি
বুঝেছি বুঝেছি বুঝেছি॥
তোমার দেওয়া বিদায়ের মালা পুন প্রাণ পেল প্রিয়
হ'য়ে
শুভদৃষ্টি মিলন-মালিকা বুকে ফিরে
এলো
–
এলো
প্রিয়।
যাহারে নিষ্ঠুর বলেছি
নিশীথে গোপনে কেঁদেছি
নয়নের বারি হাসি দিয়ে মুছেছি
বুঝেছি বুঝেছি বুঝেছি॥
*১৫.
তাল:
দাদ্রা
বন্ধু পথ চেয়ে চেয়ে
আকাশের তারা পৃথিবীর ফুল গণি
বন্ধু ফুল পড়ে ঝরে, তারা
যায় মরে
(ফিরে) এল না হৃদয়-মণি॥
কত নদী পেল খুঁজিয়া সাগর
আমি পাই না তোমার খবর
বন্ধু সকলেরি চাঁদ ওঠে রে
আমারি চির-আঁধার রজনী॥
যমুনার জলও শুকায় রে বন্ধু
আমার শুকায় না আঁখি-বারি
এত কান্দন কাঁদিলে গোকূলে হতাম ব্রজ-কুমারী
বন্ধু হতাম রাধা প্যারী।
মহা পারাবার তারও আছে পার
আমার দুখের পার নাহি আর
বন্ধু মণি না পাইনু
বৃথায় পুষিনু কাল-বিরহের ফণি
পুষিনু কাল-বিরহের ফণি॥
*১৬.
তাল:
কাহার্বা
এসো প্রিয়, মন রাঙায়ে ধীরে ধীরে ঘুম ভাঙায়ে
মন মাধবী বন দুলায়ে, দুলায়ে দুলায়ে॥
শোন
‘পিউ
পিউ’
ডাকে পাপিয়া
মোরে সেই সুরে ডাক, 'পিয়া,
পিয়া'
তব আদর-পরশ বুলায়ে, বুলায়ে, বুলায়ে॥
যদি আন্ কাজে ভুলে রহি
চলে যেও না হে মোর বিরহী
দিও প্রিয়, কাজ ভুলায়ে, ভুলায়ে, ভুলায়ে॥
*১৭.
তাল:
কাহার্বা
উপল নুড়ির কাঁকন চুড়ি বাজে
বাজে ঘুম্তি নদীর জলে।
বুনো হাঁসের পাখার মত মন যে ভেসে চলে
সেই ঘুম্তি নদীর জলে॥
মেঘ এসেছে আকাশ
ভ'রে
–
যেন শ্যামল ধেনু চরে
নাগিনীর সম বিজলি-ফণা তুলে
নাচে, নাচে নাচে রে।
মেঘ-ঘন গগন তলে॥
পাহাড়িয়া অজগর ছুটে আসে ঝর্ ঝর্ বেনো-জল্
দিয়ে করতালি প’রে
পিয়াল পাতার মাথালি
ছিটায় জল্, গেঁয়ো কিশোরীর দল।
রিনিক্
ঝিনিক্
বাজে চাবি আঁচলে
কালনাগিনীর মত পিঠে বেণী দোলে
তীর-ধনুক হাতে বন-শিকারীর সাথে
মন ছিটে যায় বনতলে॥
*১৮.
তাল:
দাদ্রা
আমি গগন গহনে সন্ধ্যা-তারা
কনক গাঁদার ফুল গো।
গোধূলির শেষে হেসে উঠি আমি
এক নিমেষের ভুল গো।
আমি ক্ষণিকা,
আমি সাঁঝের অধরে ম্লান আনন্দ-কণিকা
আমি অভিমানিনীর খুলে ফেলে দেওয়া মণিকা
আমি দেব-কুমারীর দুল্ গো॥
আলতা
রাখার পাত্র আমার আধখানা চাঁদ ভাঙা
তাহারি
রং গড়িয়ে পড়ে (মোর) অস্ত-আকাশ রাঙা।
আমি একমুঠো আলো কৃষ্ণা-সাঁঝের হাতে
আমি নিবেদিত ফুল আকাশ-নদীতে রাতে
ভাসিয়া বেড়াই যাঁর উদ্দেশে গো
তার
পাই না চরণ-মূলে॥
*১৯.
