কবিবরের প্রতিবাদ
২২ জুলাই ১৯২১

প্রথমেই বলে রাখি, আমার এই 'কবি-বরে'র অর্থ 'কবি-শ্রেষ্ঠ' নয়, এ 'কবি-বরের
মানে-'যে কবি বিয়ের বর। কারণ, দিন কতক আগে আমি বাস্তবিকই- অন্তত ঘন্টা
কয়েকের জন্যে বর" সেজেছিলুম, যদিও বরের এখনো বধূর সঙ্গে সাক্ষাৎ নেই। যাক সে
কথা, আমার 'ত্রিশঙ্কু বিয়েতে' শ্বশুরকূলের কর্তৃপক্ষগণ এক কাব্যিক নিমন্ত্রপত্র
ছাপিয়েছিলেন এবং সেটি চরমে গিয়ে পৌঁছেছে এই জন্যে যে, সেটা আবার আমার
সাহিত্যিক ও কবি বন্ধুর্গকে পাঠানো হয়েছে। সেটা একপ্রকার জামাই-বিজ্ঞাপন
বললেও হয়। ওতে আমার নামের আগে ও পেছনে এত লেজুড় লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে
যে, কোনো চতুষ্পদ জীবেরই অতগুলো ল্যাজ থাকে না। অবশ্য ওটা কন্যাপক্ষের
নিমন্ত্রণপত্র, অতএব আমার ও নিয়ে মাথা ঘামাবার দরকার ছিল না। কিন্তু মজা হয়েছে
এই যে, আমার অধিকাংশ বন্ধু ওটা নিয়ে এই ভেবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন যে, আমি আমার
নামে এই অভিধান উজাড় করা বিশেষণ লাগানোতে প্রকারান্তরে প্রশ্রয় দিয়েছি।
    তাই তাদিকে আমি জানাচ্ছি যে, চোখে দেখাটাই বেশি প্রমাণ; অন্যের প্রকাশিত
বিজ্ঞাপনটি আমার সত্যিকার পরিচয় নয়। এতদিনের চেনাশোনার পরেও যাঁরা
গোটাকতক কালির আঁখরের ঢাকনায় আমাকে ঢেকে দিতে চান, তাঁদের আমার কিছুই
বলবার কইবার নেই। আমি পথের ভিখারি, আমার পথিক জীবনের শেষও ঘনিয়ে
এসেছে। 'রবি'র সাথে এ খাদ্যোত কবির তুলনায় আমি গভীর প্রতিবাদ করছি। সৈনিক
কবি হয়তো হতে পারি, কারণ আমি দিনকতক ছন্দ নিয়ে সৈনিকের মতনই কোস্তাকুস্তি
করেছি। আর কথাকে পাট করে সাজাই বলে কবি, যেমন কাপড় ধোলাই পাট করতে
পারলেই ধোবি হওয়া যায় ! ক্ষমা চাইলুম না, কেননা আমি কোনো দোষ করিনি। যাক
আর শিয়ালের গু নিয়ে পর্বত করব না।
                            ইতি
                        কাজী নজরুল ইসলাম
                        কুমিল্লা