পূবের হওয়া
কাব্যগ্রন্থ
কাজী নজরুল ইসলাম


                      বিরহ-বিধূরা
কার তরে? ছাই এ পোড়ামুখ আয়নাতে আর দেখব না;
সুর্মা-রেখার কাজল-হরফ নয়নাতে আর লেখব না!
লাল-রঙিলা করব না কর মেহেদি-হেনার ছাপ ঘষে;
গুলফ চুমি কাঁদবে গো কেশ চিরুণ-চুমার আপসোসে!
কপোল-শয়ান অলক-শিশুর উদাস ঘুম আর ভাঙবে না;
চুম-হারা ঠোঁট পানের পিকের হিঙুল রঙে রাঙবে না!
কার তরে ফুলশয্যা বাসর, সজ্জা নিজেই লজ্জা পায়;
পিতম্ আমার দূর প্রবাসে, দেখবে কে সাজ-সজ্জা হায়!

চাঁচর চুলে ধূম্র ওড়ে, অঙ্গ রাঙায় আগুন-রাগ,
যেমনি ফোটে মন-নিকষে পিয়ার ফাগুন-স্মৃতির দাগ।
সবাই বলে, চিনির চেয়েও শিরিন জীবন, -হায় কপাল!
পিতম্-হারা নিম-তেতো প্রাণ কেঁদেই কাটায় সাঁঝ সকাল।

যেথায় থাকো খোশহালে রও, বন্ধু আমার -শোকের বল!
তুমি তোমার সুখ নিয়ে রও, -থাকুক আমার চোখের জল!

রচনা ও প্রকাশকাল: কবিতাটি মোসলেম ভারত পত্রিকার মাঘ ১৩২৭ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ার ১৯২১) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। পাদটীকায় উল্লেখ ছিল- 'কাবুলী কবি 'খোশহাল'-এর হিন্দুস্থানে নির্বাসনকালীন তাঁহার সহধর্মিণীর লিখিত একটি কবিতার ভাব অবলম্বনে। কবিতাটি পূবের হাওয়া কাব্যগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।