*১১০১.
আমি গত জনমে, হে প্রিয়, যত কথা বলেছিনু তব কাছে।
ফুল হয়ে সেই কথা আজ পৃথিবীতে ফুটিয়াছে॥
কাঁদিয়া কাঁদিয়া যত আঁখি মম
নিভিয়া গিয়াছে ওগো প্রিয়তম
তারা হয়ে সেই আঁখিগুলি মোর তব পথ চেয়ে আছে॥
যত দীপ জ্বেলে নিশি জেগেছিনু একা বাতায়ন তলে,
কমল কুমুদ হয়ে সেই দীপ ফুটেছে সায়র জলে।
চকোরিনী হয়ে অপূর্ব সাধ
আজো কেঁদে যায় ওগো মোর চাঁদ,
চাতকিনী হয়ে আজো মোর প্রাণ তৃষ্ণার জল যাচে॥
*১১০২. নাটক: ‘হরপার্বতী’ (ঝর্ণা ও ব্রহ্মপুত্রের দ্বৈত গান)
ঝর্ণা : আমি চাই পৃথিবীর ফুল ছায়া ঢাকা ঘরে খেলা।
ব্রহ্মপুত্র : আমি চাই দূর আকাশের তারা সাগরে ভাসাতে ভেলা॥
ঝর্ণা : আমি চাই আয়ু, চাই আলো প্রাণ
ব্রহ্মপুত্র : মরণের মাঝে মোর অভিযান,
উভয়ে : মোরা একটি বৃন্তে যেন দু’টি ফুল প্রেম আর অবহেলা॥
ব্রহ্মপুত্র : আমি বাহির ভুবনে ছুটে যেতে চাই উদাসীন সন্ন্যাসী,
ঝর্ণা : হে উদাসীন! তব তপোবনে তাই উর্বশী হয়ে আসি।
ব্রহ্মপুত্র : মোর ধ্বংসের মাঝে উল্লাস জাগে
ঝর্ণা : তাই বাঁধি নিতি নব অনুরাগে,
উভয়ে : মোরা চিরদিন খেলি এই খেলা, গ’ড়ে তোলা ভেঙে ফেলা॥
*১১০৩.
আমি নহি বিদেশিনী।
(ঐ) ঝিলের ঝিনুক, বিলের শালুক ছিল মোর সঙ্গিনী॥
ঐ বাঁধা-ঘাট, ঐ বালুচর
মাটির প্রদীপ, ঐ মেটে ঘর,
চেনে মোরে ঐ তুলসীতলার নববধূ ননদিনী॥
‘বৌ কথা কও’ পাখি,
বাদ্লা নিশীথে মনের নিভৃতে আজও যায় মোরে ডাকি’।
এত কালো চোখ এলোকেশ-ভার
এত শ্যাম-মেঘ, আছে কোথা আর,
(ঐ) পদ্ম-পুকুরে মোরে স্মরি’ ঝুরে সখি মোর কমলিনী॥
*১১০৪.
আমি নিজেরে আড়াল রাখি, বঁধু সারাদিন গৃহ-কাজে।
হাসে গুরুজন আশেপাশে তাই চাহিতে পারি না লাজে॥
ওগো প্রিয় তুমি অহরহ
কেন বাহির ভবনে রহ?
তব মৌন এ অভিমান বুকে কাঁটার মতন বাজে॥
আমি তোমারি ঘরের বধু, বঁধু এ-লাজ তোমারি লাগি’,
আমি দিনের কুমুদ কলি, ওগো চাঁদ আমি রাতে জাগি।
মোর দেহ গৃহ-কাজ করে
তব পায়ে থাকে মন প’ড়ে,
মোর লাজ-গুণ্ঠন টানি’ লাজ দিও না সভার মাঝে॥
*১১০৫. রাগ: পটমঞ্জরি, তাল: ত্রিতাল (ঢিমা)
আমি পথ-মঞ্জরি ফুটেছি আঁধার রাতে।
গোপন অশ্রু-সম রাতের নয়ন-পাতে॥
দেবতা চাহে না মোরে
গাঁথে না মালার ডোরে,
অভিমানে তাই ভোরে শুকাই শিশির-সাথে॥
মধুর সুরভি ছিল আমার পরান ভরা,
আমার কামনা ছিল মালা হয়ে ঝ’রে পড়া।
ভালোবাসো পেয়ে যদি
আমি কাঁদিতাম নিরবধি,
সে-বেদনা ছিল ভালো, সুখ ছিল সে-কাঁদাতে॥
*১১০৬.
আমি বাণিজ্যেতে যাব এবার মদিনা শহর।
আমি এদেশে হায় গোনাহ্গারি ছিলাম জীবন ভর॥
পাঞ্জেগানার বাজার যেথা বসে দিনে রাতে
দু’টি টাকা ‘আল্লাহ’ ‘রসুল’ পুঁজি নিয়ে হাতে,
কত পথের ফকির সওদা ক’রে হ’ল সওদাগর॥
সেথা আজান দিয়ে কোরান প’ড়ে ফিরিওয়ালা হাঁকে
বোঝাই ক’রে দৌলত দেয়, যে সাড়া দেয় ডাকে,
ওগো জানেন তাহার পাকে কা’বা খোদার আফিস্-ঘর॥১
বেহেশ্তে রোজগারের পরে ছাড়পত্র পায়,
পায় সে সাহস ঈমান-জাহান যদি ডুবে যায়।
ওগো যেতে খোদার খাস্-মহলে পায় সে সিল্মোহর॥
*১১০৭. নাটক: ‘সুভদ্রা’ (ঊর্বশীর গীত)
আমি ভুলিতে পারি না সেই দূর অমরার স্মৃতি।
যার আকাশে বিরাজে চির পূর্ণিমার তিথি॥
আজও যেন শুনি ইন্দ্র সভায়
দেবকুমারীরা ডাকে ‘আয় আয়’,
কেঁদে যেন ডাকে অলকানন্দা নন্দন-বন-বীথি॥
*১১০৮.
