*১০৫১. রাগ: আশাবরি মিশ্র, তাল: একতাল
আজিকে তোমারে স্মরণ করি’
মৃত্যু আড়ালে জীবন তোমার
ওঠে অপরূপ মহিমায় ভরি’॥
জীবন তোমার তটীনীর মত
বয়ে গেছে বাধা উপল-আহত
আত্মারে রাখি চির জাগ্রত
অম্বরে শির রেখেছিলে ধরি’॥
তোমার এ স্মৃতি বাসরে আমরা
তোমারে শ্রদ্ধা তর্পণ দানি,
তোমার ধর্ম তোমার কর্ম
দিক অভিনব মহিমা আনি।
এসো আমাদের করুণ স্মৃতিতে
নয়নের জলে বিষাদিত চিতে
জীবনের পরপার হতে
পড়ুক আশিস সান্ত্বনা বারি॥
*১০৫২. রাগ: কেদারা/ হাম্বির. তাল ত্রিতাল
আজো কাঁদে কাননে কোয়েলিয়া।
চম্পা কুঞ্জে আজো গুঞ্জে ভ্রমরা, কুহরিছে পাপিয়া॥
প্রেম-কুসুম শুকাইয়া গেল হায়,
প্রাণ-প্রদীপ মোর হের গো নিভে যায়,
বিরহী এসো ফিরিয়া॥
তোমারি পথ চাহি হে প্রিয়া নিশিদিন
মালার ফুল মোর ধূলায় হ’ল মলিন
জনম গেল ঝুরিয়া॥
*১০৫৩. তাল: মঞ্জুভাষিণী (১৮ মাত্রা)
আজো ফাল্গুনে বকুল কিংশুকের বনে
কহে কোন্ কথা হৃদয় স্বপ্নে আনমনে॥
মৃদু মর্মরে পথের পল্লবের সাথে
গাহে কোন্ গীতি নিশীথে পান্‌সে জোছনাতে
খোঁজে কার স্মৃতি নীরস শুভ্র চন্দনে॥
গ্রহ চন্দ্রে কয়, সে কি গো মৃত্যুদ্বার খুলে
হয়ে সৃষ্টিপার গিয়াছে অমৃতের কূলে,
কাঁদে কোন্ লোকে পরম সুন্দরের সনে॥
*১০৫৪.
আদরিণী মোর কালো মেয়ে রে কেমনে কোথায় রাখি।
তারে রাখিলে চোখে বাজে ব্যথা বুকে বুকে রাখিলে দুখে ঝুরে আঁখি॥
কাঙাল যেমন পাইলে রতন লুকাতে ঠাঁই নাহি পায়;
তেমনি আমার শ্যামা মেয়েরে জানি না রাখিব কোথায়।
দুরন্ত মোর এই মেয়েরে
বাঁধব আমি কি দিয়ে রে,
(তাই) পালিয়ে যেতে চায় সে যবে আমি অমনি মা ব’লে ডাকি॥
*১০৫৫. রাগ: রাগমালা, তাল:তেওড়া
আদি পরম বাণী, ঊর বীণাপাণি।
আরতি করে তব কোটি কোবিদ জ্ঞানী॥
হিমেল শীত গত, ফাগুন মুঞ্জরে,
কানন-বীণা বাজে সমীরে মর্মরে।
গাহিছে মুহু মুহু আগমনী কুহু,
প্রকৃতি বন্দিছে নব কুসুম আনি’॥
মূক ধরণী করে বেদনা-আরতি,
বীণা-মুখর তারে কর মা ভারতী!
বক্ষে নব আশা, কণ্ঠে নব ভাষা
দাও মা, আশিস যাচে নিখিল প্রাণী॥
শুচি রুচির আলো-মরাল বাহিনী
আনিলে আদি জ্যোতি, সৃজিলে কাহিনী।
কণ্ঠে নাহি গীতি, বক্ষে ত্রাস,-ভীতি,
কর প্রবুদ্ধ মা বর অভয় দানি’
ব্রহ্মবাদিনী আদিম বেদ-মাতা,
এসো মা, কোটি-দল হৃদি আসন পাতা।
অশ্রুমতী মা গো, নব বাণীতে জাগো,
রুদ্ধ দ্বার খোলো সাজিয়া রুদ্রাণী॥
*১০৫৬.
আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়, চাঁদ নেহারিয়া প্রিয়
মোরে যদি মনে পড়ে, বাতায়ন বন্ধ করিয়া নিও॥
সুরের ডুরিতে জপমালা সম
তব নাম গাঁথা ছিল প্রিয়তম,
দুয়ারে ভিখারি গাহিলে সে গান, তুমি ফিরে না চাহিও॥
অভিশাপ দিও,বকুল-কুঞ্জে যদি কুহু গেয়ে ওঠে,
চরণে দলিও সেই যুঁই গাছে আর যদি ফুল ফোটে।
মোর স্মৃতি আছে যা কিছু যেথায়
যেন তাহা চির-তরে মুছে যায়,
(মোর) যে ছবি ভাঙিয়া ফেলেছ ধূলায় (তারে) আর তু’লে নাহি নিও॥
*১০৫৭. তাল: কাহার্‌বা
আনন্দ-দুলালি ব্রজ-বালার সনে
নন্দ-দুলাল খেলে হোলি!