তাল:
দাদ্রা
কে তোরে কি বলেছে মা ঘুরে বেড়াস কালি মেখে
ওমা বরাভয়া ভয়ঙ্করী
সাজ পেলি তুই কোথা থেকে॥
তোর এলোকেশে প্রলয় দোলে
আমি
চিন্তে নারি গৌরী বলে।
ওমা চাঁদ লুকাল মেঘের কোলে তোর মুখে না হাসি দেখে॥
ওমা শঙ্কর
কি গঙ্গা নিয়ে, কাঁদায় তোরে দুঃখ দিয়ে
ওমা শিবানী তোর চরণ তলে এনেছি তাই শিবকে
ডেকে॥
*২০.
তাল:
কাহার্বা
তুই জগত-জননী শ্যামা আমি কি মা জগত ছাড়া,
কোন্ দোষে মা তুই থাকিতে আমি চির
মাতৃহারা॥
পুত্র অপরাধী ব'লে
মা কি তারে নেয় না কোলে,
মা
শাসন করে মারে-ধরে তবু কাছ ছাড়া করে না তারা।
কোন দোষে মা তুই থাকিতে আমি চির
মাতৃহারা॥
ছেলের চোখে ঠুলি দিয়ে কি মা নিজেরে লুকিয়ে রাখে
ছেলের দুঃখে মা উদাসীন দেখিনি তো এমন
মাকে।
মাতৃস্নেহ পেলে শ্যামা এমন মন্দমতি
হতেম না মা
তুই যাহারে হানিস হেলা তার কে মছাবে
নয়ন-ধারা
কোন দোষে মা তুই থাকিতে আমি চির
মাতৃহারা॥
*২১.
তাল:
দ্রুত-দাদ্রা
তোরা
দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে
মধু পূর্ণিমাতে সেথা চাঁদ দোলে
যেন ঊষার কোলে রাঙা-রবি দোলে॥
কূল মখ্লুকে
আজি ধ্বনি অঠে, কে এল ঐ
কলেমা শাহাদতের্
বাণী ঠোঁটে, কে এল ঐ
খোদার জ্যোতি পেশানীতে ফোটে, কে এল ঐ
আকাশ-গ্রহ-তারা পড়ে লুটে, কে এল ঐ
পড়ে দরুদ ফেরেশ্তা, বেহেশ্তে সব
দুয়ার খোলে॥
মানুষে মানুষে অধিকার দিল যে-জন
'এক
আল্লাহ ছাড়া প্রভু নাই'
কহিল যে-জন
মানুষের লাগি'
চির-দীন্ বেশ ধরিল যে-জন
বাদশা ফকিরে এক শামিল করিল যে-জন
এলো ধরায় ধরা দিতে সেই সে নবী
ব্যথিত-মানবের ধ্যানের ছবি
আজি মাতিল বিশ্ব-নিখিল্
মুক্তি-কলোরোলে॥
*২২.
তাল:
কাহার্বা
আমি
যার নূপুরের ছন্দ বেণুকার সুর –
কে সেই সুন্দর কে!
আমি যার বিলাস-যমুনা বিরহ-বিধুর
কে সেই সুন্দর কে॥
যাহার গানের আমি বনমালা
আমি যার কথার
কুসুম-ডালা,
না-দেখা সুদূর –
কে সেই সুন্দর কে॥
যার শিখী-পাকা লেখনী হয়ে
গোপনে মোরে কবিতা লেখায়
সে রহে কোথায় হায়!
আমি যার বরষার আনন্দ-রেখা,
নৃত্যের সঙ্গিনী দামিনী-রেখা,
যে মম অঙ্গে কাঁকন-কেয়ূর
কে
সেই সুন্দর কে॥
*২৩.
তাল:
কাহার্বা
কত নিদ্রা যাও রে কন্যা
জাগো একটুখানি
যাবার বেলায় শুনিয়া যাই তোমার মুখের বাণী॥
নিশীথিনীর ঘুম ভেঙ্গে যায় চন্দ্র যখন হেসে তাকায় গো
চাতকিনী ঘুমায় কি গো
দেখলে মেঘের পানি॥
ফুলের কুঁড়ি চোখ মেলে চায় যেই না
ভ্রমর বোলে (রে কন্যা)
বসন্ত আসিলে রে কন্যা
বনের লতা দোলে (রে কন্যা)।
যারা আছে প্রাণে প্রাণে জাগে তারা ঘুম না জানে
আমি যখন রইব না গো
(তখন) জাগবে তুমি জানি॥
*২৪.