পুরুষ : (আমি) মুস্লিম যুবা, মোর হাতে বাঁধা আলির জুল্ফিকার।
স্ত্রী : (আমি) মুস্লিম নারী জ্বালিয়া চেরাগ ঘুচাই অন্ধকার॥
পুরুষ : ধরিয়া রাখিতে দীনের নিশান
: আনন্দে করি জান কোরবান,
স্ত্রী : কত ছেলে মোর শহীদ হয়েছে মরুতে কারাবালার।
আমি নন্দিনী মা ফাতেমার॥
পুরুষ : য়ুরোপ-এশিয়া-আফ্রিকা জুড়ে ছড়ানু খোদার বাণী,
স্ত্রী : মোর একা গৃহ-মক্কাতে আমি আনি জম্জম্ পানি।
পুরুষ : (আমি) জিনিব পৃথিবী আছে মোর আশা
স্ত্রী : (আমি) প্রাণে দেই তেজ, বুকে ভালোবাসা,
পুরুষ : আমি মুসলিম যুবা
স্ত্রী : আমি মুসলিম নারী,
উভয়ে : দুইধারী তলোয়ার॥
*১১০৯.
আমিনা দুলাল এসো মদিনায় ফিরিয়া আবার, ডাকে ভুবনবাসী।
হে মদিনার চাঁদ! জ্যোতিতে তোমার, আঁধার ধরার মুখে ফোটাও হাসি॥
নয়নেরই পিয়ালায় আনো হজরত
তরাইতে পাপীরে খোদার রহমত,
আবার কাবার পানে ডাকো সকলে বাজায়ে মধুর কোরানের বাঁশি॥
শোকে বেদনার পাপের জ্বালায় হের মৃত-প্রায় আজি বিশ্ব নিখিল,
খোদার হাবিব এসে বাঁচাও বাঁচাও, বসাও খুশির হাট, তাজা কর দিল্।
প্রেম-কওসর দিয়ে বেহেশ্ত্ হতে
মেহেদীরে পাঠাও দুঃখের জগতে,
দুনিয়া ভাসুক পুন পুণ্য-স্রোতে শোনাও আজান পাপ-তাপ-বিনাশী॥
১১১০.
আল্লা নামের দরখ্তে ভাই ফুটেছে এক ফুল।
তাঁরে কেউ বলে মোস্তফা নবী, কেউ বলে রসুল॥
পয়গম্বর ফেরেশ্তা হুর পরী ফকির ওলি
খুঁজে জমিন আসমান ভাই দেখতে সে ফুল-কলি,
সে-ফুল যে দেখেছে সেই হয়েছে বেহেশ্তি বুলবুল॥
আল্লা নামের দরিয়াতে ভাই উঠলো প্রেমের ঢেউ
তারে কেউ বলে আমিনা দুলাল, মোহম্মদ কয় কেউ,
সে-ঢেউ যে দেখেছে সে পেয়েছে অকূলের কূল॥
আল্লা নামের খনিতে ভাই উঠেছে এক মণি
কোটি কোহিনূর ম্লান হয়ে যায় হেরি’ তার রোশ্নি,
সেই মণির রঙে উঠল রেঙে ঈদের চাঁদের দুল
তারে কেউ বলে মোস্তফা নবী, কেউ বলে রসুল॥
*১১১১.
আল্লা নামের চ’ড়ে যাব মদিনায়।
মোহাম্মদের নাম হ’বে মোর (ও ভাই) নদী-পথে পুবান বায়॥
চার ইয়ারের নাম হ’বে মোর সেই তরণীর দাঁড়
কল্মা শাহাদতের বাণী হাল ধরিবে তা’র,
খোদার শত নামের শুন্ টানিব (ও ভাই) নাও যদি না যেতে চায়॥
মোর নাও যদি না চলিতে দেয় সাহারার বালি,
মরুভূমে বান ডাকব, (চোখের) পানি দিব ঢালি’।
তাবিজ হ’য়ে দুল্বে বুকে কোরান, খোদার বাণী
আঁধার রাতে ঝড়-তুফানে১ আমি কি ভয় মানি!
আমি তরে’ যাব রে তরী যদি ডুবে’ তারে না পায়২॥
১১১২.
আল্লা নামের শিরনি তোরা কে নিবি কে আয়।
মোরা শিরনি নিয়ে পথে হাঁকি (নিতে) কেহ নাহি চায়॥
এই শিরনির গুণে ওরে শোন
শিরিণ্ হবে তোর তিক্ত মন রে
রাঙা হবে ভাঙা হৃদয় এই শিরনির মহিমায়॥
ধররে প্রাণের তশ্তরি তোর আরশ পানে মেলে,
খোদার খিদে মিটবে রে ভাই এই শিরনি খেয়ে।
তোদের পেট পুরিলি ধূলামাটি খেয়ে
করলি হেলা আল্লার নাম পেয়ে
তোরা কাবা পাবার দরজা পাবি আয় আল্লা নামের দরজায়॥
*১১১৩.
