১. চাপান সং। এই তালিকায় রয়েছে ১৮টি চাপান সং। এগুলো হলো- অন্ধরাজা, এককন্যা-তিন বর, এক যুবতীকে, দুই যুবক বৌ বলে দাবী করছে, সে যাবে কার কাছে?, কংসবধ, কলঙ্কভঞ্জন, কর্ণবধ, কুশ ও লব, দাতা কর্ণ, দেবযানী-শর্মিষ্ঠা, পায়রা-পায়রী, বানর রাজকুমারের সং, ভক্ত মুচি, মেঘনাদ বধ, রাজপুত্র-মন্ত্রীপুত্র, রাজা হরিশচন্দ্র, রাজা যুধিষ্ঠির, সিন্ধু বধ ও হারানো আংটি।
২. উতোর সং। এই তিনটি উতোর সং। এগুলো হলো- কর্ণবধ, যজ্ঞের ঘোড়া ও হারানো আংটি।৩. পালা গান। আকবর বাদশা, কুলসুম, চাষার সং, জেলে ও জেলেনী, বাছুরীর খোঁজে, ঠকপুরের ঠগ,নীলকুঠি, বনের মেয়ে পাখি, বাবলুর মা, বিদ্যাভুতুম, বুড়ো জমিদার, বৌ-এর বিয়ে, সুদখোর ব্রজেন মুখার্জী, যুবরাজ শিকোহ, রাজা জয়চাঁদের ধর্ম পরীক্ষা, স্বামীস্ত্রীর ঝগড়া ও হারাধনের বিয়ে।
৪. চাপান বা উতোর সং ও পালার নাম পাওয়া যায় না এমন লেটো গান। এই জাতীয় গানকে দুটি ভাগে করা যায়। ভাগ দুটো হলো-৪.১. ভণিতাযুক্ত গান: এই জাতীয় গানের ভিতর কিছু গানের সাথে ভণিতায় নজরুলের নিজের নাম বা প্রতীকী নাম পাওয়া যায়। কোনো কোনো গবেষকের সূত্রে এমন কিছু গান পাওয়া যায়, যেগুলো নজরুলের ১১ থেকে ১৩ বৎসরের মধ্যে রচিত কিনা, এমন সন্দেহ থেকে যায়। যেমন- 'চেয়ো না সুনয়না আর চেয়ো না' এই গানের শেষে 'রে ভ্রমর' থেকে লেটো গান হিসেবে ধারণা করাই যেতে পারে। এই গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল- সওগাত পত্রিকার 'অগ্রহায়ণ ১৩৩৪' (নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯২৭) সংখ্যায়। গজল সুরাঙ্গের এই গানটির প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করেছিল এইচএমভি [ডিসেম্বর ১৯২৯ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৩৬)]। রেকর্ড নম্বর, পি ১১৬৬১। শিল্পী ছিলেন ইন্দুবালা। আমার ধারণা, গানটিতে 'রে ভ্রমর' থাকলেও গানটি নজরুল রচনা করেছিলেন, তাঁর গজল সুরাঙ্গের অন্যান্য গান রচনার উৎসাহে।
৪.২. ভণিতাহীন গান. এই জাতীয় গানগুলোর ভণিতায় কোনো নাম পাওয়া যায়। নজরুলে লেটো-গানের সন্ধানে যাঁরা বিস্তর গবেষণা করেছেন, তাঁদের সূত্রে এই গানগুলোকে নজরুলের গানের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কোনো কোনো গবেষকের সংকলনে- 'আমার গলার হার খুলে নে ওলো ললিতে' নজরুলের লেটো গান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন। এই গানটি ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে আব্বাস উদ্দীনের কণ্ঠে এইচএমভি থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে নজরুলের লেটোগানের সাথে আব্বাসউদ্দীনের গানের বাণীর বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। হতে পারে প্রচলিত গানের সূত্রে নজরুল এই গানটি রচনা করেছিলেন। সংকলিত গানের প্রাসঙ্গিক তথ্য যুক্ত করা হয়েছে পরিশিষ্ট অংশ। সাধারণ পাঠক ও গবেষকদের বিশেষ সহায়ক হবে।