রাগ:
সাবন্ত সারং, তাল:
ত্রিতাল
মেঘ-বিহীন খর-বৈশাখে
তৃষায় কাতর চাতকী ডাকে॥
সমাধি-মগ্না উমা তপতী –
রৌদ্র যেন তার তেজঃ জ্যোতি,
ছায়া মাগে ভীতা ক্লান্তা কপতী –
কপোত-পাখায় শুষ্ক শাখে॥
শীর্ণা তটিনী বালুচর জড়ায়ে
তীর্থে চলে যেন শ্রান্ত পায়ে।
দ্গ্ধ-ধরণী
যুক্ত-পাণি
চাহে আষাঢ়ের
আশিস বাণী
যাপিয়া নির্জলা একদশীর তিথি
পিপাসিত আকাশ যাছে কাহাকে॥
*২৫.
রাগ:
বাহার, তাল:
ত্রিতাল
পিউ পিউ বোলে
পাপিয়া,
ফাল্গুন
উন্মন বন ব্যাপিয়া॥
বিরহিনী মন বিহগী–
ওরি সাথে কাঁদে, একা
ঘরে নিশি জাগিয়া॥
*২৬.তালঃ
দাদ্রা
ঘুমাইতে দাও শ্রান্ত রবি রে জাগায়ো না জাগায়ো
না,
সারা জীবন যে আলো দিল ডেকে তার ঘুম ভাঙায়ো না॥
যে সহস্র করে রূপরস দিয়া
জননী কোলে পড়িল ঢলিয়া
তাঁহারে শান্তি-চন্দন দাও ক্রন্দনে রাঙায়ো না॥
যে তেজ
শৌর্য-শক্তি
দিলেন, আপনারে করি ক্ষয়
তাই
হাত পেতে নাও।
বিদেহ রবি ও ইন্দ্র মোদের নিত্য দেবেন জয়
কবিরে ঘুমাতে দাও।
অন্তরে হের হারানো রবির জ্যোতি
সেইখানে তারে নিত্য কর প্রণতি
আর কেঁদে তাঁরে কাঁদায়ো না॥
*২৭.
তালঃ কাহার্বা
সাধ জাগে মনে পর-জীবনে
(আমি) তব কপোলে যেন তিন হই।
ভালবাসিয়া মোরে দিল্ দিবে তুমি
(যেন) আমি তোমার মত বে-দিল্
হই॥
মোর দেওয়া যে হার নিলে না অকরুণা
(যেন) হয়ে সে হার তব বক্ষে রই॥
যাহারে ভালবেসে তুমি চাহ না মোরে
মরিয়া
আসি যেন তাহারি রূপ ধ'রে
(তুমি) হার
মানিবে আমি হ'ব
জয়ী॥
হৃদি
নিঙাড়ি মম আল্তা হব পায়ে
অধরে হব হাসি রূপ-লাবনি গায়ে
আমার যাহা কিছু তোমাতে হবে হারা
(প্রিয়) তুমি জানিবে
না আমার বৈ॥
*২৮.
তালঃ দ্রুত-দাদ্রা
স্বপ্নে দেখি একটি নতুন ঘর
তুমি আমি দু'জন
প্রিয় তুমি
আমি দু'জন।
বাহিরে বকুল-বনে কুহু পাপিয়া করে কুজন॥
আবেশে ঢুলে'
ফুল-শয্যায় শুই
মুখ
টিপে হাসে মল্লিকা যুঁই
কানে কানে গানে
গানে কহে 'চিনেছি
উতল সমীরণ'॥
পূর্ণিমা চাঁদ
কয়, গান আর সুর, চঞ্চল ওরা দু'জন
প্রেম-জ্যোতি আনন্দ-আঁখিজল, ছল ছল ওরা দু'জন।
মৌমাছি কয়, গুন্ গুন্ গান গাই
মুখোমুখি দু'জনে
সেইখানে যাই
শারদীয়া শেফালি গায়ে
পড়ে কয়–
'ব্রজের
মধুবন–
এই তো ব্রজের মধুবন'॥
*২৯.
