বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: আদি পরম বাণী, ঊর বীণাপাণি
	
		আদি পরম বাণী, ঊর বীণাপাণি।
আরতি করে তব কোটি কোবিদ জ্ঞানী॥
হিমেল শীত গত, ফাগুন মুঞ্জরে,
কানন-বীণা বাজে সমীরে মর্মরে।
গাহিছে মুহু মুহু আগমনী কুহু,
প্রকৃতি বন্দিছে নব কুসুম আনি’॥
মূক ধরণী করে বেদনা-আরতি,
বীণা-মুখর তারে কর মা ভারতী!
বক্ষে নব আশা, কণ্ঠে নব ভাষা
দাও মা, আশিস যাচে নিখিল প্রাণী॥
শুচি রুচির আলো-মরাল বাহিনী
আনিলে আদি জ্যোতি, সৃজিলে কাহিনী।
কণ্ঠে নাহি গীতি, বক্ষে ত্রাস-ভীতি,
কর প্রবুদ্ধ মা বর অভয় দানি’
ব্রহ্মবাদিনী আদিম বেদ-মাতা,
এসো মা, কোটি-দল হৃদি আসন পাতা।
অশ্রুমতী মা গো, নব বাণীতে জাগো,
রুদ্ধ দ্বার খোলো সাজিয়া রুদ্রাণী॥
		
	
	- ভাবসন্ধান:  আসন্ন বিদ্যারূপিণী সরস্বতী পূজায়, তাঁকে আবাহন করে হয়েছে এই গানে। গানের 
	স্থায়ীতে তাঁকে আহ্বান করা হয়েছে (ঊর অর্থাৎ আবির্ভূত হও) 'আদি পরম বাণী' 
	এবং 'বীণাপাণি' নামে। 
	ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণের প্রকৃতি খণ্ডের প্রথম অধ্যায় তাঁর পরিচয় দেওয়া হয়েছে- 
	বুদ্ধিরূপা, বাক্যরূপা, বিদ্যারূপা হিসেবে। তাই এই গানে তাঁকে 
	সম্বোধন করা হয়েছে 'আদি পরম বাণী' নামে। বীণা পাণিতে (হাতে ) যাঁর এই অর্থে তিনি 
	বীণা পাণি। অগণন জ্ঞান-পিপাসীরা এই দেবীকে বিদ্যা লাভের আশায় পূজা ও বন্দনা 
	করেন।
 
 হিন্দু শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয়। 
	মাঘ মাসের 
	শেষে প্রকৃতিতে শীতের বিদায় ঘণ্টা বেজে ওঠে। ফাগুন মাসের বনভূমি পত্র-পুষ্পে 
	মুঞ্জরিত হয়ে ওঠে। যেন বাতাসে বাতাসে  বেজে উঠে বসন্তের কানন-বীণা দেবীর বীণা হয়ে। বসন্তের আগমনে কোকিলের 
	মুহুমুহু ডাক, নব বসন্তের কুসুমের ডালি- এসবই যেন দেবীবরণের আগমনী উৎসবের অঙ্গ।
 
 তাই
	দেবীর কাছে ভক্তের প্রার্থনা- যেন তিনি নব ভাবনার, নব আশার বাণী সঞ্চার 
	করেন তাঁর নব-ভাষায়। দেবীর বাহন 
	মরাল (হংস)। কবি একে আলো-মরাল নামে অভিহিত করেছেন। এই মরাল জ্ঞানালোকের ধারক এবং 
	দেবীর বাহন। তাই আলো-মরাল বাহিত দেবী প্রদান করেন আদি জ্ঞানের জ্যোতি, সৃষ্টি 
	করেন নব নব কাহিনি। পৌরাণিক কাহিনি মতে-
	এই দেবীই জগতে প্রথমে জ্ঞানের আদি জ্যোতি এনেছিলেন। তাঁর কল্যাণে আদি কাহিনি 
	রচিতি হয়েছিল কাব্যে ও গল্পে।
 
 কালক্রমে মানুষ হয়ে পড়েছে জ্ঞানবিমুখ। তাই মনুষের কণ্ঠ 
	এখন গীতহারা, বক্ষে বাজে কালো-বিদ্যার ভীতি। এসব দূর করে, দেবীর কাছে কবি অভয় বর 
	প্রার্থনা করেন যেন- অজ্ঞানতার ভয়কে মানুষ জয় করতে পারে।
 
 তিনি পরম ব্রহ্মের আদি 
	প্রবক্তা এবং বেদ প্রদায়িনী বলে বেদমাতা।
	আসন্ন সরস্বতী পূজায় কবি তাঁর কোটি-দল রূপী হৃদয়-পদ্মে তাঁর জন্য আসন পেতেছেন। 
	জ্ঞানহীন মানুষের দৈন্যদশায় দেবী অশ্রুমতী হয়ে ওঠেন। এই গানে তিনি দেবীকেই নব বাণীতে 
	জেগে ওঠার জন্য আহ্বান করেছেন। অজ্ঞানতার কলুষতা থেকে জগৎকে মুক্ত করার জন্য 
	দেবীকে রুদ্ধ দ্বার খুলে রুদ্রাণী বেশে আসার জন্য আহ্বান করেছেন।
 
- রচনাকাল ও স্থান:
গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর 
	(আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ) মাসে প্রকাশিত 
'চন্দ্রবিন্দু' সঙ্গীত-সংকলনে গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩২ বৎসর ৪ মাস।
 
 
- গ্রন্থ:
		- 
		
		চন্দ্রবিন্দু।
			- প্রথম সংস্করণ [সেপ্টেম্বর ১৯৩১, আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ।]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, মে ২০১১। 
চন্দ্রবিন্দু। ১। রাগমালা-তেওড়া। পৃষ্ঠা: ১৬৩]
 
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা 
		১০৫৫]
 
- পর্যায়: 
	- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন হিন্দুধর্ম। সরস্বতী। আবাহন