আল্লা ব’লে কাঁদ বারেক্ রসুল ব’লে কাঁদ।
সাফ্ হবে তোর মনের আকাশ উঠবে ঈদের চাঁদ॥
ভোগে কেবল দুর্ভোগ সার, বাড়ে দুখের বোঝা
ত্যাগ শিখ্ তুই সংযম শিখ, সেই তো আসল রোজা,
এই রোজার শেষে ঈদ আস্বে, রইবে না বিষাদ॥
আস্বে খোদার দরগা থেকে শিরনি তোর তরে
কমলিওয়ালা নবীর দেখা পাবি রে অন্তরে,
খোদার প্রেমের স্রোত বইবে ভেঙ্গে মনের বাঁধ॥
তোর হৃদয়ের কারবালাতে বইবে ফোরাত নদী
শহীদের দর্জা তোরে দেবেন আল্লা হাদী,
দুনিয়াদারি ক’রেই পাবি বেহেশ্তেরি স্বাদ॥
*১১১৪. তাল: কাহার্বা
আল্লা রসুল তরু আর ফুল প্রেমিক-হৃদয় জানে।
কেহবা তরুরে ভালোবাসে ভাই, কেহ ফুল ধ’রে টানে॥
কেহবা ফুলের মধু চায়, কেহ চায় সে-গাছের ছায়া
গাছের ছায়ায় জুড়াইয়া পায় গুল্ সুবাসের মায়া,
তরু ছুঁয়ে বোঝে আল্লা রসুলে রসলীলা কোন্খানে॥
কোন জন চাহে গুলের খশ্বু, কোন জন চাহে গুল্
খশ্বুর সাথে ফুলেরেও চাহে প্রেমিক যে বুলবুল।
জালালের সাথে জামালেও চাহে, প্রেমিক যে বুলবুল॥
আল্লারে ভালোবেসে যার গেছে সকল দ্বিধা ও ভয়
রসুল তাহারে প্রেম দিয়ে কন্, আল্লা যে প্রেমময়,
তিনি যে কেবল বিচারক নন্, আল্লা যে প্রেমময়,
মজনুর মত দিওয়ানা সে যে লাইলার মধুপানে॥
*১১১৫. রাগ: ভৈরবী, তাল: কাহার্বা
আল্লাহ্ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়।
আমার নবী মোহাম্মদ, যাঁহার তারিফ জগৎময়॥
আমার কিসের শঙ্কা
কোরআন আমার ডঙ্কা,
ইস্লাম আমার ধর্ম, মুসলিম আমার পরিচয়॥
কলেমা আমার তাবিজ, তোহীদ্ আমার মুর্শিদ্,
ঈমান্ আমার বর্ম, হেলাল আমার খুর্শিদ্।
‘আল্লাহ্ আকবর’ ধ্বনি
আমার জেহাদ-বাণী,
আখের মোকাম ফেরদৌস্ খোদার আরশ যথায় রয়॥
*১১১৬.
আল্লাহ থাকেন দূর আরশে, নবীজী রয় প্রাণের কাছে।
প্রাণের কাছে রয় যে প্রিয়, সেই নবীরে পরান যাচে॥
পয়গম্বরও পায় না খোদায়
মোর নবীরে সকলে পায়,
নবীজী মোর তাবিজ হ’য়ে আমার বুকে জড়িয়ে আছে॥
খোদার নামে সেজ্দা করি, নবীরে মোর ভালোবাসি,
খোদা যেন নূরের সূরয, নবী যেন চাঁদের হাসি।
নবীরে মোর কাছে পেতে
হয় না পাহাড়-বনে যেতে,
বৃথা ফকির-দরবেশ মরে পু’ড়ে খোদার আগুন-আঁচে॥
*১১১৭.
এসো মা পরমা শক্তিমতী।
দাও শ্রী দাও কান্তি-আনন্দ-শান্তি অন্তরে বাহিরে দিব্য জ্যোতি॥
দাও অপরাজেয় পৌরুষ শক্তি
দাও দুর্জয় শৌর্য পরা-ভক্তি,
দাও সূর্য সম তেজ প্রদীপ্ত প্রাণ ঝঞ্ঝার সম, বাধাহীন গতি॥
এসো মা পরম অমৃতময়ী.
নির্জিত জাতি হোক মৃত্যুজয়ী।
পরম জ্ঞান দাও পরম অভয়
রূপ-সুন্দর তনু প্রাণ প্রেমময়,
আকাশের মত দাও মুক্ত জীবন সকল কর্মে হও তুমি সারথি॥
*১১১৮.
