নয়নে ঘনাও মেঘ, মালবিকা!
গগনে জাগাও তব নীরদ-লিখা॥
বিদ্যুৎ হানে যদি গরজায় বাজ,
সুন্দর মৃত্যুরে নাহি ভয় আজ,
আমার এ বনে এসো মনোবালিকা॥
ঝরুক এ শিরে মোর ঘন বরষা,
ফুটিবে কাননে ফুল, আছে ভরসা।
এসো জল-ছলছল পথে অভিসারিকা॥
ভাবার্থ: এই গানের মালবিকা কবির কল্যাণীয়া মানসী। দুর্যোগ ঝঞ্ছাটে
এই মালবিকা কবির কাছে অভয়া, শান্তি প্রদায়িনী। এ গানের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রকৃতি
মূলত কবির যাপিত জীবনের সঙ্কট। আর তাঁর আশ্রয়দাত্রী হলো- তাঁর মানসী মালবিকা। এ
গানের মালবিকা যেন জীবনানন্দ দাশের বনলতার সেনের মতো। তাই বর্ষা আকাশ যখন
অশান্ত এবং ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তখন কবি মালবিকার কাছে কামনা করেন, যেন তার মায়াবী
চোখে প্রশান্তির মায়া জাগিয়ে তোলে মেঘের সঙ্কেতে। সেখানে কবি নির্ভয়ে
আশ্রয় নিতে পারেন তার প্রেমের অতুল গৌরবে।
কবি ভাবেন যদি বজ্রবিদ্যুতে মৃ্ত্যর সঙ্কেত ধ্বনিত হয়, তখন সে ভয়ঙ্কর সুন্দরের
প্রাপ্তমৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে, মনোবনে এই মনোবালিকাকে আহ্বান করবেন
অভয়ারূপে। ঘন বর্ষার অবিরাম জল ঝরে পড়লেও কবি জানেন তাঁর মনোকাননকে
সৌন্দর্যপুষ্পে স্নিগ্ধ করে রাখবে তাঁর মনোবালিকা। সেই ভরসায় কবি প্রতীক্ষা
করেন- জল-ছলছল পথে মালবিকা তার মনোবনে নেমে আসুক অভিসারিকার বেশ।
রচনাকাল: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু
জানা যায় না। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর (আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ) মাসে প্রকাশিত
'চন্দ্রবিন্দু' সঙ্গীত-সংকলনে গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩২ বৎসর ৪ মাস।