রাগঃ দেশী, তালঃ ত্রিতাল
এসো প্রিয় আরো কাছে
পাইতে হৃদয়
এ বিরহী মন যাচে॥
দেখাও
প্রিয় ঘন
ও রূপ মোহন
যে রূপে প্রেমাবেশে পরান নাচে॥
*৩০.
তালঃ আদ্ধা
আজি মনে মনে লাগে হোরি
আজি বনে বনে জাগে হোরি॥
ঝাঁঝর করতাল খরতালে বাজে
বাজে কঙ্কণ চুড়ি মৃদুল আওয়াজে
লচকিয়া আসে মুচকিয়া হাসে
প্রেম-উল্লাসে শ্যামল গোরী॥
কদম্ব তমাল রঙে লালে লাল
লাল হলো কৃষ্ণ ভ্রমর ভ্রমরী
রঙের উজান চলে কালো যমুনার জলে
আবির রাঙা হলো ময়ূর-ময়ূরী॥
মোর হৃদি-বৃন্দাবন
যেন রাঙে
রাধা শ্যাম-যুগল
চরণ-রাগে
ও চরণ-ধূলি যেন ফাগ হ'য়ে
নিশিদিন
অন্তরে পড়ে মোর ঝরি'॥
*৩১.
তালঃ দ্রুত-দাদ্রা
ও কে মুঠি মুঠি আবির কাননে ছড়ায়
রাঙা-হাসির পরাগ-ফুল আননে ছড়ায়॥
তার রঙের আবেশ লাগে চাঁদের চোখে
তার লালসার রঙ জাগে রাঙা অশোকে
তার রঙীন নিশান দোলে কৃষনচূড়ায়॥
তার পুষ্পধনু দোলে শিমুল শাখায়
তার কামনা কাঁপে গো ভোমরা পাখায়,
সে খোঁপাতে বেল-ফুলের মালা জড়ায়॥
সে কুসমী শাড়ি পরায় নীল বসনায়
সে আঁধার মনে জ্বালে লাল রোশনাই
সে শুক্নো বনে ফাগুন আগুন ধরায়॥
*৩২.
তালঃ কাহার্বা
মনের রঙ
লেগেছে বনের পলাশ জবা অশোকে
রঙের ঘোর জেগেছে পারুল কনক-চাঁপার চোখে॥
মুহু মুহু বোলে কুহু কুহু কোয়েলা, মুকুলিত আমের ডালে
গাল রেখে ফুলের গালে।
দোয়েলা দোল দিয়ে যায়, ডালিম ফুলের নব-কোরকে॥
ফুলের পরাগ ফাগের রেণু ঝুরু ঝুরু ঝরিছে গায়ে
ঝিরি ঝিরি চৈতী বায়ে
বকুল বনে ঝিমায় মধুপ মদির নেশার ঝোঁকে॥
হরিত বনে হরষিত মনে হোরির হর্রা জাগে
রঙিলা অনুরাগে
নূতন প্রণয়-সাধ
জাগে চাঁদের রাঙা আলোকে॥
*৩৩.
তালঃ দ্রুত-দাদ্রা
বাঁশি বাজায় কে কদমতলায়
ওলো ললিতে
শুনে সরে না পা পথ চলিতে॥
তার বাঁশির ধ্বনি যেন ঝুরে ঝুরে
আমারে খোঁজে লো ভুবন ঘুরে
তার মনের বেদন শত সুরে সুরে
(ও সে) কি যেন চাহে মোরে বলিতে॥
আছে গোকূল নগর আরো কত নারী
কত
রূপবতী বৃন্দাবন-কুমারী
আছে গোকূল নগরে।
কেন
আমারি নাম লয়ে বংশীধারী
আসে নিতি নিতি মোরে ছলিতে।
সখি
নির্মল কুলে মোর কৃষ্ণ-কালি
কেন লাগালে কালিয়া বনমালী
আমার
বুকে দিল তুষের আগুন জ্বালি
আরো কত জনম যাবে জ্বলিতে॥
*৩৪. তাল : ফেরতা (দ্রুত-দাদ্রা ও কাহার্বা)
ও কে চলিছে বন-পথে একা নূপুর পায়ে রন ঝন্
ঝন্।
তারি চপল চরণ-আঘাতে দুলিছে নদী-দোলে ফুলবন॥
ঝরে ঝর্ ঝর্ গিরি-নির্ঝর
তার ছন্দ চুরি করে,
'এলো
সুন্দর'–
'এলো
সুন্দর'–
বাজে বনের মর্মরে।
গায় পাখি মেলি আঁখি
বলে, বন-দেবী এলো নাকি?