রঙের মাতন লেগে যেন শ্যামল মেঘে
খেলেছে রাঙা বিজলি॥
রাঙা মুঠি-ভরা রাঙা আবির-রেণু
রাঙিল পীত-ধড়া শিখি পাখা বেণু
রাঙিল শাড়ি কাঁচলি॥
লচকিয়া আসে মুচকিয়া হাসে
মারে আবির পিচকারি,
চাঁদের হাট তোরা দেখে যা রে দেখে যা
রঙে মাতোয়ালা নর-নারী!
শিরায় শিরায় সুরার শিহরণ
রঙ্গে অঙ্গে পড়ে ঢলি॥
*১০৫৮. সঙ্গীতালেখ্য: ‘পঞ্চাঙ্গনা’, তাল: কাহার্‌বা
আনারকলি! আনারকলি!
স্বপ্নে দেখে’ কোন্ ডালিম-কুমারে
এসেছিলে রেবা ঝিলামের ‘পরে,
দিতে তব রাঙা হৃদয়ের অঞ্জলি॥
মরুর মণিকা বাদশাহী নওরোজে
এসেছিলে কোন্ হারানো হিয়ার খোঁজে,
তব রূপ হেরি’ হেরেমের দীপ-মালা উঠেছিল চঞ্চলি’॥
পতঙ্গ সম পাপড়ির পাখা মেলি’ আনারকলি গো-
সেলিমের অনুরাগ-মোমের প্রদীপে পড়িলে ঢলি’ গো-
মিলায়েছে মাটিতে মোগলের মসনদ, আনারকলি।
তুমি আজো দুলিতেছ ফুলের হাসিতে
বিরহীর বাঁশিতে, আনারকলি;
তব জীবন্ত সমাধির বিগলিত পাষাণে
আজও প্রেম-যমুনার ঢেউ ওঠে উথলি’॥
*১০৫৯. সঙ্গীতালেখ্য: ‘কাফেলা’ (মরুদেশের সঙ্গীত)
আন্ গোলাপ-পানি, আন্ আতরদানি গুলবাগে।
সহেলি গো কিছু নাহি ভালো লাগে
বেদু্ঈন ছেলের বাঁশি কারে ডাকে
কেঁদে’ কেঁদে’ অনুরাগে॥
মরুযাত্রীদের উটের সারি
যেমন চাহে তৃষার বারি
তেমনি মম পিয়াসি পরান যেন কার-
প্রেম-অমৃত বারি মাগে॥
চাঁদের পিয়ালাতে জোছনা-শিরাজি ঝ’রে যায়
আমারি হৃদয় কেন গো সে-মধু নাহি পায়,
হায়, হায়, বাদাম গাছের আঁধার বনে
নিঃশ্বাস ওঠে যেন বুল্‌বুলির শিসের সনে,
বিরহী মোর কোথায় কাঁদে কোন্ মদিনাতে-
ফোরাত নদীর রোদন১ সম বুকে ঢেউ জাগে॥
*১০৬০. রাগ: বৃন্দাবনী সারং, তাল: ত্রিতাল
আনো আনো অমৃত বারি।
পিপাসিত চিত্তের তৃষ্ণা নিবারি॥
আনো নন্দন হতে পারিজাত-কেশর
তীর্থ-সলিল আনো ভরি’ মঙ্গল-হেম-ঝারি॥
প্রখর সূর্যকরে দহিছে দিগন্তর,
মন্দাকিনী-ধারা সঞ্জীবনী আনো নারী॥
*১০৬১. তাল: কাহার্‌বা
আবহায়াতের পানি দাও, মরি পিপাসায়
শরণ নিলাম নবীজির মোবারক পা’য়॥
ভিখারিরে ফিরাবে কি শূন্য হাতে,
দয়ার সাগর তুমি যে মরু সাহারায়॥
অন্ধ আমি আঁধারে মরি ঘুরিয়া,
দেখাবে না-কি মোরে পথ, এই নিরাশায়॥
যে-মধু পিয়ে রহে না ক্ষুধা তৃষ্ণা,
মরার আগে সেই মধু দিও গো আমায়॥
*১০৬২.রাগ: জয়জয়ন্তী মিশ্র, তাল: ত্রিতাল
আবার কি এলো রে বাদল।
ল’য়ে পিঠভরা এলোচুল, চোখ ভরা জল॥
তৃষিত গগনের তৃষ্ণা কি মিটিল
কৃষ্ণা-প্রিয়ায় হিয়া কি তিতিল,
কাহার বিরহ-দাহন জুড়াল,
মোর মত কা’র নিশি হইল বিফল॥
ফুটিল কি কদম কেয়া,
দোলে, কা’র বুকে ফুল, কা’র নয়নে দেয়া।
কে গেল অভিসারে, কে কাঁদে ভবনে
আকা’র দীপ নিভে গেল দুরন্ত পবনে,
কণ্ঠ-লগ্না কা’র কান্তা ঘুমায়
মোর মত কা’র বুকে জ্বলিছে অনল॥
*১০৬৩.
