কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিককে লিখিত
৪-৯-৩৮
দুপুর সাড়ে বারোটা
শ্রীশ্রীচরণারবিন্দেষু,
পরম পৃজ্যপাদ দাদা, আজ এখন পর্যন্ত আপনার পত্র আসিল না। ...
আপনার শরীরের কথা ভাবিয়া অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হইয়া আছি, এ জন্যও প্রত্যহ
আপনার পত্র পাইবার আকাঙ্ক্ষা করি। ...
গতকল্য বিকাল হইতে আপনার বৌমার অত্যন্ত অস্থিরতা ও আনচানানি
বৃদ্ধি পাইয়াছে। সে সর্বদা আমাকে বলিতেছে, গুরুদেবকে আনাও, কে আসতে বল,
ওঁকে আমার হয়ে ডাক, আমার ডাকে তিনি আসছেন না। আমি কি বলিব, চুপ করিয়া থাকি।
আপনার শরীরের এই অবস্থা না হইলে গিয়া আনিতে পারিতাম। পরম পূজনীয়া বৌদি
ও ছেলেদের সহ আসিতে পারেন, তাহা হইলে ভালো হয়। ... আপনি যদি অনুমতি দেন,
তাহা হইলে আমি নিজে গিয়া আপনাদের সকলকে লইয়া আসিতে পারি। আপনার আদেশের
প্রতীক্ষায় রহিলাম।
আমার শাশুড়ি ঠাকুরানী বলিতেছেন, তিনি নাকি গত রাত্রে কি খারাপ
স্বপ্ন দেখিয়াছেন। তিনি বলিতেছেন তাঁহার কন্যার যাহা হইবে তাহা জানিতে নাকি
তাঁহার বাকি নাই, তাঁহার এখন একমাত্র প্রার্থনা যে, তাঁহার কন্যাকে শুধু
একবার দেখা দিয়া যান- তাহা না হইলে তাঁহার কন্যা শাস্তি পাইতেছে না। যে
যাহা বলিতেছে আমি শ্রীচরণে নিবেদন করিতেছি মাত্র। আপনার যাহা শুভ বিবেচনা
হয় করিবেন। আমি নিরাশ হই নাই, আমার শ্রীবরদাচরণ ভরসা।...
রুগিনী অত্যন্ত দুর্বল হইয়া পড়ায় মালিশ প্রায়ই হইতেছে না।
অতি কষ্টে মাথা ধোওয়াইয়া দিতে হয়। একটু নাড়াচাড়া করিলেই রুগিনী
অত্যন্ত অস্থির হইয়া উঠে, মুখ নীল হইয়া যায়।... অত্যন্ত দুর্বল হইয়া
পড়ায় সে এখন খিটখিটে-স্বভাব শিশুর মতো কাঁদুনে হইয়া উঠিয়াছে। তাহার কোনো
কথার প্রতিবাদ করিলেই সে কাঁদিতে থাকে।
তাহাকে দিনে একশো বার করিয়া বলিতে হইবে যে, গুরুদেব আজ আসিবেন। অন্য কোনো
কথা বলিলেই কীঁদে। ...
আজ আবার আমার ছোট ছেলেটির (নিনির) জ্বর আসিয়াছে। আপনার বৌমার
জন্য প্রার্থনা করিলে যদি আপনার শরীরের ক্ষতি না হয় তাহা হইলে প্রার্থনা
করিবেন। আপনি তাহার জন্য যাহা করিয়াছেন ও করিতেছেন, কলিযুগে কেহ কখনো
তাঁহার ভক্তের জন্য করেন নাই।...
শ্রীচরণাশ্রিত
নজরুল