মধুর রঙ্গে অঙ্গে-ভঙ্গে জাগে শিহরণ॥
সন্ধ্যায় ঝিল্লির মঞ্জির তার
ঝির্ ঝির্ শির্ শির্ তোলে ঝঙ্কার।
মধুভাষিণী
সুচারু-হাসিনী সে মায়াহরিণী'–
ফোটালে আঁধারে মরি মরি
অরুণ আলোর মঞ্জরি
দুলিছে অলকে আঁখির পলকে দোলন-চাঁপার নাচের মতন॥
*৩৫.
তালঃ দ্রুত-দাদ্রা
ধর্মের পথে শহীদ যাহারা আমরা সেই সে জাতি
সাম্য-মৈত্রী এনেছি আমরা বিশ্বে করেছি জ্ঞাতি॥
পাপ-বিদগ্ধ তৃষিত ধরার লাগিয়া আনিল যাঁরা
মরুর তপ্ত বক্ষ নিঙাড়ি শীতল শান্তি-ধারা
উচ্চ-নীচের ভেদ ভাঙি দিল সবারে বক্ষ পাতি॥
কেবল মুসলমানের
লাগিয়া আসেনি'ক
ইসলাম
সত্যে যে চায় আল্লায় মানে মুসলিম তারি নাম
আমির ফকিরে ভেদ
নাই
–সবে
ভাই, সব এক সাথী॥
নারীরে প্রথম দিয়াছি মুক্তি, নর্ সম অধিকার
মানুষের গড়া প্রাচীর ভাঙিয়া করিয়াছি একাকার।
আঁধার রাতির বোরখা উতারি এনেছি আশার-ভাতি॥
*৩৬.
তালঃ দ্রুত-দাদ্রা
মেঘ চারণে যায় নবী কিশোর রাখাল বেশে
নীল রেশমি রুমাল বেঁধে তাঁর চারু-চাঁচর
কেশে॥
তাঁর রাঙা পদতলে পুলকে ধরা টলে
তাঁর রূপ-লাবনির ঢলে মরুভূমি গেল ভেসে॥
তাঁর মুখে রহে চাহি মেষ-শিশু তৃণ ভুলি',
বিশ্বের শাহানশাহ্ আজ মাখে গোঠের ধূলি,
তাঁর চরণ-নখরে কোটি চাঁদ কেঁদে মরে
তাঁর ছায়া ক'রে
চলে আকাশে মেঘ এসে॥
কিশোর নবী গোঠে চলে
তাঁর
চরণ-ছোঁয়ায় পথের পাথর মোম্ হয়ে যায় গ'লে।
তস্লিম
জানায় পাহাড় চরণে ঝুঁকে তাঁহার।
নারাঙ্গি, আঙুর, খর্জুর, পায়ে নজরানা দেয় হেসে॥
*৩৭.
রাগঃ মালকোষ মিশ্র, তালঃ দাদ্রা
গুণে গরিমায় আমাদের নারী আদর্শ দুনিয়ায়
রূপে লাবণ্যে মাধুরী ও শ্রীতে হুরী-পরী লাজ পায়॥
নর নহে, নারী ইসলাম, পরে প্রথম আনে ঈমান
আম্মা খাদিজা জগতে সর্বপ্রথম মুসলমান।
পুরুষের সব গৌরব ম্লান এক এই মহিমায়॥
নবী-নন্দিনী ফাতেমা মোদের সতী-নারীদের রানী
যাঁর ত্যাগ সেবা স্নেহ ছিল মরুভূমে কওসর পানি
যাঁর গুণ-গাথা ঘরে ঘরে প্রতি নর-নারী আজো গায়॥
রহিমার মত মহিমা কাহার তাঁর সম সতী
কেবা
নারী নয় যেন মূরতি ধরিয়া এসেছিল পতি-সেবা
মোদের খাওয়ালা জগতের আলা বীরত্বে গরিমায়॥
রাজ্য শাসনে রিজিয়ার নাম ইতিহাসে অক্ষয়
শৌর্যে
সাহসে চাঁদ-সুলতানা বিশ্বের বিস্ময়
জেবুন্নেসার তুলনা কোথায়, জ্ঞানের তপস্যায়॥
আঁধার হেরেমে বন্দিনী হল সহসা আলোর মেয়ে
সেইদিন হতে ইসলাম গেল গ্লানির কালিতে ছেয়ে।
লক্ষ খালেদা আসিবে যদি এ নারীরা মুক্তি পায়॥
*৩৮.