আবার কেন আগের মত অমন চোখে চাও
যে বিরহ গেছি ভুলে’, ভুলতে তারে দাও॥
শান্ত উদাস আমার আকাশ
নাই সেথা আর মেঘের আভাস,
নির্মল সে-আকাশ কেন বাদল-মেঘে ছাও॥
বিপুল ধরার দূর নিরালায়
একটুখানি পেয়েছি ঠাঁই,
নিঠুর, তুমি আবার আগুন জ্বেলো না সেথাও॥
*১০৬৪. রাগ: নাগস্বরাবলী/ইমন-পূরবী, তাল: কাহার্‌বা
আবার ভালোবাসার সাধ জাগে।
সেই পুরাতন চাঁদ আমার চোখে আজ নূতন লাগে॥
যে ফুল দলিয়াছি নিঠুর পায়ে
সাধ যায় ধরি তারে বক্ষে জড়ায়ে,
উদাসীন হিয়া হায় রেঙে ওঠে অবেলায় সোনার গোধূলি-রাগে॥
আবার ফাগুন-সমীর কেন বহে,
আমার ভুবন ভরি’ কেঁদে ওঠে বাঁশরি অসীম বিরহে।
তপোবনের বুকে ঝর্ণার সম
কে এলে সহসা হে প্রিয়তম,
মাথুরের গোকুল সহসা রাঙাইলে রাসের কুঙ্কুম-ফাগে॥
*১০৬৫. তাল: লাউনি
আবির-রাঙা আভীরা নারী সনে কৃষ্ণ কানাই খেলে হোলি।
হোরির মাতনে চুড়ি ও কাঁকনে উঠিছে কল-কাকলি॥
শ্যামল তনু হ’ল রাঙা আবিরে রেঙে,
ইন্দ্রধনু-ছটা যেন কাজল মেঘে,
রাঙিল রঙে নীল চোলি॥
লহু লহু হাসে মুহু মুহু ভাসে রাঙা কুঙ্কুম ফাগের রাগে,
দোঁহে দুহু ধরি’ মারে পিচকারি চাঁদ-মুখে কলঙ্ক জাগে।
অঙ্গে অপাঙ্গে অনঙ্গ-রঙ্গিমা ইঙ্গিতে উঠিছে উছলি’॥
*১০৬৬. নাটক: ‘মধুমালা’
আমরা বনের পাখি বনের দেশে থাকি।
ফিরি পাহাড়ি ফুলের রাঙা পরাগ মাখি’॥
মোরা ঝর্ণা-ধারে ঐ নীল পাহাড়ে
দেবদারুর শাখায় বাঁধি লতার রাখি।
শুনি বন-উদাসী মিঠে পাহাড়ি বাঁশি
মোরা শিস্ দিয়ে রাখাল ছেলেরে ডাকি॥
*১০৬৭.
আমার আঘাত যত হান্‌বি শ্যামা ডাকব তত তোরে।
মায়ের ভয়ে শিশু যেমন লুকায় মায়ের ক্রোড়ে॥
ওমা চারধারে মোর দুখের পাথার
তুই পরখ্ কত করবি মা আর,
আমি জানি তবু পার হ’ব মা চরণতরী ধ’রে॥
আমি ছাড়বো না তোর নামের ধেয়ান বিশ্বভুবন পেলে,
আমায় দুঃখ দিয়ে নাম ভুলাবি, নই মা তেমন ছেলে।
তুই স্মরণ করিস পলে পলে,
আমি সেই আনন্দে দুখের অসীম-সাগর যাব ত’রে॥
১০৬৮.
(আমায়) আর কতদিন মহামায়া রাখ্‌বি মায়ার ঘোরে।
(মোরে) কেন মায়ার ঘূর্ণিপাকে ফেল্‌লি এমন করে॥
(ওমা) কত জনম করেছি পাপ
কত লোকের কুড়িয়েছি শাপ,
তবু মা তার নাই কি গো মাফ ভুগব চিরতরে॥
এমনি ক’রে সন্তানে তোর ফেল্‌লি মা অকূলে,
তোর নাম যে জপমালা তাও যাই হায় ভুলে’।
পাছে মা তোর কাছে আসি
তাই বাঁধন দিলি রাশি রাশি,
কবে মুক্ত হ’ব মুক্তকেশী (তোর) অভয় চরণ ধ’রে॥
*১০৬৯.
আমার যারা ঘিরে আছে আমার মুখে চেয়ে।
তারা আমার নহে হে নাথ, (তারা) তোমার ছেলে মেয়ে॥
ওদের তুমি রেখো সুখে
ধ’রে তোমার আপন বুকে
বাঁচুক ওরা তোমার আশির্বাদের প্রসাদ পেয়ে॥
আমায় দিও দুর্ভাবনার বোঝা যত আছে
(নাথ) থাকুক পরম নির্ভরতায় ওরা আমার কাছে।
শুধু তোমার ভরসাতে নাথ
আমি ওদের ধরেছি হাত,
তোমার স্নেহ মায়ের মত থাকুক ওদের ছেয়ে॥
*১০৭০.
