বিষয়: নজরুল সঙ্গীত। 
শিরোনাম: আমার হৃদয়-শামাদানে জ্বালি’ মোমের বাতি
	
		
			
			আমার হৃদয়-শামাদানে জ্বালি’ মোমের বাতি।
নবীজী গো! জেগে- আমি কাঁদি সারা রাতি॥
       
	আস্মানেরই চাঁদোয়া-তলে
       
	চাঁদ-সেতারার পিদিম১ জ্বলে,
ওরাও যেন খোঁজে তোমায় আমার দুঃখের সাথি২॥
দিনের কাজে পাই না সময় যাই নিরালা রাতে,
তোমায় পাওয়ার পথ খুঁজি গো কোরানের আয়াতে।
       
	তোমায় পেলে পাব খোদায়
       
	তাই শরণ যাচি তোমারি পায়,
পাওয়ার আশে জেগে থাকি প্রেমের শয্যা পাতি’॥
       
	ঝর্লে পাতা, ডাক্লে পাখি,
       
	চম্কে ভাবি, তুমি নাকি?
মস্জিদে যাই গভীর রাতে খুঁজি আঁতিপাঁতি॥
রোজ-হাশরে দেখা পাব মোরে সবাই বলে;
তোমার বিহনে আমার ঘুম নাই নয়নে,
মোর জীবনে রোজ-কিয়ামত আসে প্রতি পলে।
বিষের সমান লাগে আমার দুনিয়ার যশ-খ্যাতি॥
				
			১. চেরাগ
২. ওরা আমার দুখের সাথি
			
		
	
	- ভাবসন্ধান:	 এই গানটিতে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর 
	পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে। নবির প্রতি পরম ভক্তিতে, কবি তাঁর 
	হৃদয়ের দীপাধারে ভক্তির মোমবাতি জ্বালিয়ে, তাঁর করুণা পাওয়ার আশায় সারারাত জেগে 
	কাটান। যেমন করে আকাশের চাঁদোয়ার নিচে চন্দ্র ও নক্ষত্রেরা সারারাত ধরে প্রদীপ 
	জ্বালিয়ে রাখে। কবির মনে হয় তারাও যেন নবিকে না পাওয়ার বেদনায় তাঁরই সমব্যথী হয়ে 
	জেগে থাকে। 
 
 দিনের সাংসরিক কাজে নবীকে স্মরণ করার সময় পান না কবি। তাই নবিকে পাওয়ার পথ 
	হিসেবে কবি, কুরআনের আয়াতে তাঁকে খুঁজেন। কবি মনে করেন নবিকে পেলেই খোদাকে পাওয়া 
	যায়। তাই খোদাকে পাওয়ার আশায় তিনি সারারাত কাটান ভক্তি নবি-প্রেমের আসন পেতে।
 
 রাতের এই প্রার্থনার মাঝে গাছের পাতা ঝরে পড়লে, রাতাজাগা পাখি ডেকে উঠলে- কবি 
	চমকে উঠেন। ভাবেন হয়তো নবি এসেছেন তাঁর কল্পলোকের দ্বারে। তাঁকে পাওয়ার অস্থিরতা 
	নিয়ে তিনি গভীর রাতে মসজিদে যান। সেখানেও আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও তাঁর সন্ধান পান 
	না।
 
 সবাই বলে হাশরের ময়দানে তাঁর দেখা মিলবে। সে ভাবনায় তাড়িত কবই নবির 
	সান্নিধ্যহীন সারারাত অতিবাহিত করেন। তাঁর সান্নিধ্য পান না বলেই কবির কাছে 
	প্রতিটি ক্ষুদ্র মুহুর্তও হয়ে ওঠে রোজ-কিয়ামতের মতো। দুনিয়ার যশ-খ্যাতি তাঁর 
	কাছে হয়ে ওঠে বিষময়।
 
- রচনাকাল ও স্থান:  গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে 
		কিছু জানা যায় না।  ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে  (চৈত্র 
		১৩৪৫-বৈশাখ ১৩৪৬) টুইন রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটির 
		প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৯ বৎসর ১০ মাস। 
 
- পত্রিকা: মোহাম্মদী [বৈশাখ ১৩৪৬ (এপ্রিল-মে ১৯৩৯)।
- রেকর্ড: 
	- টুইন  [এপ্রিল ১৯৩৯ (চৈত্র ১৩৪৪-বৈশাখ ১৩৪৫)। এফটি ১২৭৬৯। শিল্পী: 
			সিরাজুর রহমান
- এইচএমভি [মে ১৯৪৯ (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৫৫)] এন ১৯৭৩২। শিল্পী: মফিজুল ইসলাম
 
- গ্রন্থ: 
	
		- নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট। তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান 
		১০৮৯।] 
 
- পর্যায়:
	- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। ইসালমি গান। নাত্-এ রসুল। ভক্তি