এসো মাধব এসে পিও মধু।
এসো মাধবী লতার কুঞ্জ বিতানে (মধু) মাধবী রাতে এসো বঁধু॥
এসো মৃদুল মধুর পা ফেলে
এসো ঝুমুর ঝুমুর ঘুমুর বাজায়ে শ্রবণে অমিয়া মধু ঢেলে,
এসো বাজায়ে বাঁশরি যে-সুর-লহরি শুনে কুল ভোলে ব্রজবধূ॥
এসো নিবিড় নীরদ বরণ শ্যাম
তমাল কাননে কাজল বুলায়ে দুলায়ে চাঁচর চিকুর দাম,
এসো বামে হেলায়ে শিখী-পাখা ত্রিভঙ্গ ঠামে এসো বঁধু॥
এসো নারায়ণ এসো অবতার
পার্থসারথি বেশে এসো পাপ কুরুক্ষেত্রে আরবার,
তুমি মহাভারতের ভাগ্যবিধাতা গীতি উদ্গাতা নহ শুধু॥
*১১১৯. রাগ: মান্দ, তাল: কাহার্বা
এসো মুরলীধারী বৃন্দাবন-চারী গোপাল গিরিধারী শ্যাম।
তেমনি যমুনা বিগলিত- করুণা কুলু কুলু কুলু স্বরে ডাকে অবিরাম॥
কোথায় গোকুল-বিহারী শ্রীকৃষ্ণ
চাহিয়া পথ পানে ধরণী সতৃষ্ণ,
ডাকে মা যশোদায় নীলমণি আয় আয় ডেকে যায় নন্দ শ্রীদাম॥
ডাকে প্রেম-সাধিকা আজো শত রাধিকা গোপ-কোঙারি,
এসো নওল-কিশোর কুল-লাজ-মান-চোর ব্রজ-বিহারী।
পরি’ সেই পীতধড়া, সেই বাঁকা শিখী ছূড়া বাজায়ে বেণু
আরবার এসো গোঠে, খেল সেই ছায়া-বটে চরাও ধেনু
কদম তমাল-ছায়ে এসো নূপুর পায়ে ললিত বঙ্কিম ঠাম॥
*১১২০. নাট্যগীতি: ‘মদিনা’
আমি মদিনা মহারাজার মেয়ে সকলের জানা আছে।
নৌজোয়ান! তুমি কার ছেলে তুমি কেন এলে মোর কাছে॥
আমি গান গাইতে জানি
তুমি কি গান লিখতে জান?
তাহলে তুমি বাড়ি গিয়ে আমার তরে অনেক গান লিখে আন।
তাহলে তোমায় মালা গেঁথে দিব-
মোর গুল বাগেনে অনেক ফুল ফুটেছে ফুলের গাছে॥
তুমি মহারাজার, বাদশার ছেলে হও
তাহলে আমার ঘরে এসে কথা কও,
তব ভালো নাম কি হে কবি
তাহলে আঁকব আমি তোমার ছবি,
আমি পর্দানশীন কুমারী, মোরে এখনো কেউ নাহি যাচে॥
১১২১.
আমি রবি-ফুলের ভ্রমর।
তা’র আলোক-মধু প্রিয়ে আমি আলোর মধুপ অমর॥
ঐ শ্বেত-শতদল ফুটলো যেদিন গভীর গগন নীল সায়রে
তা’র আলোর শিখা আকাশ ছেপে ছড়িয়ে গেল বিশ্ব ’পরে-স্তরে স্তরে,
সেই বহ্নি-নলের পরাগ-রেণু
আমিই যেন প্রথম পেনু, প্রথম পেনু গো
তাই বাহির পানে ধেয়ে এনু গেয়ে আকুল স্বরে।
আজ জাগো জগৎ! ঘুম টুটেছে বিশ্বে নিবিড় তমোর॥
তাঁ’র জাগরণীর অরুণ কিরণ-গন্ধ যেদিন নিশি-শেষে
এই অন্ধ জগৎ জাগিয়ে গেল আকাশ পথের হাওয়ায় ভেসে-হঠাৎ এসে;
আমি ঘুম-চোখে মোর পেনু আভাস,
ঘরের বাহির করা সে-বাস ভাঙলে আবাস মোর॥
তাই কূজন-বেণু বাজায়ে চলি আলোর দেশের শেষে
যথা সহস্রদল কমল, আনন জাগ্ছে প্রিয়তমর॥
যেন এ শ্বেত-সরোজ-সরোদ বাঁধা সপ্ত সুরের রঙিন তারে
রচ্ছে সুরের ইন্দ্রধনু গগন-সীমায় তোরণ-দ্বারে তমোর ‘পারে,
তার সে-সুর বাজি’ আমার শাখায় গহন-গহন শাখায় শাখায়
তারায় কাঁপায় গো।
জাগে ঐ কমলে পরশ প্রিয়ার চরণ নিরুপমর॥
*১১২২. চলচ্চিত্র: ‘ধ্রুব’
আমি রাজার কুমার পথ ভোলা,
আমি পথ ভোলা, দখিন হাওয়া দাও দোলা!