আমায় রাখিস্‌নে আর ধ’রে।
পারের ঠাকুর (ওরে) ডাক দিয়েছে
এই পারেরই অন্ধকারে মন যে কেমন করে॥
আয়ু-রবির অস্ত-পথে
এলো এলো ঠাকুর কনক-রথে,
গোধূলি-রঙ হাসিটি তার ঝরছে চোখের ’পরে’ ॥
চোখ দু’টি মোর ভরে’ জলে
বল্‌ব ঠাকুর নাও গো কোলে,
রইতে নারি (আমি তোমায় ছেড়ে) রইতে নারি।
আমার এ প্রাণ (পূজার ফুলের মত)
(তোমার) পায়ে পড়ুক ঝ’রে॥
*১০৭১.
আমাদের ভালো কর, হে ভগবান,
সকলের ভালো কর, হে ভগবান॥
আমাদের সব লোকে বাসিবে ভালো
আমরাও সকলেরে বাসিব ভালো,
রবে না হিংসা-দ্বেষ, দেহ ও মনের ক্লেশ
মাটির পৃথিবী হবে স্বর্গ সমান-হে ভগবান॥
জ্ঞানের আলোক দাও, হে ভগবান!
বিপুল শক্তি দাও, হে ভগবান।
তোমারি দেওয়া জ্ঞানে চিনিব তোমায়
তোমার শক্তি হবে কর্মে সহায়,
ধর্ম যদি সাথি হয়, রবেনাক দুখ-ভয়
বিপদে পড়িলে তুমি করো যেন ত্রাণ-হে ভগবান॥
১০৭২.
আমার আছে অসীম আকাশ, তোমার আছে ঘর।
তোমার আছে পারের তরী, আমার বালুচর॥
তোমার আছে কূলের আশা
আমার অকূল স্রোতে ভাসা,
আমায় ডাকে (গো) দূর আলেয়া, তোমার প্রদীপ-কর॥
থাকুক তোমার দখিন হাওয়া, আমার থাকুক ঝড়,
তোমার তরে তরুর ছায়া, আমার তেপান্তর।
তুমি ঘুমাও সুখের কোলে
আমি ভুলে’ যাওয়ার দলে,
হারিয়ে তোমায় মোর ধরণী হলো বিপুলতর॥
*১০৭৩.
(আমার) আনন্দিনী উমা আজো এলো না তার মায়ের কাছে।
হে গিরিরাজ! দেখে এসো কৈলাসে মা কেমন আছে॥
মোর মা যে প্রতি আশ্বিন মাসে
মা মা ব’লে ছুটে আসে,
‘মা আসেনি’ ব’লে আজও ফুল ফোটেনি লতায় গাছে॥
তত্ত্ব-তলাশ নিইনি মায়ের তাই বুঝি মা অভিমানে,
না এসে তার মায়ের কোলে ফিরিছে শ্মশান মশানে।
ক্ষীর নবনী ল’য়ে থালায়
কেদে ডাকি, ‘আয় উমা আয়’।
যে কন্যারে চায় ত্রিভুবন তাকে ছেড়ে মা কি বাঁচে॥
*১০৭৪.
আমার উমা কই গিরিরাজ, কোথায় আমার নন্দিনী।
এ যে দেবী দশভুজা এ কোন্ রণ-রঙ্গিণী॥
মোর লীলাময়ী চঞ্চলারে ফেলে
এ কোন দেবীমূর্তি নিয়ে এলে,
এ যে মহীয়সী মহামায়া বামা মহিষ-মর্দিনী॥
মোর মধুর স্নেহে জ্বালতে আগুন আন্‌লে কারে ভুল ক’রে,
এরে কোলে নিতে হয় না সাহস ডাকতে নারি নাম ধ’রে।
কে এলি মা দনুজ দলন বেশে
কন্যারূপে মা ব’লে ডাক হেসে হেসে,
তুই চিরকাল যে দুলালি মোর মাতৃস্নেহে বন্দিনী॥
*১০৭৫. গীতিচিত্র: ‘অতনুর দেশ’
আমার কথা লুকিয়ে থাকে আমার গানের আড়ালে।
সেই কথাটি জানার লাগি’ কে গো এসে দাঁড়ালে॥
শূন্য মনের নাই কেহ মোর সাথি
গান গেয়ে তাই কাটাই দিবারাতি,
সেই হৃদয়ের গভীর বনে কে তুমি পথ হারালে॥
হৃদয় নিয়ে নিদয় খেলার হয় যেখানে অভিনয়,
চেও না সেই হাটের মাঝে আমার মনের পরিচয়।
যে বেদনার আগুন বুকে ল’য়ে
জ্বলি আমি প্রদীপ-শিখা হ’য়ে,
সেই বেদনা জুড়াতে মোর কে তুমি হাত বাড়ালে॥
*১০৭৬.