এরূপ একটি সংকলন নির্ভূলভাবে তৈরি করাটা দুরূ্হ। কারণ, যথেষ্ঠ সতর্কতার সাথে কাজ শেষ করার পরও অনেক ত্রুটি থেকেই যায়। তাই এই সংকলনের যেকোন ত্রুটি-বিচ্যুতি সহৃদয় পাঠক জানালে পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করার ব্যবস্থা করা হবে।
লেটোগানের কালানুক্রম
নজরুল-জীবনীকারদের অনুসরণে, নজরুলের লেটোগান রচনার প্রেক্ষাপট এবং সাম্ভাব্য সময়
সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় মাত্র, কিন্তু যথাযথ কালানুক্রমিক ধারা অনুসরণ করে
গানগুলো সাজানো যায় না। কারণ এ বিষয়ে নজরুলের নিজের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না।
আবার এসকল রচনার সাথে দিন-তারিখের উল্লেখ নেই। লেটোগানের সংগ্রাহক এবং নজরুল
গবেষকদের আলোচনার সূত্রে নজরুলের রচিত লেটো গানের ভণিতা অনুসরণ করলে, গানগুলোর একটি
রচনকালের ধারা অনুসরণ করা যায়।
নজরুল ইসলামের রচিত লেটো গানের সূচি
১. কাজী নজরুল ইসলাম ও বাংলা সাহিত্য। আজিবুল হক। লেখা প্রকাশনী, কলকাতা। ২য় সংস্করণ। ১৯৯৯
২. দুখুমিয়ার লেটো গান। সংকলক ও সম্পাদনা মুহম্মদ আয়ুব হোসেন। বিশ্বকোষ পরিষদ। নজরুল ফাউণ্ডেশন, কলকাতা। প্রথম প্রকাশ: ১৯ অগ্রহায়ণ, ১৪১০/৬ ডিসেম্বর, ২০০৩।
৩. কাজী নজরুল। প্রাণতোষ ভট্টাচার্য। ন্যাশনাল বুক এজেন্সী প্রাইভেট লিমিটেড। কলকাতা-১২। ১৩৭৩ বঙ্গাব্দ
৪. কাজী নজরুল ইসলাম। বসুধা চক্রবর্তী। ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট ইন্ডিয়া। নয় দিল্লী। জানুয়ারি ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ।
৫. নজরুল-চরিত মানস। সুশীলকুমার গুপ্ত। ভারতী লাইব্রেরী, কলিকাতা। ভাদ্র ১৩৬৭
৬. নজরুল জীবনী। অরুণকুমার বসু। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি। জানুয়ারি ২০০০।
৭. নজরুল-জীবনী। রফিকুল ইসলাম। নজরুল ইন্সটিটউট, ঢাকা। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ।
৮. নজরুল রচনা সম্ভার। আব্দুল কাদির সম্পাদিত। ইউনিভার্সল বুক ডিপো। কলিকাতা। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ।
৯. নজরুল-সংগীত সংগ্রহ। সম্পাদনা রশিদুন্ নবী। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট। ঢাকা। তৃতীয় সংস্করণ। পৌষ ১৪২৪/জানুয়ারি ২০১৮।
১০. বাংলা সাহিত্যে নজরুল। আজাহারউদ্দীন খান। ডিএম লাইব্রেরি। কলিকাতা। তৃতীয় সংস্করণ পৌষ ১৩৬৫
১১. বিদ্রোহী-রণক্লান্ত, নজরুল জীবনী। গোলাম মুরশিদ। প্রথমা, ঢাকা। ফেব্রুয়ারি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ।
১২. লেটো ও লোক-ঐতিহ্য। ওয়াকিল আহমদ। নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। প্রথম প্রকাশ: বৈশাখ ১৪০৮/এপ্রিল ২০০১।
১৩. শত কথায় নজরুল। সম্পাদনায়: কল্যাণী কাজী। সাহিত্যম, কলকাতা। প্রথম প্রকাশ: ১৪০৫।