বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: এসো মাধব এসে পিও মধু
এসো মাধব এসে পিও মধু।
এসো মাধবী লতার কুঞ্জ বিতানে (মধু) মাধবী রাতে এসো বঁধু॥
এসো মৃদুল মধুর পা ফেলে
এসো ঝুমুর ঝুমুর ঘুমুর বাজায়ে শ্রবণে অমিয়া মধু ঢেলে,
এসো বাজায়ে বাঁশরি যে সুর-লহরি শুনে কুল ভোলে ব্রজবধূ॥
এসো নিবিড় নীরদ বরণ শ্যাম
তমাল কাননে কাজল বুলায়ে দুলায়ে চাঁচর চিকুর দাম,
এসো বামে হেলায়ে শিখী-পাখা ত্রিভঙ্গ ঠামে এসো বঁধু॥
এসো নারায়ণ এসো অবতার
পার্থসারথি বেশে এসো পাপ কুরুক্ষেত্রে আরবার,
তুমি মহাভারতের ভাগ্যবিধাতা গীতি উদ্গাতা নহ শুধু॥
- ভাবসন্ধান: এই গানে মাধবকে (শ্রীকৃষ্ণ) আহ্বান করা হয়েছে দুটি ধারায়। এর
একটি হলো- ভক্তের সাধারণ ভক্তিতে অন্যটি- জগৎকল্যাণকর অবতার হিসেবে।
এই গানের শুরুতে পাওয়া যায় প্রেম-ভক্তি ও শৃঙ্গার সৌন্দর্যের মিশ্ররূপ। এর
প্রকাশ ঘটেছে ঋতুরঙ্গের বসন্ত ও বর্ষার আবহে। এই ধারায়- বসন্তের আবহে মাধবকে
সাধারণ প্রেম-ভক্তি ও সৌন্দর্যে সিক্ত মধুর আহ্বান করা হয়েছে বন্ধু হিসেবে। মধু
মাধবী রাতে (বসন্তের রাত্রি) প্রস্ফুটিত মাধবী লতাকুঞ্জে মাধবকে আহ্বান করা
হয়েছে ভক্তি ও শৃঙ্গারের বঁধু হিসেবে। যেন তিনি আসেন নূপুরের মৃদুল মধুর ছন্দে।
সে ধ্বনি যেন শ্রবণে ধ্বনি-সুধা বর্ষণ করে। যেন তাঁর বাঁশির সুর-লহরি শুনে
উদ্বেলিত হয়ে ওঠে ব্রজের কুলের বধূরা
বর্ষার আবহে বাসন্তের মাধব, বর্ষায় এসে সম্বোধিত হয়েছেন নিবিড় নীরদ বরণ শ্যামল
রূপে। ঋতুর রূপবৈচিত্র্যে শ্যামকে আহ্বান করা হয়েছে তমাল কাননে। যেন তিনি আসেন
ঘন মেঘের কাজল বুলায়ে, তাঁর চাঁচর চিকুর দাম (কুঞ্চিত কেশরাশি) দুলায়ে,
তাঁর হাতে ধৃত ময়ূরের পাখা বাম দিকে হেলিয়ে, নটবরের ত্রিভঙ্গ রূপে।
গানের শেষ অন্তরাতে কৃষ্ণকে আহ্বান করা হয়েছে জগৎ-কল্যাণকর বিষ্ণুর অবতার রূপে।
কংস ও কুরুকুলের অন্যায় অবিচার থেকে রক্ষা করার জন্য কৃষ্ণ অবতাররূপে
জন্মেছিলেন। পাপ-বিমোচনের জন্য কুরুক্ষেত্রের যিনি পাণ্ডবকুলের অর্জুনের
রথের সারথি হয়েছিলেন। তেমনি জগতের কল্যাণের জন্য পার্থসারথির (অর্জুনের রথের
সারথি, কৃষ্ণ) মতো কৃষ্ণ আবার আবির্ভুত হন, এমন কল্পভাবনায় তাঁকে আহবান করা
হয়েছে। যেন কবি কৃষ্ণকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন- তিনি শুধু মহাভারতে ভাগ্যবিধাতা
নন। জগৎ-কল্যাণে তিনি তার চেয়ে বেশি। কৃষ্ণকে এখানে মহাভারতে কীর্তনকারী উদ্গাতা
(বৈদিক যুগের সাম-সঙ্গীতশিল্পী) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত এর মধ্য দিয়ে বলা
হয়েছে- কৃষ্ণ শুধু সঙ্গীতে স্বীকৃত কীর্তন-গাঁথা নন, তিনি সকল সময়ের সকল
ক্ষেত্রে উদ্ধার কর্তা।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে
সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি (মঙ্গলবার, ১৩ মাঘ ১৩৪৩) এইচএমভি'র
সাথে নজরুলের যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তাতে গানটি ছিল। এই
সময় নজরুলের বয়স ৩৭ বৎসর ছিল ৮ মাস।
- রেকর্ড: ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি (মঙ্গলবার, ১৩ মাঘ ১৩৪৩) এইচএমভি'র
সাথে নজরুলের যে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তাতে গানটি ছিল।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ [নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২। গান সংখ্যা ১১১৮। পৃষ্ঠা: ৩৪১-৩৪২]
- নজরুলের হারানো গানের খাতা [নজরুল ইনস্টিটিউট, ঢাকা। আষাঢ় ১৪০৪/জুন ১৯৯৭। গান সংখ্যা ২৭।
HMV। কীর্ত্তন। পৃষ্ঠা ৫৩]
পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সনাতন
হিন্দুধর্ম। বৈষ্ণব সঙ্গীত। কৃষ্ণ। আগমনী