আমার ঘরের পাশ দিয়ে সে চলতো নিতুই সকাল-সাঁঝে।
আর এ পথে চলবে না সে, সেই ব্যথা হায় বক্ষে বাজে॥
আমার দ্বারের কাছটিতে তার ফুটতো লালী গালের টোলে,
টলতো চরণ, চাউনি বিবশ, কাঁপতো নয়ন-পাতার কোলে-
কুঁড়ি যেমন প্রথম খোলে গো!
কেউ কখনো কইনি কথা, কেবল নিবিড় নীরাবতা
সুর বাজাতো অনাহতা গোপন মরম-বীণার মাঝে॥
মূক পথের আজ বুক ফেটে যায় স্মরি’
তারি পায়ের পরশ বুক-খসা তার আঁচর-চুমু,
রঙিন ধুলো পাংশু হ’ল ঘাস শুকোলো যেচে’
বাচাল যোড়-পায়েলার রুমু-ঝুমু।
আজো আমার কাটবে গো দিন রোজই যেমন কাটতো বেলে,
একলা ব’সে শূন্য ঘরে- তেম্‌নি ঘাটে ভাসবে ভেলা-
অবহেলা হেলা-ফেলায় গো!
শুধু সে আর তেমন ক’রে
মন র’বে না নেশায় ভ’রে
আসার আশায় সে কার তরে সজাগ হ’য়ে সকল কাজে।
ডুকরে কাঁদে মন-কপোতী’ কোথায় সাথির কূজন বাজে?
সে-পার ভাষা কোথায় রাজে॥
১০৭৭. রাগ: ছায়ানট-কেদারা, তাল: একতাল
আমার দুখের বন্ধু, তোমার কাছে চাইনি ত’ এ সুখ।
আমি জানিনি ত বুকে পেয়েও কাঁদবে এ মন বুক॥
আমার শাখায় যবে ফোটেনি ফুল
আমি চেয়েছি পথ আশায় আকুল,
আজ ফোটা ফুলে কাঁদে কেন কুসুম ঝরার দুখ॥
প্রিয় মিলন-আশায় ছিনু সুখে ছিলে যবে দূর,
আজ কাছে পেয়ে পরান কাঁদে বিদায়-ভয়াতুর।
এ যে অমৃতে গরল মিশা
প্রাণে কেবলি বাড়িছে তৃষা,
আমার স্বর্গে কেন মলিন ধরার বেদন জাগরূক॥
*১০৭৯. রাগ: সিন্ধু মিশ্র, তাল: কাহার্‌বা
আমার নয়নে কৃষ্ণা-নয়নতারা হৃদয়ে মোর রাধা-প্যারী।
আমার প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা শ্যাম-সোহাগী গোপ-নারী॥
আমার স্নেহে জাগে সদা
পিতা নন্দ মা যশোদা,
ভক্তি আমার শ্রীদাম-সুদাম আঁখি-জল যমুনা-বারি॥
আমার সুখের কদম-শাখায়
কিশোর হরি বংশী বাজায়
আমার দুখের তমাল ছায়ায়- লুকিয়ে খেলে বন-বিহারী॥
মুক্ত আমার প্রাণের গোঠে চরায় ধেনু রাখাল-কিশোর,
আমার প্রিয়জন নেয় সে হরি’, সেই ত ননী খায় ননী-চোর।
রাধা-কৃষ্ণ-কথা শুনায়- দেহ ও মন শুক-শারী॥
*১০৮০. নাটক: ‘মধুমালা’
আমার পায়ের বেড়ি এই সোনার পুরী ভেঙে।
যাও গো নিয়ে তোমার দেশে (তোমায়) পাব সেথায় জেগে॥
এই যে সাগর এই যে কুমার এই যে তোমার আমি
এই যে তুমি স্বপ্নে-পাওয়া মধুমালার স্বামী,
(এবার) তোমার হাসির রঙে, আঁধার পুরী উঠুক রেঙে॥
*১০৮১.
