কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিককে লিখিত

৪-৯-৩৮
বিকেল দুটো

শ্রীশ্রীচরণারবিন্দেষু,
    দাদা! আজ একখানা চিঠি কিছু আগেই দিয়াছি। চিঠি ডাকে পাঠানোর পরেই আমার শাশুড়ি কয়েকটি কথা বলিলেন। তাহা আপনাকে জানানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিবেচনায় আবার এই চিঠি দিতেছি।
    গত বৎসর আশ্বিন কি কার্তিক মাসে শশী নামক একটি ঝি বাড়ির বাসনপত্র মাজিত; বোধহয় মাসখানেক সে কাজ করিয়াছিল- সে এ পাড়াতেই কোথাও থাকিত- গত অগ্রহায়ণ কি পৌষমাসে বেলগাছিয়া মেডিকেল কলেজে অপঘাতে সে মারা যায়।
    আমার শাশুড়ি ৮/৯ দিন আগে সেই ঝিকে স্বপ্নে দেখেন- সে যেন রুগিনীর সম্মুখে চুল খুলিয়া নাচিতেছে। আমার শাশুড়ি সেই নৃত্যের কারণ জিজ্ঞাসা করায় সে বলে, সে তারকনাথের উপবাসী। আমার শাশুড়ি ঠিক মনে করিতে পারিতেছেন না সে 'তারকনাথের' উপবাসী বলিয়াছিল, না, ঐরূপ কোনো নাম বলিয়াছিল। তাহার স্পিরিট
hunt করিতেছে কিনা জানিবার জন্য আপনাকে এ কথা জানাইলাম।
    গত রাত্রে আমার শাশুড়ি আবার দুঃস্বপ্ন দেখিয়াছেন, যেন তাঁহার কন্যার হঠাৎ দম বন্ধ হইয়া শেষ হইয়া গেল। আজ দিনে লক্ষ্য করিলাম রুগিনী ঘুমাইলে কিছুক্ষণের জন্য তাহার দম বন্ধ হইয়া থাকিতেছে এবং কেবল কণ্ঠের হাড়ের নিকট ধুকধুক করিতেছে। কিছুক্ষণ এই অবস্থায় থাকিয়াই সে জাগিয়া উঠিয়া এদিকে-ওদিকে চাহিয়া
কি যেন খুঁজিতেছে। ..
    আমার শাশুড়ি বলিতেছেন, তিনি কেন যেন আপনার বৌমার মৃতা খুড়িমার (যিনি প্রায় ৬/৭ মাস ভুগিয়া গত জ্যৈষ্ঠ মাসে মারা গিয়াছেন) উপস্থিতি রুগিনীর কাছে অনুভব করিতেছেন।
   আমি কয়েকদিন আগে শয্যায় একটু ধ্যান করিতেছিলাম, সেই সময় দেখিলাম এক ভীষণ প্রেত বা রাক্ষস মূর্তি আমার দক্ষিণ দিকে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে- অবশ্য তখন আমি নিচে নামার' চেষ্টা করিতেছিলাম।
    এই সব দেখার মধ্যে কোনো গুহ্য কারণ থাকিতে পারে সন্দেহ হওয়ায় আপনাকে জানাইলাম। আপনি ভূতনাথ, সত্য সত্যই ভূতের উপদ্রব থাকিলে আপনি তাহার ব্যবস্থা করিবেন বলিয়া এইসব কথা জানাইতে বাধ্য হইলাম। দয়া করিয়া দেখিবেন কোনো spirit এ বাড়িতে আছে কি না। ...
    আপনার বৌমা বলিতেছে সে চোখে কম দেখিতেছে গতকল্য হইতে, কিন্ত দিনকতক আগেও eye-specialist চক্ষু পরীক্ষা করিয়া ভালো বলিয়া গিয়াছেন।
    এইসব নানান উপসর্গ-বৃদ্ধির জন্য মনে হয়, আপনি যদি দয়া করিয়া কেবল একদিনের জন্য এখানে আসিতে পারেন, তাহা হইলে অত্যন্ত শুভদায়ক হইবে রুগিনীর পক্ষে। নিবেদন ইতি-

শ্রীচরণাশ্রিত সেবকাধম,
নজরুল