আজি প্রাণের ও মনের সকল দ্বার খোলা॥
তরুলতা বনের পাখি তোদের ডাকি আয় শুনে যা
শোন ঝর ঝর ঝর্ণা-ধারা,
রাজার দুলাল আমি শোন রে ফুল-নদী উতরোলা॥
*১১২৩. নাটক: ‘মধুমালা’
ঘুমপরী : আমি হেরে এবার নেবো লো সই বঁধুর গলার হার।
স্বপনপরী: হার মেনে তুই জিত্বি ওলো হবে না তা আর॥
*১১২৪. নাটক: ‘মদিনা’
আরক্ত কিংশুক কাঁপে, মালতীর বক্ষ ভরি’
চন্দ্রের অমৃত স্পর্শে উঠিতেছে শিহরি’ শিহরি’॥
নীরব কোকিলের গুঞ্জন
চৈত্র পূর্ণিমা রাত্রি বাড়িয়াছে বক্ষের স্পন্দন,
মোদের নাচের নূপুরের ছন্দ কভু চপল কভু মৃদুমন্দ,
বসন্ত-উৎসব সজ্জা অন্তরাল হতে মৃদু ভাষে
সুন্দর গুঞ্জন ধ্বনি কেন ভেসে আসে।
মমতার মধু-বিন্দু ক্ষরিল মোরা মধু খেয়ে বলিলাম-আহা মরি॥
ধরণীর অঙ্গ হতে বাসরের সজ্জা পড়ে খুলি’
গভীর আনন্দে মোরা চাহি দুটি আঁখি তুলি,
চৈত্রের পূর্ণিমা রাত্রি এলো ফিরি
প্রিয় তুমি কেন চ’লে গেলে ধীরি ধীরি।
তুমি ফিরে এলে মোরা লভিতাম অমৃতের স্বাদ চন্দ্রের অমিয়া পান করি॥
*১১২৫. তাল: ত্রিতাল
আসিবে তুমি, জানি প্রিয়!
আনন্দে বনে বসন্ত এলো-
ভুবন হ’ল সরসা প্রিয়-দরশা, মনোহর॥
বনান্তে পবন অশান্ত হ’ল তাই, কোকিল কুহরে,
ঝরে গিরি-নির্ঝরিণী ঝর ঝর॥
ফুল্ল-যামিনী আজি ফুল-সুবাসে
চন্দ্র অতন্দ্র সুনীল আকাশে,
আনন্দিত দীপান্বিত অম্বর॥
অধীর সমীরে দিগঞ্চল দোলে
মালতী বিতানে পাখি পিউ পিউ বোলে,
অঙ্গে অপরূপ ছন্দ আনন্দ-লহর তোলে;
দিকে দিকে শুনি আজ আসিবে রাজাধিরাজ প্রিয়তম সুন্দর॥
১১২৬. নাটক: ‘মধুমালা’ (মদনকুমার ও মধুমালার গান)
মদন : আহা! সুনীল নীরদে ঢাকিল অরুণ, নীহারে ঢাকিল শশী।
মধু : চন্দন মেখে শুকতারা হাসে মোর বাতায়নে বসি॥
*১১২৭. নাটক: ‘মধুমালা’ (স্বপনপরীর গান)
আয় আয় মোর ময়ূর-বিমান আকাশ-নদী বেয়ে।
ফুল ফোটানো হাওয়ায় ভেসে চাঁদের আলোয় নেয়ে॥
*১১২৮. নাটক: ‘হরপার্বতী’
আয় আয় যুবতী তন্বী।
জ্বালো জ্বালো লালসার বহ্নি॥
হান হান হান নয়ন-বাণ
তনুর পেয়ালা ভরি মদিরা আন॥
*১১২৯. রাগ: সুহা
আয় ইরানি মেয়ে জংলা-পথ বেয়ে আয় লো।
নদী যেমন চাঁদে
ঢেউ-এর মালায় বাঁধে,
তেমনি চাঁদে বাঁধব চিরুনির মত এলো খোঁপায় লো॥
দুপুর রাতে ঝিঁ ঝিঁ ঝিল্লি-নূপুর বাজে
বেদের বাঁশি কাঁদে বৌ-এর বুকের মাঝে,
কাঁটা দিয়ে ওঠে গোলাপ-লতার গায়ে বুল্বুলি কোথায় লো॥
বেদে গেছে বনে গো হরিণী শিকারে,
হরিণ-আঁখি তার প্রেয়সী তাঁবুতে কাঁদে মনের বিকারে।
আমাদের জল্সায় সাকি-শিরাজি নাই
আসমানের তারা-ফুল নিঙ্ড়ে তাই১ মধু খাই,
বঁধু যখন আসবে
চেয়ে চেয়ে হাসবে,
কবরীর যুঁই ছুঁড়ে ফেলে দিব পায় লো॥
*১১৩০.
আমি গিরিধারী মন্দিরে নাচিব,
আমি নাচিব প্রেম যাচিব॥
নেচে নেচে রস শেখরে মোহিব
মধুর প্রেম তার যাচিব (আমি)
প্রেম-প্রীতির বাঁধিব নূপুর রূপের বসনে সাজিব (আমি)॥
মানিব না লোক-লাজ কুলের ভয় আনন্দ রাসে মাতিব।
শ্যামের বেদীতে বিরাজিব বামে হরিরে মীরার রঙে রাঙিব (আমি)॥
*১১৩১. নাটক: ‘অর্জুন-বিজয়’
আমি গো-রাখা রাখাল।
যারা গোপের মতন চির-সরলমন-
তাদেরি সাথে আমি খেলি চিরকাল গো॥
নয়ন বুঁজে ধ্যানী আমারে খুঁজে যে গিরি-গুহায়,
(সেই) গিরি ধরিয়া রহি গিরিধারী ওরা দেখিতে না পায়।
আমি নন্দ-লালার বেশে
কাছে আসি মৃদু হেসে,
ওরা ভাবে হরি শুধু বিপুল বিশাল॥
(ওরা প্রেম যে পায়নি,
ওরা সহজে গোপীর মত ভালোবেসে চায়নি
প্রেম যে পায়নি!)
