বিষয় :
নজরুল
সঙ্গীত ।
শিরোনাম
: পাকা ধানের গন্ধ-বিধুর হেমন্তের এই দিন-শেষে
‘সুরের দুলাল’
পাকা ধানের গন্ধ-বিধুর হেমন্তের এই দিন-শেষে,
সুরের দুলাল, আসলে ফিরে দিগ্বিজয়ীর বর-বেশে।
আজো মালা হয়নি গাঁথা হয়নি আজো গান রচন,
কুহেলিকার পর্দা-ঢাকা আজো ফুলের সিংহাসন।
অলস বেলায় হেলাফেলায় ঝিমায় রূপের রংমহল,
হয়নি ক’ সাজ রূপ-কুমারীর, নিদ্ টুটেছে এই কেবল।
আয়োজনের অনেক বাকি – শুন্নু হঠাৎ খোশ্খবর,
ওরে অলস, রাখ্ আয়োজন, সুর-শা’জাদা আস্ল ঘর।
ওঠ্ রে সাকি থাক্ না বাকি ভরতে রে তোর লাল গেলাস,
শূন্য গেলাস ভরব – দিয়ে চোখের পানি মুখের হাস।
দম্ভ ভরে আস্লো না যে ধ্বজায় বেঁধে ঝড়-তুফান,
যাহার আসার খবর শুনে গর্জাল না তোপ-কামান।
কুসুম দলি’ উড়িয়ে ধূলি আস্লো না যে রাজপথে,
আয়োজনের আড়াল তারে করব গো আজ কোন্ মতে।
সে এলো গো যে-পথ দিয়ে স্বর্গে বহে সুর্ধুনী,
যে পথ দিয়ে ফেরে ধেনু মাঠের বেণুর রব শুনি’।
যেমন সহজ পথ দিয়ে গো ফসল আসে আঙ্গিনায়,
যেমন বিনা সমারোহে সাঁঝের পাখি যায় কুলায়।
সে এলো যে আমন-ধানের নবান্ন উৎসব-দিনে,
হিমেল হাওয়ায় অঘ্রাণের এই সুঘ্রাণেরি পথ চিনে।
আনে নি সে হরণ ক’রে রত্ন-মানিক সাত-রাজার,
সে এনেছে রূপকুমারীর আঁখির প্রসা কণ্ঠহার।
সুরের সেতু বাঁধ্ল সে গো, উর্দ্ধে তাহার শুনি স্তব,
আস্ছে ভারত-তীর্থ লাগি’ শ্বেত-দ্বীপের ময়-দানব।
পশ্চিমে আজ ডঙ্কা বাজে পুবের দেশের বন্দীদের,
বীণার গানে আমরা জয়ী, লাজ মুছেছি অদৃষ্টের।
কণ্ঠ তোমার যাদু জানে, বন্ধু ওগো দোসর মোর!
আস্লে ভেসে গানের ভেলায় বৃন্দাবনের বংশী-চোর।
তোমার গলার বিজয়-মালা বন্ধু একা নয় তোমার,
ঐ মালাতে রইল গাঁথা মোদের সবার পুরস্কার।
কখন আঁখির আগোচরে বস্লে জুড়ে হৃদয়-মন,
সেই হৃদয়ের লহ প্রীতি, সজল আঁখির জল্-লিখন।
-
রচনাকাল ও স্থান:
গানটির রচনাকাল সম্পর্কে
সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯২৭
খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর দিলীপকুমার
রায়, ইউরোপ ভ্রমণ শেষে কলকাতায় ফিরে আসেন। ২৮ ডিসেম্বর
(২৯ অগ্রহায়ণ ১৩৩৪) কলকাতা ইউনিভার্সিটি
ইন্স্টিটিউট হলে তাঁকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে
দিলীপকুমার রায়ের উদ্দেশ্যে
নজরুল তাঁর স্বরচিত কবিতা 'সুরের দুলাল' পাঠ করেন। পরে
এই কবিতাটিতে সুররোপ করে গানে পরিণত করেন।
কল্লোল পত্রিকার মাঘ ১৩৩৪ সংখ্যায় এই রচনাটি গান হিসেবে
প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ২৮ বৎসর
৭ মাস।
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইন্সটিটিউট। ফেব্রুয়ারি ২০১২)।
১৫৩৫ সংখ্যক গান।
পৃষ্ঠা: ২৯৬-২৯৭।
- সন্ধ্যা
- প্রথম সংস্করণ [১৩৩৬
বঙ্গাব্দের ভাদ্র (আগষ্ট ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ।
- নজরুল-রচনাবলী─ চতুর্থ
খণ্ড [বাংলা
একাডেমী। ২৫ মে, ২০০৭। সন্ধ্যা।
শিরোনাম 'সুরের দুলাল্'। পৃষ্ঠা: ৭৭-৭৮]
- পত্রিকা: কল্লোল, মাঘ ১৩৩৪ সংখ্যা। গান।