তালঃ দ্রুত-দাদ্রা
'চোখ
গেল'
'চোখ
গেল'
কেন ডাকিস রে
চোখ
গেল পাখি (রে)।
তোর ও চোখে কাহার চোখ পড়েছে নাকি রে
চোখ গেল পাখি (রে)॥
চোখের বালির জ্বালা জানে সবাই রে
চোখে যার চোখ পড়ে তার ওষুধ নাই রে
কেঁদে কেঁদে অন্ধ হয় তাহার আঁখি রে॥
তোর চোখের জ্বালা বুঝি নিশি রাতে বুকে লাগে
চোখ গেল ভুলে
রে 'পিউ
কাঁহা'
'পিউ
কাঁহা'
বলে
তাই ডাকিস অনুরাগে রে।
ওরে বন পাপিয়া কাহার গোপন্-প্রিয়া
ছিলি আর জনমে
আজো ভুলতে নারিস আজো ঝুরে হিয়া
ওরে পাপিয়া বল্ যে হারায় তাহারে কি
পাওয়া যায় ডাকি'
রে॥
*৩৯.
রাগঃ বনকুন্তলা (নজরুল সৃষ্ট রাগ), তালঃ
ত্রিতাল
মোর প্রথম মনের মুকুল
ঝরে গেল হায় মনে মিলনের ক্ষণে।
কপোতীর মিনতি কপোত শুনিল
না,
উড়ে গেল গহন-বনে॥
দক্ষিণ
সমীরণ কুসুম ফোটায় গো
আমারি কাননে
ফুল কেন ঝরে যায় গো
জ্বলিল প্রদীপ সকলেরি ঘরে হায়
নিভে গেল মোর দীপ গোধূলি লগনে॥
বিফল অভিমানে কাঁদে ফুলমালা কণ্ঠ
জড়ায়ে
কাঁদে ধূলি-পথে একা ছিন্ন-লতার প্রায় লুটায়ে লুটায়ে।
দারুণ তিয়াসে এসে সাগর-মুখে
ঢলিয়া পড়িনু হায় বালুকারি বুকে
ধোঁয়ারে মেঘ ভাবি ভুলিনু চাতকী
জ্বলিয়া
মরি গো বিরহ-দহনে॥
*৪০.
রাগঃ ভৈরবী-আশাবরি,
তালঃ কাহার্বা
কে বিদেশী
বন-উদাসী'
বাঁশের বাঁশী
বাজাও বনে।
সুর-সোহাগে তন্দ্রা লাগে
কুসুম-বাগের গুল-বদনে॥
ঝিমিয়ে আসে
ভোমরা-পাখা
যূথীর চোখে আবেশ মাখা
কাতর ঘুমে
চাঁদিমা রাকা
ভোর গগনের দর্-দালানে
দর্-দালানে ভোর গগনে॥
লজ্জাবতীর
লুলিত লতায়
শিহর লাগে পুলক-ব্যথায়
মালিকা সম বঁধুরে জড়ায়
বালিকা-বঁধু সুখ-স্বপনে॥
বৃথাই গাঁথি, কথার মালা
লুকাস্ কবি বুকের
জ্বালা,
কাঁদে নিরালা বন্শীওয়ালা
তোরি উতালা বিরহী মনে॥
*৪১.