১১৩২. তাল:দাদ্রা
আমি নূতন ক’রে গড়ব ঠাকুর কষ্টি পাথর দে মা এনে।
দিব হাতে বাঁশি মুখে হাসি ডাগর চোখে কাজল টেনে॥
মথুরাতে আর যাবে না, মা যশোদায় কাঁদাবে না,
রইবে ব্রজগোপীর কেনা, চলবে রাধার আদেশ মেনে॥
শ্রীচরণ তার গড়ব না মা, গড়লে চরণ পালিয়ে যাবে
নাইবা শুনলে নূপুর-ধ্বনি, ঠাকুরকে তো কাছে পাবে।
চরণ পেলে দেশে দেশে, কুরুক্ষেত্র বাঁধাবে সে-
গন্ধমালা দিসনে মাগো, ভক্ত ভ্রমর ফেলবে জেনে॥
দেখে কখন করবে চুরি
একলা ঘরে মরব ঝুরি,
গন্ধমালা দিস্নে মাগো, ভক্ত ভ্রমর ফেলবে জেনে॥
*১১৩৩.
আমি বুকের ভিতর থাকি তবু ওরা ডাকে দেখা দাও ব’লে।
ওরা চিনিতে পারে না কত রূপে আমি দেখা দিই কত ছলে॥
চোর চোর খেলি মনে বসে, ওরা বনে যায় খুঁজিতে;
কোলে থাকি আমি খোকা হয়ে, ওরা মন্দিরে যায় পূজিতে।
মোরে পাষাণ করিয়া ফেলে রাখে, ওরা আঁধার দেউল তলে॥
(ওরা ডাকিয়া লয় না কোলে গো আমি কোল্ যে বড় ভালবাসি।)
কেশবে ডাকিয়া লয় না কোলে॥
ওরা দেবতা ভাবিয়া পূজা দেয় যাহা, আমি তাহা নাহি খাই;
লুকায়ে ভিখারি সাজিয়া ওদের পাতের অন্ন চাই।
ওরা প্রভু ব’লে মোরে দূরে রাখে, তাই কেঁদে দূরে যাই চ’লে।
(ওরা গোপাল বলিয়া ডাকে না মোরে, কেন বুকে বেঁধে রাখে না।)
আমি তাই দূরে যাই চ’লে, কেশবে ডাকিয়া লয় না কোলে॥
*১১৩৪. রাগ: দেশ, তাল: দাদ্রা
আমি বেলপাতা জবা দেব না মাগো দেব শুধু আঁখিজল।
মাগো হাত দিয়ে যাহা দেওয়া যায়, পাই হাতে শুধু তার ফল॥
হাত দিয়ে ফল দিতে যাই
(মাগো) হাতে হাতে তার ফল পাই,
পাই অর্থ বিভব যশ
পাই না অমৃত আনন্দ মাগো, পাই না হৃদয়ে রস।
তাই আঁখিতে রাখিব ব’লে মা আনিয়াছি আঁখি ছলছল॥
এবার রাখিব চোখে চোখে তোরে ছাড়িয়া দেব না আর,
মাগো তুই চ’লে গেলে হয়ে যায় মোর ত্রিলোক অন্ধকার।
এবার দেখিবে নিত্য হৃদয়
তোর রাঙা চরণের অরুণ উদয়,
তাই জবা ফেলে দিয়ে মেলিয়াছি তাই হৃদয়ের শতদল॥
১১৩৫. রাগ: ভৈরবী, তাল: দাদ্রা
আমি বাঁধন যত খুলিতে চাই জড়িয়ে পড়ি তত।
শুভদিন এলো না দিনে দিনে দিন হল হায় গত॥
শত দুঃখ অভাব নিয়ে
জগৎ আছে জাল বিছিয়ে
অসহায় এ পরান কাঁদে জালে মীনের মত॥
বোঝা যত কমাতে চাই ততই বাড়ে বোঝা,
শান্তি কবে পাব কবে চল্ব হয়ে সোজা।
দাও ব’লে হে জগৎ-স্বামী
মুক্তি কবে পাব আমি?
কবে উঠবে ফুটে জীবন আমার ভোরের ফুলের মত॥
*১১৩৬.
আমি মা ব’লে যত ডেকেছি, সে-ডাক নূপুর হয়েছে ও-রাঙা পায়।
মোর শত জনমের কত নিবেদন, চরণ জড়ায়ে কহিয়া যায়॥
মাগো তোরে নাহি পেয়ে লোকে লোকে
যত অশ্রু ঝরেছে মোর চোখে,
সেই আঁখিজল জবা ফুল হয়ে, শোভা পেতে ঐ চরণ চায়॥
মাগো কত অপরাধ করেছিনু বুঝি, সংহার ক’রে সে-অপরাধ,
বল লীলাময়ী, মিটেছে কি তোর মুণ্ডমালিকা পরার সাধ।
যে ভক্তি পায়নি চরণতল
আজ হয়েছে তা বিল্বদল,
মোর মুক্তির তৃষা মুক্তকেশী গো, এলোকেশ হয়ে পায়ে লুটায়॥
১১৩৭.
