দাচরণ মজুমদারকে লিখিত

৫৩-জি হরিঘোষ স্ট্রিট
কলিকাতা
২২-৮-৩৮ (সকাল ৯টা)
 

শ্রীচরণারবিন্দেষু
    পরম পূজ্যপাদ দাদা! আপনার শ্রীকরকমল পরশপূত আশীর্বাদী লিপি পাইয়া আমি ও আপনার বৌমা অত্যন্ত আনন্দিত ও কৃতার্থ হইয়াছি। পরশু সন্ধ্যায় আপনার পত্র পাইয়া একটু পরেই প্রথমে বিল্বপত্রে রক্তচন্দনে লিখিত মন্ত্র দিয়া ঔষধ খাওয়াই। আপনার পত্র পাওয়ার একটু পরেই নরেন ডাক্তার আসে, তাহাকে আপনার পত্র দেখাই। বিকালে আমাকে তাহার ডিসপেনসারিতে যাইতে বলায় সেখানে গিয়া তাহার সাথে করি। নরেন তখন বলে যে, সে রোগ নির্ণয় করিতে পারিতেছে না,- তবে ইহা 'পক্ষঘাত-এর দিকে যাইতেছে।...
    কল্য হরিদাস গাঙ্গুলি আসে, সে একটা শিকড় লইয়া অনেকক্ষণ ধ্যান করিয়া মাথা হইতে পা পর্যস্ত বুলাইয়া হাতে সুতো দিয়া বাঁধিয়া দিতে বলে। সে আপনার ভক্ত বলিয়া আমি আপত্তি করি নাই ও তদনুসারে বাঁধিয়া দিই। তাহার পর হইতেই তাহার ব্যথা বাড়িতে থাকে দেখিয়া আমি তাহা আবার খুলিয়া রাখিয়া দিয়াছি। জানি না আপনার শ্রীচরণে অপরাধ করিয়াছি কিনা। আপনি শিব, আপনার ওঁষধের ওপর আর কিছু করা উচিত ছিল না। কিন্ত দুর্বল মানুষের এমনি মতিচ্ছন্ন হইয়া থাকে।...
    আপনার নির্দেশ মতো কার্য করিতে পারি নাই বলিয়া আপনার বৌমা আপনার শ্রীচরণারবিন্দে ক্ষমা ভিক্ষা করিতেছে। দুই দিন হইতে এখন এভাবে প্রণাম করিতেছে। তবে উঠিতে পারে না বলিয়া ঠিক ঐভাবে পারিতেছে না। এ সম্বন্ধে আপনার আদেশ জানাইবেন।
    আমার এবং আপনার বৌমার ইচ্ছা আর কাহারো ঔষধ না খাওয়ার। যদি তাহার জীবনের কোনো প্রয়োজন থাকে, আপনারই আশীর্বাদে সে বাঁচিয়া উঠিবে। স্বয়ং শিব যদি বাঁচাইতে না পারেন কেহ পারিবে না।
    আপনার শ্রীচরণারবিন্দ দর্শনের আশায় অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছি। কখন পর্যস্ত আসিতে পারিবেন জানাইবেন। আমাকে গিয়া লইয়া আসিবার জন্য আপনার বৌমা বলিতেছেন। আপনি ইচ্ছাময়, আপনার ইচ্ছায়ই পূর্ণ হউক। আপনি জন্মে জন্মে যাহা করিতেছেন আমার জন্য, তাহা আমার মঙ্গলের জন্যই। আপনি ও বৌদি আমার
অনন্ত কোটি প্রণাম গ্রহণ করুন। আবার হরগৌরী দেখার সৌভাগ্য কবে হইবে আপনিই জানেন। এই বন্ধন জর্জরিত দাসকে মুক্তি দিন। দাদা, আর পারি না, আর ভালো লাগে না।...
    নলিনীদার ছোট কন্যাটি মারা গিয়েছে, বোধ হয় শুনিয়াছেন। আপনি যখন প্রার্থনা করিতেছেন তখন আমার আর কোনো ভয় নাই। শীঘ্রই পত্রোত্তর দানে কৃতার্থ করিবেন।

ইতি-

চির-প্রণত
নজরুল