বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: অসীম বেদনায় কাঁদে মদিনাবাসী
অসীম বেদনায় কাঁদে মদিনাবাসী।
নিভিয়া গেল চাঁদের মুখের হাসি॥
শোকের বাদল আছড়ে প’ড়ে
কাঁদছে মরুর বুকের পরে,
ব্যথার তুফানে আরব গেল ভাসি’ ॥
গোলাব-বাগে গুল্ নাহি আজ
কাঁদিছে বুল্বুলি,
ছাইল আকাশ অন্ধকারে
মরু সাহারার ধূলি।
তরুলতা বনের পাখি,
‘কোথায় হোসেন?’ কইছে ডাকি’,
পড়ছে ঝরে তারার রাশি॥
- ভাবসন্ধান: ইসলাম ধর্মের প্রবক্তা হজরত মুহম্মদ সাঃ-এর কন্যা ফাতিম রাঃ
এবং ইসলাম ধর্মের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী রাঃ-এর পুত্র হাসান ইবনে আলী রাঃ, ৬৭০
খ্রিষ্টাব্দের ১ এপ্রিল (২৮ সফর ৫০ হিজরি)- তাঁর বিমাতা বনু উমাইয়ার দ্বারা
প্ররোচিত হয়ে- তাঁরই স্ত্রী জাদা বিনতুল আশআস-এর প্রদেয় বিষপ্রয়োগে মৃত্যবরণ করেন।
ইসলাম ধর্মের অন্যান্য সম্প্রদায়ের কাছেও এটি একটি শোকাবহ ঘটনা হিসেবে স্মরিত হলেও-
ইসলাম ধর্মের শিয়া মতালম্বীরা তাঁর এই মৃত্যুকে বিশেষ শোকাবহ ঘটনা হিসেবে স্মরণ করে
থাকেন। মূলত এই শোকাবহ ঘটনার বিলাপই শোকগাঁথা হয়ে এই গানে উপস্থাপিত হয়েছে।
বিষয়াঙ্গের বিচারে এই গানটিকে মর্সিয়া শ্রেণিতে ফেলা হয়।
হাসান রাঃ-এর মৃত্যুর পর, ইসলামী দুনিয়ায় যে শোকাবহের সৃষ্টি হয়েছিল, নানা রূপকতার
কল্পাশ্রয়ী উপমার মধ্য দিয়ে তাঁরই বর্ণনা করা হয়েছে এই গানে। যেন তাঁর মৃত্যুতে
গভীর শোকাহত মদিনবাসীর মুখের হাসি নিভে গিয়েছিল। যেন শোকের বাদল আছড়ে পড়েছিল
মরুর বুকে আর আরব বুকে বয়ে গিয়েছিল শোকের ঝড়। সেদিন গোলাপ বাগানের গোলাপ শোকে ঝরে
পড়েছিল, ক্রন্দসী হয়ে উঠেছিল বুলবুল। মরু সাহারার আকাশ হয়ে উঠেছিল শোকের
অন্ধকারে আচ্ছন্ন। এই শোকে তরুলতা হয়ে পড়েছিল স্তব্ধ, বনের পাখিরা 'কোথায় হাসান?'
বলে বিলাপ করে চলেছিল। তাদের শোকে যেন আকাশ থেকে ঝরে পড়েছিল নক্ষত্রেরা।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে
কিছু জানা যায় না। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র
১৩৪৩) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির
প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৭ বৎসর ৯ মাস।
- রেকর্ড:
এইচএমভি। মার্চ ১৯৩৭ (ফাল্গুন-চৈত্র ১৩৪৩)।
এন ৯৮৭২। শিল্পী: মুসলিম বন্ধুদ্বয়। সুর:
মুসলিম বন্ধুদ্বয়।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট, মাঘ ১৪১৮। ফেব্রুয়ারি
২৫২৭। গান সংখ্যা ১০১৮। পৃষ্ঠা: ৩১০]
- পর্যায়:
- বিষায়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসলাম ধর্ম। মর্সিয়া