আমি মৃতের দেশে এনেছি রে মাতৃ নামের গঙ্গা ধারা।
আয় রে নেয়ে শুদ্ধ হবি অনুতাপে মলিন যারা॥
আয় আশাহীন ভাগ্য হত
শক্তি-বিহীন পদানত,
(আয় রে সবাই আয়),
এই অমৃতে, আয়, উঠ্বি বেঁচে জীবন্মৃত সর্বহারা॥
ওরে এই শক্তির গঙ্গা-স্রোতে
অনেক আগে এই সে-দেশে,
মৃত সগর-বংশ বেঁচে উঠেছিল এক নিমেষে।
এই গঙ্গোত্রীর পরশ লেগে
নবীন ভারত উঙ্ল জেগে,
এই পণ্য স্রোত ভেঙেছিল ভেদবিভেদের লক্ষ কারা॥
*১১৩৮.
আমি রব না ঘরে।
জোমা ডেকেছে আমারে হরি বাঁশির-স্বরে॥
আমি আকাশে শুনি আমি বাতাসে শুনি
ওমা নিশিদিন বাঁশরি বাজায় সে গুণী,
ওমা তাহারি সুরের সুরধুনী বহে অন্তরে বাহিরে ভুবন ভ’রে॥
যবে জাগিয়া থাকি,
হেরি’ শ্রীহরির পদ্ম-পলাশ আঁখি।
যদি ভুলিয়া কভু আমি ঘুমাই মাগো
সে-ঘুম ভেঙে দেয় বলে, জাগো জাগো,
সে শয়নে স্বপনে মোর সাধনা গো-
আমি নিবেদিতা মাগো তাহারি তরে॥
*১১৩৯.
আরো কত দূর?
কখন শুনিব তব বাঁশরির সুর?
দেবে কখন ধরা হব স্বয়ম্ভরা
কাঁদাতে জান শুধু তুমি নিঠুর॥
*১১৪০. নাট্যগীতি: ‘দেবী দুর্গা’
আয় ঘুম আয়!
সাপিনীর দংশনে যেমন অবশ তনু-
তেমনি ঢলিয়া পড় মায়া-নিদ্রায়॥
সংসার অহিফেন বিষ পিয়ে হায়
যেমন অচেতন জীব অসাড়ে ঘুমায়,
যেমন পাতাল তলে ঘুমায় দৈত্যদলে
তেমনি ঘুমাও জড় পাষাণের প্রায়॥
*১১৪১.
আয় ওলো সই, খেলবো খেলা ফাগের ফাজিল পিচ্কিরিতে।
আজ শ্যামে জোর করব ঘায়েল হোরির সুরে গিট্কিরিতে॥
বসন-ভূষণ ফেল্লো খুলে’,
দে দোল্ দে দোল্ দোদুল-দুলে,
কর্ লালে-লাল কালায় কালো আবির হাসির টিট্কিরিতে॥
*১১৪২, রাগ: ভৈরবী
আয় বিজয়া আয় রে জয়া উমার লীলা যা রে দেখে।
সেজেছে সে মহাকালী চোখের কাজল মুখে মেখে॥
সে ঘুমিয়েছিল আমার কোলে
জেগে উঠে কেঁদে বলে,
আমায় কালী সাজিয়ে দে মা ছেলেরা মোর কাঁদছে ডেকে॥
চেয়ে দেখি মোর উমা নাই নাচে কালী দিগম্বরী,
হুঙ্কার দেয় কোটি গ্রহের মুণ্ডমালা গলায় পরি’।
আমি শুধু উমায় চিনি
এ কোন্ মহামায়াবিনী,
কালোরূপে বিশ্বভুবন আকাশ-পবন দিল ঢেকে॥
*১১৪৩. রাগ: বাঙ্গাল, তাল: ত্রিতাল
আয় মা চঞ্চলা মুক্তকেশী শ্যামা কালী।
নেচে নেচে আয় বুকে আয়, দিয়ে তাথৈ তাথৈ করতালি॥
দশদিক আলো ক’রে
ঝঞ্ঝার নূপুর প’রে,
দুরন্ত রূপ ধ’রে আয় মায়ার সংসারে আগুন জ্বালি’॥
আমার স্নেহের রাঙাজবা পায়ে দ’লে
কালো রূপ-তরঙ্গ তুলে১
গগন-তলে সিন্ধুজলে
আমার কোলে আয় মা আয়।
তোর চপলতায় মা কবে
শান্ত ভবন প্রাণ-চঞ্চল হবে,
এলোকেশে এনে ঝড় মায়ার এ খেলাঘর ভেঙে দে মা আনন্দ-দুলালি॥
*১১৪৪. রেকর্ড-নাটিকা: ‘মাতৃস্তোত্র’
আয় সবে ভাই বোন আয় সবে আয় শোন্ পদধূলি শিরে লয়ে মা’র।
মা’র বড় কেহ নাই, কেহ নাই, কেহ নাই
নত করি’ বল সবে- ‘মা আমার! মা আমার!’
*১১৪৫.