আমার বিদায়-রথের চাকার ধ্বনি ঐ গো এবার কানে আসে।
পুবের হাওয়া তাই কাঁদে যায় ঝাউ-এর বনে দীঘল শ্বাসে॥
ব্যথায়-বিবশ গুলঞ্চ ফুল
মালঞ্চে আজ তাই শোকাকুল,
মাটির মায়ের কোলের মায়া ওগো আমার প্রাণ উদাসে॥
অঙ্গ আসে অলস হ’য়ে নেতিয়ে-পড়া অলস ঘুমে,
স্বপন-পারের বিদেশিনীর হিম-ছোঁওয়া যায় নয়ন চুমে।
হাতছানি দেয় অনাগতা
আকাশ ডোবা বিদায়-ব্যথা,
লুটায় আমার ভুবন ভরি’ বাঁধন-ছেঁড়ার কাঁদন-ত্রাসে॥
মোর বেদনার কর্পূর-বাস ভরপুর আজ দিগ্বলয়ে,
বনের আঁধার লুটিয়ে কাঁদে হরিণটি তার হারার ভয়ে।
হারিয়ে-যাওয়া মানসী হায়
নয়ন-জলে শয়ন তিতায়,
ওগো, এ কোন্ যাদুর মায়ায় দু’চোখ আমার জলে ভাসে॥
আজ আকাশ-সীমায় শব্দ শুনি অচিন পায়ের আসা-যাওয়ার,
তাই মনে হয় এই যেন শেষ আমার অনেক দাবিদাওয়ার।
আজ কেহ নাই পথের সাথি
সামনে শুধু নিবিড় রাতি,
আমায় দূরের বাঁশি ডাক দিয়েছে, রাখ্‌বে কে আর বাঁধন-পাশে॥
*১০৮২. রাগ: দেশি মিশ্র, তাল: দাদ্‌রা
(আমার) মা আছে রে সকল নামে মা যে আমার সর্বনাম।
যে নামে ডাক শ্যামা মাকে পুর্‌বে তাতেই মনস্কাম॥
ভালোবেসে আমার শ্যামা মাকে
যার যাহা সাধ সেই নামে সে ডাকে,
সেই নামে দেয় রে সাড়া১ কেউ শ্যামা কয়, কেহ শ্যাম॥
এক সাগরে মিশে গিয়ে সকল নামের নদী,
সেই হরি হর কৃষ্ণ ও রাম, দেখিস্ তাঁকে যদি।
নিরাকারা সাকারা সে কভু
সকল জাতির উপাস্য সে প্রভু,
নয় সে নারী নয় সে পুরুষ, সর্বলোকে তাঁহার ধাম॥
*১০৮৩. রাগ: মালকোষ, তাল: তেওড়া
আমার মা যে গোপাল-সুন্দরী।
যেন এক বৃন্তে কৃষ্ণ-কলি অপরাজিতার মঞ্জরি॥
মা আর্ধেক পুরুষ অর্থ অঙ্গে নারী
আর্ধেক কালি আর্ধেক বংশীধারী,
অর্দ্ধ অঙ্গে পীতাম্বর আর অর্ধ অঙ্গে দিগম্বরী॥
মা সেই পায়ে প্রেম-কুসুম ফোটায় নূপুর-পরা যে চরণ,
মা’র সেই পায়ে রয় সর্প-বলয় যে পায়ে প্রলয়-মরণ।
মার আধ-ললাটে অগ্নি-তিলক জ্বলে
চন্দ্রলেখা আর্ধেক ললাট তলে,
শক্তিতে আর ভক্তিতে মা আছেন যুগল রূপ ধরি’॥
১০৮৪. রাগ: দেশ মিশ্র, তাল: দাদ্‌রা
আমার মানস-বনে ফুটেছে রে শ্যামা-লতার মঞ্জরি।
সেই মঞ্জু-বনে ফির্‌ছে রে তাই ভক্তি-ভ্রমর গুঞ্জরি॥
সেথা আনন্দে দেয় করতালি
প্রেমের কিশোর বনমালী,
সেই লতামূলে শিবের জটার গঙ্গা ঝরে ঝর্ঝরি॥
কোটি তরু শাখা মেলি’ এই সে-লতার স্পর্শ চায়,
শিরে ধ’রে ধন্য হ’তে এই শ্যামারই শ্যাম শোভায়।
এই লতারই ফুল-সুবাসে
কোটি চন্দ্র সূর্য আসে১ নীল আকাশে,
এই লতার ছায়ায় প্রাণ জুড়াতে ত্রিলোক আছে প্রাণ ধরি’॥
*১০৮৫. রেকর্ড-নাটিকা: ‘সুভদ্রা’ (নাট্যকার: বরদাপ্রসন্ন দাশগুপ্ত)
আমার লীলা বোঝা ভার।
নদীতে বান আনি আমি আমিই করি পার॥
আমার যারা করে আশ
করি তাদের সর্বনাশ,
তবু আশা ছাড়ে না যে মিটাই আশা তার॥
*১০৮৬. রাগ: আশাবরি, তাল: কাওয়ালি
আমার সকলি হরেছ হরি এবার আমায় হ’রে নিও।
যদি সব হরিলে নিখিল-হরণ তবে ঐ চরণে শরণ দিও॥
আমায় ছিল যারা আড়াল ক’রে
হরি তুমি নিলে তাদের হ’রে,
ছিল প্রিয় যারা গেল তারা (হরি) এবার তু্মিই হও হে প্রিয়॥
*১০৮৭.
আমার সারা জনম কেঁদে গেল
(কবে) শেষ হবে মোর কাঁদা।
পথে পথে ঘুরে মরি, পদে পদে বাধা॥
বাঁচ্‌তে চাইরে যে ডাল ধরে’
সে ডাল অম্‌নি ভেঙে পড়ে,
সুখের আশায় ছুটে ছুটে দুঃখ হ’ল সাধা॥
দুঃখী জনের বন্ধু কোথায় দীনের সহায় কোথা,
(নাই) অসহায়ের তরে বুঝি ব বিধাতারও ব্যথা।
আকুল হয়ে কাঁদি যত
বেড়ে ওঠে বোঝা তত,
আদায় ক’রে ফিরি যেন আমি দুখের চাঁদা।
*১০৮৮.
