বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: আমার মা যে গোপাল-সুন্দরী
আমার মা যে গোপাল-সুন্দরী।
যেন এক বৃন্তে কৃষ্ণ-কলি অপরাজিতার মঞ্জরি॥
মা আধেক পুরুষ অর্ধ অঙ্গে নারী
আধেক কালি আধেক বংশীধারী,
অর্দ্ধ অঙ্গে পীতাম্বর আর অর্ধ অঙ্গে দিগম্বরী॥
মা সেই পায়ে প্রেম-কুসুম ফোটায় নূপুর-পরা যে চরণ,
মা’র সেই পায়ে রয় সর্প-বলয় যে পায়ে প্রলয়-মরণ।
মার আধ-ললাটে অগ্নি-তিলক জ্বলে
চন্দ্রলেখা আধেক ললাট তলে,
শক্তিতে আর ভক্তিতে মা আছেন যুগল রূপ ধরি’॥
-
ভাবসন্ধান: এই গানে পাওয়া যায় শ্যাম ও শ্যামার দ্বৈত বন্দনা। গানের
প্রতিটি চরণে ফুটে উঠেছে কবির কল্প-বাস্তবের এক অনির্বচনীয় মিশ্র অমিয় ধারা।
যেখানে শক্তি আর ভক্তি একাকার হয়ে গেছে।
এই গানে ভক্ত তাঁর সেই আরাধ্য সত্তাকে অনুভব করেছেন, যিনি একই সাথে গোপাল (কৃষ্ণা)
এবং মাতৃরূপিণী সর্বাঙ্গসুন্দরী কালী। যেন একই ভক্তি বৃক্ষের প্রস্ফুটিত দুটি
ফুল। তাঁর এক শাখায় ভক্তির কৃষ্ণ-পুষ্প, অন্য শাখায় শক্তির পুষ্প অপরাজিতা (দুর্গার
অপর নাম) মঞ্জরি। তাঁর অর্ধেক পুরুষসত্তা হিসেবে রয়েছেন বংশীধারী কৃষ্ণ, অপর
স্ত্রীসত্তা হিসেবে রয়েছেন কালী। তাই তাঁর দেহাঙ্গের একাংশ ভক্ত দেখতে পান
কৃষ্ণের পীতাম্বর, অন্য অংশে দেখান দিগম্বরী (কালীর নগ্ন রূপ) রূপ
মাতৃরূপিণী এই দেবী যখন কৃষ্ণের নূপূর পরা চরণ ফেলেন তখন ভক্তির প্রেম-লীলার
কুসুম ফোটে। আবার কালীর রূপের যখন কলুষ-কালিমা বিনাশের সর্পবলয়ে বাঁধা পা ফেলেন,
তখন তিনি ওঠেন শক্তিরূপিণী মরণের প্রলয়। তাঁর কপালের আধখানাতে জ্বলে অগ্নি-তিলক,
বাকি আধ-কপালে জাগে চন্দ্রলেখা। এ গানের শেষ চরণে তিনি সাধকের কাছে এই আরাধ্য
সত্ত্বাকে একবাক্যে প্রকাশ করেছেন- শক্তিতে আর ভক্তিতে মা আছেন যুগল রূপ ধরি’।
-
রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে কিছু জানা যায় না।
১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের
২০ নভেম্বর ১৯৩৯ (সোমবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৩৪৬) কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে 'রক্তজবা'
নামক একটি গীতি-আলেখ্য প্রচারিত হয়েছিল। এই
গীতি-আলেখ্যে এই গানটি ছিল।
এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪০ বৎসর ৫ মাস।
-
রেকর্ড:
- মেগাফোন। মার্চ ১৯৪০ (ফাল্গুন-চৈত্র১৩৪৬)। জেএনজি ৫৪৫৬। শিল্পী: ভবানী দাস
- এইচএমভি। নিতাই ঘটকের প্রশিক্ষণে পদ্মরাণীর কণ্ঠে গানটি
রেকর্ড হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত রেকর্ডটি প্রকাশিত হয় নি। [সূত্র: নজরুল সঙ্গীত
নির্দেশিকা। ব্রহ্মমোহন ঠাকুর। গান সংখ্যা: ১৮১]
- বেতার:
-
রক্তজবা ।
(গীতিচিত্র),। রচয়িতা: অবিনাশ
বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ২০ নভেম্বর ১৯৩৯ (সোমবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৩৪৬)।
সান্ধ্য অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৬.১০।
- সূত্র:
- বেতার জগৎ। ১০ম বর্ষ, ২২শ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ৮৭৭
- নজরুল যখন বেতারে। আসাদুল হক। বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমী। মার্চ ১৯৯৯।
পৃষ্ঠা: ৭৬।
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
-
আহসান মুর্শেদ [নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি,
তেত্রিশতম খণ্ড, (নজরুল ইন্সটিটিউট, আষাঢ় ১৪১৭। জুন
২০১০)। ১৩ সংখ্যক গান। রেকর্ডে ভবানী দাস -এর
গাওয়া সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে। পৃষ্ঠ: ৪৪-৪৭][নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সাধারণ হিন্দুধর্ম। শাক্ত-বৈষ্ণব। বন্দনা
- সুরাঙ্গ: ধ্রুপদাঙ্গ
- রাগ: কৌশিক কানাড়া
- তাল:
তেওরা
- গ্রহস্বর: সা