ইরানের বুলবুলি কি এলে পথ ভুলে
গোলাপের স্বপ্ন ল’য়ে সিন্ধু নদী-কূলে॥
চন্দনের গন্ধে কবি মিশালে হেনার সুরভি
তোমার গানে মরুভূমির দীর্ঘশ্বাস দুলে॥
কোন সাকির আঁখির করুণা নাহি পেয়ে
মরুচারী হে বিরহী, এলে মেঘের দেশে ধেয়ে।
হেথা কাজল আঁখি নিরখি’
তৃষ্ণা তব জুড়াল কি,
লালা ফুলের বেদনা ভুলিবে কি পলাশ ফুলে॥
*১১৪৬. নাটক: ‘মদিনা’, তাল: কাহার্বা
ইরানের রূপ-মহলের শাহজাদী শিঁরি! জাগো জাগো শিঁরি।
‘প্রিয়া জাগো’ ব’লে ফরহাদ ডাকে শোনো আজো১ রাতে ধীরি ধীরি॥
তুমি ধরা দিবে তারে বলেছিলে, বে-দরদি,
যদি পাহাড় কাটিয়া আনিতে পারে সে নদী।
হের গো শিলায় শিলায় আজি উঠিয়াছে ঢেউ
সেথা তব মুখ ছাড়া নাহি আর কেউ,
প্রেমের পরশে যেন মোমের পুতুল হয়েছে পাষাণ-গিরি॥
গলিল পাষাণ, তুমি গলিলে না ব’লে-
যে প্রেমিক মরেছিল তোমার পাষাণ-প্রতিমার তলে,
সেই বিরহীর রোদন যেন গো উঠিছে ভুবন ঘিরি’॥
*১১৪৭.
ইয়া রাসুলুল্লাহ! মোরে রাহ্ দেখাও সেই কাবার।
যে কাবা মসজিদে গেলে পাব আল্লার দিদার॥
দ্বীন দুনিয়া এক হয়ে যায় যে কাবার ফজিলতে,
যে কাবাতে হাজি হ’লে রাজি হন পরওয়ারদিগার॥
যে কাবার দুয়ারে জামে তৌহিদ দেন হজরত আলী,
যে কাবায় কুল্-মাগফেরাতে কর তুমি ইন্তেজার॥
যে কাবাতে গেলে দেখি আরশ কুর্সি লওহ কালাম,
মরণে আর ভয় থাকে না, হাসিয়া হয় বেড়া পার॥
*১১৪৮. রাগ: ভৈরবী, তাল: কাহার্বা
ঈদজ্জোহার চাঁদ হাসে ঐ এলো আবার দুস্রা ঈদ।
কোর্বানি দে কোর্বানি দে শোন্ খোদার ফর্মান তাকিদ॥
এমনি দিনে কোর্বানি দেন পুত্রে হজরত ইব্রাহিম,
তেমনি তোরা খোদার রাহে আয় রে হবি কে শহীদ্॥
মনের মাঝে পশু যে তোর আজকে তা’রে কর্ জবেহ্,
পুল্সেরাতের পুল হ’তে পার নিয়ে রাখ্ আগাম রসিদ্॥
গলায় গলায় মিল্রে সবে ভুলে যা ঘরোয়া বিবাদ,
মিলনের ঈদগাহ্ গড়ে তোল্ প্রাণ দিয়ে তার তোল্ বুনিয়াদ॥
মিলনের আর্ফাত ময়দান হোক আজি গ্রামে গ্রামে,
হজের অধিক পাবি সওয়াব এক হ’লে সব মুসলিমে।
বাজবে আবার নূতন ক’রে দ্বীনি ডঙ্কা, হয় উমীদ্॥
ইসমাইলের মতন যদি কোরবানি পারিস হতে
দেখব আবার তোদের মাঝে দিশারি মুসা, খালিদ॥
*১১৪৯.
ঈদজ্জোহার তকবির শোন ঈদগাহে!
(তোর) কোরবানিরই সমান নিয়ে চল্ রাহে॥
কোরবানির রঙে রঙিন পর লেবাস্
পিরহানে মাখ্রে ত্যাগের গুল্-সুবাস,
হিংসা ভুলে প্রেমে মেতে
ঈদগাহেরই পথে যেতে দে মোবারকবাদ দ্বীনের বাদ্শাহে॥
খোদারে দে প্রাণের প্রিয়, শোন্ এ ঈদের মাজেরা
যেমন পুত্র বিলিয়ে দিলেন খোদার নামে হাজেরা,
ওরে কৃপণ, দিস্নে ফাঁকি আল্লাহে॥
তোর পাশের ঘরে গরীব কাঙাল কাঁদছে যে
তুই তারে ফেলে ঈদ্গাহে যাস্ সঙ সেজে,
তাই চাঁদ উঠ্ল, এলো না ঈদ্
নাই হিম্মৎ, নাই উম্মিদ,
শোন্ কেঁদে কেঁদে বেহেশ্ত হ’তে হজরত আজ কি চাহে॥
*১১৫০.
ঈদ মোবারক হোক আজি ঈদ মোবারক হোক!
সব ঘরে পঁহুচুক এ ঈদের চাঁদের আলোক॥
যে আছে আজ প্রাণের কাছে, আছে আপন পুরে
যে আছে পরদেশে যার লাগি নয়ন ঝুরে
আজ সবারে বারে বারে খোশ খবরি কো’ক্॥
আজের মত দিলে দিলে থাকুক মহাব্বত
আজের মত খুশি থাকুক সবার তবিয়ত্,
কারো যেন থাকে না আর দুঃখ-ব্যথা-শোক॥
আজের মত এক জামাতে মিলন ঈদগাহে
দাঁড়াই যেন চলি যেন খোদারই রাহে,
দীন ইস্লামের এ ক্যওমী যোশ জিন্দা হোক॥