আমার সুরের ঝর্ণা-ধারায় করবে তুমি স্নান।
ওগো বধু! কণ্ঠে আমার তাই ঝরে এই গান॥
কেশে তোমার পর্‌বে বালা
তাই গাঁথি এই গানের মালা,
তোমার টানে ভাব-যমুনায় বহিছে উজান॥
আমার সুরের ইন্দ্রাণী গো, উঠ্‌বে তুমি ব’লে,
নিত্য বাণীর সিন্ধুতে মোর মন্থন তাই চলে।
সিংহাসনের সুর-সভাতে
বসবে রানীর মহিমাতে,
সৃজন করি’ সেই গরবে সুরের পরীস্থান॥
*১০৮৯.
আমার হৃদয়-শামাদানে জ্বালি’ মোমের বাতি।
নবীজী গো! জেগে’ আমি কাঁদি সারা রাতি॥
আস্‌মানেরই চাঁদোয়া-তলে
চাঁদ-সেতারার পিদিম১ জ্বলে,
ওরাও যেন খোঁজে তোমায় আমার দুঃখের সাথি২॥
দিনের কাজে পাই না সময় যাই নিরালা রাতে,
তোমায় পাওয়ার পথ খুঁজি গো কোরানের আয়াতে।
তোমায় পেলে পাব খোদায়
তাই শরণ যাচি তোমারি পায়,
পাওয়ার আশে জেগে থাকি প্রেমের শয্যা পাতি’॥
ঝর্‌লে পাতা, ডাক্‌লে পাখি,
চম্‌কে ভাবি, তুমি নাকি?
মস্‌জিদে যাই গভীর রাতে খুঁজি আঁতিপাঁতি॥
রোজ-হাশরে দেখা পাব মোরে সবাই বলে;
তোমার বিহনে আমার ঘুম নাই নয়নে,
মোর জীবনে রোজ-কিয়ামত আসে প্রতি পলে।
বিষের সমান লাগে আমার দুনিয়ার যশ-খ্যাতি॥
*১০৯০.
আমারে চরণে দিও ঠাঁই
ও চরণ বিনা, ওহে গিরিধারী! কামনা কিছুই নাই॥
ব্যথিত হৃদয় হতে আকুল মরম বাণী,
থেকে থেকে ভেসে আসে, ফিরে এসো এসো রানী।
ফিরিতে পারি না আর অসীমে মিশিয়া যাই-
তুমি ফিরে যাও সখা আমাতে আর আমি নাই॥
*১০৯১. নাটক: ‘মধুমালা’ (ঘুমপরী স্বপনপরীর গান)
ঘুম : আমারে ভাসালে অসীম আকাশে তোমারে ভাসানু জলে।
স্বপন : মাটির মানুষ বোঝে না বেদনা, বুঝিত দেবতা হলে॥
ঘুম : ওগো সুন্দর তুমি ত জানো না
: ভালোবাসার কি নিবিড় বেদনা,
স্বপন : জান না ত আমি কাঁদি কত তোমারে কাঁদাই ব’লে॥
*১০৯২, ‘মোনাজাত’
আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হ’তে বাঁচাও প্রভু উদার!
হে প্রভু, শেখাও নীচতার চেয়ে নীচ পাপ নাহি আর॥
যদি শতেক জন্ম-পাপে হই পাপী
যুগ-যুগান্ত নরকেও যাপি,
জানি জানি প্রভু, তারও আছে ক্ষমা, ক্ষমা নাই নীচতার॥
ক্ষুদ্র করো না, হে প্রভু, আমার হৃদয়ের পরিসর,
যেন হৃদয়ে আমার সম ঠাঁই পায় শত্রু-মিত্র-পর।
নিন্দা না করি ঈর্ষায় কারো
অন্যের সুখে সুখ পাই আরো,
কাঁদি তা’রি তরে অশেষ দুঃখী ক্ষুদ্র আত্মা যার॥
*‌১০৯৩.
আমি অগ্নি-শিখা, মোরে বাসিয়া ভালো।
যদি চাও, তব অন্তরে প্রদীপ জ্বালো॥
মোর দহন-জ্বালা র’বে আমারি বুকে,
তব তিমির রাতে হ’ব রঙিন আলো॥
হ’ব তোমার প্রেমে নব উদয়-রবি,
আমি মুছাব প্রাণের তব বিষাদ-কালো॥
ল’য়ে বহ্নি-দাহ, প্রিয়! করো না খেলা,
কবে লাগিবে আগুন, হায়! ভাঙিবে মেলা।
শেষে আমার মতো কেন মরিবে জ্ব’লে,
তুমি মেঘের মায়া, শুধু সলিল ঢালো॥
মোরে আঁচলে ঢেকে’ তুমি বাঁচালে ঝড়ে,
আজ তুমিই আবার তা’রে নিভায়ো না লো॥
*১০৯৪. রাগ: মিশ্র মালবশ্রী, তাল: দাদ্‌রা
আমি অলস উদাস আন্‌মনা।
আমি সাঁঝ-আকাশে শান্ত নিথর রঙিন্ মেঘের আল্‌পনা॥
অলস যেমন বনের ছায়া
নীড়ের পাখি শ্রান্ত-কায়া,
যেমন অলস তৃণের মুখে ভোরের শিশির হিম-কণা॥
নদীর তীরে অলস রাখাল এক্‌লা ব’সে রয় যেমন,
তেম্‌নি অলস উদাস আমি রই ব’সে রই অকারণ।
যেমন অলস দীঘির জলে
থির হ’য়ে রয় কমল-দলে,
নিতল ঘুমে স্বপন সম অলস আমি কল্পনা॥
*১০৯৫.
