বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: এই দেহেরই রঙমহলায় খেলিছেন লীলা-বিহারী 
	
		
			এই দেহেরই রঙমহলায় খেলিছেন লীলা-বিহারী।
মিথ্যা মায়া নয় এ কায়া কায়ায় হেরি ছায়া তাঁরি॥
           
	রূপের রসিক রূপে রূপে
           
	খেলে বেড়ায় চুপে চুপে,
মনের বনে বাজায় বাঁশি মন-উদাসী বন-চারী॥
           
	তার খেলা-ঘর তোর এ দেহ
           
	সে ত নহে অন্য কেহ,
সে যে রে তুই, 
			- তবু মোহ ঘুচল না তোর হায় পূজারি॥
           
	খুঁজিস্ তারে ঠাকুর-পূজায়
           
	উপাসনায় নামাজ রোজায়,
চাল কলা আর সিন্নি দিয়ে ধর্বি তারে হায় শিকারি!
পালিয়ে বেড়ায় মন-আঙিনায় সে যে শিশু প্রেম-ভিখারি॥
		
	
	-  ভাবসন্ধান: এই গানে পরমাত্মাকে উপস্থাপন করা হয়েছে সুফিবাদী 
	দর্শনের আদর্শে। এই গানের পরমাত্মা দেহাধারীর দেহের রঙমহলে লীলা-বিহারী রূপে 
	বিরাজ করেন। দেহধারীর কাছে এই পর্মাত্মা মিথ্যা বা মায়া নয়। দেহধারী এর বিমূর্ত 
	দৈহিক রূপ, মূর্ত দেহের আধারে তাঁকে ছায়া রূপে দেখতে পায়।
	
	লীলা-বিহারী পরমাত্মার এই রূপের স্বরূপ বুঝতে পারে একমাত্র রূপ-রসিকেরা। তার 
	রূপান্তরের লীলা ঘটে রসিকের মনের ঘরে চূপে চুপে। সে মনের বনে বনচারী হয়ে বাজায় 
	মন উদাসী বাঁশি। 
	
	পর্মাত্মারূপী বংশীধারী বিরাজ করেন দেহধারীর মনের খেলাঘরে। তিনি কোনো পৃথক সত্তা 
	নন। তিনি আর দেহধারী একই। গানের এই অংশের সাথে মিল পাওয়া যায়- জালালউদ্দিন 
	রূমির মসনবীতে বর্ণিত বাঁশী রূপী রূহের  দেহধারী হয়ে ওঠা রূপকতায়। 
	বাঁশীরূপী রূহ তাঁর জগত ছেড়ে আশ্রয় নেন দেহের বাঁশী হয়ে। দেহধারী মানুষ মূলত 
	বংশীধারী।
	
	তাই পার্থিব জগতে বিচিত্র লীলায় মানুষ হয়ে পড়ে বিভ্রান্ত। তাই বংশীধারী আর 
	দেহধারীর দ্বন্দ্ব মন থেকে যায় না। সে নিজেকে চিনতে পারে না বলেই অন্যের পূজা 
	করে পূজার মোহে। তাই সে পর্মাত্মাকে খুঁজে মনগড়া ঠাকুর পুজায়, পরমসত্তার 
	উদ্দেশ্যে নিবেদিত নামাজ রোজার আনুষ্ঠানিকতায়। চিরায়ত ধরমানুসারীরা পূজারীকে 
	চাল-কলা দিয়ে বা মসজিদ ও দরগায় সিন্নি দিয়ে শিকারীর মতো তাকে ধরতে চায়। কিন্তু 
	এই চিরপলাতককে ধরা যায় না। কারণ তিনি থাকেন মনের ঘরে। মন-আঙিনায় তিনি পালিয়ে 
	বেড়ান। তিনি শিশুর মতো প্রেম ভিখারি। তাই প্রেমের অর্ঘে সন্তুষ্ট করলেই তিনি 
	শিশুর মতো ধরা দেন প্রেমের বাহু ডোরে।
  
	-  রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। '
	গুলবাগিচা'
	গীতি-সংকলনের প্রথম সংস্করণে [১৩ আষাঢ় ১৩৪০, ২৭ জুন ১৯৩৩]  গানটি 
	প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৪ বৎসর ১ মাস
  
	- 
	গ্রন্থ: 
	- 
	গুলবাগিচা
	- প্রথম সংস্করণ [১৩ আষাঢ় ১৩৪০, ২৭ জুন ১৯৩৩। ভৈরবী-একতালা। পৃষ্ঠা: 
				৭১] 
 
	- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংকলন। পঞ্চম খণ্ড। বাংলা একাডেমী। ঢাকা। 
	জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮ মে, ২০১১। গান সংখ্যা ৬৩। ভৈরবী-একতালা।  পৃষ্ঠা ২৬২-২৬৩]
	
 
	
	
	 
	- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ, (নজরুল ইনস্টিটিউট ফেব্রুয়ারি ২০১২)-এর ৬৪৫ সংখ্যক 
	গান। 
 
	
	 
	- পর্যায়:
	- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সুফিদর্শন। সাধারণ