মোতাহার হোসেন-কে

১৫ জেলিয়াটোলা স্ট্রিট,
কলিকাতা
সকাল

প্রিয় মোতিহার!
    নতুন বছরের নতুন ভালোবাসা নাও। তোমায় চিঠি দিয়াছি বোধ হয় হপ্তা খানিকেরও আগে। পেয়ে উত্তর দিয়েছ কি না জানিনে। মিস ফজিলতুন্নেসাকে আমার দু-খানা বই ছাড়া আর সব বই (১৬ খানা) পাঠিয়েছি কাল তা তিনি পেয়েছেন বোধ হয়। তিনি তো দেবেন না, তুমিই প্রাপ্তি-সংবাদটা দিয়ো।
    দিলীপ ও নলিনীদা কৃষ্ণনগর গিয়েছিলেন, আমি যেতে পারিনি। গ্রামোফোনে যাঁরা আমার গান দেবেন তাঁদের গান শেখানো নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এখন তা শেষ হয়েছে। আমি গ্রামোফোনে গান দেব পরশু শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত। চারটা গান এবং ‘নারী’ আবৃত্তি দেব আমি নিজে। কেমন উতরাবে জানিনে। আগামী শনিবার রাত্রি ৮/৩০ট কী ৯টায় গান ও আবৃত্তি করব রেডিয়োতে। শুনবার চেষ্টা কোরো ওখান থেকে – এবং কেমন হয় জানিয়ো। এর পরেই কলকাতার প্রোগ্রাম আমার শেষ হবে। আপাতত
Family কলকাতায় আনা হবে না হয়তো। সুবিধেমত বাড়ি পাচ্ছিনে। তারপর ঢাকা যাত্রার আয়োজন।
    বোধ হয় দিন দশেকের মধ্যেই সেখানে গিয়ে পঁহুছব। যাবার আগে তার করব। কিন্তু তার আগে তোমার চিঠি পাই যেন। পার তো আজই চিঠি দিয়ো জেলিয়াটোলা স্ট্রিটে এবং জানিয়ো আমার এখন যাওয়া ভালো হবে কি না। নানান দিক থেকে এ প্রশ্ন করছি। আমার বইগুলো ওকে পাঠাতে এত লজ্জা করছিল, সে আর কী বলব। আমি একটুও অত্যুক্তি বা বিনয় করছিনে, ভাই! ও লেখাগুলোয় আমার অপরিণত মন ও বয়েসের এত সুস্পষ্ট ছাপ আছে যে, তা পড়তে এখন আমারই লজ্জা করে। আমার ওপর তোমাদের ধারণা হয়তো শিথিল হয়ে যাবে এসব পাগলের প্রলাপ পড়ে। বইগুলো পাঠানোর পর থেকে আমার আর অসোয়াস্তির অন্ত নেই। পোকা-খেগো ফুল দিয়ে কি দেবতার অর্ঘ্য দেওয়া যায়? বার্ষিক ‘সওগাত’ পেয়েছ কি?’ দু-দিনের দেখায় আমার গোদা হাতের ছাপ লেগে অসুন্দর হয়ে ওঠেনি তো? উনি কী বললেন?
    ওঁর শরীর কেমন? শফিক কখন গেল? ওর বাবা মা কখন আসবেন? সব লিখো।
    আমার কোনো কিছু ভালো লাগে না আর! এত আড্ডা গান – কিছুতেই মনকে ডুবাতে পারছিনে। এর কোথায় শেষ – কে জানে? কেবলই বিস্বাদ ঠেকছে – আলো বাতাস, হাসি – গান! সব, কী যে হবে কী যে করব – আমি জানিনে।
    কী করছ এখন? কেমন করে তোমাদের দিন যাচ্ছে – জানতে এত ইচ্ছা করে– লোভ হয়। – যাক – চিঠি দিয়ো। ইতি–

তোমার
নজরুল