২০০৪. রাগ: গারা মিশ্র, তাল: দাদ্‌রা
প্রিয় যাই যাই বলো না, না না না
আর ক’রো না ছলনা, না না না॥
আজো মুকুলিকা মোর হিয়া মাঝে
না-বলা কত কথা বাজে,
অভিমানে লাজে বলা যে হ’ল না॥
কেন শরমে বাধিল কে জানে
আঁখি তুলিতে নারিনু আঁখি পানে।
প্রথম প্রণয়-ভীরু কিশোরী
যত অনুরাগ তত লাজে মরি,
এত আশা সাধ চরণে দ’লো না॥
*১০৯৬. দ্বৈত সঙ্গীত
পুরুষ : আমি আল্লার ডাকে ছুটে যাই যবে
তুমি মোনাজাত কর গো নীরবে,
স্ত্রী : তুমি যে খোদার দেওয়া সওগাত মম বেহেশ্‌তের সাথি॥
পুরুষ : তুমি হেরেমের বন্দিনী নহ তুমি যে ঘরের বাতি।
স্ত্রী : তুমি যে ঈদের চাঁদ! তব তরে জাগিয়া কাটাই রাতি॥
পুরুষ : তুমি নারী আগে আনিলে ঈমান দ্বীন ইসলাম ’পরে,
স্ত্রী : তুমি যে বিজয়ী খোদার রহম আনিয়াছ জয় ক’রে!
পুরুষ : আজি দুর্বল মোরা তোমারে ত্যজিয়া
স্ত্রী : দাঁড়াইব পাশে উঠহ জাগিয়া,
উভয়ে : হাতে হাত ধরি’ চলি যদি মোরা জাগিবে নূতন জাতি-
দুনিয়া আবার উঠিবে মাতি’ ॥
১০৯৭.
আমি কালী নামের ফুলের ডালি এনেছি গো মাথায় ক’রে।
দুখের সাগর পার হয়ে যায় এ ফুল যে বুকে ধ’রে॥
(এই) প্রসাদী ফুল দিবস-যামী
ফিরি ক’রে ফিরি আমি,
(এই) ফুল নিলে তার ভুলের আড়াল চিরতরে যায় গো স’রে॥
*১০৯৮.
আমি কালি যদি পেতাম কালী রইত না এ মনের কালি।
মোর সাদা মনের পদ্মপাতায় লিখ্‌তাম তোর শ্রীনাম খালি॥
(মা) কালী পেলে সকল কালো
এক নিমিষে হ’ত আলো,
(মা) কালো পাতার কোলে যেমন ফুটে থাকে ফুলের ডালি॥
(তোর) কালো রূপের নীল যমুনা বইতে যদি মনের মাঝে,
(শ্যামা!) দেখ্‌তে পেত এই ত্রিভবন, কোথায় শ্যামের বেণু বাজে।
তোর কালো রূপের কৃষ্ণ আকাশ পেলে,
(আমি) ময়ূর হয়ে নাচতাম মা তারার পেখম মেলে।
দুঃখ কালো কপালে মোর হাসত শিশু-চাঁদের ফালি॥
*১০৯৯. রাগ: মিশ্র গৌড়-সারঙ, তাল: দ্রুত-দাদ্‌রা
আমি কৃষ্ণচূড়া হতাম যদি হতাম ময়ূর-পাখা, (সখা হে)!
তোমার বাঁকা চূড়ায় শোভা পাতাম ওগো শ্যামল বাঁকা॥
আমি হলে গোপীচন্দন, শ্যাম, অলকা-তিলকা হতাম;
শ্যাম, ও-চাঁদমুখে অলকা-তিলক হতাম।
শ্রীঅঙ্গের পরশ পেতাম হ’লে কদম-শাখা॥
আমি বৃন্দাবনে বন-কুসুম হতাম যদি কালা,
কণ্ঠ ধ’রে ঝ’রে যেতাম হয়ে বনমালা।
আমি নূপুর যদি হতাম হরি
কাঁদতাম শ্রীচরণ ধরি’
ব্রজবুলি হলে রইত বুকে চরণ-চিহ্ন আঁকা॥
*১১০০. নাটক: বিল্বমঙ্গল’ (বিল্বমঙ্গলের গান)
আমি কেমন ক’রে কোথায় পাব কৃষ্ণ চাঁদের দেখা।
অন্ধকারে খুঁজি তাঁহার ব্রজের পথ-রেখা॥
মেঘে ঢাকা আকাশ সম
পাপে মলিন হৃদয় মম
সে-আকাশে উঠবে কি সে কৃষ্ণ-শশী-লেখা॥
অশান্ত তার বেণু বাজে
আমার ব্যাকুল বুকের মাঝে,
(আমি) শুনেছি, সে ডাকে তা’রেই যে বিরহী একা॥