রাগঃ কর্ণাটি-সামন্ত, তালঃ ত্রিতাল
কাবেরী নদী-জলে কে গো বালিকা
আনমনে ভাসাও চম্পা-শেফালিকা॥
প্রভাত-সিনানে আসি আলসে
কঙ্কণ-তাল হানো কলসে
খেলে
সমীরণ ল'য়ে
কবরীর মালিকা॥
দিগন্তে
অনুরাগে
নবারুণ জাগে
তব জল ঢল ঢল করুণা মাগে।
ঝিলাম, রেবা নদী তীরে,
মেঘদূত বুঝি খুঁজে ফিরে
তোমারেই তন্বী শ্যামা কর্ণাটিকা॥
*৪২.
রাগঃ ভৈরবী, তালঃ ত্রিতাল
স্বপনে এসেছিলে মৃদু-ভাষিণী
মৃদু-ভাষিণী মধু-হাসিনী।
রূপের তৃষা মোর রূপ ধ'রে
এসেছিল
কল্পনা-মনোবন-বাসিনী॥
যে পরম সুন্দর আছে মোর অন্তরে
তারি অভিসারে আসে উদাসিনী॥
*৪৩.
তালঃ ত্রিতাল
তোমার বিনা-তারের গীতি বাজে আমার
বীণা-তারে
রইল তোমার ছন্দ-গাথা গাঁথা আমার কণ্ঠ-হারে॥
কি কহিতে চাও হে গুণী, আমি জানি আমি শুনি
কান পেতে রই তারার সাথে তাই তো দূর গগন-পারে॥
পালিয়ে বেড়াও উদাস হাওয়া গোপন কথার ফুল ফুটিয়ে গো
আমি তারে মালা গেঁথে লুকিয়ে রাখি বক্ষে নিয়ে গো।
হয়ত তোমার কথার মালা, কাঁটার মত করবে জ্বালা
সেই জালাতেই জ্বলবে আমার প্রেমের শিখা অন্ধকারে॥
*৪৪.
কাফি-সিন্ধু,
তালঃ কাহার্বা
ব্রজ-গোপী খেলে হোরি
খেলে আনন্দ নবঘন শ্যাম সাথে।
রাঙা অধরে ঝরে হাসির কুম্কুম্
অনুরাগ-আবির নয়ন-পাতে॥
পিরিতি-ফাগ মাখা গোরীর সঙ্গে
হোরি খেলে হরি উন্মাদ রঙ্গে।
বসন্তে এ কোন কিশোর
দুরন্ত
রাধারে জিনিতে এলো পিচ্কারি হাতে॥
গোপিনীরা হানে অপাঙ্গ খর শর ভ্রুকুটি ভঙ্গ
অনঙ্গ আবেশে জর জর থর থর শ্যামের অঙ্গ।
শ্যামল তনুতে হরিত কুঞ্জে
অশোক ফুটেছে যেন পুঞ্জে পুঞ্জে
রঙ-পিয়াসি মন ভ্রমর গুঞ্জে
ঢালো আরো ঢালো রঙ প্রেম-যমুনাতে॥
*৪৫.
আরবি
সুর,
তালঃ কাহার্বা
শুকনো পাতার নুপূর পায়ে
নাচিছে ঘূর্ণিবায়
জল তরঙ্গে ঝিল্মিল ঝিল্মিল্
ঢেউ তুলে সে যায়॥
দীঘির বুকে শতদল দলি'
ঝরায়ে বকুল-চাঁপার কলি
চঞ্চল ঝরনার জল ছল ছলি
মাঠের পথে সে ধায়॥
বন-ফুল আভরণ খুলিয়া ফেলিয়া
আলুথালু এলোকেশ গগনে মেলিয়া
পাগলনী নেচে যায় হেলিয়া দুলিয়া
ধূলি-ধূসর কায়॥
ইরানী বালিকা যেন মরু-চারিণী
পল্লীর-প্রান্তর-বনমনোহারিণী
আসে ধেয়ে সহসা গৈরিক বরণী
বালুকার উড়্ণী গায়॥
*৪৬.
তালঃ কাহারবা
প্রজাপতি! প্রজাপতি!
কোথায় পেলে ভাই এমন রঙীন পাখা,
টুকটুকে লাল্-নীল্, ঝিলিমিলি আঁকা-বাঁকা॥
তুমি টুলটুলে বন-ফুলে মধু খাও
মোর বন্ধু হয়ে সেই মধু দাও
ওই পাখা দাও সোনালি-রুপালি পরাগ মাখা॥
মোর মন যেতে চায় না পাঠশালাতে
প্রজাপতি! তুমি নিয়ে যাও সাথী ক'রে
তোমার সাথে।
তুমি হাওয়ায় নেচে নেচে যাও
আজ
তোমার মত মোরে আনন্দ দাও
এই জামা ভাল লাগে না, দাও জামা
ছবি-আঁকা॥
*৪৭.
তালঃ দ্রুত-দাদ্রা
পদ্মার ঢেউ রে‒
মোর শূন্য
হৃদয়-পদ্ম নিয়ে যা, যা রে।
এই পদ্মে ছিল রে যার
রাঙ পা
আমি হারায়েছি তারে॥
মোর পরাণ-বঁধু নাই, পদ্মে তাই মধু নাই
(নাই রে)
বাতাস কাঁদে বাইরে, সে সুগন্ধ নাই রে
মোর রূপের সরসীতে আনন্দ-মৌমাছি নাহি ঝঙ্কারে রে॥
ও পদ্মারে‒
ঢেউয়ে তোর ঢেউ উঠায় যেমন চাঁদের আলো
মোর বঁধুয়ার রূপ তেমনি ঝিল্মিল্ করে কৃষ্ণ-কালো।
সে প্রেমের ঘাটে ঘাটে বাঁশি বাজায়
যদি দেখিস তারে, দিস এই পদ্ম তার পায়
বলিস, কেন বুকে আশার দেয়ালি জ্বালিয়ে
ফেলে গেল চির-অন্ধকারে॥
*৪৮.
তালঃ কাহার্বা
মেঘলা নিশি ভোরে মন যে কেমন করে
তারি তর গো মেঘ-বরণ যার কেশ।
বুঝি তাহারি লাগি'
হয়েছে বৈরাগী
গেরুয়া রাঙা গিরিমাটির দেশ॥
মৌরি ফুলের ক্ষেতে, মৌমাছি ওঠে মেতে
এলিয়েছিল কেশ কি গো তার এই পথে সে যেতে।
তার ডাগর চোখের ঝিলিক লেগে রাত হয়েছে শেষ গো॥
শিরিষ পাতায় ঝিরিঝিরি, বাজে নূপুর তারি
সোনাল ডালে দোলে তাহার কামরাঙা রঙ্ শাড়ি।
হয়েছে মন-ভিখারি
কোন্
মন-শিকারি আমি
উঠি পাহাড় চূড়ায়, ঝর্ণা জলে নামি
কালো পাথর দেখে জাগে কার চোখের আবেশ গো॥
*৪৯.
তালঃ দাদ্রা
নয়ন ভরা জল গো তোমার আঁচল ভরা ফুল
ফুল নেব না, অশ্রু নেব ভেবে হই আকুল॥
ফুল যদি নিই তোমার হাতে
জল রবে
না১
নয়ন পাতে
১. গো
অশ্রু নিলে ফুটবে না আর প্রেমের মুকুল॥
মালা যখন গাঁথ তখন পাওয়ার সাধ যে জাগে
মোর বিরহে কাঁদ যখন আরো ভাল লাগে।
পেয়ে তোমায় যদি হারাই
দূরে দূরে থাকি গো তাই
ফুল ফুটিয়ে যাই গো চলে চঞ্চল বুলবুল॥
*৫০.
কামোদ মিশ্র,
তালঃ দাদ্রা
অন্তরে তুমি আছ চিরদিন ওগো অন্তযার্মী
বাহিরে বৃথাই যত খুঁজি তা-ই পাই না তোমারে আমি॥
প্রাণের মতন, আত্মার সম
আমাতে আছ হে অন্তরতম
মন্দির রচি'
বিগ্রহ পূজি দেখে হাস তুমি স্বামী॥
সমীরণ সম, আলোর মতন বিশ্বে রয়েছ ছড়ায়ে
গন্ধ-কুসুমে সৌরভ সম প্রাণে-প্রাণে আছ জড়ায়ে।
তুমি
বহুরূপী তুমি রূপহীন
‒
তব
লীলা হেরি অন্তরবিহীন
তব লুকোচুরি খেলা সহচরী আমি যে দিবসযামী॥
|